বাসস
  ০৬ জুলাই ২০২৩, ২৩:১০

সংসদের ২৩তম ও ২০২৩-২৪ অর্থবছরের বাজেট অধিবেশন সমাপ্ত

সংসদ ভবন, ৬ জুলাই, ২০২৩ (বাসস) : একাদশ জাতীয় সংসদের ২৩তম ও ২০২৩-২৪ অর্থবছরের বাজেট অধিবেশন  শেষ হয়েছে ।
অধিবেশন সমাপ্তি সংক্রান্ত রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিনের ঘোষণা পাঠ করার মাধ্যমে স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী আজ চলতি অধিবেশন সমাপ্তির ঘোষণা দেন।  
এর আগে ১৯৭২ সালের ১৬ জানুয়ারি বাস্তুহারাদের উদ্দেশ্যে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের দেয়া ভাষণের অডিও শুনানো হয়। ৯ মিনিট ১০ সেকেন্ডের এই ভাষণটি বাংলাদেশ বেতার থেকে সংগ্রহ করা হয়।
গত ৩১ মে থেকে ২২ কার্যদিবস পর্যন্ত অধিবেশন চলার পর আজ ৬ জুলাই জাতীয় সংসদের চলতি অধিবেশন শেষ হয়। গত ১ জুন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল ‘উন্নয়নের অভিযাত্রার দেড় দশক পেরিয়ে স্মার্ট বাংলাদেশের অগ্রযাত্রা’য় সর্বোত্তম জনকল্যাণের লক্ষ্যমাত্রাকে সামনে ২০২৩-২৪ অর্থবছরের জন্য ৭ লাখ ৬১ হাজার ৭৮৫ কোটি টাকার বাজেট উপস্থাপন করেন। এরপর গত ২৬ জুন জাতীয় সংসদে এই বাজেট পাস হয়।
অধিবেশনে সম্পূরক বাজেটসহ সামগ্রিক  বাজেট  আলোচনায় ১৮৭ জন সংসদ সদস্য অংশগ্রহণ করেন এবং মোট ৩২ ঘন্টা ৩ মিনিট আলোচনা হয়। বাজেট পাস ছাড়াও এ অধিবেশনে ১৪টি বিল পাস হয়। পাশের অপেক্ষায় আছে ৬টি বিল। সংশ্লিষ্ট কমিটির পরীক্ষাধীন ১১টি বিল। কমিটির রিপোর্ট উপস্থান হয় ৫টি। কমিটি পুনঃগঠন হয় ৪টি। অডিট রিপোর্ট উপস্থাপন করা হয় ৪৭টি। আইন প্রণয়ন সম্পর্কিত কাজ সম্পাদনের পাশাপাশি কার্যপ্রণালী-বিধির ৭১ বিধিতে  ৩৩টি নোটিশ পাওয়া গিয়েছে। প্রধানমন্ত্রীর উত্তর দানের জন্য সর্বমোট ৯৭ টি প্রশ্ন পাওয়া যায়, তারমধ্যে তিনি ৫৬ টি প্রশ্নের উত্তর দেন। বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রীদের উত্তরদানের জন্য প্রাপ্ত মোট ১ হাজার ৮৭৯ টি  প্রশ্নের মধ্যে মন্ত্রীরা ১ হাজার ৩৩৩ টি প্রশ্নের জবাব দেন। এছাড়া বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রীবর্গ সমসাময়িক গুরুত্বপূর্ণ কয়েকটি বিষয়ে বিবৃতি প্রদান করেন।
এই অধিবেশনটি ছিল ২০২৩ খ্রিস্টাব্দের বাজেট ও একাদশ জাতীয় সংসদের শেষ বাজেট অধিবেশন। অধিবেশনটি ছিল অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ কারণ এটি ২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বর জাতীয় নির্বাচনের মধ্য দিয়ে গঠিত আওয়ামী লীগ সরকারের পঞ্চম ও শেষ বাজেট অধিবেশন।
অধিবেশনের সমাপনী ভাষণে স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশের মহান স্থপতি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে পরম শ্রদ্ধায় স্মরণ করে বলেন ,যাঁর নেতৃত্বে আমরা স্বাধীনতা অর্জন করেছি। সেইসাথে তিনি ৩০ লাখ শহিদ এবং দু’লাখ মা-বোনের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জানান।
স্পিকার বলেন, সংসদীয় পদ্ধতিতে বাজেট অধিবেশন একটি গুরুত্বপূর্ণ অধিবেশন। সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতার কারণেই সরকারের এক বছরের আয়-ব্যয় ও উন্নয়ন কর্মকান্ডের হিসাব বিবরণী জাতীয় সংসদে উপস্থাপন করতে হয়। বিগত এক বছরের আয়-ব্যয়ের হিসাব ও আগামী এক বছরে সরকারের আর্থিক কর্মকান্ড নিয়ে এ সংসদে বিস্তারিত আলোচনা হয়েছে। সংসদ-সদস্যরা তাদের সুচিন্তিত মতামতের মাধ্যমে সরকারি আয়-ব্যয়ের স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করার পাশাপাশি বাজেটকে জনকল্যাণমুখী করার পরামর্শ প্রদান করেছেন। সরকারি ও বিরোধী দলের সংসদ-সদস্যরা ২০২৩-২০২৪ আর্থিক বছরের বাজেটের খুঁটিনাটি তুলে ধরে বাজেটকে আরো অর্থবহ ও বাস্তবমুখী করতে ভূমিকা রেখেছেন। এ অধিবেশনের বিভিন্ন কার্যক্রম পরিচালনায় সর্বাত্মক সহযোগিতার জন্য তিনি সকলকে আন্তরিক ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানান।   
