শিরোনাম
ঢাকা, ১২ মার্চ, ২০২৩ (বাসস) : জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটি (একনেক) আকস্মিক বন্যা প্রবণ জনগোষ্ঠী ও নদীর তীরবর্তী মানুষের বন্যা ঝুঁকি কমাতে আজ ৪ হাজার ৩২৩ কোটি ৪৭ লাখ টাকার “অভিযোজন ও ঝুঁকি হ্রাসের জন্য টেকসই অবকাঠামো” (আরআইভিইআর) প্রকল্পে অনুমোদন দিয়েছে। রাজধানীর শেরেবাংলা নগরে এনইসি সম্মেলন কক্ষে একনেক চেয়ারপারসন ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত একনেকের বৈঠকে এ অনুমোদন দেওয়া হয়।
বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের ব্রিফিংকালে পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী ড. শামসুল আলম জানান, দিনের বৈঠকে মোট আটটি প্রকল্পের অনুমোদন দেওয়া হয়েছে, যার মোট আনুমানিক ব্যয় ১২,১৬৭.১৫ কোটি টাকা। তিনি বলেন, মোট প্রকল্প ব্যয়ের মধ্যে, বাংলাদেশ সরকারের অংশ থেকে ৩,০৯৭.৯১ কোটি টাকা, সংশ্লিষ্ট সংস্থার নিজস্ব তহবিল থেকে ১৫৬.৪৭ কোটি টাকা এবং প্রকল্প সহায়তা থেকে সিংহভাগ ৮,৯১২.৭৭ কোটি টাকা আসবে।
ব্রিফিংয়ে পরিকল্পনা বিভাগের সচিব সত্যজিৎ কর্মকার, পরিকল্পনা কমিশনের সদস্যরা এবং সংশ্লিষ্ট সচিবরা উপস্থিত ছিলেন।
অনুমোদিত ৮টি প্রকল্পের মধ্যে ৬টি নতুন এবং ২টি সংশোধিত প্রকল্প। এছাড়া বৈঠকে ব্যয় না বাড়িয়ে চারটি প্রকল্পের মেয়াদ বাড়ানোরও অনুমোদন দেওয়া হয়।
স্থানীয় সরকার বিভাগের অধীনে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল বিভাগ (এলজিইডি) ২০২৮ সালের জুন মাস নাগাদ নদী প্রকল্পটি বাস্তবায়িত করবে। প্রকল্পটিতে মোট ব্যয় হবে ৪ হাজার ৩২৩ দশমিক ৪৭ কোটি টাকা। এর মধ্যে ৪৮ দশমিক ৪৭ কোটি টাকা আসবে বাংলাদেশ সরকারের কাছ থেকে। প্রকল্পে সহায়তা হিসেবে অবশিষ্ট ৪ হাজার ২৭৫ কোটি টাকা দেবে বিশ্বব্যাংকের আইডিএ।
প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে, এটি বন্যা-প্রবণ এলাকায় দুর্যোগ প্রস্তুতি ও দুর্যোগ মোকাবিলায় সক্ষমতা বাড়াতেও সহায়ক হবে। প্রকল্পটি ১৪টি জেলার ৭৮টি উপজেলায় বাস্তবায়িত হবে।
মূল প্রকল্প কার্যক্রমের মধ্যে রয়েছে- প্রায় ৫০০ প্রাথমিক স্কুল কাম বন্যা আশ্রয়কেন্দ্র নির্মাণ, ছোট গ্রিডের প্রায় ১০০ সৌর-বিদ্যুৎ স্থাপন, প্রায় ২৫০টি মাঠের উচ্চতা হ্রাস করা ও ২৭৫ কিলোমিটার বন্যা আশ্রয়কেন্দ্র সংযোগ সড়কের উন্নয়ন, ৫০০ মিটার সেতু নির্মাণ, ১ হাজার ৩৩০ মিটার কালভার্ট, ১১০ কিলোমিটার কমিউনিটি অবকাঠামো সংযোগ সড়কের উন্নয়ন, ১৫টি ল্যান্ডিং স্টেজ স্থাপন, প্রায় ৬ হাজার ৬০০টি সড়কে সোলার লাইট স্থাপন ও প্রায় ১ হাজার ৪০০টি বজ্রপাত-রোধী মেশিন স্থাপন।
