শিরোনাম
ময়মনসিংহ, ১১ মার্চ, ২০২৩ (বাসস) : আওয়ামী লীগ দেশকে ধ্বংস করেছে বলে মিথ্যাচার ছড়ানোর জন্য বিএনপি নেতাদের সমালোচনা করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, মিথ্যা বলা, দুর্নীতি ও লুটপাট করা তাদের অভ্যাস।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আজ বিকেলে ময়মনসিংহ সার্কিট হাউজ মাঠে ময়মনসিংহ জেলা ও মহানগর আওয়ামী লীগ আয়োজিত মহাসমাবেশে দেয়া ভাষণে এ কথা বলেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, “আমি শুনি, বিএনপির কোন এক নেতা আছে সারাদিন মাইক লাগিয়ে বসে থাকেন। বাংলাদেশটাকে নাকি আমরা ধ্বংস করে দিয়েছি।”
তিনি ময়মনসিংহবাসীর উদ্দেশে প্রশ্ন করেন, ময়মনসিংহে এক যোগে ১০৩টি বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্পের উদ্বোধন কি বাংলাদেশ ধ্বংসের নমূনা?
এরআগে সার্কিট হাউজ মাঠ থেকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এক যোগে ১০৩টি বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্পের উদ্বোধন ও ভিত্তিপ্রস্থর স্থাপন করেন। এরমধ্যে প্রায় ৫৭০ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মাণ সমাপ্ত ৭৩টি উন্নয়ন প্রকল্প উদ্বোধন এবং প্রায় ২ হাজার ৭৬২ কোটি টাকা ব্যয়ে ৩০টি উন্নয়ন প্রকল্পের নির্মাণ কাজের ভিত্তি প্রস্তর স্থাপন করেন তিনি।
প্রধানমন্ত্রী এসব উন্নয়ন প্রকল্পকে স্বাধীনতার মাসে ময়মনসিংহবাসীর জন্য উপহার হিসেবে উল্লেখ করে বিভাগীয় শহর ময়মনসিংহে একটি মেডিকেল বিশ^বিদ্যালয় এবং একটি প্রকৌশল বিশ^বিদ্যালয় করা হবে বলেও জানান।
আজকের উদ্বোধন হওয়া ৭৩টি প্রকল্প এবং ভিত্তিপ্রস্থর স্থাপন করা ১০৩টি প্রকল্প কি ধ্বংসের নমুনা না তাদের কাজের ময়মনসিংহবাসীর কাছে সে প্রশ্ন তোলেন তিনি।
‘মিথ্যা বলাটাই তাদের পেশা’ এমন অভিমত ব্যক্ত করে তিনি বলেন, খালেদা জিয়া এতিমের অর্থ আত্মসাত এবং দুর্নীতির দায়ে সাজাপ্রাপ্ত আসামী। আর তার ছেলে ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা এবং ১০ ট্রাক অস্ত্র মামলা এবং দুর্নীতির দায়ে সাজাপ্রাপ্ত। যেখানে তারেক ও এবং কোকোর দুর্নীতি আমেরিকার গোয়েন্দা সংস্থার তদন্তে বেরিয়েছে। এখন দেশ থেকে ভেগে (পলাতক) আছে আর তাঁর সরকারের করে দেয়া ডিজিটাল বাংলাদেশের সুযোগ নিয়ে দূরে বসে রাজনীতিও করে। তাঁর সরকারের দেওয়া বিদ্যুৎ ব্যবহার করে ‘তাঁরা কিছুই করেন নাই’ বলে অপবাদ দিয়ে যাচ্ছে।
তিনি বলেন, আসলে লুটপাট, চুরি, দুর্নীতি এটাই তাদের স্বভাব। লুটপাট, সন্ত্রাস, জঙ্গিবাদ, বাংলা ভাই এবং বাংলাদেশকে পাঁচ পাঁচ বার দুর্নীতি চ্যাম্পিয়ন করা এবং আন্তর্জাতিকভাবে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি নষ্ট করে দেয় তারা।
