চট্টগ্রাম, ১ ফেব্রুয়ারি, ২০২২ (বাসস) : বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগ (বিপিএল) টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটের অষ্টম আসরে নিজেদের প্রথম তিন ম্যাচ জিতে আকাশে উড়ছিলো দু’বারের চ্যাম্পিয়ন কুমিল্লার ভিক্টোরিয়ান্স। সেই কুমিল্লাকে এবারের আসরে প্রথম হারের স্বাদ দিলো মাহমুদুল্লাহ-তামিম-মাশরাফির মিনিস্টার গ্রুপ ঢাকা। আজ আসরের ১৫তম ম্যাচে ঢাকা ৫০ রানে হারিয়েছে কুমিল্লাকে।
৪ ম্যাচ শেষে ৩ জয় ও ১ হারে ৬ পয়েন্ট নিয়ে এখনো রান রেটে এগিয়ে শীর্ষে কুমিল্লা। ৬ ম্যাচে ৩টি করে জয়-হারে ৬ পয়েন্ট নিয়ে রান রেটে পিছিয়ে দ্বিতীয়স্থানে ঢাকা।
এ ম্যাচে প্রথমে ব্যাট করে অধিনায়ক মাহমুদুল্লাহ রিয়াদের দুর্দান্ত হাফ-সেঞ্চুরিতে ২০ ওভারে ৬ উইকেটে ১৮১ রান করে মিনিস্টার গ্রুপ ঢাকা। মাহমুদুল্লাহ ৪১ বলে অপরাজিত ৭০ রান করেন। জবাবে ঢাকার বোলারদের তোপে ১৩১ রানে অলআউট হয় কুমিল্লা।
চট্টগ্রামের জহুর আহমেদ চৌধুরি স্টেডিয়ামে টস জিতে প্রথমে ঢাকাকে ব্যাটিংয়ের আমন্ত্রন জানায় কুমিল্লার অধিনায়ক ইমরুল কায়েস। আগের ম্যাচে সিলেট সানরাইজার্সের বিপক্ষে তামিম ইকবালের ১৭৩ রানের জুটি গড়েছিলেন আফগানিস্তানের আহমেদ শাহজাদ। কিন্তু আজ দ্বিতীয় ওভারেই প্যাভিলিয়নে ফিরতে হয় শাহজাদকে। কুমিল্লার পেসার মুস্তাফিজুর রহমানের বলে লেগ বিফোর হন শাহজাদ। এডিআরএস নিয়েও নিজের উইকেট বাঁচাতে পারেননি শাহজাদ। ১টি চারে ৫ বলে ৬ রান করেন শাহজাদ।
শুরুতে শাহজাদকে হারালেও পাওয়ার প্লের সুবিধা ভালোভাবেই নিয়েছেন তামিম। তাকে ভালোই সঙ্গ দেন তিন নম্বরে নামা ডান-হাতি ব্যাটার ইমরান উজ্জামান। ৬ ওভার শেষে ৪৭ রান পায় ঢাকা।
অষ্টম ওভারে ইমরানের বিদায় নিশ্চিত করেন আফগানিস্তানের ডান-হাতি পেসার করিম জানাত। জানাতের বলে বোল্ড হয়ে ১৫ রানে ফিরেন ইমরান। দ্বিতীয় উইকেটে তামিমের সাথে ৪৮ রান যোগ করেন ইমরান।
এরপর ক্রিজে তামিমের সঙ্গী হন অধিনায়ক মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ। রানের গতি ধরে রেখে বড় স্কোরের ভিত গড়ছিলেন তামিম-মাহমুদুল্লাহ। কিন্তু ১১তম ওভারে এই জুটির পথে বাঁধা হয়ে দাঁড়ান বাঁ-হাতি স্পিনার তানভীর ইসলাম। আগের ম্যাচের সেঞ্চুরিয়ান তামিম ২ বাউন্ডিারি ও ৩ ওভার বাউন্ডারিতে ৪৬ রানে মিড-উইকেটে ধরা পড়েন জানাতের হাতে।
তামিমের আউটের পর উইকেটে গিয়ে সুবিধা করতে পারেননি শুভাগত হোম। ৮ বলে ৯ রান করেন তিনি। তবে উইকেটে গিয়েই মারমুখী হয়ে উঠেন ওয়েস্ট ইন্ডিজের আন্দ্রে রাসেল।
তারভীরের করা ১৬তম ওভারে ১টি করে চার-ছক্কা হাকান রাসেল। তবে ঐ ওভারের শেষ বলে উইকেটে ছেড়ে খেলতে গিয়ে বোল্ড হন রাসেল। ৭ বলে ১১ রান করেন হার্ড-হিটার রাসেল।