তিনি বলেন, এ অধিবেশনে ‘উন্নয়নের অভিযাত্রায় দেড় দশক পেরিয়ে স্মার্ট বাংলাদেশের অগ্রযাত্রা’ শীর্ষক প্রতিপাদ্যকে সামনে রেখে জীবন-জীবিকাকে প্রাধান্য দিয়ে সকল বৈষম্য দূর করে টেকসই উন্নয়ন বাস্তবায়নের লক্ষ্যে অর্থমন্ত্রী জনাব আ হ ম মোস্তফা কামাল বর্তমান সরকারের ২০২৩-২৪ অর্থবছরের বাজেট পেশ করেছেন। বাজেটে বর্তমান সরকারের বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কর্মকান্ড বাস্তবায়নের প্রতিফলন ঘটেছে। ২০৩০ সালে এসডিজির লক্ষ্যসমূহ অর্জনসহ ‘রুপকল্প- ২০২১’ সফলভাবে বাস্তবায়নের পর ২০৪১ সালের মধ্যে একটি সুখী-সমৃদ্ধ স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণের লক্ষ্যকে সামনে রেখে এবারের বাজেট প্রণীত হয়েছে সমৃদ্ধশালী বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে- যেখানে অর্থনীতির চালিকা শক্তি হবে উন্নত প্রযুক্তি ও উচ্চতর প্রবৃদ্ধি। কোভিড-উত্তর বৈশ্বিক দুর্যোগ মোকাবেলাসহ সবার জন্য স্বাস্থ্য ও শিক্ষার অধিকার নিশ্চিত করে মানুষের সৃজনশীলতা ও সক্ষমতা বৃদ্ধি, সামাজিক বৈষম্য হ্রাস, ন্যায় বিচার প্রতিষ্ঠা, জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে সৃষ্ট বিপর্যয় মোকাবেলায় সক্ষমতা অর্জন এবং তথ্য প্রযুক্তিতে সমৃদ্ধ স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ার প্রত্যয় ব্যক্ত হয়েছে এ বাজেটে।
শিরীন শারমিন চৌধুরী বলেন, এ বাজেট বাস্তবায়নে দলমত নির্বিশেষে আমাদের সকলকে সমন্বিত প্রয়াস চালাতে হবে। এদেশের আপামর জনগণের স্বপ্ন হচ্ছে একটি সুখী সমৃদ্ধ বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠা। তাদের সে প্রত্যাশা পূরণ আমাদেরই করতে হবে। সংসদ-সদস্যদেরকে জনপ্রতিনিধি হিসেবে দলমতের ঊর্ধ্বে থেকে এ গুরুদায়িত্ব পালন করতে হবে।
তিনি বলেন, অব্যাহত উন্নয়নের অগ্রযাত্রায় বাংলাদেশের স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উন্নয়নশীল দেশে উত্তরণ ঘটেছে। দারিদ্র্য দূরীকরণ, মাতৃমৃত্যু-শিশুমৃত্যুর হার হ্রাস, নারীর ক্ষমতায়ন, স্বাস্থ্য ব্যবস্থার উন্নয়ন, গড় আয়ু বৃদ্ধি, শিক্ষার হার বৃদ্ধিসহ নানা আর্থ-সামাজিক সূচকে বাংলাদেশ আজ দক্ষিণ এশিয়ায় নেতৃত্ব দিচ্ছে।
স্পিকার বলেন, ‘আমরা একটি কল্যাণকামী, উন্নত-সমৃদ্ধ, স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ে তোলার লক্ষ্য নিয়ে রূপকল্প ২০৪১ এবং ডেল্টা প্ল্যান-২১০০ বাস্তবায়নে নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছি। স্মার্ট বাংলাদেশ হবে এমন এক বাংলাদেশ, যেখানে মানুষ দেশের যে অঞ্চলেই বসবাস করুক না কেন, সব ধরনের সুযোগ-সুবিধা সমতার ভিত্তিতে পাবে। আসুন, আমাদের মাতৃভূমিকে এমনভাবে গড়ে তুলি যেন ভবিষ্যৎ প্রজন্ম এর সুফল ভোগ করতে পারে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ঘোষিত ২০৪১ সাল নাগাদ সাশ্রয়ী, টেকসই, বুদ্ধিদীপ্ত, উদ্ভাবনী, উচ্চ অর্থনীতির স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণে সদস্যবৃন্দ অগ্রণী ভূমিকা রাখবেন বলে আমি আশা করি।’
তিনি বলেন, আগামী দিনগুলোতে সংবিধানকে সমুন্নত রেখে সুশাসন ও আইনের শাসন প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে গণতন্ত্র ও জনকল্যাণকর রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠায় ২০৪১ সালের মধ্যে ‘স্মার্ট বাংলাদেশ’ বিনির্মাণের লক্ষ্যকে সামনে রেখে বাংলাদেশ এগিয়ে যাবে এটাই সকলের প্রত্যাশা।