শিরোনাম
ঢাকা, ১২ মার্চ, ২০২৩ (বাসস) : বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি বিদেশী বিনিয়োগকারিদের বাংলাদেশের বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চলে বিনিয়োগ নিয়ে এগিয়ে আসার আহ্বান জানিয়েছেন।
তিনি বলেন,‘বাংলাদেশে বিনিয়োগকারিরা যথেষ্ট নিরাপদ এবং বিনিয়োগের সুবিধার্থে দ্বৈত কর পরিহারের জন্য আমরা একাধিক চুক্তিতে স্বাক্ষর করেছি।’ তিনি বিদেশী বিনিয়োগকারিদের উদ্দেশ্যে বলেন,‘ প্রিয় বন্ধুরা, আপনারা এই ট্রেন মিস করেন না।’
রাজধানীর আগারগাঁও বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে বাংলাদেশ শিল্প ও বণিক সমিতি ফেডারেশন (এফবিসিসিআই) আয়োজিত বাংলাদেশ বিজনেস সামিটের দ্বিতীয় দিন আজ রোববার একটি প্লেনারি অধিবেশনে বিশেষ অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন।
‘বাংলাদেশ: প্রধান খাতসমূহে বিনিয়োগকারিদের ১০০ বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগের সুযোগ’ শীর্ষক অধিবেশনে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ বিষয়ক উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান।
অনুষ্ঠানে পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম ও যুক্তরাজ্যের ইন্দো-প্যাসিফিক প্রতিমন্ত্রী এ্যান-মেরি ট্রিভেলিয়ান সম্মানিত অতিথি হিসেবে বক্তব্য দেন ।
প্রধানমন্ত্রীর মূখ্যসচিব তোফাজ্জল হোসেন মিয়ার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে প্যানেল আলোচক ছিলেন ইয়ংওয়ান কর্পোশেনের চেয়ারম্যান ও সিইও কিয়াং সান, এফবিসিসিআইয়ের সাবেক সভাপতি একে আজাদ, কোট্রার মহাপরিচালক জং অন কিম, যুক্তরাজ্যের সিডব্লিউইআইসির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা রোজলি গ্লেজব্রুক প্রমুখ। এফবিসিসিআই সভাপতি মো. জসীম উদ্দিন অধিবেশনটি সঞ্চালনা করেন।
বিনিয়োগের ক্ষেত্রে বিদ্যমান সুবিধাদি উল্লেখ করে টিপু মুনশি বলেন, বিনিয়োগবান্ধব পরিবেশের উন্নয়নের লক্ষ্যে বাংলাদেশ ব্যাংক কার্যকর নীতি প্রণয়নের পাশাপাশি জাতীয় রাজস্ব বোর্ড সিঙ্গেল ইউন্ডো সেবা চালু করেছে। বিডা ওয়ান স্টপ সার্ভিস এবং কোম্পানি নিবন্ধন পরিদপ্তরে অনলাইন সেবা চালু করা হয়েছে। তিনি বলেন, বাংলাদেশে ১০০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার বিনিয়োগের চমৎকার সুযোগ রয়েছে।
বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, সরকার এখন ইউরোশিয়া ও আফ্রিকার দেশগুলোতে রপ্তানি বাজার সম্প্রসারণকে প্রাধিকার দিচ্ছে এবং দেশে বিনিয়োগ উপযোগি পরিবেশের উন্নয়নে সব ধরনের সহযোগিতা প্রদানে প্রস্তুত।
তিনি বলেন, তৈরি পোশাক বাংলাদেশের প্রধান রপ্তানি পণ্য হলেও এখানে পাট ও পাটজাত পণ্য, চামড়া ও চামড়াজাত পণ্য, হালকা প্রকৌশল, কৃষি প্রক্রিয়াকরণ ও প্লাস্টিক পণ্যের বিপুল সম্ভাবনা রয়েছে।
