শিরোনাম
রাজশাহী, ২৭ জানুয়ারী, ২০২৩ (বাসস) : রাজশাহীতে নির্মাণাধীন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব হাইটেক পার্ক এখান সেখানকার প্রায় ১৪ হাজার যুব’র (নারী ও পুরুষ উভয়ের) কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টির চূড়ান্ত পর্যায়ে রয়েছে।
‘বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব হাইটেক পার্ক স্থাপন’ প্রকল্পের পরিচালক প্রকৌশলী ফজলুল হক বলেন, এ পর্যন্ত পার্কের গড়ে ৮৮ শতাংশ কাজ শেষ হয়েছে।
পার্কে দুটি অংশ রয়েছে- শেখ কামাল আইটি ট্রেনিং অ্যান্ড ইনকিউবেশন বিল্ডিং ও সজীব ওয়াজেদ জয় সিলিকন টাওয়ার।
তিনি বলেন, শেখ কামাল আইটি ইনকিউবেশন অ্যান্ড ট্রেনিং সেন্টারের নির্মাণ কাজ প্রায় দুই বছর আগে শেষ হয়েছে এবং জয় সিলিকন টাওয়ার এখন চূড়ান্ত পর্যায়ে রয়েছে।
তিনি বলেন, শেখ কামাল আইটি ট্রেনিং অ্যান্ড ইনকিউবেশন বিল্ডিংয়ে এ পর্যন্ত ১০টি কোম্পানি এবং জয় সিলিকন টাওয়ারে সাতটি প্রতিষ্ঠানকে স্থান বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে।
তিনি উল্লেখ করেন, পার্কটি যুবদের কর্মসংস্থানের হাবে পরিণত হয়েছে এবং তরুণ প্রজন্মের মধ্যে উদ্দীপনা সৃষ্টি করেছে।
সফটওয়্যার ডেভেলপমেন্ট, বিখ্যাত কোম্পানির সাইট রক্ষণাবেক্ষণ, বিদেশ থেকে চাহিদা অনুযায়ি ফাইলের কাজ, পার্কে কর্ম পরিবেশ তৈরিসহ বিভিন্ন কাজে বর্তমানে প্রায় ৪০০ যুবক নিয়োজিত রয়েছে।
ফ্লিট বাংলাদেশে কর্মরত আফরোজা আরবি তুসি বলেন, তিনি রাজশাহীতে পরিবারের সঙ্গে বসবাস করে ক্যারিয়ার গড়ার সুযোগ পেয়েছেন।
তিনি বৃহস্পতিবার বাসস-এর সাথে আলাপকালে বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয় জীবনে আমি আমার ক্যারিয়ার উন্নয়ন নিয়ে খুব উদ্বিগ্ন থাকতাম এবং ক্যারিয়ারের উন্নয়নের জন্য ঢাকায় যাওয়ার কথা ভাবতাম।’
তিনি আরও বলেন, বঙ্গবন্ধু হাই-টেক পার্ক তার জন্য আশীর্বাদ হয়ে উঠেছে, কারণ এটি আইটি সেক্টরে আগ্রহী অনেক যুবকের ক্যারিয়ার গড়ার সুযোগ সৃষ্টি করেছে।
‘টেক রাজশাহী’ মোবাইল গেমস ও অন্যান্য সফটওয়্যার সংক্রান্ত সেবা পৌঁছে দিতে কাজ করছে।
সংস্থার প্রধান নির্বাহী মাহফুজুর রহমান জানান, তাদের ১৪২ জন কর্মী রয়েছে এবং তাদের মধ্যে ২৮ জন হাইটেক পার্কে কাজ করছেন।
তিনি বলেন, পার্কের অবস্থানের পাশাপাশি আধুনিক সুযোগ-সুবিধার জন্য তাদের প্রতিষ্ঠানের ব্র্যান্ড ভ্যালু বাড়িয়ে দিয়েছে।