দলীয় ১৩০ রানে রাসেলের বিদায়ে পর মোহাম্মদ নাইমকে নিয়ে ৩০ রানের জুটি গড়েন মাহমুদুল্লাহ। যেখানে নাইমের অবদান ছিলো ১০। রানের চাকা ঘুড়িয়েছেন মাহমুদুল্লাহই। ১৯তম ওভারে বাউন্ডারি দিয়ে টি-টোয়েন্টি ক্যারিয়ারের ১৯তম হাফ-সেঞ্চুরি পূর্ণ করেন মাহমুদুল্লাহ।
৩৫ বলে হাফ-সেঞ্চুরি করা রিয়াদ ইনিংসের শেষ ওভারে জানাতের দ্বিতীয় বলে দারুন পুল শটে ছক্কা মারেন । শেষ বলে আবারও ছক্কা মারেন মারেন তিনি। বলটি কোমরের উপর ফুলটস হওয়াতে নো-বল ছিলো। আর শেষ বলে ফ্রি-হিটে ২ রান নিয়ে দলকে বড় স্কোর এনে দেন মাহমুদুল্লাহ। ২০ ওভারে ৬ উইকেটে ১৮১ রানের সংগ্রহ পায় ঢাকা।
৪১ বলে ৩টি চার ও ৪টি ছক্কায় অপরাজিত ৭০ রান করেন মাহমুদুল্লাহ। ২ রানে অপরাজিত থাকেন মাশরাফি বিন মর্তুজা। কুমিল্লার তানভীর ৩৬ রানে ২ উইকেট নেন। মুস্তাফিজ-শহিদুল ও জানাত ১টি করে শিকার করেন।
জয়ের জন্য ১৮২ রানের টার্গেটে শুরুতেই হোচট খায় কুমিল্লা। ঢাকার পেসার রুবেল হোসেনের করা প্রথম ওভারের তৃতীয় বলে উইকেটে ছেড়ে মারতে গিয়ে আকাশে বল তুলে দেন ওপেনার লিটন দাস। শাহজাদের পরিবর্তে উইকেটরক্ষকের দায়িত্ব পালন করা ইমরান উজ্জামান সহজে ক্যাচটি তালুবন্দি করেন। খালি হাতে প্যাভিলিয়নে ফিরেন লিটন। তৃতীয় ওভারে ঢাকার উইকেটরক্ষক ইমরানের দক্ষতায় রান আউটের ফাঁদে পড়েন দক্ষিণ আফ্রিকার ফাফ ডু-প্লেসিস। ৮ রান করেন তিনি।
১২ রানে ২ উইকেট পতনের পর ঢাকার বোলারদের উপর চড়াও হন ওপেনার মাহমুদুল হাসান জয়। চতুর্থ ওভারে মাশরাফিকে ৩টি চার মারেন তিনি। এবাদতের পরের ওভারে ১২ রান নেন জয় ও অধিনায়ক ইমরুল। আর শুভাগত হোমের করা পাওয়ার প্লের শেষ ওভারে পরপর চারটি চার মারেন জয়। এতে ৬ ওভারে ৫৬ রান তুলে কুমিল্লা।
জয় ও ইমরুলের স্বাচ্ছেন্দ্যের ব্যাটিংয়ে ১০ ওভারে ৮২ রান পেয়ে জয়ের স্বপ্ন দেখতে শুরু করে কুমিল্লা। তবে কুমিল্লার স্বপ্নে জল ঢেলে দেন রাসেল। ১১ তম ওভারে দুই সেট ব্যাটার জয় ও ইমরুলকে বিদায় দেন রাসেল। ঐ ওভারের প্রথম বলে ইমরুল ও শেষ বলে জয়কে বোল্ড করেন রাসেল। ২৩ বলে ২৮ রান করেন ইমরুল। আর ৩০ বলে ৮টি চারে ৪৬ রান করেন জয়। তৃতীয় উইকেটে ৭০ রান যোগ করেন ইমরুল-জয়।
একই ওভারে ইমরুল-জয়ের আউটের পর ধস নামে কুমিল্লার ইনিংসে। এবাদত ও আফগানিস্তানের স্পিনার কাইস আহমেদের তোপে ১৭ দশমিক ৩ ওভারে ১৩১ রানে গুটিয়ে যায় কুমিল্লা। ৪৯ রানে শেষ ৮ উইকেট হারায় তারা।
বল হাতে ঢাকার সফল বোলার রাসেল ১৭ রানে ৩ উইকেট নেন। এছাড়াও এবাদত-কাইস ২টি করে ও রুবেল ১টি উইকেট নেন।
সংক্ষিপ্ত স্কোর :
মিনিস্টার গ্রুপ ঢাকা : ১৮১/৬, ২০ ওভার (মাহমুদুল্লাহ ৭০*, তামিম ৪৬, তানভীর ২/৩৬)।
কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্স : ১৩১/১০, ১৭.৩ ওভার (জয় ৪৬, ইমরুল ২৮, রাসেল ৩/১৭)।
ফল : মিনিস্টার গ্রুপ ঢাকা ৫০ রানে জয়ী।
ম্যাচ সেরা :মাহমুদুল্লাহ(ঢাকা)