শিরোনাম
ঢাকা, ১২ জুলাই, ২০২৩ (বাসস) : তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ড. হাছান মাহমুদ দেশি-বিদেশি মানবাধিকার সংস্থা ও বন্ধুরাষ্ট্রগুলোকে বিএনপি প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমান এবং বেগম খালেদা জিয়ার নির্মম বর্বরতার শিকার ও তাদের স্বজনদের কান্না ও আর্তনাদ শোনার আহবান জানিয়ে বলেছেন, ‘সেটি সত্যিকার অর্থে মানবাধিকার প্রতিষ্ঠায় সহায়ক হবে এবং অবশ্যই এ অপরাধের বিচার করতে সরকার বদ্ধপরিকর।’ তিনি আজ দুপুরে রাজধানীর ঢাকা মেডিকেল কলেজ প্রাঙ্গণে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার চত্বরে ২০১৩-১৪-১৫ সালে পেট্রোলবোমা হামলায় নিহতদের পরিবার ও আহতদের সংগঠন ‘অগ্নিসন্ত্রাসের আর্তনাদ’ এবং ১৯৭৭ সালে সামরিক জান্তার হাতে বিনা বিচারে নিহতদের স্বজনদের সংগঠন ‘মায়ের কান্না’ আয়োজিত মানববন্ধনে প্রধান অতিথির বক্তৃতাকালে এসব কথা বলেন।
তথ্যমন্ত্রী বলেন, “জিয়াউর রহমানের নির্মমতায় ১৯৭৭ সালে বাংলাদেশে মানবাধিকারের চরম লঙ্ঘন হয়েছে। হাজার হাজার সেনাসদস্যকে বিনা বিচারে হত্যা করা হয়েছে, এমনকি আগে ফাঁসি কার্যকর করে পরে রায় দেওয়ার ঘটনাও ঘটেছে। রাতের বেলায় ঘুমন্ত অফিসারকে ধরে নিয়ে গিয়ে কোনো বিচার ছাড়াই জেলে ঢুকিয়ে ফাঁসি দেওয়া হয়েছে।” ‘নামের মিল থাকার কারণে একজনের পরিবর্তে আরেকজনকে ফাঁসি দেওয়া হয়েছে’ উল্লেখ করে তিনি বলেন, “যখন ভুল অফিসারকে ফাঁসির মঞ্চে নিয়ে যাচ্ছে, তখন সে ‘আমি নই, আমি নই, এটা আমি নই’ বলে আর্তনাদ করেছে। কিন্তু কে শোনে কার কথা! ফাঁসিতে ঝুলিয়ে তাকে হত্যা করা হয়েছে। সেই নির্মমভাবে নিহতদের সন্তানেরা আজ ‘মায়ের কান্না’ ব্যানারে কান্নারত।”
হাছান মাহমুদ বলেন, “বয়োবৃদ্ধ সার্জেন্ট কামাল আজ বক্তব্য রেখেছেন, তিনি নিজেই অগ্নিসন্ত্রাসের শিকার। যারা রাজনীতি জানে না, রাজনীতি বোঝে না, রাজনীতি করে না- সেই নিরপরাধ সাধারণ মানুষ, যারা নিতান্তই জীবিকার তাগিদে রাস্তায় বের হয়েছিলো, এমন শতশত মানুষ ২০১৩, ১৪ ও ১৫ সালে রেহাই পায়নি। বেগম খালেদা জিয়া-তারেক জিয়ার সন্ত্রাসী-পেটুয়াবাহিনী মির্জা ফখরুল, মির্জা আব্বাসসহ এদের নেতাদের পরিচালনায়, অর্থায়নে, নির্দেশে তাদের ওপর পেট্রোলবোমা নিক্ষেপ করা হয়েছিলো।”
‘বিএনপি-জামায়াতের অবরোধের মধ্যে রাতের বেলায় যে ট্রাক চলছে না, রাস্তায় দাঁড়িয়ে আছে, ড্রাইভার গাড়িতে শুয়ে ঘুমাচ্ছে, সেই ড্রাইভারকে বাইরে থেকে তালা দিয়ে পেট্রোলবোমা মেরে ট্রাক জ্বালিয়ে দিয়েছে, গাড়ির সাথে ড্রাইভারও পুড়ে অঙ্গার হয়ে গেছেন -এ কেমন রাজনীতি!’ প্রশ্ন রাখেন মন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘মির্জা ফখরুল, মির্জা আব্বাসসহ যারা আজকে বিকালের সমাবেশে লম্বা লম্বা কথা বলবে, তারা এবং তাদের নেতারা সবাই এই অগ্নিসন্ত্রাসের হুকুমদাতা এবং নির্মমতার জন্য দায়ী।’
আজ যারা মানবাধিকারের কথা বলে, প্রেসক্রিপশন দেয়, যখন বঙ্গবন্ধুর হত্যাকান্ডের বিচার বন্ধ করে মানবাধিকারের চরম লঙ্ঘন করা হয়েছিলো, তখন তারা কোথায় ছিলো প্রশ্ন রেখে সম্প্রচারমন্ত্রী বলেন, ‘একজন মানুষের পিতা কিম্বা আত্মীয় পরিবার পরিজনের হত্যাকান্ডের বিচার চাওয়ার অধিকার আছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং তার ছোট বোন শেখ রেহানার বিচার চাওয়ার অধিকার কেড়ে নেওয়া হয়েছিলো। তখন মানবাধিকার কোথায় ছিলো!’