তাঁর সরকার বিদ্যুৎ উৎপাদন বাড়ায় আর বিএনপি ক্ষমতায় এসে তা কমিয়ে ফেলে, স্বাক্ষরতার হার কমিয়ে ফেলে উল্লেখ করে আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, ’৯৬ সালে ক্ষমতায় এসে তাঁর সরকার ১৬শ’ মেগাওয়াট থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদন বাড়িয়ে ৪ হাজার ৩শ’ মেগাওয়াট করেছিল। স্বাক্ষরতার হারকে ৬৫ ভাগে উন্নীত করেছিল যা পরবর্তী বিএনপি জামাত সরকার না বাড়িেেয় উল্টো কমিয়ে ফেলে। আজকে সেখান থেকে তাঁর সরকার দেশকে টেনে তুলে ঘরে ঘরে বিদ্যুৎ পৌঁছে দিয়ে ২৪ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদনের সক্ষমতা অর্জন করেছে এবং স্বাক্ষরতার হারও ৭৫ দশমিক ২ ভাগে উন্নীত করেছে।
বিদ্যুৎ উৎপাদন হ্রাসে চুরি ও দুর্নীতি এবং স্বাক্ষরতার হার কমানোর পেছনে বিএনপি নেতৃত্বের শিক্ষাগত যোগ্যতাকে দায়ী করেন প্রধানমন্ত্রী।
তিনি বলেন, জিয়াউর রহমান ছিল ম্যাট্রিক পাশ, খালেদা জিয়া ম্যাট্রিক ফেল, আর তাদের ছেলে কয়েক স্কুল থেকে বহিস্কৃত হয়ে কোন এক অখ্যাত জায়গা থেকে একটি সার্টিফিকেট জোগাড় করেছে বলে শোনা যায়। কিন্তু কি পাশ করেছে তা কেউ বলতে পাওে না। তবে, বোমা মারা, গ্রেনেড হামলা, লুটপাট, মানি লন্ডারিং, টাকা চুরি, দুর্নীতি, এতিমের অর্থ আত্মসাতে তারা সিদ্ধহস্ত। সেজন্য বাংলাদেশের মানুষ লেখাপড়া শিখে উন্নত হবে এটা তারা চায় না।
আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের, প্রেসিডিয়াম সদস্য বেগম মতিয়া চৌধুরী, কৃষিমন্ত্রী মোহাম্মদ আবদুর রাজ্জাক ও আবদুর রহমান এবং যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল- আলম হানিফ, আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম ও শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি, সাংগঠনিক সম্পাদক শফিউল আলম চৌধুরী নাদেল ও মির্জা আজম প্রমুখ সমাবেশে বক্তব্য রাখেন। এতে সভাপতিত্ব করেন আওয়ামী লীগের ময়মনসিংহ জেলা শাখার সভাপতি এহতেশামুল আলম।
সর্বশেষ ২০১৮ সালের ২ নভেম্বরের পর এদিন আবারো ময়মনসিংহ আসেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তাঁর আগমন উপলক্ষে গোটা ময়মনসিংহ বিভাগে যেন সাজ সাজ রব পড়ে যায়। উৎসবের নগরীতে রূপ নেয় নতুন বিভাগীয় এ শহরটি। শহরের গুরুত্বপূর্ণ স্থান, মোড়গুলোকে সাজানো হয় নানা রঙের সাজে। তোরণ নির্মাণের পাশাপাশি ব্যানার-ফেস্টুনে ছেয়ে গেছে গোটা শহর। সকাল থেকে জনসভা স্থল সার্কিট হাউজ মাঠ অভিমুখে জনতার ঢল নামে। বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে জনসভা স্থলটি জনসমুদ্রে রূপ নেয়।