শিরোনাম
॥ আরিফ রিজভী ॥
ফেনী, ৩০ এপ্রিল, ২০২৩ (বাসস) : বর্তমান বৈশ্বিক অর্থনৈতিক সংকটে দেশে দেশে যখন খাদ্য ঘাটতির আশঙ্কা, তখন ফেনীতে রেকর্ড উৎপাদনে কৃষি খাতে আশা জাগাচ্ছে। নানা রকম উচ্চ ফলনশীল জাত উদ্ভাবন, শিক্ষিতদের কৃষি উদ্যোক্তা হওয়ার আগ্রহ, সরকারের প্রণোদনা কর্মসূচি এবং মাঠপর্যায়ে কৃষি বিভাগের তৎপরতায় ফেনীতে বিগত ৩ বছরে কৃষিতে রেকর্ড উৎপাদন হয়েছে। জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের দেয়া তথ্যমতে, এ সময়ে জেলায় প্রধান ফসল ধান আবাদের পরিমাণ বেড়েছে ৪৬ শতাংশেরও বেশি।
বিষয়টিকে ইতিবাচক উল্লেখ করে জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ পরিচালক মো. একরাম উদ্দিন বলেন, আগামী দিনগুলোতে বিশ্বের যেসব দেশে খাদ্য উৎপাদন বাড়াতে পারে তার মধ্যে বাংলাদেশ অন্যতম। সেদিক থেকে সরকার ও কৃষি বিভাগের নিরলস প্রচেষ্টায় ফেনীতেও কৃষি উৎপাদন উল্লে খযোগ্য হারে বাড়ছে। এটি আমাদের জন্য অত্যন্ত ইতিবাচক।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের দেয়া তথ্যমতে, জেলায় চলতি মৌসুমে ৩০ হাজার ৯৬৬ হেক্টর বোরো আবাদ হয়েছে। উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ১ লাখ ১৭ হাজার ৮৩১ মেট্রিকটন (চাল)। অন্যদিকে ২০১৯-২০ মৌসুমে বোরো আবাদ হয়েছিল ২৬ হাজার ২১০ হেক্টর, উৎপাদনের পরিমাণ ছিল ১ লাখ ৪ হাজার ২৩ মেট্রিকটন। পরিসংখ্যানে দেখা যায়, বিগত ৫ বছরে আবাদ বেড়েছে ১৮ শতাংশের বেশি। চলতি মৌসুমে বিঘাপ্রতি ১৮ হাজার কৃষককে হাইব্রিড ও ৮ হাজার ৪০০ জন কৃষককে উফশী জাতে প্রণোদনা দেয়া হয়েছে।
জেলায় ২০২২-২৩ অর্থবছরে আমন আবাদ হয়েছিল ৬৬ হাজার ৭৪৮ হেক্টর। উৎপাদনের পরিমাণ ২ লাখ ৬ হাজার ২৮৮ মেট্রিক টন ধান। অন্যদিকে ২০১৯-২০ অর্থবছরে আমন আবাদ হয়েছিল ৬৬ হাজার ৪৪৬ হেক্টর। উৎপাদন হয় ২ লাখ ৫ হাজার ৭২৬ মেট্রিক টন ধান। এতে দেখা যায়, বিগত ৫ বছরে আবাদ দশমিক ৪৫ শতাংশ ও উৎপাদন বেড়েছে দশমিক ২৭ শতাংশ। কৃষি বিভাগ বলছে, বোরো ও আমন মিলে ধান উৎপাদন গত চার বছরে ৪৫ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে।
তেল জাতীয় ফসলের মধ্যে ২০২২-২৩ অর্থবছরে সরিষা আবাদ হয়েছে ৩ হাজার ৪৯৪ হেক্টর। উৎপাদন হয়েছে ৪ হাজার ৭৮৭ মেট্রিক টন। অন্যদিকে গত অর্থবছরে জেলায় সরিষা আবাদ হয়েছে ১ হাজার ৮৩৭ হেক্টর জমিতে। উৎপাদনের পরিমাণ ছিল ২ হাজার ৪৮০ মেট্রিক টন। এতে দেখা যায়, একবছরে আবাদ ৯০ দশমিক ২০ শতাংশ ও উৎপাদন বেড়েছে ৯৩ শতাংশের বেশি।
