বাসস
  ০১ সেপ্টেম্বর ২০২১, ২০:১৫
আপডেট : ০১ সেপ্টেম্বর ২০২১, ২১:৩৪

জিয়ার থেকে একধাপ এগিয়ে খুনীদের সংসদে বসিয়েছেন খালেদা : প্রধানমন্ত্রী

ঢাকা, ১ সেপ্টেম্বর ২০২১ (বাসস) : প্রধানমন্ত্রী এবং সংসদ নেতা শেখ হাসিনা ১৫ আগস্টের খুনীদের পৃষ্ঠপোষকতা প্রদানে বেগম খালেদা জিয়া স্বামী জিয়াউর রহমানের থেকেও একধাপ এগিয়ে ছিলেন উল্লেখ করে  বলেছেন, ১৫ আগস্টের খুনীদের জিয়াউর রহমান যেমন ইনডেমনিটি করে বিভিন্ন দূতাবাসে চাকরি দিয়ে পুরস্কৃত করেছিলেন তেমনি খালেদা জিয়া আরো একধাপ এগিয়ে খুনীদের সংসদে বসায়। 
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘৯৬ সালের ভোটারবিহীন নির্বাচনে চান্দিনা থেকে রশিদকে সংসদ সদস্য করে পার্লামেন্টে নিয়ে আসে খালেদা জিয়া এবং বিরোধী দলীয় নেতার আসনে বসায়। চুয়াডাঙ্গা থেকে হুদাকেও (বঙ্গবন্ধুর অপর খুনী) সংসদ সদস্য করে নিয়ে আসা হয়।’
প্রধানমন্ত্রী এবং সংসদ নেতা শেখ হাসিনা আজ বিকেলে একাদশ জাতীয় সংসদের চতুর্দশ অধিবেশনে সাবেক ডেপুটি স্পিকার, সরকারি প্রতিশ্রুতি সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি, কুমিল্লা-৭ আসনের প্রয়াত সংসদ সদস্য অধ্যাপক আলী আশরাফের মৃত্যুতে গৃহীত শোক প্রস্তাবের ওপর আলোচনায় এসব কথা বলেন।
এ সময় স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী অধিবেশনে সভাপতিত্ব করছিলেন।
অন্যান্যের মধ্যে আলোচনায় অংশ নেন, কৃষি মন্ত্রী ড. আবদুর রাজ্জাক, স্থানীয় সরকার পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রী মো. তাজুল ইসলাম, আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রী আনিসুল হক, বিরোধীদলীয় উপনেতা গোলাম মোহাম্মদ কাদের, সরকারি দলের শেখ ফজলুল করিম সেলিম, বেগম মতিয়া চৌধুরী, মোহাম্মদ ফারুক খান, মুজিবুল হক, জাতীয় পার্টির আনিসুল ইসলাম মাহমুূদ, কাজী ফিরোজ রশীদ, বিরোধী দলের চিফ হুইপ মশিউর রহমান রাঙ্গা, গণফোরামের সুলতান মোহাম্মদ মুনসুর আহমেদ, তরিকত ফেডারেশনের সৈয়দ নজিবুল বশর মাইজভান্ডারি এবং বিকল্প ধারার আবদুল মান্নান।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ১৯৯৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি বাংলাদেশে যে নির্বাচন হয়। খালেদা জিয়া ক্ষমতায় থেকে যে নির্বাচনটা করেছিল। সকল রাজনৈতিক দল সেটা বয়কট করেছিল। সেটা ছিল ভোটারবিহীন নির্বাচন। সারা বাংলাদেশে সেনাবাহিনী নামিয়ে প্রশাসন এবং গোয়েন্দা সংস্থাকে ব্যবহার করে নির্বাচনটা করা হয়। সেই নির্বাচনে চান্দিনা থেকে রশিদকে সংসদ সদস্য করে পার্লামেন্টে নিয়ে আসে খালেদা জিয়া এবং বিরোধী দলীয় নেতার আসনে বসায়। চান্দিনা থেকে কর্নেল রশিদকে এবং চুয়াডাঙ্গা থেকে হুদাকে (বঙ্গবন্ধুর অপর খুনী) সংসদ সদস্য করে নিয়ে আসা হয়। 