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, তাঁর চাওয়া পাওয়ার কিছু নেই। বাবা-মা-ভাই সব হারিয়েছেন, ১৯৮১ সালে যেদিন বাংলাদেশে ফিরেছিলেন সেদিনও তিনি জানতেন না কোথায় থাকবেন, কিভাবে চলবেন তা চিন্তা করেন নি। তিনি বলেন, শুধু একটা জিনিষ চিন্তা করেছি এই দেশ আমার বাবা স্বাধীন করে দিয়ে গেছেন। কাজেই এদেশের মানুষের ভাগ্য গড়ে তাদের দারিদ্রের হাত থেকে মুক্তি দিতে হবে। গৃহহীণ মানুষকে ঘর দিতে হবে, তাদের শিক্ষা ও চিকিৎসার ব্যবস্থা করতে হবে। মানুষকে উন্নত জীবন দেয়ার মাধ্যমে স্বাধীনতার সুফল প্রত্যেক ঘরে পৌঁছে দিতে হবে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, এই স্বাধীনতা লাখো শহিদের রক্তের বিনিময়ে আমরা পেয়েছি। এই স্বাধীনতাকে কোনমতে ব্যর্থ হতে দেয়া যায়না। তিনি বলেন, দুর্ভাগ্যের বিষয় আমাদের যারা তথাকথিত বিরোধী দল আছে, তারা মিথ্যা বলে এই স্বাধীনতার সুফল ব্যর্থ করতে চায়। তারা তা পারবে না ইনশাল্লাহ। শেখ হাসিনা বলেন, বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে, এগিয়ে যাবে। ২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ে তুলবো। ডেল্টা প্লান বাস্তবায়নের মাধ্যমে ২১০০ সাল নাগাদ এই ভুখন্ডকে আরো উন্নত করবো। সেই ওয়াদা দিয়ে গেলাম। তিনি বলেন, ২০৪১ সালের জন্য আমাদের জনগোষ্ঠী স্মার্ট জনগোষ্ঠী হিসেবে গড়ে ওঠবে। আমাদের অর্থনীতি হবে স্মার্ট, আমাদের কৃষি হবে স্মার্ট, আমাদের স্বাস্থ্য হবে স্মার্ট, তৃণমূল পর্যন্ত বাংলাদেশের প্রতিটি মানুষের উন্নত জীবন হবে। প্রত্যেকটা গ্রামের মানুষ শহরের নাগরিক সুবিধা পাবে।
ময়মনসিংহ অঞ্চলে বিএনপি-জামাত সরকারের সময়কার সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদি তৎপরতার কথা স্মরণ করিয়ে দিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, ২০০১ সালে বিএনপি-জামাত সরকারের থাকার সময় তাদের অত্যাচারে মানুষ অতিষ্ঠ ছিল। ময়মনসিংহে চারটি সিনেমা হলে বোমা হামলা হলো এবং অনেক মানুষ তাতে মৃত্যুবরণ করে। প্রতিনিয়ত সারাদেশে বোমা হামলা, গ্রেনেড হামলা, সন্ত্রাস, জঙ্গিবাদ, দুর্নীতি, লুটপাট-এটাই ছিল ঐ বিএনপি-জামাত জোটের কাজ। সে সময় গফরগাঁওয়ে একজন আওয়ামী লীগ নেতার বাড়ি দখল করে রাতারাতি পুকুর কেটে চারদিকে কলাগাছের চারাও পুঁতে দেয়। তিনি সরেজমিন পরিদর্শনে গিয়ে একটি চুলা ও পাকের ঘর থাকার চিহ্ন দেখতে পান। ঐটা না থাকলে সেটা যে বসত বাড়ি ছিল, তা