শিরোনাম
ঢাকা, ২ জানুয়ারি, ২০২৫ (বাসস): বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের (বিএনপি) মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনা সরকারের সময় বিদ্যুৎ খাতে ভয়াবহ দুর্নীতি হয়েছে।
তিনি বলেন, জনগণের ভোটে নির্বাচিত হয়ে ক্ষমতায় গেলে, আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে হওয়া বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতের সব চুক্তি পুনর্বিবেচনা করে, পরবর্তীতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবে বিএনপি।
আজ বুধবার রাজধানীর গুলশানে বিএনপি চেয়ারপার্সনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি একথা বলেন।
‘গত ১৫ বছরের আওয়ামী লীগ আমলে বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতে অনিয়ম-দুর্নীতির মাধ্যমে অর্থ লুটপাট ও পাচার’- শীর্ষক বিশ্লেষণ তুলে ধরতেই এ সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে বিএনপি।
এ বিষয়ে লিখিত বক্তব্য উপস্থাপন করেন বিএনপি’র স্থায়ী কমিটির সদস্য ও সাবেক প্রতিমন্ত্রী ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু। সংবাদ সম্মেলনে দলটির স্থায়ী কমিটির আরেক সদস্য নজরুল ইসলামও খান উপস্থিত ছিলেন।
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘রাজনৈতিক তর্ক-বিতর্কের কারণে আওয়ামী লীগ এক ধরণের সুবিধা পেয়ে যাচ্ছে। আওয়ামী লীগের যে দুর্বৃত্তায়ন ও আওয়ামী লীগ যে দেশটা ধ্বংস করে দিয়েছে, এসব কথা না বলতে থাকলে, মানুষ ধীরে ধীরে সব ভুলে যাবে।’
এ সময় শেখ হাসিনার সরকারের আমলে বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতে সম্পাদিত সকল চুক্তি জনসমক্ষে প্রকাশের দাবি জানান বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু।
বিএনপি’র এই সিনিয়র নেতা বলেন, ‘আওয়ামী লীগ সরকার বিদ্যুৎ খাতে যে ম্যাজিক দেখাতে চেয়েছিল, সেই ম্যাজিক করতে গিয়ে বাংলাদেশের মানুষের পকেট কেটে নিয়ে গেছে। এখানে আপনারা প্রত্যেকে বিদ্যুত বিল পরিশোধ করেন, সবাই ভুক্তভোগী।’
তিনি আরো বলেন, ‘আসলে আওয়ামী লীগ বিদ্যুৎ খাতকে একটা ব্যবসার খাত বানিয়েছিল। তারা বুঝতে পেরেছিল যে, এ খাত থেকে কোনো হিসাব না দিয়েই কুইক মানি বানানো যায় । কারণ বিদ্যুৎ তো ‘হাওয়া’, এটি দেখা যায় না।’
তিনি বলেন, ‘ক্যাপাসিটি চার্জে কোনো মেসিনে কত ক্যাপাসিটি? কে এটাকে আইডেন্টিফাই করেছে এবং সেই মেসিনগুলো এফিসিয়েন্সি কি? এগুলো কেউ বিশ্লেষণ করেও না, দেখেও না। এই ক্যাপাসিটির নামে তারা ১৫ বছরে প্রায় এক লাখ কোটি টাকা নিয়ে চলে গেছে।’
ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু বলেন, ‘বিদ্যুৎ খাতের প্রত্যেকটা চুক্তিতে তারা কোনো পাবলিক প্রকিউরমেন্ট রুল মানেনি। তারা আইন করে নিয়মনীতি বন্ধ করে দিয়ে ইচ্ছামতো ক্লোজ টেন্ডারে এসব চুক্তি করেছে। জনগণের অধিকার আছে এসব বিষয় জানার। অন্তর্বর্তী সরকারের প্রথম কাজ হলো- জনগণের কাছে এই কন্ট্রাক্টগুলো উন্মুত্ত করে দেওয়া ও প্রত্যেকটা চুক্তি জনসমক্ষে প্রকাশ করা।’
বিদ্যুৎখাতে দুর্নীতির চিত্র তুলে ধরে সাবেক এই বিদুৎ প্রতিমন্ত্রী আরো বলেন, ‘বিদ্যুৎখাতে ১৫ বছরে মোট খরচ হলো ২ হাজার ৮৩০ কোটি ডলার। বর্তমান বিনিময় হারে তা হলো ৩ লাখ ৩৩ হাজার ৯৪০ কোটি টাকা। ক্যাপাসিটি চার্জে লুটপাট হয়েছে প্রায় এক লক্ষ কোটি টাকা।’