টিপু মুনশি বলেন, সরকার ইতিমধ্যে ডিজিটাল বিজনেস আইডেনটিফিকেশন (ডিবিআই) নাম্বার প্রবর্তনের মাধ্যমে ই-কমার্স খাতে শৃঙ্খলা নিশ্চিত করেছে এবং ই-কমার্স ব্যবসায় বিভিন্ন ধরনের অনিয়ম ও জালিয়াতি রোধ করার প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।
মূল প্রবন্ধে প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান বলেন, বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ বাজার অনেক বড়। বিদেশী বিনিয়োগকারিরা এর সুফল যেমন পাবেন, পাশাপাশি চীন ও ভারতের মতো দুটি বড় বাজারে প্রবেশের সুযোগ রয়েছে। এর সাথে অন্যান্য আঞ্চলিক বাজার তো রয়েছে।
সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে প্রধানমন্ত্রীর জিরো টলারেন্স অবস্থানের কথা উল্লেখ করে সালমান বলেন, বাংলাদেশ জঙ্গিবাদ নিয়ন্ত্রণ করতে সক্ষম হয়েছে যদিও পার্শ্ববর্তী অনেক দেশে জঙ্গিবাদের হুমকি রয়ে গেছে। দুর্নীতি দমনে সরকারের সংশ্লিষ্ট দপ্তর অত্যন্ত তৎপর উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘সকল পর্যায়ে দুর্নীতি রোধ করতে আমাদের প্রধানমন্ত্রী অত্যন্ত দৃঢ় প্রতিজ্ঞ।’
চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় প্রস্তুতি গ্রহনের উপর গুরুত্বারোপ করে তিনি বলেন, এই চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় আমরা একাডেমি ও শিল্প-কারখানার মধ্যে সমন্বয় করে শিক্ষা কারিকুলাম প্রণয়ন করছি। তিনি অবকাঠামো খাতে আরও পিপিপি প্রকল্প গ্রহণের উপর জোর দেন।
এক প্রশ্নের উত্তরে উপদেষ্টা বলেন, জ্বালানি তেলের মূল্য হ্রাসের লক্ষ্যে সরকার কাতারসহ অন্যান্য দেশের সঙ্গে দীর্ঘমেয়াদি জ্বালানি চুক্তি করতে যাচ্ছে।
পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম বলেন, বাংলাদেশের মেগা ও অন্যান্য যুগান্তকারি প্রকল্পের সুফল বিবিচেনা করলে বিদেশী বিনিয়োগকারিরা এখানে বিনিয়োগ করে আগামী দিনে ব্যবসায় দ্রুত প্রবৃদ্ধির গতিপথ তৈরি করতে সক্ষম হবেন।
তিনি বলেন,বাংলাদেশে এখন সবচেয়ে বেশি সংখ্যক সবুজ কারখানা রয়েছে এবং আমাদের পোশাক অত্যন্ত মানসম্পন্ন, যা বিশ্বব্যাপী স্বীকৃত।
পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘প্রাচ্য হোক বা পশ্চিম, আমি গিয়ে দাবি করব, বাংলাদেশ সেরা।’
যুক্তরাজ্যোর ইন্দো-প্যাসিফিক প্রতিমন্ত্রী এ্যান-মেরি ট্রিভেলিয়ান বলেন, উভয় দেশের মধ্যে একটি ঐতিহাসিক এবং গভীর সম্পর্ক রয়েছে যেখানে বাংলাদেশের অর্থনীতিতে যুক্তরাজ্যের ব্যবসায়ীরা খুব সক্রিয় এবং গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে।
তিনি বলেন,বাংলাদেশের উচ্চশিক্ষা ও আর্থিক খাতে যুক্তরাজ্যের আরও বিনিয়োগ আসার সম্ভাবনা রয়েছে।
প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব তোফাজ্জল হোসেন মিয়া বলেন, এই সামিট বিনিয়োগকারিদের বিনিয়োগ স্থান খুঁজে পেতে এবং ভবিষ্যতে বিনিয়োগের সম্ভাবনা কাজে লাগাতে একটি চমৎকার সুযোগ।
তিনি বলেন, ডিজিটাল অর্থনীতি বাংলাদেশের জন্য একটি উদীয়মান খাত এবং এখাতে বিনিয়োগের জন্য অনুকূল পরিবেশ তৈরি করা হয়েছে।