শেখ হাসিনা বলেন, খালেদা জিয়া জনগণের সংসদে এনে একজন খুনীকে বসিয়েছিলেন। পরবর্তীতে সেই আসনে অবশ্য আলী আশরাফই জনগণের ভোটে জয়যুক্ত হন। কাজেই, তিনি সবসময়ই একটা আদর্শ নিয়ে চলতেন এবং তিনি কেবল রাজনীতিবিদ নন একাধারে বিশিষ্ট লেখকও ছিলেন, ইংরেজি-বাংলা মিলিয়ে ১৫টি বই লিখেছেন, বলেন প্রধানমন্ত্রী।
তিনি বলেন, সবথেকে দুর্ভাগ্যের হলো তিনি যে এলাকা থেকে নির্বাচন করতেন কুমিল্লার চান্দিনা এলাকা সেখানে জাতির জনক বঙ্গবন্ধুর খুনী কর্নেল রশিদের বাড়ি। তারপাশেই খন্দকার মোস্তাকের বাড়ি।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, অধ্যাপক আলী আশরাফ একজন অধ্যাপক, রাজনীতিবিদ এবং গবেষক ছিলেন। এরকম বহুমুখী প্রতিভার অধিকারী একজন সংসদ সদস্যকে আমরা হারালাম। এটা আমাদের জন্য অত্যন্ত দুঃখের। কেননা তিনি একজন প্রবীণ সংসদ হিসেবে নবীন সংসদ সদস্যদের নানারকম বুদ্ধি পরামর্শ দিতেন। আরো দুঃখজনক এই সংসদের আমরা অনেক সদস্যকেই হারিয়েছি।
সংসদ নেতা বলেন, পাঁচ বার অধ্যাপক আলী আশরাফ সংসদ সদস্য হয়েছেন। সপ্তম সংসদে ডেপুটি স্পিকারের দায়িত্ব পালন করেছেন। আর বিভিন্ন কমিটিতে কখনো চেয়ারম্যান কখনো সদস্য হিসেবে অত্যন্ত দক্ষতার সঙ্গে তিনি দায়িত্ব পালন করেছেন।
’৭৫ এর বিয়োগান্তক অধ্যায়ের পর ’৮০ সালে লন্ডনে থাকাকালীন তাঁর সঙ্গে প্রধানমন্ত্রীর দেখা হওয়ার কথা উল্লেখ করে জাতির পিতার কন্যা স্মৃতি রোমন্থনে বলেন, অধ্যাপক আলী আশরাফ সবসময় জাতির পিতা হত্যাকান্ডের যেমন প্রতিবাদ করেছেন তেমনি ৩ নভেম্বরের হত্যাকান্ডে খুনীদের বিরুদ্ধে সাক্ষীও দিয়েছিলেন। আলী আশরাফ অসুস্থ থাকাকালীন তার নিয়মিত খোঁজ-খবর নেয়ার প্রসঙ্গ টেনে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আশা ছিল হয়তো ফিরে আসবেন কিন্তু দুর্ভাগ্য অনেক চেষ্টা করেও তাকে আমরা ফিরিয়ে আনতে পারলাম না। তিনি না ফেরার দেশেই চলে গেছেন। প্রধানমন্ত্রী আলী আশরাফের আত্মার মাগফিরাত কামনা করেন এবং তাঁর পরিবারের প্রতি সহমর্মিতা জানান।
এছাড়া, সংসদে সাবেক সংসদ সদস্য আফাজ উদ্দিন আহমেদ, তোফাজ্জল হোসেন সরকার, জামাল উদ্দিন আহম্মদ, খুররম খান চৌধুরী, মো. রেজা খান জাহানারা বেগম, আনোয়ার হোসেন এবং গণসঙ্গীত শিল্পী ফকির আলমগীর, ব্রিটিশ সাংবাদিক সাইমন ড্রিং এবং বিমান বাংলাদেশ এয়ারলেইন্সের পাইলট নওশাদ আতাউল কাইউমের মৃত্যুতে শোক প্রকাশ করা হয়।
এছাড়াও করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে দেশ-বিদেশে যারা মারা গেছেন তাদের মৃত্যুতে শোক প্রকাশ করা হয়।
চলমান সংসদের কোনো আইনপ্রণেতা মারা গেলে সংসদে আনা শোক প্রস্তাবের ওপর আলোচনা শেষে সংসদের বৈঠক মুলতবির রেওয়াজ থাকায় এর পরই স্পিকার সংসদের এদিনের অধিবেশন মূলতবি করে দেন। তবে, প্রধানমন্ত্রীর জন্য নির্ধারিত প্রশ্নোত্তর পর্বটি টেবিলে উত্থাপিত হয়।