শিরোনাম
ঢাকা, ২৭ ফেব্রুয়ারী, ২০২৩ (বাসস) : সরকারের খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির আওতায় খোলাবাজারে পণ্য বিক্রি’র (ওএমএস) পণ্যও টিসিবির মতো কার্ডের মাধ্যমে দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। আজ সোমবার মন্ত্রিসভার বৈঠকে অনির্ধারিত আলোচনায় প্রধানমন্ত্রী এই নির্দেশ দেন। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত মন্ত্রিসভার বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
পরে বিকেলে সচিবালয়ে সংবাদ সম্মেলন করে প্রধানমন্ত্রীর ওই নির্দেশসহ মন্ত্রিসভার সিদ্ধান্ত জানান মন্ত্রিপরিষদ সচিব মো. মাহবুব হোসেন। মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, চলমান ওএমএস কার্যক্রমে মাঝেমধ্যে ব্যবস্থাপনায় কিছু ঘাটতি সরকারের নজরে এসেছে। এজন্য প্রধানমন্ত্রী ব্যবস্থাপনার এই ঘাটতি উন্নতি করতে বলেছেন এবং টিসিবির পণ্যের মতো ওএমএস’র পণ্যও কার্ডের মাধ্যমে দেওয়ার নির্দেশনা দিয়েছেন। কার্ড কীভাবে ও কাদের দেওয়া হবে, তা এখন সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে বসে ঠিক করা হবে বলে জানান মন্ত্রিপরিষদ সচিব। আর কার্ড না হওয়া পর্যন্ত, এখনকার মতোই ওএমএস কার্যক্রম চলবে বলেও জানান তিনি।
মাহবুব হোসেন বলেন, মন্ত্রিসভার বৈঠকে বিভিন্ন দেশের নাগরিকত্ব পাওয়া বাংলাদেশীদের দ্বৈত নাগরিকত্ব সুবিধা প্রদানের বিষয়ে এস.আর.ও জারির প্রস্তাব অনুমোদন করা হয়েছে। তিনি বলেন, বাংলাদেশীদের জন্য দ্বৈত নাগরিকত্বের সুযোগ আরও বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। নতুন সিদ্ধান্ত হলো, বিশ্বের আরও ৪৪ দেশের নাগরিকত্ব পেলেও বাংলাদেশিরা দেশেও নাগরিত্ব হারাবেন না। অর্থাৎ তারা দ্বৈত নাগরিক হওয়ার সুযোগ পাবেন। বর্তমানে শুধু আমেরিকা ও ইউরোপের দেশগুলোসহ ৫৭ টি দেশের নাগরিক হলে, দ্বৈত নাগরিত্বের সুযোগ পান বাংলাদেশীরা। মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, বিদ্যমান ৫৭টি দেশের বাইরেও বিভিন্ন দেশে গিয়ে সেখানকার নাগরিকত্ব নিয়েছেন, এমন বাংলাদেশিরা দেশের নাগরিকত্বও অব্যাহত রাখতে চান। এই বিষয়টি বিবেচনায় রেখে, আরও ৪৪টি দেশকে অন্তভুর্ক্ত করা হয়েছে। সব মিলিয়ে এখন এই সুবিধার আওতায় আসছে ১০১টি দেশ। অর্থাৎ এই ১০১টি দেশে নাগরিত্ব গ্রহণ করলেও কোনো বাংলাদেশী চাইলে দেশেও নাগরিত্ব পাবেন। নতুন ৪৪টি দেশের মধ্যে রয়েছে- আফ্রিকা মহাদেশের ১৯টি দেশ মিশর, দক্ষিণ আফ্রিকা, কেনিয়া, আলজেরিয়া, সুদান, মরক্বো, ঘানা, রুয়ান্ডা, বুরুন্ডি, তিউনিশিয়া, সিয়েরা লিয়ন, লিবিয়া, কঙ্গো, লাইবেরিয়া, মধ্য আফ্রিকান প্রজাতন্ত্র, ইরিত্রিয়া, গাম্বিয়া, বতসোয়ানা ও মরিশাস; দক্ষিণ আমেরিকা মহাদেশের ১২টি দেশ ব্রাজিল, বলিভিয়া, কলম্বিয়া, ভেনিজুয়েলা, সুরনাম, আর্জেন্টিনা, পেরু, ইকুয়েডর, চিলি, উরুগুয়ে ও গায়ানা; ক্যারিবীয় অঞ্চলের ১২ টি দেশ কিউবা, ডোমিনিকান প্রজাতন্ত্র, হাইতি, বাহামা, জ্যামাইকা, ত্রিনিদাদ ও টোবাগো, ডমিনিকা, সেন্ট লুসিয়া, বার্বাডোস,সেন্ট ভিনসেন্ট, গ্রানাডাইন, গ্রেনাডা, সেন্ট কিটস ও নেভিস এবং ওশেনিয়া মহাদেশের একটি দেশ ফিজি।