অন্যান্য তেলবীজ ফসলের মধ্যে চলতি মৌসুমে সূর্যমুখী আবাদ হয়েছে আবাদ হয়েছে ৩৯৫ হেক্টর। উৎপাদনের পরিমাণ ৭৯০ মেট্রিক টন। যা ২০২১-২২ মৌসুমে আবাদ হয়েছিল ২৪৫ হেক্টর। উৎপাদন হয় ৪৯০ মেট্রিক টন সূর্যমুখী বীজ। যাতে দেখা যায়, এক মৌসুমের ব্যবধানে আবাদ ৬১ দশমিক ২২ শতাংশ ও উৎপাদন বেড়েছে ৬৮ শতাংশের বেশি। চলতি মৌসুমে জেলায় বিঘা প্রতি সরিষাতে ১৩ হাজার ৫০০ জন এবং সূর্যমুখী আবাদে ২ হাজার ৯০০ জন কৃষককে প্রণোদনা দেয়া হয়েছে।
কৃষি বিভাগ সূত্র আরও জানায়, ২০২২-২৩ মৌসুমে জেলায় শীতকালীন সবজি আবাদ হয়েছে ৫ হাজার ৩৫১ হেক্টর। যা আগের বছর ছিল ৫ হাজার ২১৪ হেক্টর। আবাদের পরিমাণ বেড়েছে প্রায় ৩ শতাংশ।
এছাড়া অন্যান্য ফসলের মধ্যে চলতি মৌসুমে জেলায় চিনাবাদাম আবাদ হয়েছে ১ হাজার ৫৯৮ হেক্টর। যা বিগতবছরে ছিল ৯৫২ হেক্টর। বছর ব্যবধানে আবাদ বেড়েছে ৬৭ দশমিক ৮৬ শতাংশ।
চলতি মৌসুমে ভূট্টা আবাদ হয়েছে ৪১৪ হেক্টর। যা গতবছর ছিল ২৪০ হেক্টর। বছর ব্যবধানে আবাদ বেড়েছে ৭২ শতাংশের বেশি। এছাড়াও জেলায় চলতি মৌসুমে তরমুজ আবাদ হয়েছে ৫৯০ হেক্টর জমিতে। যা গতবছর ছিল ৩৭৯ হেক্টর। আবাদের পরিমাণ বেড়েছে প্রায় ৫৬ শতাংশ।
আবাদ প্রসঙ্গে জেলার পরশুরাম উপজেলার বীরচন্দ্র নগর গ্রামের কৃষক ছিদারাম চন্দ্র বলেন, নানা সংকটে বিভিন্ন সময় জমিগুলো অনাবাদি থাকত। এখন প্রণোদনাসহ কৃষি বিভাগের পরামর্শ মত একই জমিতে ভিন্ন ভিন্ন ফসল আবাদ করছি। পরিবারের চাহিদা পূরণ করে কিছুকিছু বিক্রিও করছি।
মো. আলম নামে আরেক কৃষক বলেন, উৎপাদন বাড়লেও এখন রোগবালাই অনেক বেড়ে গেছে। জমিতে বারবার বিভিন্ন কীটনাশক প্রয়োগ করতে হয়। খরচের সাথে অনেকসময় সামঞ্জস্য থাকে না। কৃষি বিভাগ আরও সচেষ্ট হলে আমরা উপকৃত হবো।
কৃষিবিভাগের মতে উৎপাদন বাড়ার কারণগুলোর মধ্যে অন্যতম, শিক্ষিত তরুণদের কৃষি উদ্যোক্তা হওয়ার স্বপ্নে কর্মতৎপরতা। ফেনী পৌর এলাকার বিরিঞ্চির মাস্টার্স শেষ করা নিশাদ আদনান নামে এক যুবক গত ৩ বছর ধরে উদ্যোক্তা হয়ে নানা কার্যক্রম করছে। নিজের অভিজ্ঞতা তুলে ধরে নিশাদ বলেন, ৩ বছর আগে থেকে উদ্যোক্তা হয়ে কাজ শুরু করলেও কৃষিতে সম্পৃক্ত একবছর ধরে। এখানে নিজের মতো করে নির্দিষ্ট গন্ডির বাইরে গিয়েও স্বাধীনভাবে কাজ করার বাড়তি সুযোগ রয়েছে।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা সঞ্জয় কান্তি সেন বলেন, কৃষকদের সহায়তায় মাঠপর্যায়ে কৃষি বিভাগ সবসময় সচেষ্ট রয়েছে। অনেকক্ষেত্রে সীমিত জনবল দিয়েও কর্মকর্তারা সর্বোচ্চ কাজ করার চেষ্টা করছে।
অন্যদিকে জেলার কৃষি খাত আরও সমৃদ্ধ করতে কৃষি বিভাগকে প্রান্তিক পর্যায়ের কৃষকদের নিয়ে নানামুখী সচেতনতামূলক কার্যক্রম করার কথা বলছেন বিশিষ্টজনরা।
উল্লেখ্য, ফেনীতে মোট আবাদি জমির পরিমাণ ৬৯ হাজার ৫৫২ হেক্টর।