বাসস
  ০১ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ২০:২৮
আপডেট : ০১ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ২১:২১

গণঅভ্যুত্থানের সত্য ঘটনা অবলম্বনে বইমেলায় এলো বাতিঘরের গ্রন্থ ‘জুলাইর গল্প’

জুলাইয়ের গল্পের প্রচ্ছদ। ছবি : ফেসবুক

।। নেছার উদ্দিন ।।

ঢাকা,  ১ ফেব্রুয়ারি, ২০২৫ (বাসস) : জুলাইয়ের গণঅভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে এদেশে আওয়ামী লীগের দীর্ঘ দুঃশাসনের অবসান হয়েছে। পতন হয়েছে স্বৈরাচার শেখ হাসিনার। বুদ্ধিজীবী ও লেখক সমাজ নানান আঙ্গিকে শিল্প-সাহিত্যে জুলাই গণঅভ্যুত্থানকে চিত্রিত করার প্রয়াস চালিয়ে যাচ্ছেন। তেমনই একটি বই ‘জুলাইর গল্প’।

এ বছর অমর একুশে বইমেলায় বাতিঘর প্রকাশনী থেকে প্রকাশ হচ্ছে গল্পগ্রন্থ ‘জুলাইর গল্প’। গল্পগ্রন্থটি সম্পাদনা করেছেন বাতিঘর প্রকাশক লেখক মোহাম্মদ নাজিম উদ্দিন।

‘জুলাইর গল্প’ বইতে মোট ১৫টি ছোটগল্প স্থান পেয়েছে। জুলাই গণঅভ্যুত্থানের নানান ঘটনাকে উপজীব্য করে রচিত হয়েছে এই গল্পগুলো। ফুঁটে উঠেছে জুলাই গণঅভ্যুত্থানে আওয়ামী ধ্বংসযজ্ঞের নানান দিক।

গল্পগ্রন্থটির সম্পাদক লেখক মোহাম্মদ নাজিম উদ্দিন বাসস’র সঙ্গে বইটির নানান দিক নিয়ে কথা বলেছেন। জুলাই গণঅভ্যুত্থানে প্রত্যক্ষভাবে অংশগ্রহণ করা লেখকেরা সত্য ঘটনাকে উপজীব্য করে ‘জুলাইর গল্প’র গ্রন্থে ছোট গল্পগুলো লিখেছেন বলে তিনি জানান।

নাজিম উদ্দিন বলেন, এই গল্পগ্রন্থে যারা গল্প লিখেছেন সবাই আন্দোলনে সক্রিয় অংশগ্রহণ করেছিল। সত্য ঘটনা অবলম্বনে গল্পগুলো রচিত হয়েছে। জুলাইকে উপজীব্য করে বাতিঘরের লেখকদের গল্প লেখার পরামর্শ দিয়েছিলাম। কেননা, ছোট গল্পের মাধ্যমে জুলাইয়ের ঘটনাগুলো যদি তুলে আনা না যায় তবে কিছুদিন পর এসব ইতিহাস হারিয়ে যাবে।

ছোটগল্পের মাধ্যমে জুলাইকে ধরে রাখার তাগিদ অনুভব কেন করেছেন? এমন প্রশ্নের জবাবে নাজিম উদ্দিন বলেন, ৯০-এর গণঅভ্যুত্থান পরবর্তী একটিও ছোটগল্প লেখা হয়নি। অথচ আমাদের ইতিহাসে তা ছিল উল্লেখযোগ্য ঘটনা। এই বিষয়টি আমাকে খুব আশাহত করেছে। এরপর ৭১-এর মুক্তিযুদ্ধ নিয়েও আমাদের খুব বেশি সাহিত্য রচিত হয় নাই। সাহিত্য যা হয়েছে তা অনেক পরে। মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে অনেক লেখক একেবারে দলীয় দৃষ্টিকোণ থেকে লিখেছেন।

তিনি বলেন, এসব উপলব্ধি থেকে মনে হয়েছে গণঅভ্যুত্থান পরবর্তী ছোটগল্প লেখা না হলে অনেক ইতিহাস নষ্ট হয়ে যাবে। এগুলো ধরে রাখতে হবে ছোট গল্পের মাধ্যমে। ছোটগল্পের মাধ্যমে ছোট-ছোট ইতিহাস ফুঁটে উঠে যা উপন্যাসে তুলে আনা কষ্টকর।’

নাজিম বলেন, গল্পগুলোর মাধ্যমে আন্দোলনে জড়িত সাধারণ মানুষের কথাগুলো উঠে এসেছে। গল্পগুলো পড়লে যে কেউ বুঝবে এর মাধ্যমে আন্দোলনের সত্য চিত্র উঠে এসেছে।

জুলাই গণ-অভ্যুত্থান নিয়ে বাতিঘর আর কোন বই প্রকাশ করবে কী না? জানতে চাইলে তিনি বলেন, পরে আরও একটি ছোটগল্পের বই বের হবে। এ ছাড়া জুলাই গণঅভ্যুত্থান নিয়ে একটি নন-ফিকশন বই বের হবে। একটি ডকুমেন্টেশন করবে বাতিঘর। কেননা সময় যত যাবে ঘটনাগুলো বিকৃতি হয়ে যাবে।

জুলাই নিয়ে সাহিত্য রচনার বিষয়ে তিনি বলেন, আমি বাতিঘরের লেখকদের বলেছি- এক বছরে আমরা যদি ১ হাজার গল্প লিখতে পারি তবে জুলাইয়ের অভ্যুত্থান সাহিত্যে টিকে থাকবে।

তিনি বলেন, আন্দোলনে সম্পৃক্ত লেখকদের বলবো এখনই সময় জুলাইয়ের সত্য ঘটনাগুলো লিপিবদ্ধ করার। কেননা এসব ইতিহাস এখন না লিখলে কিছুদিন পর হারিয়ে যাবে। দলাদলি, বিভক্তি তৈরি হলে  লেখায়ও বিভক্তি হবে।

‘জুলাইর গল্প’ গ্রন্থে লিখেছেন তরুণ লেখক হাসান ইনাম। তিনি বাসসকে বলেন, এই গল্পগ্রন্থে আমি দু’টো গল্প লিখেছি। দুটো গল্পই জুলাইয়ের সত্য ঘটনাকে কেন্দ্র করে রচিত। ‘একটু যদি বাতাস হইতো’ গল্পে আন্দোলনের সময় সাভারে যে সাতটি লাশ পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে সে ঘটনাকে কেন্দ্র করে রচিত হয়েছে। ওই পুড়িয়ে দেওয়া লাশগুলোর পরিবারের সঙ্গে আমি কথা বলেছি। তাদের কথাগুলো এখানে ফুটে উঠেছে।

তিনি বলেন, অপর একটি গল্পের মাধ্যমে তুলে ধরেছি- আন্দোলনের সময় যারা জেলে গিয়েছিলেন তারা কীভাবে হাসিনা পালানোর খবর পেলেন। সে সময় তাদের অনুভূতি কী রকম ছিল তা নিয়ে।