বাসস
  ১০ জানুয়ারি ২০২৫, ১৯:২২

চট্টগ্রামে বই বিনিময়ের মাধ্যমে জুলাই অভ্যুত্থানকে স্মরণ করলো পাঠকেরা

চট্টগ্রামে ৬ষ্ঠ বই বিনিময় উৎসব। ছবি: বাসস

চট্টগ্রাম, ১০ জানুয়ারি, ২০২৫ (বাসস)  রাস্তার দু’পাশে ফুটপাতে সারি সারি সাজানো বইয়ের স্টলে উপচে পড়া ভিড়। ‘বই নয়, জ্ঞানের বিনিময়’ শ্লোগানে বই বিনিময় উৎসবের এই ভিড়ে আপনি যেমন খুঁজে পাবেন স্কুল-কলেজ পড়ুয়া কাঁধে ব্যাগ ঝোলানো কিশোর-কিশোরীর দল, তেমনি দেখবেন প্রবীণ পাঠক। কখনো বা বাবার কাঁধে চড়ে আগমন ছোট্ট সোনামনিদের। এমন দৃশ্য দেখে কোনো আগন্তুক থমকে দাঁড়াতেই পারেন, কারণ বই নিয়ে এমন আয়োজনটাই যে অভাবনীয়!

চট্টগ্রামের জামালখানে এবারে বই বিনিময় করতে এসে নির্ধারিত স্টলগুলোতে গিয়ে পাঠকরা দেখতে পাচ্ছিলেন জুলাই গণঅভ্যুত্থানে শহিদদের নামে নামকরণ করা ফ্রেম, ব্যানার, গ্রাফিতিতে আয়োজকরা ফুটিয়ে তুলেছেন জুলাই গণঅভ্যুত্থানকে। উৎসবস্থলকে সাজানো হয়েছে জুলাই অভ্যুত্থানের নানা চিত্রে। সেসব চিত্রে ফিরে ফিরে আসে দ্রোহ-বেদনা-ক্ষোভের সেই দিনগুলো।

শুক্রবার (১০ জানুয়ারি) সকাল ৯টায় চট্টগ্রাম নগরীর জামালখান মোড়ে স্টোরিটেলিং প্ল্যাটফর্ম ‘ফেইল্ড ক্যামেরা স্টোরিজ’ এর উদ্যোগে জাতীয় সংগীত পরিবেশনের মাধ্যমে শুরু হয় দিনব্যাপী ৬ষ্ঠ বই বিনিময় উৎসব। উৎসবের এবারের আয়োজনটি উৎসর্গ করা হয় জুলাই গণঅভ্যুত্থানে শহিদদের উদ্দেশ্যে। আয়োজকরা জানান, সব মিলিয়ে এবারে অন্তত ৫৫০০ বই ছিল নানা স্টলে।

ব্যতিক্রমী এই বই বিনিময় উৎসবে একজন পাঠক তার পঠিত বইটি রেখে অন্য বই বিনিময় করে নিয়ে যেতে পারেন বিনামূল্যে। যেমন; কোনো পাঠকের যদি একটি উপন্যাসগ্রন্থ পড়া শেষ হয়ে থাকে কিংবা আর প্রয়োজন না হয় তিনি এসে উক্ত বইটি জমা দিয়ে অন্য কোনো অপঠিত উপন্যাসের বই তার পছন্দমতো বিনিময় করে নিয়ে যেতে পারেন। ২০২১ সাল থেকে তাদের অভিনব এই আয়োজন দেশজুড়ে সাড়া ফেলে আসছে।

এবারের উৎসবের উদ্বোধন করেন সরকারের শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার মিজানুর রহমান। তিনি বলেন, বই বিনিময় উৎসব একটি মহতি উদ্যোগ। এই উদ্যোগ আমাদের জাতীয় মানস গঠনে ভূমিকা রাখছে। এই উদ্যোগ অব্যাহত রাখা জরুরি।

প্রধান অতিথি ছিলেন একুশে পদকপ্রাপ্ত সাংবাদিক দৈনিক আজাদী সম্পাদক এম এ মালেক। তিনি বলেন, বই বিনিময় উৎসব বাংলাদেশের নানা জায়গায় ছড়িয়ে দেওয়া অপরিহার্য হয়ে পড়েছে। অনুষ্ঠানের বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন নজরুল ইন্সটিটিউটের পরিচালক প্রখ্যাত লেখক লতিফুল ইসলাম শিবলী। তিনি বই বিনিময় উৎসবের নজরুল কর্ণার উদ্বোধন করেন। উদ্বোধন শেষে তিনি জুলাইয়ে নজরুলের সাম্য-দ্রোহের চেতনায় উদ্বুদ্ধ হয়ে দেশ গড়ার আহবান জানান। জুলাই গণঅভ্যুত্থান এবং নজরুলের কবিতা নিয়ে সাজানো হয় নজরুল কর্ণার।