মানববন্ধনে জিয়াউর রহমানের মরণোত্তর এবং বিএনপি ও জামায়াতের ইসলামীর নেতৃবৃন্দের বিচার দাবি করে বক্তব্য দেন পুত্রহারা মমতাজ বেগম, অগ্নিসন্ত্রাসে দগ্ধ সার্জেন্ট কামাল পাশা, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাবি) শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক ড. নিজামুল হক ভুঁইয়া, সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক জিনাত হুদা, বঙ্গবন্ধু আইনজীবী পরিষদের সহ-সভাপতি এড. জেসমিন সুলতানা, ঢাবি’র ফার্মাসি অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. সীতেশ চন্দ্র বাছার, ‘মায়ের কান্না’র উপদেষ্টা প্রশান্ত ভূষণ বড়ুয়া, ‘অগ্নিসন্ত্রাসের আর্তনাদে’র আহবায়ক শাহাদাত হোসেন বাবু, ‘মায়ের কান্না’র আহবয়ক কামরুজ্জামান লেলিন, মানববন্ধন সমন্বয়ক রাশেদুল ইসলাম রাসেল প্রমুখ।
তথ্যমন্ত্রীর সাথে ইইউ প্রতিনিধিদের সাক্ষাৎ : এ দিন দুপুরে আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচন উপলক্ষে বাংলাদেশ সফররত ইউরোপীয় ইউনিয়ন প্রতিনিধি দলের তিন সদস্য রিকার্ডো কেলেরি, দিমিত্রা আয়ানো এবং ক্রিস্টিনা ডোস রামোস আলভেস সচিবালয়ে তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী এবং আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ড. হাছান মাহমুদের দপ্তরে তার সাথে সাক্ষাৎ করেন। বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন মন্ত্রী। আলোচনার বিষয় নিয়ে প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, রাজনৈতিক কর্মসূচি নিয়ে কোনো আলোচনা হয়নি। তারা দেশের গণমাধ্যম আমাদের মন্ত্রণালয়ের ভূমিকা সম্পর্কে জানতে চেয়েছে। আমরা বলেছি, বাংলাদেশের গণমাধ্যম মূলত বেসরকারি। বাংলাদেশ টেলিভিশন আর ৩৫টি বেসরকারি টিভি চ্যানেল এখন সম্প্রচারে আছে। সাড়ে ১২শ’ দৈনিক পত্রিকা, কয়েক হাজার অনলাইন, এফএম ও কমিউনিটি রেডিও সবই বেসরকারি, বাংলাদেশ বেতার ছাড়া।
তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী জানান, সমসাময়িক চ্যালেঞ্জগুলো বিশেষ করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে গুজব ছড়ানোর ফলে অনেক সময় যে হানাহানি হয়, সে জন্য সেই প্লাটফর্মের যে দায়িত্ব রয়েছে, সেগুলো নিয়ে আলোচনা হয়েছে। আপনারা জানেন যে, ইউরোপীয় ইউনিয়ন এ বছরের গোড়াতে আইন সংশোধন করে বলেছে, প্রত্যেক সামাজিক যোগাযোগ প্লাটফর্মকে ইউরোপে রেজিস্টার্ড হতে হবে। আমরা ফেসবুক, টুইটার, ইউটিউবসহ সমস্ত সোশ্যাল মিডিয়ার প্লাটফর্মগুলোকে বাংলাদেশের আইন অনুযায়ী, এখানে রেজিস্টার্ড হওয়ার জন্য সরকারের পক্ষ থেকে বলে আসছি, কিন্তু এখনও পর্যন্ত তা হয়নি উল্লেখ করে হাছান মাহমুদ বলেন, সেখানে কোনো গুজব বা বিতর্কিত পোস্ট সরাতে বললেও তারা দেরি করে এবং যদিও সরায় তার হারটা হচ্ছে ১০ শতাংশ, ৯০ শতাংশ সরায় না। এতে রাষ্ট্রে, সমাজে যে হানাহানি তৈরি হয় সেই চ্যালেঞ্জ নিয়ে আলোচনা হয়েছে।
তথ্যমন্ত্রী বলেন, ইউরোপের দেশগুলোতে যে সরকার ক্ষমতায় থাকে, তারা ক্ষমতায় থেকেই নির্বাচন করে, আমাদের দেশেও আইন অনুযায়ী তাই হবে, সে বিষয়টি আমি তাদেরকে জানিয়েছি। কিন্তু নির্বাচনের সময় সরকারের রুটিন কাজ করা ছাড়া আর কোন কাজ করার ক্ষমতা থাকে না। সরকারের সমস্ত প্রতিষ্ঠান যেগুলো নির্বাচনের সাথে সংশ্লিষ্ট তাদের সবার চাকরি নির্বাচন কমিশনের হাতে ন্যস্ত হয়, সেটি আমি তাদের জানিয়েছি।
তত্ত্বাবধায়ক সরকার এবং বিরোধী দলকে নির্বাচনে আনা প্রসঙ্গে আলোচনা হয়েছে কি না এ প্রশ্নে তথ্যমন্ত্রী বলেন, ‘তত্ত্বাবধায়ক ইস্যু নিয়ে কোনো আলোচনা হয়নি। আসলে এ নিয়ে কারো কোনো মাথাব্যথা নাই। এটি একমাত্র বিএনপির মাথাব্যথা। আর তারা এসেছে নির্বাচন পর্যবেক্ষণের ব্যাপারে, বিরোধী দলকে নির্বাচনে আনার জন্য আসে নাই। তবে আমি তাদেরকে বলেছি, আমরা চাই বিএনপিসহ সমস্ত রাজনৈতিক দল আগামী নির্বাচনে অংশগ্রহণ করুক।’