শিরোনাম
ঢাকা, ২৪ জানুয়ারি, ২০২৫ (বাসস): বিএনপি’র সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব অ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভী স্বাভাবিক নিয়মের গণতান্ত্রিক প্রবাহমানতা বজায় রাখার ওপর গুরুত্ব আরোপ করেছেন।
তিনি বলেন, অন্তর্বর্তী সরকার গণতান্ত্রিক আন্দোলনের ফসল। আর গণতন্ত্র মানেই বিদ্যমান পরিস্থিতির আলোকে আলোচনা-সমালোচনা। যারা গণতন্ত্রের প্রতি আস্থাবান, তারা প্রেক্ষাপট বিবেচনায় আলোচনা-সমালোচনা দু’টোই গ্রহণ করবে।
অন্তর্বর্তী সরকারের উদ্দেশ্যে প্রশ্নোচ্ছলে রিজভী বলেন, ‘নির্বাচন প্রশ্নে গড়িমসি কেন ! আর কেনোই বা পতিত ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনার কথার পুনরাবৃত্তি হবে যে আগে সংস্কার পরে নির্বাচন। এর মানে, শেখ হাসিনার মতো বলা যে-আগে উন্নয়ন পরে গণতন্ত্র। আমরা এই কথা শুনতে চাই না। কারণ, সংস্কার হচ্ছে চলমান একটি প্রক্রিয়া। যা, যুগের পর যুগ চলতে পারে। নানা কারণে নতুন-নতুন সংস্কার হতে পারে। এর পরিিেক্ষতে গণতন্ত্রের যে প্রক্রিয়া, গণতন্ত্রের যে প্রবাহমানতা, তা আটকে রাখবেন কেন!’
বিএনপি’র সিনিয়র যুগ্ম-মহাসচিব শুক্রবার রাজধানীর বনানী কবরস্থানে বিএনপি’র চেয়ারপার্সন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার কনিষ্ঠ পুত্র আরাফাত রহমান কোকোর দশম মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে তার (কোকো) কবর জিয়ারত শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে এসব কথা বলেন।
এ সময় তিনি উল্লেখ করেন, ‘শুনতে পাচ্ছি সরকারের ভেতর থেকেই বিভিন্ন লোক রাজনৈতিক দল গঠন করার চেষ্টা করছে। আর, উপদেষ্টারা দল গঠন করলে সরকারের নিরপেক্ষতা নিয়ে জনগণ-তো প্রশ্ন করতেই পারে। আমরা দেখছি, অন্তর্বর্তী সরকার গঠিত হওয়ার পর থেকেই কোনো কোনো উপদেষ্টা বিএনপি’র প্রতি অত্যন্ত বিরূপ ধারণা পোষণ করে প্রকাশ্যে-অপ্রকাশ্যে কথা বলছেন, যা কাম্য হতে পারে না।’
রুহুল কবির রিজভী বলেন, ‘গণতন্ত্রের জন্য, অবাধ সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য, গত ১৬ বছর ধরে এদেশের মানুষ অপেক্ষা করেছে, লড়াই করেছে, রক্ত ঝরিয়েছে, নিজের জীবন উৎসর্গ করেছে। সেই অবাধ- সুষ্ঠু নির্বাচন দিতে এত দ্বিধা - গড়িমসি কেন ! এটাই আজকে জনগণের জিজ্ঞাসা, এটা কী কোনো অন্যায় ?’
বিএনপি’র শীর্ষ-স্থানীয় এই নেতা বলেন, আন্দোলনের পরিপ্রেক্ষিতে অন্তর্বর্তী সরকার প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। দেশের সব গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক দল এই সরকারকে সমর্থন দিয়েছে। তাই, দেশের মানুষের প্রত্যাশা এই সরকার নিরপেক্ষভাবে দায়িত্ব পালন করবে, গণতন্ত্রকে শক্তিশালী করার জন্য পদক্ষেপ নেবে।
তিনি বলেন,‘কিন্তু যখন শুনি আগে সংস্কার, পরে নির্বাচন তখন মনে হয়, শেখ হাসিনার ‘আগে উন্নয়ন-পরে নির্বাচন’ কথাটিই প্রতিধ্বনিত হচ্ছে। এটা অন্তর্বর্তী সরকারের কোনো উপদেষ্টার কাছ থেকে শোনা- অন্তত: আমরা মনে করি শোভন নয়।’
রিজভী আবারো প্রশ্নোচ্ছলে বলেন, ‘বাজারে নিত্য পণ্যের দাম বৃদ্ধি পাওয়ার বিষয়ে সমালোচনা করা যাবে না ! সরকারের প্রশাসন যদি নিরপেক্ষভাবে কাজ না করে তার জন্যও কী সমালোচনা করা যাবে না ? তাহলে কিসের ভয়ে বলা হয় যে, ১/১১ এর পুনরাবৃত্তি হতে পারে! উপদেষ্টারা কি বিজ্ঞলোকদের রাজনীতি শেখাতে চায় ?’
আন্দোলনের পর প্রশাসনে এখনো ৭০ শতাংশ কর্মকর্তা -কর্মচারী আওয়ামী লীগের দোসর- এ কথা উল্লেখ করে বিএনপি’র যুগ্ম-মহাসচিব বলেন, ‘পতিত স্বৈরাচারের দোসররা এখনো দেশ চালাচ্ছেন। কিন্তু যারা বঞ্চিত হয়েছিলেন, তাদের হয়তো-বা- কয়েকজনকে প্রমোশন দেওয়া হয়েছে। কিন্তু তাদেরকে কোনো গুরুত্ব দেওয়া হয়নি। অধিকাংশ সচিব এবং প্রশাসনের সিংহভাগ কর্মকর্তা হলেন ফ্যাসিস্টদের দোসর। তাদেরকে দিয়েই তো দেশ চালাচ্ছেন, তাহলে জিনিসপত্রের দাম কমবে কি করে ! কি করে আইন শৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণ করবেন- কারণ ওরাই তো বিভিন্ন জায়গায় ঘাপটি মেরে বসে আছে !’
বিএনপি’র নেতা সাইফুল আলম নীরব, আমিনুল হক, এস এম জাহাঙ্গীর হোসেন প্রমুখ এ সময় উপস্থিত ছিলেন।