বই বিনিময় উৎসবের সমন্বয়ক ও ফেইল্ড ক্যামেরা স্টোরিজ এর পরিচালক সাইদ খান সাগর বলেন, আমরা কয়েক বছর আগে পাঠক তৈরির মহান উদ্দেশ্যে যে বই বিনিময় উৎসব শুরু করেছিলাম সেটা আমাদের জাতীয় সাংস্কৃতিক জীবনে বৈচিত্র্য এনেছে। বইমেলার মতো বই বিনিময় উৎসবের জন্যও পাঠক এখন অপেক্ষা করে থাকেন। বিশেষ করে যারা বই কিনতে চান কিন্তু অর্থাভাবে পারেন না, তাদের জন্য বই বিনিময় উৎসব বই পড়া অব্যাহত রাখতে সাহায্য করছে।

বই বিনিময় উৎসব এই প্রজন্মের প্রতীক উল্লেখ করে তিনি আরও বলেন, এই প্রজন্মের গর্বের নাম জুলাই অভ্যুত্থান। তাই আমরা এবার ৬ষ্ঠ বই বিনিময় উৎসবকে জুলাইয়ের রঙ্গে এমনভাবে সাজিয়েছি যাতে জুলাইয়ের স্বাধিকারবোধ সর্বদা জাগ্রত থাকে। পাঠকেরাও এবার বই বিনিময় করতে এসে নির্ধারিত স্টলগুলোতে গিয়ে দেখতে পাচ্ছিলেন জুলাই গণঅভ্যুত্থানে শহিদদের নামে নামকরণ করা বিভিন্ন স্টল।

চুয়েটের শিক্ষার্থী মো. মিনহাজ বই বিনিময় করতে এসে জানান, প্রতিবারই তিনি এই বই বিনিময় উৎসবের জন্য অপেক্ষা করে থাকেন। এবারও তার পঠিত বইগুলো নিয়ে অপেক্ষা করছিলেন কখন বই বিনিময় উৎসবের ডাক আসবে, আর তিনি তার পছন্দের বইটি বিনিময় করে নিবেন। এসে তিনি শীর্ষেন্দুর ‘দূরবীন’ রেখে বিনিময় করে নেন আখতারুজ্জামান ইলিয়াসের ‘চিলেকোঠার সেপাই’। নতুন স্বাধীনতার উচ্ছ্বাস এই উৎসবে অনুভূত হচ্ছিলো বলে জানান তিনি।

সুনীতির ‘বাংলার ইতিহাস’ বইটি বিনিময় করে লর্ড কিনরড এর ‘রাইজ এন্ড ফল’ বিনিময় করেন ব্যাংকার নিষাণ কুন্ডু। প্রতিবার কাঙ্খিত বইটি খুঁজে পেয়েছেন বলে আয়োজকদের ধন্যবাদ জানান তিনি।

বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক শাহরিয়ার ইমশিয়াত বই বিনিময় করতে এসে জুলাইয়ের থিম দেখে বলেন, জুলাই অভ্যুত্থানকে এই তরুণেরা যেভাবে নিজেদের ভেতর লালন করছে তা আশাব্যঞ্জক। এই অভ্যুত্থানের প্রেরণাই একটি পাঠকনির্ভর সমাজ তৈরি করবে বলে জানান তিনি।

এসেছিলো শিশুরাও। প্রার্থনা নামে এক চতুর্থ শ্রেণি পড়ুয়া শিক্ষার্থীকে কমিকবুক বিনিময় করতে দেখা গেছে। বিকাল হলে বাড়তে থাকে ভিড়। জামালখান পরিণত হয় সববয়সী পাঠকদের মিলনমেলায়। মাসব্যাপী একুশে বইমেলার পূর্বে এই ধরণের আয়োজন পাঠককে আড়মোড়া ভাঙতে সাহায্য করবে মনে করেন অনেকেই। উৎসবে জুলাইকে স্মরণ করাকেও ইতিবাচকভাবেই নিচ্ছেন সবাই।