বাসস
  ২৪ জানুয়ারি ২০২৫, ১১:৩৪
আপডেট : ২৪ জানুয়ারি ২০২৫, ১১:৩৯

তারুণ্যের অনুপ্রেরণা: বগুড়ার মাসুমা মরিয়মের গল্প

মাসুমা মরিয়ম। ছবি : সংগৃহীত

ঢাকা, ২৪ জানুয়ারি, ২০২৫ (বাসস) : মানুষের কল্যাণে কাজ করার ইচ্ছা কতটা শক্তিশালী হতে পারে, তার জীবন্ত উদাহরণ বগুড়ার মেয়ে মাসুমা মরিয়ম। শৈশব থেকেই স্বপ্ন দেখেন মানুষের কল্যাণে কিছু করবেন। বিশেষ করে তরুণ-তরুণীদের নিয়ে কাজ করার স্বপ্ন দেখতেন তিনি। সেই স্বপ্নই তাকে আজ তারুণ্যের এক ‘আইকন’ হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছে।

মাসুমা মরিয়ম ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইনস্টিটিউট অব ডিজাস্টার ম্যানেজমেন্ট অ্যান্ড ভালনারেবিলিটি স্টাডিজ বিষয়ে স্নাতকোত্তর করেছেন। এরই মাঝে নিজের নামের সঙ্গে যুক্ত করেছেন এক আন্তর্জাতিক পুরস্কার।

যুব উন্নয়নে বিশেষ ভূমিকার জন্য তিনি ভারতের ‘কালাম ইয়ুথ লিডারশিপ অ্যাওয়ার্ড ২০২১’ সম্মাননা পেয়েছেন।

সম্মাননার বিষয়ে আলাপ-চারিতায় মাসুমা মরিয়ম বলেন, ‘আন্তর্জাতিক পুরস্কার পাওয়ার সময় নিজের নামের সঙ্গে ‘বাংলাদেশ’ কথাটি দেখলেই অন্য রকম ভালো লাগা, আবেগ কাজ করে। এই অনুভূতি একদম আলাদা। সেই মুহূর্তে পৃথিবীর সবচেয়ে সুখী মানুষ মনে হয় নিজেকে। নিজের যা কিছু অর্জন, তা তো এ দেশের মেয়ে বলেই।’

মাসুমা শৈশব থেকেই দেখেছেন পরিবারের অন্যান্য সদস্যরা বিভিন্ন সামাজিক কাজের সঙ্গে যুক্ত। সেই অভিজ্ঞতা বা পরিবার থেকে শেখাকে গুরুত্ব দিয়েই বিশ্ববিদ্যালয়জীবনের শুরুতেই যুক্ত হন কয়েকটি সামাজিক সংগঠনের সঙ্গে। উপলব্ধি করেন, বেশির ভাগ সুযোগই রাজধানীকেন্দ্রিক। সেই বৈষম্য দূর করার চেষ্টা ছিল মাসুমার।

তারুণ্যের ইচ্ছা, সম্ভাবনা, কাজের সুযোগ, যোগ্যতা, নতুন কিছু করার ভাবনার স্বপ্ন পূরণের লক্ষ্যেই মূলত ২০১৫ সালে নিজের জন্মস্থান বগুড়ার শেরপুরে স্বপ্ন ইয়ুথ ডেভেলপমেন্ট অর্গানাইজেশন মাসুমার হাত ধরে যাত্রা শুরু করে। ২০১৮ সালে সংগঠনটি যুব উন্নয়ন অধিদপ্তরের নিবন্ধিত একটি সংগঠন হয়ে ওঠে।

শুরু থেকেই তরুণ-তরুণীদের জন্য বিভিন্ন প্রশিক্ষণ, কর্মশালা ও ক্যাম্পেইনের আয়োজনের পাশাপাশি সরকারের বিভিন্ন প্রশিক্ষণে স্থানীয় যুবকদের সুযোগ সৃষ্টিতে কাজ করছে এই সংগঠন। যুবসমাজকে দক্ষ ও স্বাবলম্বী করে গড়ে তোলার জন্য সেলাই প্রশিক্ষণ, পাখি ও পশুপালন প্রশিক্ষণ, নারীর ক্ষমতায়নবিষয়ক কর্মশালা, কম্পিউটার প্রশিক্ষণসহ নানা আয়োজন করেন তারা।

