বাসস
  ২৯ জানুয়ারি ২০২৫, ১৭:৫৭

অর্থনীতি স্থিতিশীল করতে সমন্বিত পদ্ধতির ওপর জোর দিয়েছে সিপিডি

বুধবার রাজধানীতে সিপিডি সেন্টারে বক্তব্য দেন নির্বাহী পরিচালক ড. ফাহমিদা খাতুন। ছবি : সংগৃহীত

ঢাকা, ২৯ জানুয়ারি, ২০২৫ (বাসস) : বহুমুখী চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা, অর্থনীতি স্থিতিশীল করা এবং দুর্বল, নিম্ন ও সীমিত আয়ের পরিবারগুলোকে রক্ষা করতে সমন্বিত পদ্ধতির ওপর জোর দিয়েছে সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি)।

সিপিডি’র নির্বাহী পরিচালক ড. ফাহমিদা খাতুন বলেন, ‘আগামী মাসগুলোতে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করার জন্য অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে একটি ভারসাম্যপূর্ণ ও কার্যকর কৌশল গ্রহণ করতে হবে, যা তাৎক্ষণিক সংকট মোকাবিলা করবে এবং রাজনৈতিকভাবে নির্বাচিত সরকার মাঝারি থেকে দীর্ঘমেয়াদী সংস্কার শুরু করবে।’

রাজধানীর সিপিডি সেন্টারে ‘বাংলাদেশ অর্থনীতি ২০২৪-২৫ : প্রথম অন্তর্বর্তীকালীন পর্যালোচনা’ শীর্ষক এক মিডিয়া ব্রিফিংয়ে এ কথা বলেন।

ফাহমিদা বলেন, গত কয়েক বছরে বাংলাদেশের অর্থনীতি উল্লেখযোগ্য চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হয়েছে। এগুলোর বেশ কয়েকটি সমস্যার মধ্যে- দুর্বল রাজস্ব ব্যবস্থার ফলে আর্থিক অবস্থান সংকুচিত হওয়া, বাজেট ঘাটতি মেটাতে ব্যাংক ঋণের উপর অতিরিক্ত নির্ভরতা, ব্যাংকগুলোতে তারল্য সংকট, প্রয়োজনীয় পণ্যের উচ্চ মূল্য, কম বিনিয়োগ ও বৈদেশিক রিজার্ভ হ্রাস সামষ্টিক অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতাকে প্রভাবিত করেছে।

২০২৪ সালের জুলাই মাসে গণঅভ্যুত্থানের কথা স্মরণ করে তিনি বলেন, অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে অর্থনীতির গুরুত্বপূর্ণ চ্যালেঞ্জগুলো মোকাবিলা করার দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।

তিনি আরও বলেন, এই বহুমুখী চ্যালেঞ্জগুলো মোকাবিলা করার জন্য একটি সমন্বিত পদ্ধতির প্রয়োজন। ‘এগুলো হলো- জনসাধারণের জন্য স্বল্পমেয়াদী ত্রাণ ভারসাম্য বজায় রাখা, দীর্ঘস্থায়ী সমস্যাগুলি মোকাবেলা করা ও অর্থনৈতিক মৌলিক বিষয়গুলোকে শক্তিশালী করার জন্য টেকসই সংস্কার বাস্তবায়ন করা।’

ফাহমিদা বলেন, তবে ২০২৫ অর্থবছরের প্রথমার্ধে বৈদেশিক খাতের ইতিবাচক প্রবণতা, শক্তিশালী রপ্তানি প্রবৃদ্ধি এবং শক্তিশালী রেমিট্যান্স প্রবাহ উৎসাহব্যঞ্জক।

তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশের ব্যাংকিং খাত দুর্বল শাসনব্যবস্থা, অদক্ষতা ও দুর্বল নিয়ন্ত্রক কাঠামোসহ পদ্ধতিগত চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি। এসসিবিতে নিয়োগ ও লাইসেন্সিং সিদ্ধান্তসহ বিভিন্ন স্তরে রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ, এ খাতের কর্মক্ষমতাকে দুর্বল করে দিয়েছে। দুর্বল অভ্যন্তরীণ নিয়ন্ত্রণ, অকার্যকর ঝুঁকি ব্যবস্থাপনা ও অপর্যাপ্ত আইনি কাঠামো খেলাপি ঋণকে আরো বাড়িয়ে তোলে। অন্যদিকে খেলাপিরা আইনি ফাঁক-ফোকর ও বিচার ব্যবস্থার বিলম্বকে কাজে লাগায়।

এ ছাড়াও ব্যাংকিং কোম্পানি আইন প্রায়শই স্বার্থান্বেষী গোষ্ঠীর পক্ষে সংশোধন করা হয়েছে বলে তিনি উল্লেখ করেন।

তিনি বলেন, ‘ব্যাংকিং খাতের স্থিতিশীলতা ও দক্ষতা পুনরুদ্ধারের জন্য স্বল্প, মধ্যম ও দীর্ঘমেয়াদী ব্যবস্থার মাধ্যমে ব্যাপক সংস্কার বাস্তবায়ন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তবে এই সংস্কারগুলোকে সর্বোচ্চ স্তরের রাজনৈতিক প্রতিশ্রুতি দ্বারা সমর্থিত হতে হবে।’

মিডিয়া ব্রিফিংয়ে সিপিডি’র বিশিষ্ট ফেলো অধ্যাপক মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, দেশের কর-জিডিপি অনুপাত খুবই কম এবং এই সমস্যা সমাধানের জন্য সুনির্দিষ্ট ব্যবস্থা গ্রহণ করা আবশ্যক।

তিনি বলেন, মজুরি বৃদ্ধির থেকে মুল্যস্ফীতি দিগুণ হারে বৃদ্ধি পাচ্ছে, যার ফলে সাধারণ মানুষের জীবনযাত্রার মান হ্রাস পাচ্ছে। আয় বৈষম্য মোকাবিলার সুযোগ ছিল এবং বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলন এই ক্ষেত্রে একটি উল্লেখযোগ্য সুযোগ তৈরি করেছে।