বাসস
  ০২ জানুয়ারি ২০২৫, ১৬:০৫

পিঠা বিক্রিতেই ভাগ্য বদল নেত্রকোনার আব্দুল কদ্দুসের

হাওরাঞ্চল (নেত্রকোনা), ২ জানুয়ারি, ২০২৫ (বাসস): হতদরিদ্র আব্দুল কদ্দুস। এক সময় জীবিকার সন্ধানে গ্রাম ছেড়ে উপজেলা শহরে চলে যান। আট সদস্যের পরিবার নিয়ে আশ্রয় নেন শহরের জরাজীর্ণ একটি ভাড়া বাসায়। কি করবেন ভেবে পাচ্ছিলেন না। একপর্যায়ে তিনি শহরের রাস্তার পাশে ফুটপাটে বসে যান পিঠা নিয়ে। স্ত্রীর সহায়তায় চিতই পিঠা ও ভাঁপা পিঠাসহ নানা রকম পিঠা নিজেই তৈরি করে বিক্রি শুরু করেন। পিঠা বিক্রি করেই ভাগ্য বদল হয়েছে আব্দুল কদ্দুসের। বর্তমানে তিনি শহরে জায়গা কিনে পাকা বাড়ি করেছেন। ছেলে-মেয়েদের পড়াশোনা করাচ্ছেন কলেজে।

নেত্রকোনার কেন্দুয়া উপজেলার পৌরশহরের টেংগুরী গ্রামের বাসিন্দা আব্দুল কদ্দুস।

আজ সকাল ৯টার দিকে কেন্দুয়া পৌরশহরের দিগদাইর মোড় এলাকায় রাস্তার পাশে ফুটপাতে নিজস্ব ভ্যান গাড়িতে গ্যাসের চুলা সাজিয়ে পিঠা বিক্রির সময় কথা হয় তার সঙ্গে ।

এ সময় পিঠা বিক্রির ফাঁকে ফাঁকে আব্দুল কদ্দুস তার ভাগ্য বদলের কথা বলেন। দুই ছেলে ও চার মেয়ের জনক আব্দুল কদ্দুস। স্ত্রী-সন্তানসহ আট সদস্যের পরিবার তার। তাদের স্থায়ী ঠিকানা কেন্দুয়া উপজেলার বলাইশিমুল ইউনিয়নের নোয়াদিয়া গ্রামে। গ্রামে তাদের বসতভিটাটুকু ছাড়া তেমন কিছুই নাই। তাই তিনি নিঃস্ব অবস্থায় গত ১৮ বছর আগে পরিবার নিয়ে গ্রাম ছেড়ে জীবিকার সন্ধানে নিজ উপজেলা শহরের আরামবাগ এলাকায় আশ্রয় নিয়েছিলেন। একপর্যায়ে পিঠা বিক্রি শুরু করেন এবং তা দিয়েই তিনি নিজের ভাগ্য বদল করেছেন। বর্তমানে বড় তিন মেয়েকে বিয়ে দিয়েছেন। ছোট মেয়ে স্থানীয় কলেজে বিএ পড়ছে। দুই ছেলের মধ্যে বড় ছেলে মাইক্রোবাস চালক এবং ছোট ছেলে স্থানীয় কলেজে এইচএসসিতে অধ্যয়ন করার পাশাপাশি বাবাকে পিঠা বিক্রির কাজে সহায়তা করেন।

আব্দুল কদ্দুস বলেন, এক সময় আমি পরিবার নিয়ে নিঃস্ব ছিলাম। ঠিক মতো খাবার জুটতো না। তবে আল্লাহর রহমতে এখন আমার শহরে নিজের জায়গা-বাসা হয়েছে। খাবারেরও কোনো রকম অভাব নাই। পরিবার নিয়ে এখন আমি অনেক সুখী। তাই এখন আনন্দের  সঙ্গে পিঠা বিক্রি করি।

প্রতিদিন ভোর ৬টা থেকে সকাল ১০টা পর্যন্ত এবং বিকেল ৩টা থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত পিঠা বিক্রি করেন জানিয়ে আব্দুল কদ্দুস বলেন, আমার পিঠার চাহিদা অনেক। প্রতিদিন সকালে ২ হাজার ৫০০ টাকা থেকে ৩ হাজার টাকা এবং বিকেলে ৩ হাজার টাকা থেকে ৪ হাজার টাকার মতো পিঠা বিক্রি হয়। সব মিলিয়ে প্রতিদিন ৬-৭ হাজার টাকার পিঠা বিক্রি হয়। এতে প্রতিদিন লাভ হয় বিক্রিত টাকার অর্ধেকেরও বেশি। তবে পিঠা তৈরির উপকরণ যেমন- চাল, গুড় ও গ্যাসের দাম বেশি। তা না হলে লাভ আরও বেশি হতো।

তিনি আরও বলেন, গত ১৮ বছর ধরে আমি কেন্দুয়া পৌরসভার চাল মহাল ও দিগদাইর মোড়ে রাস্তার পাশে বসে পিঠা বিক্রি করে আসছি। আমার তৈরি পিঠা দিনমজুর, গাড়ি চালক, স্কুল-কলেজের ছাত্রছাত্রী ও চাকরিজীবীসহ সব ধরনের লোকজনই খায়। এতে আমারও খুব ভালো লাগে।

পিঠা খেতে আসা জুবাঈদ পাঠান ফাহিম নামে দশম শ্রেণির এক শিক্ষার্থী জানায়, প্রতিদিন ভোরবেলা ঘুম থেকে উঠেই বাসা থেকে প্রাইভেট পড়তে বের হই। এ সময় কদ্দুস কাকার এখানে প্রতিদিনই গরম গরম পিঠা খাই। খুব ভালো লাগে। ৫ টাকা করে দুইটা পিঠা খেলেই পেট ভরে যায়।

ভ্যান চালক আব্দুস সালাম বলেন, কদ্দুস ভাই একজন ভালো মানুষ। তার ব্যবহার খুবই ভালো। তিনি পরিস্কার পরিচ্ছন্নভাবে অনেক যত্ন করে পিঠা বানান। তার কাছে ডিম চিতই পিঠা, ভর্তা ও চিতই পিঠা, গুড়ের ভাঁপা পাওয়া যায়। খেতেও ভালো লাগে। তাই আমি কাজে বের হওয়ার পর প্রায় প্রতিদিনই তার এখানে পিঠা খেতে আসি।

এ বিষয়ে কেন্দুয়া পৌরসভার বাজার ওয়ার্ডের সাবেক কাউন্সিলর মনির খন্দকার বলেন, পিঠা বিক্রেতা আব্দুল কদ্দুসকে আমি চিনি। তিনি আমার ওয়ার্ডের আরামবাগ এলাকায় বসবাস করেছেন দীর্ঘদিন। পৌর এলাকায় অনেকেই পিঠা বিক্রি করেন। তবে তাদের মধ্যে আব্দুল কদ্দুস অন্যতম, তিনি পিঠা বিক্রি করেই বর্তমানে স্বাবলম্বী। কঠোর পরিশ্রম করলে মানুষ যে সফল হয় তারই দৃষ্টান্ত আব্দুল কদ্দুস।