‘এমডি ইনফো’র প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মনজুরুল মোর্শেদ বলেন, তারা জয় সিলিকন টাওয়ার এবং শেখ কামাল আইটি ট্রেনিং অ্যান্ড ইনকিউবেশন ভবনে জায়গা পেয়েছেন।
তাদের প্রায় এক হাজার কর্মী রয়েছে এবং তাদের মধ্যে ১৫০ জন অফিসে কাজ করছেন, কারণ পঁচানব্বই শতাংশ কর্মী রাজশাহীর বাসিন্দা।
প্রকল্প পরিচালক প্রকৌশলী ফজলুল হক জানান, এলাকাভিত্তিক উন্নয়ন নিশ্চিতের মাধ্যমে জ্ঞানভিত্তিক তথ্যপ্রযুক্তি শিল্প গড়ে তোলার লক্ষ্যে প্রায় ৩৩৫ কোটি ৫১ লাখ টাকা ব্যয়ে পদ্মা নদীর তীরে রাজশাহী মহানগর সংলগ্ন নবীনগর এলাকায় প্রায় ৩১ একর জমির ওপর পার্কটি নির্মাণ করা হয়েছে।
অবকাঠামো উন্নয়ন কাজের মধ্যে রয়েছে- ভূমি উন্নয়ন, ২ লাখ ৭০ হাজার বর্গফুট আয়তনের একটি দশ তলা সিলিকন টাওয়ার, একটি সাবস্টেশন ভবন, অভ্যন্তরীণ রাস্তা ও ড্রেন, সীমানা প্রাচীর এবং উচ্চ গতিসম্পন্ন ইন্টারনেট।
৬২ হাজার বর্গফুটের আইটি ইনকিউবেশন সেন্টারে একটি অত্যাধুনিক অফিস ভবনসহ বহুমুখী প্রশিক্ষণ সুবিধা, উচ্চ-মানের স্টার্ট আপ, বৃষ্টির পানি সংগ্রহ ও নবায়নযোগ্য জ্বালানি উৎসের ব্যবস্থ্ ারয়েছে।
এদিকে, গত ১৪ জানুয়ারি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব হাইটেক পার্কে ১৭২ আসনের স্টার সিনেফ্লেক্স চালু হয়েছে। সিনেমা দেখানোর পাশাপাশি, সিনেপ্লেক্সটি সংশ্লিষ্ট সংস্থার দ্বারা প্রকল্প প্রশিক্ষণ এবং অডিও-ভিজ্যুয়ালের জন্য ব্যবহার করা হবে।
প্রকৌশলী ফজলুল হক বলেন, সিনেপ্লেক্সে একটি অডিটোরিয়ামের পাশাপাশি দেশ-বিদেশের বিনিয়োগকারীদের ভিডিও ডকুমেন্টারি দেখানোর ব্যবস্থা রয়েছে।
তিনি বলেন, সিলিকন টাওয়ারে দুটি বেজমেন্ট পার্কিং ফ্লোর, উচ্চমানের প্রশিক্ষণ, সেমিনার ও কনফারেন্স রুম, ভাড়া দেওয়ার জন্য অফিস স্পেস, একটি লাউঞ্জ ও বিনোদন এরিয়াসহ বহুমুখী সুবিধা থাকবে। এখানে দেশ-বিদেশের বিনিয়োগকারীদের আকৃষ্ট করার জন্য সব ধরনের ব্যবসার পরিবেশ নিশ্চিত করা হয়েছে।
সামগ্রিকভাবে পার্কটি দেশি-বিদেশি বিনিয়োগকারীদের আকৃষ্ট করার মাধ্যমে ব্যবসার পরিবেশ সৃষ্টির পাশাপাশি রাজশাহীতে একটি জ্ঞানভিত্তিক আইটি শিল্প প্রতিষ্ঠায় প্রভূত অবদান রাখবে।
বিশেষজ্ঞরা আশা করছেন, কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টির পাশাপাশি নতুন তথ্যপ্রযুক্তি উদ্যোক্তাদের জন্য সুযোগ সৃষ্টির মাধ্যমে এটি জাতীয় অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।