বাসস
  ২২ জুন ২০২৩, ২০:৫৪

বাংলাদেশে হিন্দু নির্যাতন নিয়ে মার্কিন কংগ্রেসম্যানদের দাবি হিন্দু সম্প্রদায়ের প্রত্যাখ্যান 

ঢাকা, ২২ জুন, ২০২৩ (বাসস) : দেশের হিন্দু সম্প্রদায়ের নেতৃবৃন্দ মার্কিন প্রেসিডেন্টের কাছে পাঠানো এক পত্রে বাংলাদেশে হিন্দুরা নির্যাতিত হচ্ছে বলে ছয় মার্কিন কংগ্রেসম্যানের দাবিকে সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন এবং বানোয়াট অভিহিত করে এর প্রতিবাদ জানিয়েছেন।
 গত ২৫ মে তারিখের মার্কিন কংগ্রেসের ছয় প্রতিনিধির চিঠির প্রতিবাদ জানিয়ে হিন্দু সম্প্রদায়ের নেতৃবৃন্দ জো বাইডেনের কাছে পাঠানো এক চিঠিতে লিখেন, ‘এটি কেবল একটি অযৌক্তিক ও ভিত্তিহীন দাবিই নয়, বরং এটি একটি বিশাল ভুল ধারণাকেও চিত্রিত করেছে এবং আমরা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্টের কাছে পাঠানো সেই পক্ষপাতদুষ্ট কংগ্রেসম্যানদের চিঠির মিথ্যা এবং বানোয়াট বক্তব্যকে যর্থাথত প্রত্যাখ্যান করছি।’ 
আজ এখানে এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, বিশ্বব্যাপী স্বীকৃত হিন্দু সম্প্রদায়ের প্রতিনিধি আন্তর্জাতিক কৃষ্ণভাবনামৃত সংস্থা বা ইন্টারন্যাশনাল সোসাইটি ফর কৃষ্ণ কনসাসনেস (ইসকন) এবং শ্রীশ্রী অভয়মিত্র মহাশ্মশান পরিচয় কমিটি, চট্টগ্রাম এই বিষয়ে মার্কিন প্রেসিডেন্টকে ২০ জুন পৃথক চিঠি লিখেছে। 
হিন্দু সম্প্রদায়ের নেতৃবৃন্দ চিঠিতে লিখেছেন, বাংলাদেশে হিন্দুদের নিপীড়নের দাবিগুলোর সবই ভিত্তিহীন মিথ্যা ও বানোয়াট।
 জো বাইডেনকে লেখা চিঠিতে তারা জানান, ‘আমরা আপনাকে জানাতে লিখছি যে সেই পক্ষপাতদুষ্ট ছয় মার্কিন কংগ্রেসম্যানের আনা দাবিটি সম্পূর্ণ মিথ্যা। এটি আপনাকে জানানোর জন্য যে চিঠিতে করা দাবিগুলো ভিত্তিহীন এবং বানোয়াট। মার্কিন কংগ্রেসম্যানদের দাবিকে সত্যের অপলাপ হিসাবে বিবেচনা করা উচিৎ এবং এটি বাংলাদেশে বিদ্যমান সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির বিনষ্ট করার জন্যই এটা করা হয়েছে।’
চিঠিতে নেতৃবৃন্দ লিখেছেন, ২০০৮ সাল থেকে শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় ফিরে আসার পর, সংখ্যালঘু সম্প্রদায় সম্প্রীতিতে বসবাস করছে। এমনকি এই সরকারের আমলে কয়েকটি বিচ্ছিন্ন সাম্প্রদায়িক ঘটনা ঘটলেও সরকার অবিলম্বে সেগুলো মোকাবেলায় কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করে ও দৃঢ় প্রতিক্রিয়া জানানোর পাশাপাশি যথাযথ প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করে।
নেতৃবন্দ বাইডেনকে লিখেছেন, ‘আমরা সংখ্যালঘু সম্প্রদায় গোষ্ঠী সম্পর্কে সেই মার্কিন কংগ্রেসম্যানদের পক্ষপাতদুষ্ট মূল্যায়নের তীব্র প্রতিবাদ করছি এবং শেখ হাসিনা ক্ষমতায় আসার পর থেকে হিন্দু জনসংখ্যা অর্ধেক হয়ে গেছে-এমন দাবির কোন সত্যতা নেই। 
হিন্দু নেতারা তাদের চিঠিতে শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগ সরকারের কাছ থেকে হিন্দু সম্প্রদায়ের প্রাপ্ত উল্লেখযোগ্য সুবিধার পরিসংখ্যান তুলে ধরেন। এছাড়া চিঠিতে আওয়ামী লীগের স্লোগান ‘ধর্ম যার যার, উৎসব সবার’- যা প্রধানমন্ত্রীর ধর্মনিরপেক্ষ মূল্যবোধ প্রদর্শন করে তাও তুলে ধরেন।
হিন্দুরা চিঠিতে আরো জানান যে- বর্তমান সরকার সর্বদা ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের সকল উৎসবে পর্যাপ্ত নিরাপত্তা নিশ্চিত করছে।
চিঠিতে আরো বলা হয়, ‘পিউ রিসার্চ সেন্টারের মতে, আওয়ামী লীগ সরকারের নীতি বাংলাদেশের হিন্দু সম্প্রদায়ের ওপর ইতিবাচক প্রভাব ফেলেছে এবং এমনকি মার্কিন পররাষ্ট্র দফতরের আন্তর্জাতিক ধর্মীয় স্বাধীনতা রিপোর্ট স্বীকার করেছে যে-বাংলাদেশ সরকার হিন্দুসহ সকল ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের সুরক্ষার জন্য পদক্ষেপ নিয়েছে এবং ধর্মীয় বৈষম্য ও সহিংসতা প্রতিরোধে আইন প্রণয়ন করেছে। বাংলাদেশের বর্তমান সরকার যেকোনো ধরনের ধর্মীয় নিপীড়নের সক্রিয়ভাবে নিন্দা জানিয়েছে।’
হিন্দু নেতারা চিঠিতে আরও লিখেছেন, আওয়ামী লীগ সরকার হিন্দু জনবহুল এলাকায় অবকাঠামো, শিক্ষা ও স্বাস্থ্যসেবার উন্নয়নকে অগ্রাধিকার দিয়েছে এবং ঐতিহাসিক সমস্যা ও অভিযোগর সমাধান করেছে এবং হিন্দু সম্প্রদায়ের সমস্যা সমাধান নিশ্চিত করেছে।
চিঠিতে বলা হয়েছে, ‘প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ধর্মনিরপেক্ষতার নীতি বজায় রেখে চরমপন্থী ও ধর্মান্ধ গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে লড়াই করছেন এবং তাই আমাদের বলতে হবে যে- যতক্ষণ শেখ হাসিনা ক্ষমতায় থাকবেন, ততক্ষণ আমরা নিরাপদ। বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠালগ্নের মূলনীতি ধর্মনিরপেক্ষতাকে সমুন্নত রাখার জন্য তিনি আমাদের একমাত্র আশা।’