শিরোনাম
ঢাকা, ১১ জানুয়ারি, ২০২৩ (বাসস) : প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আজ সংসদে বলেছেন, বাংলাদেশে এখনো এমন কোনো শক্তি তৈরি হয়নি যা আওয়ামী লীগ সরকারের পতন ঘটাতে পারে, কারণ এই দলের শিকড় অনেক গভীরে।
তিনি বলেন,“এমন কোনো শক্তি এখনো তৈরী হয়নি বাংলাদেশে যা আওয়ামী লীগ সরকারকে উৎখাত করতে পারে।”
প্রধানমন্ত্রী ও সংসদ নেতা শেখ হাসিনা জাতীয় পার্টির সংসদ সদস্য ফখরুল ইমামের এক সম্পূরক প্রশ্নের জবাবে এ কথা বলেন।
তিনি বলেন, আওয়ামী লীগের জন্ম ক্ষমতা দখলকারী কোন মিলিটারী ডিক্টেটরের পকেট থেকে হয়নি। আওয়ামী লীগের জন্ম এদেশের মাটি ও মানুষ থেকে। কাজেই আমাদের শেকড় অনেক গভীরে প্রোথিত রয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ইয়াহিয়া-আইয়ুব খান-জিয়া-এরশাদ-খালেদা জিয়ারা আওয়ামী লীগকে ধ্বংস করতে অনেক চেষ্টা করেছে, কিন্তু পারেনি। আগামীতেও পারবে না।
স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে জাতীয় সংসদ অধিবেশনে প্রধানমন্ত্রীর জন্য নির্ধারত প্রশ্নোত্তর পর্বে সম্পূরক প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী প্রশ্নকর্তাকে আরেকটি ওয়ান ইলেভেন আসা নিয়ে চিন্তা না করার পরামর্শ দেন।
তিনি বলেন, “ঘাবড়ানোর কিছু নেই, এটুকু বলতে পারি। ঘাবড়াবেন না, আমরা আছি না? কোনো চিন্তা নেই।”
বিএনপির চরম দু:শাসন, দুর্নীতি, জঙ্গিবাদ ও ভুয়া ভোটার লিস্ট করে নির্বাচনী বৈতরনী পার হওয়ার খায়েশের কারণে ওয়ান ইলেভেন এসেছিল অভিযোগ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, তাদের দু:শাসন, দুর্নীতি, জঙ্গিবাদের কারণেই ওয়ান ইলেভেন এসেছিল। আর ২০১৪ সালে আওয়ামী লীগের বিজয় অনিবার্য জেনে বিএনপি নির্বাচন বর্জন করেছিল।
তিনি বলেন, ২০১৮ সালে তারা নির্বাচনে অংশ নিয়ে মনোনয়ন বাণিজ্য করেছিল। একটা সিটে দুই/তিনটা করে নমিনেশন দেয়। একটা আসে লন্ডন থেকে। একটা যায় পুরানা পল্টন অফিস থেকে। আরেকটা গুলশান অফিস থেকে। সকালে একটা, বিকেলে একটা, দুপুরে একটা। দলের যোগ্য প্রার্থীদের কাছে লন্ডন থেকে ম্যাসেজ আসে মোটা অংকের টাকা না দিয়ে নির্বাচন করতে পারবে না। ওইভাবে যারা নির্বাচন করতে যায় তারা আর কতক্ষণ নির্বাচনে টিকে থাকে। মাঝপথে নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ায়। সরে গিয়ে নির্বাচনকে প্রশ্নবিদ্ধ করার চেষ্টা করে এবং তারা বিভিন্নভাবে প্রচার-অপ্রচার চালিয়ে সেটা তারা প্রশ্নবিদ্ধ করতে পেরেছে-এটা বাস্তব। কিন্তু জনগণের আস্থা ও বিশ্বাস এখনো আওয়ামী লীগের ওপর আছে।
সংসদ নেতা বলেন, ২০১৪-১৫ সালে বিএনপি আন্দোলনের নামে অগ্নিসন্ত্রাস, মানুষ খুন, মানুষকে পুড়িয়ে মেরেছে। সরকারি ও সাধারণ মানুষের সম্পত্তি নষ্ট করেছে। এমন কোন অপকর্ম নেই যা করে তখন সরকার হঠানোর চেষ্টা করা হয়েছে। কিন্তু এতে জনগণের সায় তারা পায়নি। যারা নির্বাচনকে কলুষিত করেছে, নির্বাচনী প্রক্রিয়াকে ধ্বংস করেছে, মানুষের ভোটের অধিকার ছিনিয়ে নিয়েছে, যারা মানুষের ভাগ্য নিয়ে ছিনিমিনি খেলেছে তারাই নির্বাচন নিয়ে প্রশ্ন তোলে।
শেখ হাসিনা বলেন, প্রতিটি নির্বাচন পর্যালোচনা করলে দেখা যায় একমাত্র আওয়ামী লীগ সরকার আছে বলেই মানুষ ভোটটা শান্তিতে দিতে পারছে। এখানে সরকারের হস্তক্ষেপ করার দরকার নেই। জনগণ স্বতস্ফুর্তভাবে আওয়ামী লীগকে ভোট দেয়, কারণ তারা জানে-আওয়ামী লীগ যে ওয়াদা দেয় তা রাখে। আমরা কথা দিয়ে কথা রাখি। গত ১৪ বছর আগে দেশের অবস্থা কী ছিল এবং ’৭৫ পরবর্তী দীর্ঘ ২১ বছর দেশের মানুষ কেমন ছিলো তা একটু খতিয়ে দেখার জন্যও তিনি সবার প্রতি অনুরোধ জানান।
