শিরোনাম
নীলফামারী, ৩০ ডিসেম্বর, ২০২৪ (বাসস): বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল- বিএনপি’র সিনির যুগ্ম-মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেছেন, একটি জাতির আত্মজীবনী হচ্ছে সংবিধান।
তিনি বলেন, ‘ সময়, পরিস্থিতি ও প্রেক্ষাপট বিবেচনায় সংবিধান সংযোজন হতে পারে। বিয়োজন হতে পারে। এতে যে ফ্যাসিজমের বৈশিষ্ট্য আছে। ওটা বাদ দেয়া যেতে পারে। সেটা তো রাজনৈতিক দায়িত্ব। যারা গণতন্ত্রের পক্ষে ছিলেন, যারা গণতন্ত্রের জন্য সংগ্রাম করেছেন এবং যাদের সন্তান অকাতরে জীবন দিয়েছেন। রাজনৈতিক দল, যারা জনগণের ম্যান্ডেট নিয়ে ক্ষমতায় আসবে তারা এটা করবে।’
রুহুল কবির রিজভী আজ সোমবার গোধূলীলগ্নে নীলফামারী সদর উপজেলার লক্ষ্মীচাপ ইউনিয়নের দুবাছুরি দ্বি-মুখী দাখিল মাদ্রাসা মাঠে এক অনুষ্ঠানে অনলাইনে সংযুক্ত হয়ে বিশেষ অতিথি’র বক্তৃতায় এসব কথা বলেন।
‘আমরা বিএনপি পরিবার’র উদ্যোগে ২০১৪ সালের ১৮ জানুয়ারি ব্যাবের ক্রসফারে নিহত নীলফামারী সদর উপজেলার লক্ষ্মীচাপ ইউনিয়ন বিএনপি’র নেতা গোলাম রব্বানীর পরিবারের বসবাসের জন্য নতুন বাড়ির চাবি হস্তান্তর উপলক্ষে এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।
‘সংবিধান বাতিল করে দিলে মুক্তিযুদ্ধ এবং স্বাধীনতাকে অস্বীকার করা হয়’ এ কথা উল্লেখ করে বিএনপি’র সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব বলেন, ‘সংবিধানের মধ্যে আওয়ামী ফ্যাসিবাদ বাকশালের যে বৈশিষ্ট্য সেটা দূরীভূত করতে হবে। কিন্তু সংবিধানের ধারাবাহিকতা থাকবে। যদি ত্রিশ/চল্লিশ বছর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সংবিধানের ধারাবাহিকতা থাকে, সেখানে যদি কয়েকবার সংশোধন হয়, তাহলে আমাদের সংবিধানও সংশোধন হবে। কিন্তু বাতিল করে দিয়ে একেবারে নতুন কিছু করতে হবে। এইটা মূল স্পিরিট-স্বাধীনতাযুদ্ধের সাথে সাংঘর্ষিক। আর এ কারণে ওই যুদ্ধে তো ত্রিশ লাখ মানুষ মারা গেছে, দুই লাখ মা-বোনের ইজ্জত-সম্মান গেছে এবং একই যুদ্ধের একজন অন্যতম সেনানী স্বাধীনতার ঘোষক শহিদ জিয়াউর রহমান। তাই, সংবিধান বাতিল করলে আমরা নিজেরাই অস্বীকৃতির মধ্যে পড়বো - এটা ঠিক নয়।’
রিজভী বলেন, ‘আজকে মানুষের প্রত্যাশার পরিবর্তন হয়েছে। সে-পরিবর্তনেরই ফসল অন্তর্বর্তী সরকার। এই সরকারকে বিএনপিও সমর্থন করেছে। কিন্তু এই সরকার যদি কোনো একটি দিকে হেলে যান, তাহলে এই সরকারকে জনগণ কখনোই মেনে নেবে না। যে নিরপেক্ষতার দায়িত্ব তাদেরেকে দেয়া হয়েছে, তারা নিরপেক্ষভাবে সেই দায়িত্ব পালন করবেন।’
‘সরকারের আইজিপি বলেছেন, আমাদের হাতে কোন ম্যাজিক নাই। আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতি রাতারাতি আমরা ঠিক করতে পারব না’ এ কথা উল্লেখ করে রিজভী বলেন, ‘এখানে ছিনতাই হচ্ছে, ডাকাতি হচ্ছে, এমনকি ব্যাংক ডাকাতিও হচ্ছে। এসব নিরসনে পুলিশ-ম্যাজিস্ট্রেটরা দায়িত্ব এবং উদ্যোগ নিবেন। যারা এই দায়িত্ব পালন করছেন তাদের এ ব্যাপারে অনুসন্ধান করে জানতে হবে কেন এসব হচ্ছে এবং কারা করছে ?’
