বাসস
  ১১ জুন ২০২৩, ২০:২৪
আপডেট : ১১ জুন ২০২৩, ২০:৪৪

ঢাকা আগামী ১৩-১৪ সেপ্টেম্বর ‘কমনওয়েলথ ট্রেড অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট ফোরাম’ আয়োজন করবে 

ঢাকা, ১১ জুন, ২০২৩ (বাসস) : বাংলাদেশসহ কমনওয়েলথভুক্ত দেশগুলোর মধ্যে ব্যবসা-বাণিজ্য ও বিনিয়োগ বৃদ্ধির লক্ষে আগামী ১৩-১৪ সেপ্টেম্বর ঢাকায় দুই দিনব্যাপী ‘কমনওয়েলথ ট্রেড অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট ফোরাম’ অনুষ্ঠিত হবে। 
বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (বিডা), পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও জেডআই ফাউন্ডেশনের অংশীদারিত্বে কমনওয়েলথ এন্টারপ্রাইজ অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট কাউন্সিল (সিডব্লিউইআইসি) কমনওয়েলথ ট্রেড অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট ফোরামটির আয়োজন করতে যাচ্ছে।
ফোরামটি বাণিজ্য, বিনিয়োগ ও অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির জন্য একটি প্ল্যাটফর্মের প্রস্তাব করবে। এটির লক্ষ্য অংশীদারিত্ব বৃদ্ধি, উদ্ভাবন প্রচার এবং বাংলাদেশের জন্য একটি টেকসই ও অন্তর্ভুক্তিমূলক অর্থনৈতিক উন্নয়নের পথ অন্বেষণ করা।
আজ রাজধানীর একটি হোটেলে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এ ঘোষণা দেয়া হয়। 
সংবাদ সম্মেলনে অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন- প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান, পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী মো. শাহরিয়ার আলম, যুক্তরাজ্যের হাউস অব লর্ডসের সদস্য এবং কমনওয়েলথ এন্টারপ্রাইজ অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট কাউন্সিলের (সিডব্লিউইআইসি) ডেপুটি চেয়ারম্যান লর্ড সোয়ার কেসিএমজি, বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (বিডা) নির্বাহী চেয়ারম্যান (সিনিয়র সচিব) লোকমান হোসেন মিয়া এবং বাংলাদেশের সিডব্লিউইআইসি  কৌশলগত উপদেষ্টা জিল্লুর হোসেন।
বাংলাদেশে এই প্রথমবারের মতো কমনওয়েলথ ট্রেড অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট ফোরাম অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। এর আগে কমনওয়েলথের অন্যান্য সদস্য রাষ্ট্র- যেমন যুক্তরাজ্য, সিঙ্গাপুর, কেনিয়া, রুয়ান্ডা ও মাল্টায় এ ফোরাম অনুষ্ঠিত হয়েছে।
অনুষ্ঠানে সালমান এফ রহমান বলেন, স্বাধীনতার পর জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে কমনওয়েলথে যোগদানের পর থেকে বাংলাদেশ সংগঠনটির একটি সক্রিয় অংশ ছিল।
তিনি বলেন, ট্রেড অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট ফোরাম বাংলাদেশকে বাণিজ্য ও বিনিয়োগ বৃদ্ধির এক অসাধারণ সুযোগ করে দেবে।
সালমান আরো বলেন, ‘ফোরাম চলাকালীন, বাংলাদেশ কমনওয়েলথভুক্ত দেশগুলোর সামনে তার বাণিজ্য ও বিনিয়োগের সুযোগগুলি প্রদর্শন করতে সক্ষম হবে। এটি সবার জন্য ইতিবাচক হবে।’ 
বিভিন্ন আর্থ-সামাজিক ক্ষেত্রে বাংলাদেশের বিভিন্ন অর্জনের কথা উল্লেখ করে, তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার গতিশীল নেতৃত্বে বাংলাদেশ গত সাড়ে ১৪ বছরে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি অর্জন করেছে।
এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, তারা আসন্ন ফোরামে উপস্থিত থাকার জন্য সকল কমনওয়েলথ দেশকে আমন্ত্রণ জানিয়েছে এবং নাইজেরিয়া, কেনিয়া, রুয়ান্ডা এবং ঘানার মতো দেশ ইতিমধ্যেই তাদের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করেছে।
অপর এক প্রশ্নের জবাবে সালমান বলেন, ‘স্মার্ট বাংলাদেশ’ বাস্তবায়ন করার লক্ষ্যের সাথে সামঞ্জস্য রেখে দেশে বেশ কিছু স্টার্ট-আপ গড়ে উঠেছে এবং তারা আগামী ফোরামে চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের দিকেও নজর দেবে।
আরেক প্রশ্নের জবাবে বাংলাদেশি কোম্পানিগুলো ফোরামে যোগ দিতে সম্পূর্ণ প্রস্তুত- উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা বলেন, ‘আমি নিশ্চিত করতে পারি যে- আমাদের সেই পরিবেশ রয়েছে।’