মাহবুব হোসেন বলেন, মন্ত্রিসভার বৈঠকে ‘বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় আইন (সংশোধন) আইন,২০২৩’ এর খসড়া অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। এর মাধ্যমে মূলত ওই বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য, সহ উপাচার্য ও কোষাধ্যক্ষের মেয়াদ এক বছর বাড়িয়ে চার বছর করার প্রস্তাব করা হয়েছে। এ বিষয়ে তিনি বলেন, অপরাপর সব বিশ্ববিদ্যালয়ে উপাচার্য, উপ-উপাচার্য ও কোষাধ্যক্ষের মেয়াদ চার বছর । কিন্তু বিদ্যমান আইনে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে (বিএসএমইউ) এসব পদের মেয়াদ তিন বছর। এটিকেও অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো চার বছর করার প্রস্তাব করা হয়েছে। তিনি বলেন, এ ছাড়া বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেটের সদস্যসংখ্যা একটি বাড়িয়ে ৩১ জন করা হয়েছে। এর মধ্যে স্পিকার কর্তৃক মনোনীত জাতীয় সংসদের তিনজন সদস্যের মধ্যে একজন নারী সদস্য হতে হবে। এর আগে শুধু স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক সিন্ডিকেট সদস্য ছিলেন। এখন স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালকও এই সিন্ডিকেটের সদস্য হবেন।
মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, বৈঠকে ‘মুজিব জলবায়ু সমৃদ্ধি পরিকল্পনা ২০২২-২০৪১’ এর খসড়াসহ আরও একাধিক প্রস্তাব অনুমোদন দেওয়া হয়। ডেল্টা প্ল্যান, ২০৪১ সাল নাগাদ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার স্মার্ট বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠা ও এসডিজি অর্জনে জলবায়ু ইস্যু বিবেচনায় নেওয়ার জন্য এই পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। তিনি বলেন, এই পরিকল্পনা বাস্তবায়নে ৮০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার লাগবে। বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের বাজেট থেকে ব্যয় করা হবে। তবে ২০৪১ সালে দেশের জিডিপিতে ৫০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার যোগ হবে। এই পরিকল্পনা ৫ বছর পর পর রিভিউ করা হবে।
মাহবুব হোসেন বলেন, মন্ত্রিসভার বৈঠকে “ইমপ্লিমেন্টিং এগ্রিমেন্ট বিটুইন কাতার আর্মড ফোর্সেস অ্যান্ড বাংলাদেশ আর্মড ফোর্সেস কনসার্নিং ডেপুটেশন ( সেকেন্ডমেন্ট) অব অফিসার্স অ্যান্ড মিলিটারী পার্সোনেল ফ্রম বাংলাদেশ আর্মড ফোর্সেস টু কাতার আর্মড ফোর্সেস” শীর্ষক চুক্তির খসড়া অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। তিনি বলেন, এই চুক্তি চূড়ান্ত অনুমোদন পেলে কুয়েতের মতো কাতারারেও এক হাজার ১২৯ জন সশস্ত্র বাহিনীর সদস্য কাজ করবে। তারা ডেপুটেশনে লিয়নে কাজ করবে।