মানসিক স্বাস্থ্য ভালো রাখতে ‘সাইকোলজিক্যাল ফার্স্ট এইড ট্রেইনিং’, নারীদের ওপর অত্যাচার, ধর্ষণ প্রতিরোধে ‘রাইট টু ফাইট অ্যাগেইনস্ট হ্যারেসমেন্ট’, করোনা দুর্যোগে মানসিকভাবে সুস্থ থাকতে মানসিক স্বাস্থ্যবিষয়ক ক্যাম্পেইন ‘হাউ আর ইউ, রিয়েলি?’ ক্যাম্পিংয়ের আয়োজন ছাড়াও সংগঠনের স্বেচ্ছাসেবকদের প্রতি মাসে গ্রাফিক্স ডিজাইন, ই-মেইল যোগাযোগ ইত্যাদি প্রশিক্ষণ দেয় মাসুমার সংগঠন।

বর্তমানে ৭ জন কার্যকরী সদস্য এবং ২০ জন সাধারণ সদস্যের পাশাপাশি দেশের বিভিন্ন কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ে ৬২ জন স্বেচ্ছাসেবী ও ২৬ জন ক্যাম্পাস অ্যাম্বাসেডর নিয়ে কাজ করছে স্বপ্ন ইয়ুথ ডেভেলপমেন্ট অর্গানাইজেশন।

এক প্রশ্নের উত্তরে মাসুমা বলেন, আমরা ছোট পরিসরে ২০১৫ সালে নিজ উপজেলা থেকেই কাজটা শুরু করি। এতে স্থানীয় তরুণ-তরুণীরা বেশ আগ্রহ দেখিয়েছে। আমাদের সঙ্গে যুক্ত হয়েছে। নানাভাবে সহযোগিতা করেছেন স্থানীয় কর্তৃপক্ষও। এখন দেশের ও দেশের বাইরের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে সমাজ উন্নয়ন সংক্রান্ত কাজ করার বিষয়ে যোগাযোগ করছেন বলে জানান তিনি।

সম্প্রতি ভারতের খোয়াব ফাউন্ডেশন সে দেশের সাবেক রাষ্ট্রপতি এ পি জে আবুল কালাম আজাদের স্মরণে তৃতীয়বারের মতো আয়োজন করে ‘কালাম ইয়ুথ লিডারশিপ কনফারেন্স ৩.০’। বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে তরুণেরা এতে অংশগ্রহণ করে। ভার্চ্যুয়াল সম্মেলনে বিভিন্ন দেশের মোট ২২ জনকে এ পুরস্কার দেওয়া হয়।

এদিকে গত বছর ‘কালাম ইয়ুথ লিডারশিপ কনফারেন্স-২০২০’-এ সেরা বক্তার পুরস্কারও পেয়েছিলেন মাসুমা। এ ছাড়া সামাজিক ও যুব উন্নয়নে ভূমিকা রাখায় ‘ন্যাশনাল ইয়ুথ আইকন অ্যাওয়ার্ড ২০১৯’, ‘আউটস্ট্যান্ডিং লিডারশিপ অ্যাজ আ ফ্রন্ট লাইন ফাইটার ডিউরিং কোভিড-১৯’, ‘গ্লোবাল চেঞ্জমেকার অ্যাওয়ার্ড-২০২০’ সম্মাননা আছে সমাজকর্মী মাসুমার ঝুলিতে।

ভবিষ্যতে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনায় কাজ করার ইচ্ছে রয়েছে মাসুমার। তিনি বলেন, আমি পড়াশোনা করছি দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা নিয়ে। বাংলাদেশের উপকূলীয় এলাকা ছাড়াও বিভিন্ন প্রান্তে মানুষেরা নানা দুর্যোগের সঙ্গে যুদ্ধ করে জীবন-যাপন করছে। আমি তরুণ সমাজের মধ্যে এই বোধ সৃষ্টি করতে চাই যেন তারা নিজ জায়গা থেকে দক্ষতা উন্নয়ন ঘটাতে পারে এবং মানুষের কল্যাণে নিজেকে নিয়োজিত করার তাগাদা পায়।

মাসুমা বলেন, ‘এভাবে সচেতন ও দক্ষ তারুণ্য-ই একদিন বাংলাদেশকে বিশ্ব দরবারে নতুন করে পরিচয় করিয়ে দেবে।’