প্রতিমন্ত্রী বলেন, সভার শুরুতে একনেকে দেশের অর্থনৈতিক পরিস্থিতি সম্পর্কে ব্রিফ করা হয়। তিনি জানান, সভায় নানা ধরনের প্রতিকূলতা সত্ত্বেও প্রধানমন্ত্রীর সাহসী ও সুপরিকল্পিত নেতৃত্বে সরকারের সময়োপযোগী সিদ্ধান্ত, কৌশল ও নীতির ফলে মাইক্রোইকোনোমিক স্থিতিশীলতা ও ভারসাম্য বজায় থাকায় সরকারের প্রশংসা করা হয়। ড. আলম বলেন, অসহায় মানুষদের আর্থিক সহায়তা প্রদান ও দেশীয় উৎপাদন বৃদ্ধির কারণে গত সেপ্টেম্বর থেকে সাধারণ মূল্যস্ফীতি নিম্নমুখী। এছাড়া সরকারের প্রণোদনা প্যাকেজ এবং সময়োপযোগী নীতি ও কৌশলের কারণে অভ্যন্তরীণ রেমিট্যান্স প্রবাহ বেড়েছে। পাশাপাশি আমদানি ব্যয় কমেছে ও রপ্তানি আয় বেড়েছে, যা বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ বাড়াতে সহায়তা করেছে।
ড. আলম বলেন, জানুয়ারিতে বেসরকারি খাতে ঋণের প্রবৃদ্ধি ছিল ১৩ শতাংশ, যা গত বছরের একই সময়ে ছিল ১১ শতাংশ। সামগ্রিকভাবে, অভ্যন্তরীণ ঋণের প্রবৃদ্ধি বেড়েছে- যা অর্থনীতির মোড় পরিবর্তনে সাহায্য করেছে। আমদানি ব্যয় নিয়ন্ত্রণ বা সামগ্রিক ব্যয় হ্রাসের কারণে এই জুলাই-জানুয়ারি সময়ের মধ্যে চলতি হিসাব ব্যালেন্সের ঘাটতিও গত বছরের একই সময়ের ১০ বিলিয়ন ডলার থেকে ৫ বিলিয়ন ডলারে নেমে এসেছে।
অনুমোদিত প্রকল্পগুলো হলো : অতিরিক্ত ১০৪৮.৪৭ কোটি টাকা ব্যয়ে বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের ‘দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলীয় ট্রান্সমিশন-গ্রিড সম্প্রসারণ (১ম সংশোধিত)’ প্রকল্প, ১২৮.১৬ কোটি টাকা ব্যয়ে জেন্ডার রেসপনসিভ এন্টারপ্রাইজ ডেভেলপমেন্ট অ্যান্ড টিভিইটি সিস্টেম (প্রগ্রেস), ১৬৮৬.৪৭ কোটি টাকা ব্যয়ে শুল্ক আধুনিকায়ন ও অবকাঠামো উন্নয়ন প্রকল্প, ১২.৪৪ কোটি টাকা কর্তন করে ৩য় সংশোধিত নগর টেকসই প্রকল্প (ইউআরপি): প্রজেক্ট কোঅর্ডিনেশন অ্যান্ড মনিটরিং ইউনিট (পিসিএমইউ), ৩,৬৪৪.৯২ কোটি টাকা ব্যয়ে দক্ষিণ চট্টগ্রাম আঞ্চলিক উন্নয়ন (এসসিআরডি) প্রকল্প, ১,০০০ কোটি টাকা ব্যয়ে ময়মনসিংহ জেলার গ্রামীণ অবকাঠামো উন্নয়ন, ৩৪৭.৬৫ কোটি টাকা ব্যয়ে মেঘনা-ধোনাগোদা সেচ প্রকল্পের পুনর্বাসন ও নদীর তীর রক্ষা।
সভায় সংশ্লিষ্ট মন্ত্রী ও প্রতিমন্ত্রী উপস্থিত ছিলেন। এছাড়াও সেখানে পরিকল্পনা কমিশনের সদস্য ও সংশ্লিষ্ট সচিবগণও উপস্থিত ছিলেন।