শিরোনাম
॥ এস এম মজিবুর রহমান ॥
শরীয়তপুর, ২৫ জুন, ২০২৩ (বাসস) : ২০২২ সালের এ দিনে বঙ্গবন্ধু কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশি বিদেশী সকল ষড়যন্ত্রের জাল ছিন্ন করে বাংলাদেশের গৌরব ও অহংকারের পদ্মা সেতু’র উদ্বোধন করেন। সেদিন থেকেই ঘুরে দাঁড়াতে শুরু করে তুলনামূলক উন্নয়ন অগ্রগতিতে দেশের সবচেয়ে পিছিয়ে থাকা শরীয়তপুর জেলা। বাংলাদেশের উন্নয়নের অগ্রনায়ক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হাতের ছোঁয়ায় শুধু পদ্মা সেতুর ফলকই উন্মোচন হয়নি উন্নয়নের ডানা মেলতে শুরু করেছে নদী বেষ্টিত পিছিয়ে থাকা জেলা শরীয়তপুর। পদ্মা সেতুর মাধ্যমে শুধু যোগাযোগের স্বার্ণালী যুগেই প্রবেশ করেনি শরীয়তপুর উন্নয়নের পরশ লেগেছে জেলার কৃষি, পরিবহন, ব্যবসা-বাণিজ্য, পর্যটন শিল্প, শিক্ষা, চিকিৎসা ও জীবন যাত্রায়।
জাজিরা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ মো: জামাল হোসেন বলেন, পদ্মা সেতুর হাত ধরে জাজিরাসহ শরীয়তপুরের কৃষি এগিয়ে চলছে। যোগাযোগ ব্যবস্থার অপ্রতুলতার কারণে পদ্মা সেতু বাস্তবায়নের আগে জেলার কৃষির রাজধানীখ্যাত জাজিরাসহ শরীয়তপুরের সবজি ঢাকার বাজারে যেতে সময় লাগত ক্ষেত্র বিশেষে ১০-১২ ঘন্টা পর্যন্ত। আর এখন সকল বাধা অতিক্রম করে জাজিরার কৃষি পণ্য ঢাকার কারওয়ান বাজারে পৌঁছে যাচ্ছে আড়াই থেকে তিন ঘন্টার মধ্যে। ফলে কৃষক যেমন তার উৎপাদিত পণ্যের ন্যায্যমূল্য পাচ্ছেন, তেমনি কমেছে মধ্যস্বত্তভোগীদের দৌরাত্ব। আর কৃষক হচ্ছে লাভবান। এছাড়াও পদ্মা সেতুর ফলে জাজিরার উৎপাদিত সবজি এ বছরের জানুয়ারির ৩ তারিখ থেকে দেশের গন্ডি পেরিয়ে পারি জমিয়েছে সুইজারল্যান্ড, ইতালি ও ইংল্যান্ডসহ ইউরোপের বিভিন্ন দেশে। দুইশ’ কেজি সবজি দিয়ে যাত্রা শুরু হলেও যা এখন ক্রমাগত বৃদ্ধি পেয়ে ৬ টনে দাঁড়িয়েছে। রপ্তানিকারকদের চাহিদা অনুযায়ী কৃষি বিভাগের উত্তম কৃষি চর্চা পদ্ধতি অবলম্বন করে কৃষকরাও এখন ক্রমাগত বাড়িয়ে চলেছেন নিরাপদ সবজি আবাদ। যা দেশের অর্থনীতির জন্য এক অনন্য অর্জন।
জাজিরা উপজেলা উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান শিল্পপতি মোবারক আলী সিকদার বলেন, শিল্প ও বাণিজ্যের বিকাশের সাথে যোগাযোগ ব্যবস্থার বন্ধন অবিচ্ছেদ্য। পদ্মা-মেঘনা বেষ্টিত শরীয়তপুর জেলা ঢাকার খুব কাছের জেলা হওয়া সত্বেও শুধুমাত্র অনুন্নত যোগাযোগ ব্যবস্থার কারণে আমরা পিছিয়ে ছিলাম যোজন যোজন দূরত্বে। ২০২২ সালের আজকের দিনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা’র বলিষ্ঠ হাতে শুধু পদ্মা সেতুর উদ্বোধনী ফলকই উন্মোচন হয়নি, শরীয়তপুরের শিল্প ও বাণিজ্যের বন্ধ দুয়ার খুলে দিয়েছে। শরীয়তপুরবাসীসহ পুরো দক্ষিণ বঙ্গের মানুষ বঙ্গ কন্যার প্রতি জানাচ্ছি কৃতজ্ঞতা, ভালোবাসা ও প্রাণঢালা দোয়া।