বোঝার কোন উপায় ছিল না। তিনি বলেন, ওরা মানুষের সম্পত্তি দখল করে আর আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসলে যাদের ঘর নাই, বাড়ি নাই মাথা গোঁজার ঠাঁই নাই, রাস্তার পাশে পড়ে থাকে তাদেরকে ঘর-বাড়ি বানিয়ে জীবন-জীবকার ব্যবস্থা করে দিচ্ছে। ইনশাল্লাহ, শেখ মুজিবের বাংলায় আর একটি মানুষও আর ভূমিহীন বা গৃহহীন থাকবে না। তাঁর সরকার ৩৫ লাখ মানুষকে ঘর করে দিয়েছে, আর অল্প কিছুদিনের মধ্যে আরো ৪০ লাখ মানুষকে ঘর করে দেবে। ইতোমধ্যে বিএনপি সরকারের রেখে যাওয়া ৪১ শতাংশ দারিদ্রের হারকে তাঁর সরকার ২০ ভাগে নামিয়ে এনেছে।
জিয়াউর রহমান অবৈধভাবে সংবিধান লঙ্ঘন করে ক্ষমতা দখল করে উল্লেখ করে তিনি বলেন, এই ক্ষমতায় বসে ক্ষমতার উচ্ছিষ্ট বিলিয়ে দল (বিএনপি) গঠন করে। সেই দলতো কেবল সন্ত্রাস, লুটপাট, মানুষ হত্যা আর অত্যাচার-নির্যাতন করতে পারে। ওদের ক্ষমতায় থাকার মানেই হচ্ছে মানুষের ওপর নির্যাতন করা, শোষণ ও বঞ্চনা করা। আর আওয়ামী লীগ মানুষকে উপহার দেয় উন্নয়ন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, করোনাকালে মানুষকে আমরা বিনে পয়সায় করোনার টিকা দিয়েছি। তা এখনও দিয়ে যাচ্ছি। ময়মনসিংহ চমৎকার একটি বিভাগ, যেখানে শিক্ষা-স্বাস্থ্য-কৃষি-খাদ্য উৎপাদন সবকিছুতেই এগিয়ে যাবে। আমরা ময়মনসিংহ বিভাগ করেছি। যদি করোনা না হত, ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধ না থাকত তাহলে হলে এই বিভাগের কার্যক্রম আরও উন্নত হত। প্রধানমন্ত্রী এ সময় তাঁর নিজের সব অনাবাদি জমিকে চাষের আওতায় এনেছেন উল্লেখ করে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে চলমান বিশ^মন্দার প্রেক্ষাপটে দেশের প্রতি ইঞ্চি জমিকে চাষাবাদের আওতায় আনার মাধ্যমে সার্বিক উৎপাদন বাড়ানোর জন্য তাঁর আহবান পুণর্ব্যক্ত করেন। তিনি বলেন, আমরা বয়স্ক ভাতা, বিধবা ভাতা, প্রতিবন্ধী ভাতার ব্যবস্থা করেছি। মানুষ এখন দেশে শান্তিতে বসবাস করছে। এখন আমাদের ২১ লাখ মেট্রিক টন খাদ্য মজুত আছে এবং বর্তমানে দেশে কোনো খাদ্য ঘাটতি নেই। এক কোটি মানুষকে আমরা মাত্র ৩০ টাকা কেজিতে চাল কিনতে পারার সুযোগ করে দিয়েছি। প্রায় ৫০ লাখ মানুষকে ১৫ টাকা কেজিতে চাল দিচ্ছি। আবার যাদের একেবারে সামর্থ্য নেই তাদের বিনামূল্যে চাল দেওয়া হচ্ছে।
শেখ হাসিনা বলেন, ১শ’টি অর্থনৈতিক অঞ্চল করে দিচ্ছি। সেখানে যুব সমাজের কর্মসংস্থানের সুযোগ হবে। বিনা জামানতে যুব সমাজকে ঋণ দেওয়া হচ্ছে। যাতে করে তারা অন্যদের কর্মসংস্থানের সুযোগ করে নিতে পারে। নিজেরা উদ্যোক্তা হিসেবে নিজেদের গড়ে তুলতে পারে।