মেগা প্রকল্পে দুর্নীতির অভিযোগ নাকচ করে পাল্টা চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে দিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, কোথায়, কত দুর্নীতি হয়েছে তা স্পষ্ট করতে হবে। স্পষ্ট করে বললে তার জবাবও তিনি দেবেন।
গণফোরামের সংসদ সদস্য মোকাব্বির খানের এ সংক্রান্ত একটি সম্পূরক প্রশ্নের জবাবে তিনি চ্যালেঞ্জ দিয়ে বলেন, মাননীয় স্পিকার আপনার মাধ্যমে সম্পূরক প্রশ্নকর্তাকে আমি চ্যালেঞ্জ দিচ্ছি- কোথায়, কত দুর্নীতি হয়েছে সেই কথাটা তাকে এখানে স্পষ্ট বলতে হবে। যার জবাব আমি দেবো। তিনি এ সময় পদ্মা সেতুর দুর্নীতির অভিযোগের প্রসঙ্গ টেনে বলেন, বিশ্ব ব্যাংক তো পদ্মা সেতুতে দুর্নীতির অভিযোগ এনেছিল। সেখানে কী কোন দুর্নীতি হয়েছিল? দুর্নীতি হয়নি। তারা প্রমাণ করতে পারেনি। এটা শুধু আমার কথা নয়, কানাডার ফেডারেল কোর্টের মামলার রায়েই বলা হয়েছে- সকল অভিযোগ মিথ্যা। কোন অভিযোগ সত্য নয়, সব ভূয়া। সেক্ষেত্রে কীভাবে বললেন দুর্নীতি হচ্ছে বাংলাদেশে। দুর্নীতি যদি সত্য হতো! তাহলে এত অল্প সময়ে এসব প্রজেক্টের কাজ কী শেষ হতো? কোনদিন হয়েছে?
তিনি বলেন, এখন আমরা প্রতি ঘরে ঘরে বিদ্যুত দিচ্ছি। কুইক রেন্টালে যদি দুর্নীতি হতো তাহলে তো এত বিদ্যুত দিতে পারার কথা ছিলো না। বিএনপির আমলে বিদ্যুতে দুর্নীতি হয়েছিল বলেই বিশ্বব্যাংক টাকা দেয়া বন্ধ করে দিয়েছিল। ঢাকা ময়মনসিংহ সড়কে দুর্নীতি করেছিল বলেই সেই টাকা বন্ধ হয়ে গিয়েছিল। আওয়ামী লীগের আমলে সেটা হয়নি।
প্রধানমন্ত্রী সরকারি দলের সংসদ সদস্য ধীরেন্দ্র দেবনাথ শম্ভুর সম্পূরক প্রশ্নের জবাবে রোজা পালনের সময় ভোগপণ্যে কারসাজি করলে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলেও সংশ্লিষ্ট মহলকে সতর্ক করেন।
তিনি বলেন, সারা বিশ্বে খাদ্যের দারুণ অভাব দেখা দেবে, যার কিছু আভাস আমরা পাচ্ছি। তবে আমাদের খাদ্য চাহিদা যেন আমাদের নিজেদের আওতায় রাখতে পারি সেই উদোগ আমরা নিয়েছি। আমি উৎপাদন বাড়াতে, কোনো জমি যাতে পড়ে না থাকে, যে যা পারে উৎপাদন করার আহ্বান জানিয়েছিলাম। লক্ষ্য করা যাচ্ছে মানুষ সাড়া দিয়েছে।
তিনি বলেন, রোজা বা উৎসবে জিনিসপত্রের দাম বাড়িয়ে দেওয়ার চেষ্টা করা হয়। বিশ্বের কোথাও উৎসবের সময় জিনিসের দাম বাড়ানোর চেষ্টা হয় না। কিছু ব্যবসায়ী জিনিসপত্রের দাম বাড়িয়ে চাহিদা বাড়ানোর চেষ্টা করতে চায়। এটা অমানবিক। তবে কেউ যদি ভোগ্যপণ্য নিয়ে কারসাজি বা মজুদের চেষ্টা করে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
সরকার প্রধান বলেন, যারা মজুতদারি, কালোবাজারি ও এলসি খোলা নিয়ে দুই নম্বরি করবে তাদের বিরুদ্ধে আমরা যথাযথ ব্যবস্থা নিচ্ছি এবং নেবো। প্রয়োজনে আমরা আরও কঠোর ব্যবস্থা নেবো। মানুষের কষ্ট যেন না হয় সেদিকে বিশেষভাবে দৃষ্টি দেবো।
আহসানুল ইসলাম টিটোর সম্পূরক প্রশ্নের উত্তরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, রোজার মাসে জিনিসপত্রের দাম যাতে না বাড়ে সে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। কেউ যদি মজুদদারি করে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিচ্ছি। আমরা চাই রোজার মাসে মানুষ যাতে কষ্ট না পায়। কেউ মজুদ করার চেষ্টা করলে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।