 দেশের বিদ্যুৎ ও জ্বালানি পরিস্থিতিকে সম্পর্কে তিনি বলেন, শক্তি ও জ্বালানি হচ্ছে প্রবৃদ্ধির ইঞ্জিন।
তিনি বলেন, সরকারের নানামুখী উদ্যোগের ফলে এখন বিদ্যুৎ উৎপাদন ক্ষমতা প্রায় ২৪ হাজার মেগাওয়াটে পৌঁছেছে- যা আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আসার আগে ছিল মাত্র ৪ হাজার মেগাওয়াট।
সালমান ডিজিটাল সংযোগ সম্প্রসারণ, জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব মোকাবেলা ও নারীর ক্ষমতায়নের ক্ষেত্রে বাংলাদেশের সাফল্যের বিভিন্ন দিক তুলে ধরেন।
পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী মো. শাহরিয়ার আলম বলেন, কমনওয়েলথকে অবশ্যই এলডিসি, এলএলডিসি, এসআইডিএস ও বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন  দেশগুলোর দুর্বলতা মোকাবেলা করতে হবে। এলডিসি উত্তরণের পরেও তাদের বাণিজ্য-সম্পর্কিত জিএসপিগুলো অব্যাহত রাখা, ব্যক্তিগত পুঁজি প্রবাহ ও সবুজ প্রযুক্তি স্থানান্তরের জন্য সহজ শর্তে অর্থায়নের মতো ক্ষেত্রগুলোতে আলোকপাত করতে হবে।
তিনি বলেন, আসন্ন ফোরামটি সদস্য দেশগুলোর মধ্যে বাণিজ্য ও বিনিয়োগ বাড়াতে একটি গুরুত্বপূর্ণ প্লাটফরম হবে।
তিনি আরো বলেন, ‘বাংলাদেশ যে সুযোগ দিচ্ছে তা গ্রহণ করার জন্য বিনিয়োগকারী ও ব্যবসায়ীদের জন্য এটি একটি উপযুক্ত সময়।’
তিনি জোর দিয়ে বলেন, সরকার অবকাঠামো ও ব্যবসা-বাণিজ্যের সমস্ত প্রতিবন্ধকতা দূর করতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।
শাহরিয়ার বলেন, বাংলাদেশ যেকোন ব্যবসায়িক উদ্যোগের জন্য পারস্পরিক লাভজনক প্রস্তাব উপস্থাপন করতে সক্ষম।
এক প্রশ্নের জবাবে প্রতিমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশ ফোরাম আয়োজনের জন্য খুবই উন্মুখ ও প্রস্তুত। 
তিনি আরো বলেন, বাংলাদেশ এলডিসি উত্তরণের পরও আরো তিন বছর ইউরোপীয় ইউনিয়নের বাজারে বর্তমান জিএসপি সুবিধা গ্রহণে প্রস্তুত এবং যুক্তরাজ্য থেকেও একই ধরনের সাড়া পাব বলে আমরা আশাবাদী।
যুক্তরাজ্যের হাউস অফ লর্ডসের সদস্য এবং কমনওয়েলথ এন্টারপ্রাইজ অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট কাউন্সিলের (সিডব্লিউইআইসি) ডেপুটি চেয়ারম্যান লর্ড সোয়ার কেসিএমজি বলেছেন, ‘কমনওয়েলথ হলো বাংলাদেশী কোম্পানিগুলেরা জন্য অন্বেষণ করার একটি বিস্ময়কর সুযোগ অভাবনীয় ও অভূতপূর্ব সম্ভাবনা এবং সীমাহীন সম্ভাবনার ৫৬টি দেশ।’
কমনওয়েলথ নেতাদের উচিত বাংলাদেশকে তাদের বাণিজ্য ও বিনিয়োগের পরবর্তী গন্তব্য হিসেবে দেখা-উল্লেখ করে তিনি আরো বলেন, ফোরামটি কমনওয়েলথ দেশগুলোর মধ্যে ব্যবসা সম্প্রসারণের একটি চমৎকার সুযোগ করে দেয়।
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, বাংলাদেশের অর্থনীতিতে বিগত বছরগুলোতে পরিবর্তন এসেছে। কারণ, দেশটি থেকে এখন অনেক বেশি তৈরি পণ্য বিদেশে রপ্তানি হচ্ছে- যা অর্থনীতিতে প্রভাব ফেলছে।
বাংলাদেশ ইনভেস্টমেন্ট ডেভেলপমেন্ট অথরিটি (বিডা)-র নির্বাহী চেয়ারম্যান (সিনিয়র সেক্রেটারি) লোকমান হোসেন মিয়া বলেন, এই ফোরাম যে সুযোগ দেবে দেশের সর্বোচ্চ বিনিয়োগ প্রমোশন এজেন্সি হিসেবে বিডা তার পূর্ণ সদ্ব্যবহার করবে।
তিনি আরো বলেন, ‘বাংলাদেশে সুযোগ অন্বেষণ করতে আগ্রহী এমন ব্যবসাগুলোকে আমরা নির্বিঘœ পরিষেবা দেব।’
কমনওয়েলথ এন্টারপ্রাইজ অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট কাউন্সিলের বাংলাদেশের কৌশলগত উপদেষ্টা জিল্লুর হোসেন বলেন, কমনওয়েলথ সদস্যদের রাষ্ট্রপ্রধান, রাজনৈতিক ও ব্যবসায়ী নেতৃবৃন্দ ঢাকায় কমনওয়েলথ ট্রেড অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট ফোরামে যোগ দেবেন।
কমনওয়েলথ হল ৫৬টি দেশের সমন্বয়ে একটি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা- যা একটি সাধারণ মূল্যবোধের ভিত্তিতে ঐক্যবদ্ধ এবং এ দেশগুলোতে বিশ্বের মোট জনসংখ্যার এক তৃতীয়াংশ লোক বসবাস করে। বাংলাদেশ ১৯৭২ সালে কমনওয়েলথের ৩৪তম সদস্য হিসেবে যোগদান করে।