তিনি বলেন, ‘২০০৮-০৯ অর্থবছরে হয়েছে ১ হাজার ৫০৭ কোটি টাকা, ২০১১-১২ অর্থ বছরে হয়েছে ৫ হাজার কোটি টাকা, ২০১৮-১৯ অর্থবছরে হয়েছে ৮ হাজার ৯০০ কোটি টাকা এবং ২০২২-২৩ এ হয়েছে ১৭ হাজার ১৫৫ কোটি টাকা। তার অর্থ হলো এই যে, প্রাইভেট সেক্টারে পাওয়া প্ল্যাটগুলো দিয়েছে সেগুলো চলে নাই এবং এই টাকাগুলো তাদের (কোম্পানি) প্রেমেন্ট করেছে। এভাবে দেশের মানুষের কাছ থেকে জাস্ট লুট করে দিয়ে গেছে।’
তিনি দাবি করেন যে, ‘ক্যাপাসিটি চার্জ পাওয়া প্রতিষ্ঠানগুলোর বেশিরভাগ মেসিন খারাপ। খারাপ মেসিন এনে টাকা কামাই করে চলে গেছে।’
তিনি বলেন, ‘আর এই লুটপাটের অংশে কারা কারা ছিল? ক্যাপাসিটি চার্জের শীর্ষ পাঁচ কোম্পানির কথা আমি বলছি। এরা হলো, সামিট নিয়েছে ১০ হাজার ৬৩০ কোটি টাকা, এ্যাগ্ররো ইন্টারন্যাশনাল নিয়েছে ৭ হাজার ৯৩২ কোটি টাকা, আল্ট্রা পাওয়ার হোল্ডিংস নিয়েছে ৭ হাজার ৫২৩ কোটি টাকা, ইউনাইটেড গ্রুপ নিয়েছে ৬ হাজার ৫৭৫ কোটি টাকা, আরপিসিএল নিয়েছে ৫ হাজার ১১৭ কোটি টাকা।’
বিএনপির এই সিনিয়র নেতা বলেন, ‘কুইক রেন্টাল পাওয়ার প্ল্যান্ট আসে সাধারণত আপৎকালীন বিদ্যুৎ সংকট নিরসনের জন্য। এই প্ল্যান্ট দ্ইু বছরের, সেটা ১৫ বছর পর্যন্ত চালাচ্ছে এবং এসব কুইক রেন্টালে ৭৫% বিনিয়োগ করেছে উইথআউট রিটার্ন। আর ভারত থেকে বিদ্যুৎ আমদানির নামে ৯ বছরে ক্যাপাসিটি চার্জ দিয়েছে ১১ হাজার ১৫ কোটি টাকা। বোঝেন কি অবস্থা।’
সাবেক বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রীর দাবি, ‘আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে বিদ্যুতে যেসব উন্নয়ন করা হয়েছে, তা টেকসই না, সাসটেইনেবল না। যেকোনো সময়ে এটা মুখ থুবড়ে পড়বে।’
রূপপুর প্রকল্পের দুর্নীতির প্রসঙ্গে ইকবাল হাসান মাহমুদ টুক বলেন, ‘রূপপুরে পারমাণবিক প্রকল্পের ৫ বিলিয়ন ডলার তারা (শেখ হাসিনাসহ তার পরিবার) নিয়ে গেছে। সেটা নিয়ে আরো তদন্ত হচ্ছে। লন্ডনে টিউলিপের (বৃটিশ সাংসদ টিউলিপ সিদ্দিকী-শেখ রেহানার মেয়ে) আরও দুর্নীতি আছে।’
সাবেক বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বিপুর কোম্পানিসহ ‘একটি চক্র’ এলএনজি প্রকল্পের নামে কোটি কোটি টাকা লুটপাট করেছে বলেও অভিযোগ করেন ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু।
বিদ্যুতখাতে দুর্নীতি ও অনিয়ম প্রতিরোধে এই খাতে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করা, প্রকল্পের বাস্তবায়ন প্রক্রিয়ায় জনগণের অংশগ্রহণ বাড়ানো, দুর্নীতি রোধে কঠোর আইন প্রণয়ন, বিদ্যুৎ খাতের দুর্নীতির সাথে জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ ও নিয়মিত বিদ্যুৎ পরীক্ষা-নিরীক্ষা পর্যবেক্ষণের ব্যবস্থা গ্রহণ করা জরুরি বলে মনে করেন সাবেক প্রতিমন্ত্রী।
সংবাদ সম্মেলনে বিএনপি’র স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান বলেন, গত ১৫ বছরে বিদ্যুৎ খাতকে তারা (আওয়ামী লীগ) ব্যবসার খাত বানিয়েছিল। তাদের দুর্নীতির বোঝা এখন জনগণকে বহন করতে হচ্ছে। এই বিদ্যুৎ উন্নয়ন টেকসই নয় এবং যেকোনো সময় মুখ থুবড়ে পড়বে।