শরীয়তপুর বাস মালিক গ্রুপের সভাপতি ফারুক আহমেদ তালুকদার বলেন, শরীয়তপুর-ঢাকার দূরত্ব মাত্র ৭১ কিলোমিটার হলেও প্রায় ৪০ বছর আগে থেকে শুরু হওয়া শরীয়তপুরের পরিবহন ব্যবস্থা ছিল অত্যন্ত অলাভজনক। অনেক পরিবহন মালিকরাই হয়েছেন ক্ষতিগ্রস্ত, শ্রমিকরাও হারিয়েছিলেন কাজ। কিন্তু সময়ের ব্যবধানে এখন সব পাল্টে গেছে। পদ্মা সেতু চালু হওয়ার এক বছরের মাথায় শরীয়তপুরের পরিবহন খাত এখন সোনালী যুগে। ইতিমধ্যে এ খাতে বিনিয়োগ হয়েছে দুইশ’ কোটি টাকার ওপরে। দুই শহ¯্রাধিক শ্রমিকের হয়েছে কর্মসংস্থান। প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনার প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করার ভাষা আমাদের জানা নেই।
শরীয়তপুর চেম্বার অব কমার্সের সহ-সভাপতি মো: বাবুল তালুকদার বলেন, শরীয়তপুরে ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পেদ্যোক্ত থাকলেও কেবল অনুন্নত যোগাযোগ ব্যবস্থার কারণে স্বাধীনতা পরবর্তীকাল থেকে এযাবত জেলায় কোন শিল্পোদ্যোক্তাই বিনিয়োগ করে নাই। আলাদিনের চেরাগের মতো পদ্মা সেতু চালু হওয়ার পর থেকেই শরীয়তপুর জেলায় জাগরিত হচ্ছে শিল্পায়নে। অনেক বিনিয়োগকারী জমি কিনে শুরু করে দিয়েছেন কাজ। ফলে জেলার জমিরমূল্য হয়ে উঠেছে এখন আকাশচুম্বী। জীবন যাত্রার মানেও এসেছে বৈপ্লবিক পরিবর্তন। আশা করছি আগামী পাঁচ থেকে দশ বছরের মধ্যে শরীয়তপুর জেলা হয়ে উঠবে বাংলাদেশের শিল্প-বাণিজ্যের অন্যতম জেলা।
শরীয়তপুরের জেলাপ্রশাসক মো: পারভেজ হাসান বাসস’কে বলেন, এক বছর আগের বাংলাদেশের পিছিয়ে থাকা অন্যতম জেলা ছিল শরীয়তপুর। মাত্র এক বছরের ব্যবধানে বাংলাদেশের উন্নয়ন-অগ্রগতির মহানায়ক প্রধানমন্ত্রী’র বদৌলতে শরীয়তপুর এখন ‘সোনালী সেতুর শ্যামল ভূমি’। যোগাযোগ ব্যবস্থার আমুল পরিবর্তনের মধ্যদিয়ে দুর্বার গতিতে এগিয়ে চলেছে কৃষি, পর্যটন শিল্প, পরিবহন খাত, ব্যবসা-বাণিজ্য, শিক্ষা-সংস্কৃতি। উন্নয়নের ছোঁয়া লাগেনি এমন কোন জায়গা পাওয়া খুজে পাওয়া এখন দুস্কর হয়ে যাবে। আমরা আশা করছি প্রধানমন্ত্রী’র আগামীর স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ার প্রতিযোগিতায় শরীয়তপুর জেলা অগ্রনী ভূমিকা পালন করবে।