শিরোনাম
ঢাকা, ২৪ জুন, ২০২৩ (বাসস) : জামাতুল আনসার ফিল হিন্দাল শারক্বীয়া’র প্রতিষ্ঠাতা দূধর্ষ জঙ্গি নেতা শামিন মাহফুজ ও তার স্ত্রী নাজনীনকে গ্রেফতার করেছে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) কাউন্টার টেরোরিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম ইউনিট (সিটিটিসি)।
শুক্রবার গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে রাজধানীর ডেমরা থানার ধার্মিকপাড়া এলাকা থেকে তাদের গ্রেফতার করা হয়।
গ্রেফতারকৃত শামিন মাহফুজ ওরফে স্যার ওরফে আরিফ ওরফে আসলাম ওরফে মেন্ডিং মুরং পুলিশের মোস্ট ওয়ান্টেড তালিকাভূক্ত জঙ্গি নেতা।
গ্রেফতারের সময় তাদের কাছ থেকে একটি বিদেশী পিস্তল, ৩ রাউন্ড গুলি, আইইডি ডেটোনেটর, জেল এক্সপ্লোসিভসহ বোমা তৈরির সরঞ্জাম এবং সংগঠনের কাজে ব্যবহৃত মোবাইল ও ল্যাপটপ উদ্ধার করা হয়।
শনিবার দুপুরে ডিএমপি মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক প্রেস ব্রিফিংয়ে অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (সিটিটিসি) মো. আসাদুজ্জামান এসব তথ্য জানান।
অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার বলেন, গ্রেফতারকৃত শামিন মাহফুজ জঙ্গি সংগঠন জামায়াতুল আনসার ফিল হিন্দাল শারকীয়ার শীর্ষ নেতা ও মূল পরিকল্পনাকারী। তার স্ত্রী এ সংগঠনের নারী শাখার সদস্য। শামিন মাহফুজ ২০১৪ সালে গ্রেফতার হয়ে কারাগারে যাওয়ার পর জেএমবি, হুজি ও আনসার আল ইসলামের শীর্ষ নেতাদের সঙ্গে পরিচয় হয়। ওই সময় হরকাতুল জিহাদ (হুজি) ও জামায়াতুল মুজাহেদীন বাংলাদেশ (জেএমবি)-এর নেতারা জেলখানায় বসে সকল সংগঠনের সদস্যদের সমন্বয়ে একটি নতুন সংগঠন করার পরিকল্পনা করে। এ উদ্দেশ্যে ২০১৮ সালে জামিনে মুক্তি পেয়ে শামিন মাহফুজ সক্রিয়ভাবে সংগঠনের নেতৃত্ব দিতে থাকে। শামিন মাহফুজ নতুন সংগঠনের জন্য সদস্য সংগ্রহের কাজ করতে থাকে এবং একই সাথে পাহাড়ে ক্যাম্পে ট্রেনিংয়ের অবকাঠামো তৈরীর কাজ করতে থাকে। এসময় জঙ্গি রক্সি, তমাল, রাকিব জনি, রনবীর ওরফে বিকাশদের সাথে তার পরিচয় হয়। জেলখানার পরিকল্পনা মোতাবেক শামিন মাহফুজ হুজি, জেএমবিসহ অন্যান্য সংগঠন গুলোর সদস্যদের সমন্বয়ে একটি নতুন সংগঠন তৈরীর কাজ শুরু করে।
তিনি বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়নকালে বম জাতি গোষ্ঠির নাথান বম-এর সাথে মাহফুজের সখ্যতা ছিল। শামিন মাহফুজ সমাজ বিজ্ঞান বিভাগে আর নাথান বম চারুকলা বিভাগে পড়াশুনা করত । সে কুকি চিন ন্যাশনাল ফ্রন্টের (কেএনএফ) সাথে সশস্ত্র জিহাদের প্রশিক্ষণের বিষয়ে নাথান বমের সাথে আলোচনা করে। এরই ধারাবাহিকতায় শামিন মাহফুজের উদ্যোগে ২০২০ সালের মার্চ-এপ্রিলে কক্সবাজার জেলার কলাতলী এলাকায় হোটেল বে ওয়ান্ডার্সে কেএনএফ’র সাথে সমাঝোতা চুক্তি হয় নতুন জঙ্গি সংগঠনটির। এই চুক্তিতে জঙ্গি সংগঠনের পক্ষে স্বাক্ষর করে মাইনুল ইসলাম ওরফে রক্সি ও শামিন মাহফুজ। কেএনএফ এর পক্ষে স্বাক্ষর করে নাথান বম। চুক্তিপত্রটি লিখে দেয় শামিন মাহফুজ। গ্রেফতারের সময় শামীন মাহফুজের হাতের লেখায় একটি খসড়া সমঝোতা স্মারক তার ব্যাগ থেকে উদ্ধার করা হয়েছে।
অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার বলেন, সমঝোতা স্মারক অনুযায়ী কেএনএফ পাহাড়ে অর্থের বিনিময়ে সশস্ত্র জিহাদীদের প্রশিক্ষণ দিত। ২০২২ সালের শুরুতে পাহাড়ের ট্রেনিং ক্যাম্পে বসে সংগঠনের নেতৃস্থানীয়রা নতুন এ সংগঠনের নামকরণ করে জামায়াতুল হিন্দ আনসার ফিল হিন্দাল শারকিয়া। শামিন মাহফুজ এই সংগঠনের প্রতিষ্ঠাতা সমন্বয়ক। সে আমীর নির্ধারণসহ সার্বিক দায়িত্ব পালন করে। কুকি চিন নেতা নাথান বমের সঙ্গে একমাত্র শামিন মাহফুজই সমন্বয়কের দায়িত্ব পালন করে।
তিনি আরও বলেন, ২০২২ সালে ২৩ আগস্ট কুমিল্লা থেকে ৮ তরুণ নিখোঁজ হয়। ওই ঘটনার ছায়া তদন্ত করতে গিয়ে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী প্রথমে জামাতুল আনসার ফিল হিন্দাল শারক্বীয়া নামে নতুন এ জঙ্গি সংগঠনটির তথ্য পায়।
গ্রেফতারকৃতদের ডেমরা থানার মামলায় আদালতে প্রেরণ করা হয়েছে।