বাসস
  ২৬ জুলাই ২০২১, ১৮:৪৬

দেশে আরো তিনটি নতুন উপজেলা হচ্ছে

ঢাকা, ২৬ জুলাই, ২০২১ (বাসস): দেশে আরও তিনটি নতুন উপজেলা করার অনুমোদন দিয়েছে সরকার।  যেগুলো হচ্ছে : মাদারীপুরের কালকিনি উপজেলার ডাসার থানা, কক্সবাজারে ঈদগাঁও ও সুনামগঞ্জের ধর্মপাশা উপজেলার মধ্যনগর। নতুন তিনটিসহ মোট উপজেলা হল ৪৯৫টি। এছাড়া, দক্ষিণ সুনামগঞ্জ উপজেলার নাম পরিবর্তন করে রাখা হয়েছে শান্তিগঞ্জ। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে প্রশাসনিক পুনর্বিন্যাস সংক্রান্ত জাতীয় বাস্তবায়ন কমিটির (নিকার) ভার্চ্যুয়াল সভায় এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গণভবন থেকে এবং মন্ত্রিপরিষদ সদস্যবৃন্দ মন্ত্রিপরিষদ বৈঠকের পরই মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে এই বৈঠকে ভার্চুয়ালি অংশগ্রহণ করেন। পরে সচিবালয়ে মন্ত্রিপরিষদ সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম মন্ত্রি পরিষদ বৈঠক এবং নিকার এর বৈঠকের বিষয়ে সাংবাদিকদের ব্রিফ করেন।
মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, ‘তিনটিই প্রত্যন্ত এলাকা। বিশেষ বিবেচনায় এগুলোকে উপজেলায় উন্নীত করা হয়েছে।’ তিনি জানান, নিকারের সভায় এই সিদ্ধান্ত হয়েছে। তবে শর্তপূরণ না হলে উপজেলা করা হবে না। এর কাঠামোটা (নতুন উপজেলা) এর আগে সর্বশেষ যে ৪৯২তম উপজেলা হয়েছে, সে আদলে হবে।
তিনি বলেন, কক্সবাজারের ঈদগাঁও থানা সদর থেকে ৪০ কিলোমিটার দূরে। সরকার মনে করে ওখানে একটা বড় রিসোর্স গেইন করার সম্ভাবনা আছে। সেখানে একটা ইউনিট দরকার। এলাকার লোকজনেরও খুবই অসুবিধা হয়। এজন্য সরকার অনুমোদন করে দিয়েছে।
সুনামগঞ্জ উপজেলার ধর্মপাশা উপজেলার মধ্যনগর থানার একটি অংশকে উপজেলায় উন্নীত করা নিয়ে মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, এটাও ধর্মপাশা থেকে ২৫-২৬ কিলোমিটার দূরে, হাওরের মধ্যে অবস্থিত।
মাদারীপুরের কালকিনি উপজেলার ডাসার থানাকে উপজেলায় উন্নীত করা হয়েছে। এটাও রিমোট হাওড় এলাকা এবং এখনও দুর্গম।
এছাড়া, এলাকার লোকজনের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে দক্ষিণ সুনামগঞ্জ উপজেলার নাম পরিবর্তন করে শান্তিগঞ্জ রাখা হয়েছে বলে জানান মন্ত্রিপরিষদ সচিব।
সভায় ঢাকা জেলার দোহার পৌরসভার দুর্গম এলাকাকে বাদ দিয়ে কাছাকাছি ইউনিয়ন পরিষদ এবং কিছু নতুন এলাকা যেখানে শহরের সুবিধা আছে সেগুলো সংযুক্ত করা হয়েছে। এর আকার এখন গোলাকৃতি হয়েছে।
খনন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম বলেন, ‘নিকার’-এর সভায় সিলেট সিটি কর্পোরেশনের সীমানা বৃদ্ধি করা হয়েছে। ফলে শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ^বিদ্যালয় সহ বেশ কয়েকটি বড় স্থাপনা এখন সিটির সীমানায় চলে আসবে।
এছাড়া, দোহার পৌরসভা এবং মাদারীপুরের শিবচর পৌরসভার সীমানা পুনঃনির্ধারণ করা হয় বলেও তিনি জানান।
মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, এদিনের মন্ত্রিসভায় ‘সরকারি চাকরি (সংশোধন) আইন, ২০২১’-এর খসড়ার নীতিগত অনুমোদন দেয়া হয়। তিনি বলেন, এরফলে অবসরে গিয়ে কোনো কর্মচারী গুরুতর অপরাধ করলে সরকার তার অবসর সুবিধা (পেনশন) সম্পূর্ণ বা আংশিকভাবে বাতিল, স্থগিত বা প্রত্যাহার করতে পারবে- আইনের এ বিধান বহালই থাকল।
‘সরকারি চাকরি আইন, ২০১৮’ সংশোধন করে এ বিধান বাতিলের প্রস্তাব আনা হলেও মন্ত্রিসভা তা অনুমোদন দেয়নি, বলেন তিনি। সচিব বলেন, ‘সরকারি চাকরি আইন, ২০১৮’-এর কয়েকটি ধারা সংশোধনের প্রস্তাব আনা হয়েছিল। আইনের ৫১ (৪) ধারায় বলা হয়েছে- ‘অবসর সুবিধাভোগী কোনো ব্যক্তি গুরুতর অপরাধে দ-প্রাপ্ত বা কোনো গুরুতর অসদাচরণের দোষে দোষী সাব্যস্ত হইলে, কারণ দর্শাইবার যুক্তিসঙ্গত সুযোগ প্রদান করিয়া, সরকার বা নিয়োগকারী কর্তৃপক্ষ, তাহার অবসর সুবিধা সম্পূর্ণ বা আংশিকভাবে বাতিল, স্থগিত বা প্রত্যাহার করিতে পারিবে।’ এই ধারাটি বাতিলের প্রস্তাব করা হয়েছিল। ক্যাবিনেট তাতে সম্মতি দেয়নি। ক্যাবিনেট আগেরটিই বহাল রেখেছে।”
তিনি বলেন, ‘প্রস্তাব ছিল যে রিটায়ার্ড করবে তার যাতে পেনশন থেকে কোনো টাকা কাটা না হয়। মন্ত্রিসভা এটা অনুমোদন দেয়নি। আগে যেটা ছিল সেটাই রেখে দিয়েছে।’
‘আরেকটি সংশোধন আনা হয়েছিল, আইনে আছে- পিআরএলে যাওয়া ব্যক্তিদের অন্য কোথাও চাকরি করা কিংবা বিদেশে যাওয়ার জন্য সরকারের অনুমোদনের প্রয়োজন নেই। প্রস্তাব আনা হয়েছিল এক্ষেত্রে সরকারের অনুমোদন লাগবে। এতেও সম্মতি দেয়নি। আগে যেটা ছিল সেটাই থাকবে।’
তবে আগের আইনে কিছু করণিক ভুল ছিল, সংশোধিত আইনে সেগুলো ঠিক করে দেয়া হয়েছে বলেও জানান তিনি।
এছাড়া মন্ত্রিসভায় বাংলাদেশ লিগ্যাল প্র্যাকটিশনার এন্ড বার কাউন্সিল (সংশোধন) অর্ডন্যান্স, ২০২১ এর খসড়ার চুড়ান্ত অনুমোদন প্রদান করা হয়। মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, বার কাউন্সিল যে আইনটি রয়েছে (বার কাউন্সিল অর্ডার ১৯৭২) সেখানে বিধান রয়েছে ৩১ মে’র মধ্যে নির্বাচন হতে হবে এবং তিন বছরের জন্য তাদের কমিটি নির্বাচিত হবে । কিন্তু এই কমিটির কার্যাবলীও তৃতীয় বছরের ৩১ মে’র মধ্যেই শেষ করতে হবে।  তিনি বলেন, গত এক দেড় বছরের যে করোনা পরস্থিতি তাতে নির্বাচন করা সম্ভব নয়। অবশ্য ওই আইনটির মধ্যে অল্টারনেটিভ ছিল যদি কোন কারনে নির্বাচন না হয় (এ্যাক্টস অব গড) সেক্ষেত্রে কি করণীয় এটা বার কাউন্সিল আইনে ছিল না। এজন্য আইন মন্ত্রণালয় একটি প্রস্তাব নিয়ে এসেছে যেটা আর্টিকেল ফোর এর একটি সংশোধনী যেটা হচ্ছে- এক বছরের জন্য একটা এ্যাডহক কমিটি সরকার করে দিতে পারবে। যার মেয়াদ সর্বোচ্চ এক বছর হবে এবং যেটি ১৫ সদস্য বিশিষ্ট হবে।
মন্ত্রিসভা- বৈঠকে গৃহীত সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নের বিষয়ে ২০২১ সালের দ্বিতীয় ত্রৈমাসিক (এপ্রিল-জুন) প্রতিবেদন ও এদিন মন্ত্রিসভার সংক্ষিপ্ত বৈঠকে উপস্থাপিত হয় বলেও মন্ত্রিপরিষদ সচিব উল্লেখ করেন।