তিনি বলেন, গত প্রায় বছর এক দূর্বিষহ নারকীয় হিংস্রতার মধ্যে এই জাতি দিন যাপন করেছে। এ সময়ে ফ্যাসিস্ট সরকারের প্রতিহিংসা পরায়ণতায় কেউ পঙ্গুত্ব বরণ করেছেন, কেউ অন্ধত্ব বরণ করেছেন, কারো-কারো সোনার ছেলেরা পৃথিবী থেকে চিরদিনের জন্য বিদায় নিয়েছেন।’
বিএনপি’র সিনিয়র যুগ্ম-মহাসচিব বলেন, ‘উল্লিখিত এসব মানুষের তাদের পাশে দাঁড়ানোর জন্য দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের তাগিদ রয়েছে। তাঁর নির্দেশনাকে আমরা সম্মান জানিয়ে দেশব্যাপী ছুটে বেড়াচ্ছি। তারেক রহমানের এই ব্যস্ততার কারণ, তাঁর সাথে যে মানুষের হৃদয়ের সংশ্লিষ্টতা আজকে নানাভাবে আবারও তা দেখছি।’
রিজভী বলেন, ‘তারেক রহমান কার্যকলাপে প্রমাণ করেছেন-তিনিই বাংলাদেশের অবিসংবাদিত নেতা। তিনিই প্রকৃত নেতা। তিনিই ন্যাচারাল নেতা। যারা পেছনের দরজা দিয়ে ক্ষমতায় যেতে চায়। তারা তাকে সহ্য করছে না। এই কারণেই আমরা দেখি নানা ধরনের বক্তব্য বিবৃতি। তারেক রহমানের মালয়েশিয়ায় কারখানা আছে, ইন্ডাস্ট্রি আছে। উনি অবৈধভাবে ষোল বছর ক্ষমতায় থাকলেন কোথায় সেই কারখানা? কোথায় সেই ইন্ডাস্ট্রি? একটাও তো তার প্রমাণ দিতে পারলেন না।’
তিনি অন্তবর্তী সরকারের উদ্দেশের বলেন, ‘দেশে নানা পেশার মানুষ হত্যাকান্ডের শিকার হচ্ছে, শ্রমিক অসন্তোাষ হচ্ছে, জিনিসপত্রের দাম কমছে না - এসব ব্যর্থতার দায় কার!
‘আমরা বিএনপি পরিবার’ আয়োজিত এ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিতি হিসেবে বক্তব্য রাখেন বিএনপি’র ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান।
সংগঠনের আহবায়ক আতিকুর রহমান রুমনের সভাপতিত্বে এ অনুষ্ঠানে বিএনপি’র কোষাধ্যক্ষ রশিদুজ্জামান মিল্লাত, সাংগঠনিক সম্পাদক ( রংপুর বিভাগ) আসাদুল হাবিব দুলু, পল্লী উন্নয়ন বিষয়ক সম্পাদক ফরহাদ হোসেন আজাদ, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিষয়ক সহ সম্পাদক প্রকৌশলী আশরাফ উদ্দিন বকুল, নীলফামারী জেলা বিএনপির সভাপতি আ.খ.ম আলমগীর সরকার, সাধারণ সম্পাদক জহুরুল আলম, নিহত বিএনপি নেতা গোলাম রব্বীর মেয়ে রহমত জাহান রিক্তাসহ স্থানীয় নেতৃবৃন্দ বক্তৃতা করেন।