বাসস
  ২২ জানুয়ারি ২০২৫, ২০:০২

আত্মীয়-পরিজনসহ সাবেক যুগ্ম কর কমিশনার ফয়সালের বিরুদ্ধে দুদকের মামলা

ঢাকা, ২২ জানুয়ারি, ২০২৫ (বাসস): জ্ঞাত আয়ের উৎসের সঙ্গে অসঙ্গতিপূর্ণ সম্পদ অর্জনের অভিযোগে নারায়ণগঞ্জ কর অঞ্চলের সাবেক যুগ্ম কর কমিশনার ও বর্তমানে বগুড়া কর অঞ্চলের অতিরিক্ত কর কমিশনার (চলতি দায়িত্ব) কাজী আবু মাহমুদ ফয়সাল, তার স্ত্রী আফসানা জেসমিন, শ্বশুর-শাশুড়িসহ ১৪ জনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। 

মামলায় অন্য যাদের আসামি করা হয়েছে, তারা হলেন- শ্যালক আফতাব আলী, শাশুড়ি মমতাজ বেগম, শ্বশুর আহম্মেদ আলী, ভাই কাজী খালিদ হাসান, মামা শ্বশুর শেখ নাসির উদ্দিন, খালা শাশুড়ি মাহমুদা হাসান, শ্যালিকা ফারহানা আফরোজ, খালা রওশন আরা খাতুন, খন্দকার হাফিজুর রহমান, বোন ফারহানা আক্তার, মা কারিমা খাতুনসহ স্বার্থ সংশ্লিষ্ট কাজী নূর ই আলম ছিদ্দিকী।

দুদকের মহাপরিচালক (প্রতিরোধ) আক্তার হোসেন আজ এক ব্রিফিংয়ে জানান, সংস্থার উপপরিচালক শেখ গোলাম মাওলা আজ ঢাকা-১ সমন্বিত জেলা কার্যালয়ে এই মামলা দায়ের করেন। 

তিনি জানান, কাজী আবু মাহমুদ ফয়সাল নিজ নামে ও তার স্বার্থ সংশ্লিষ্ট ১৩ জনসহ মোট ১৪ জনের নামে জ্ঞাত আয়ের উৎসের সঙ্গে অসঙ্গতিপূর্ণ ১৭ কোটি ২১ লাখ ৯৪ হাজার ১৮ টাকা মূল্যের স্থাবর ও অস্থাবর সম্পদ অর্জন ও দখলে রেখে এবং অপরাধলব্ধ আয়ের অবৈধ অর্থ মানিলন্ডারিংয়ের উদ্দেশ্যে পরস্পর যোগসাজশে বিভিন্ন ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানসমূহে হিসাব খুলে সন্দেহজনক লেনদেন করে দুর্নীতি দমন কমিশন আইন, ২০০৪ এর ২৭(১) ধারা ও দুর্নীতি প্রতিরোধ আইন ১৯৪৭ এর ৫(২) ধারা এবং মানিলন্ডারিং প্রতিরোধ আইন, ২০১২ এর ৪(২), ৪(৩) ধারায় শান্তিযোগ্য অপরাধ করেছেন। 

অপর ১০ জন আসামী অপরাধলব্ধ সম্পত্তি নিজ নামে গ্রহণ, দখলে নিয়ে বা ভোগ করে ফয়সালকে মানিলন্ডারিং এ সহায়তা করে দুর্নীতি দমন কমিশন আইন, ২০০৪ এর ২৭(১) ধারা এবং মানিলন্ডারিং প্রতিরোধ আইন, ২০১২ এর ৪(২), ৪(৩) ধারায় শাস্তিযোগ্য অপরাধ করেছেন। 

তিনজন আসামি বিভিন্ন ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানসমূহে হিসাব খুলে হিসাবসমূহে সন্দেহজনক লেনদেন করে ফয়সালকে মানিলন্ডারিংয়ে সহায়তা করে মানিলন্ডারিং প্রতিরোধ আইন, ২০১২ এর ৪(২), ৪(৩) ধারায় শাস্তিযোগ্য অপরাধ করেছেন।

দুদক মহাপরিচালক জানান, আসামি কাজী আবু মাহমুদ ফয়সালের নিজ নামে ৪টি প্লট, নিজের স্ত্রী আফসানা জেসমিনের নামে ২টি প্লট ও তাদের যৌথ নামে ১টি প্লট, শ্বাশুড়ি মমতাজ বেগমের নামে ১টি প্লট ও শ্বশুর আহম্মেদ আলীর নামে ১টি ফ্ল্যাট ক্রয় বাবদ মোট ৬ কোটি ৯৪ লাখ ৬২ হাজার টাকা মূল্যের স্থাবর সম্পদ অর্জন করেন।

এ ছাড়া আসামি কাজী আবু মাহমুদ ফয়সাল নিজ নামে, তার স্ত্রীর নামে, শ্যালকের নামে, ভাইয়ের নামে, স্বশুর, খালা শ্বাশুড়ির নামে ও তার স্বার্থ সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের নামে ২ কোটি ৫৫ লাখ টাকা সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগ করেছেন। 

তিনি তার স্ত্রী, শ্যালক এবং শ্বশুরের নামে মোট ১ কোটি ৭০ লাখ ৪৬ হাজার ৭১২ টাকা মূল্যের শেয়ার ক্রয়ে বিনিয়োগ করেছেন। 

ফয়সাল ও তার স্বার্থ সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের নামে অস্থাবর সম্পদ হিসাবে ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানসমূহের বিভিন্ন হিসাবে ৬ কোটি ৯৬ লাখ ৫০ হাজার ৯০৮ টাকা গচ্ছিত রেখেছেন। 

তিনি ও তার স্বার্থ সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের নামে ৬ কোটি ৯৪ লাখ ৬২ টাকা মূল্যের স্থাবর ও ১১ কোটি ২১ লাখ ৯৭ হাজার ৬০ টাকা মূল্যের অস্থাবর সম্পদসহ মোট ১৮ কোটি ১৬ লাখ ৫৯ হাজার ৬০ টাকা মূল্যের সম্পদ অর্জন করেন। 

এর মধ্যে ১৭ কোটি ২১ লাখ ৯৬ হাজার ৩১৮ টাকা মুল্যের সম্পদের বৈধ উৎস পাওয়া যায়নি। এই সম্পদ ঘুষ ও দুর্নীতির মাধ্যমে অর্জিত এবং আয়ের উৎসের সঙ্গে অসঙ্গতিপূর্ণ। 

এছাড়া নারায়ণগঞ্জসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় তার নিজ ও আত্মীয় স্বজনের নামে বিপুল পরিমাণ সম্পদ রয়েছে বলে দুদক জানায়।