শিরোনাম
ঢাকা, ১ ফেব্রুয়ারি, ২০২৫ (বাসস) : হিউম্যান রাইটস ওয়াচ (এইচআরডব্লিউ) নির্বিচারে গণগ্রেফতার ও জোরপূর্বক গুম এবং অজ্ঞাতনামা ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের নিষিদ্ধ করতে একটি পদ্ধতি তৈরির সুপারিশ করেছে।
গত ২৭ জানুয়ারি প্রকাশিত এইচআরডব্লিউ’র এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ‘নির্বিচারে গ্রেফতার ও জোরপূর্বক গুম, অজ্ঞাতনামা ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের এবং গণগ্রেফতারি পরোয়ানা নিষিদ্ধ করতে অন্তর্র্বর্তী সরকারের উচিত একটি পদ্ধতি তৈরি করা। সমালোচকদের অস্পষ্ট ও অতিরিক্ত বিস্তৃত অভিযোগ নির্দেশ করে এমন আইনগুলো সংশোধন করা উচিত।
এইচআরডব্লিউ’র এশিয়াবিষয়ক পরিচালক ইলেইন পিয়ারসনের নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধিদল গত ২৮ জানুয়ারি প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের কাছে ‘জুলাই বিপ্লবের পর : এ রোডম্যাপ টু লাসিং সিকিউরিটি সেক্টর রিফর্ম ইন বাংলাদেশ’ শীর্ষক ৫০ পৃষ্ঠার একটি প্রতিবেদন হস্তান্তর করেন।
এইচআরডব্লিউ’র প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে যে, গত ১৫ বছর ধরে শেখ হাসিনা সরকার জোরপূর্বক গুম, বিচারবহির্ভূত হত্যা, নির্বিচারে গ্রেফতার, নজরদারি ও নির্যাতনের মাধ্যমে সমালোচক এবং বিরোধী দলের সদস্যদের দমন করার জন্য নিরাপত্তা বাহিনী মোতায়েন করেছিল।
এতে বলা হয়েছে, অন্তর্র্বর্তী সরকারের উচিত জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের মাধ্যমে আইন প্রয়োগের ওপর স্বাধীন বেসামরিক তদারকি প্রতিষ্ঠা করা, যাতে সকল অজ্ঞাত এবং গোপন আস্তানা পরিদর্শন করার সক্ষমতা থাকে।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, অবিলম্বে অন্তর্র্বর্তী সরকারকে নিশ্চিত করতে হবে যাতে কাউকে অন্যায়ভাবে বা বেআইনিভাবে আটক করা না হয়।
বিশ্বের অন্যতম মানবাধিকার সংস্থা এইচআরডব্লিউ সুপারিশ করেছে যে, মৌলিক প্রক্রিয়ার প্রতি যথাযথ শ্রদ্ধা রেখে এবং তাদের আটকের মেয়াদ শেষ হওয়ার তারিখ জানানোসহ প্রত্যেক ব্যক্তিকে আইন অনুসারে আটক করা উচিত।
যে কারণেই হোক না কেন, আটক প্রত্যেক ব্যক্তিকে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে বিচারক বা বিচার বিভাগীয় প্যানেলের সামনে হাজির করা উচিত যারা তাদের আটকের বৈধতা ও প্রয়োজনীয়তা সম্পর্কে রায় দেবে এবং মুক্তির যে কোনো আদেশ অবিলম্বে মেনে চলা উচিত।
এ ছাড়াও আরও বলা হয়েছে যে, আটক কেন্দ্র জনসাধারণের কাছে প্রকাশ এবং দেখার জন্য উন্মুক্ত করা উচিত।
আদালতগুলোকে হেবিয়াস কর্পাস আবেদনের ওপর দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়া এবং আটক ব্যক্তিকে নিরাপদে বিচারকের সামনে হাজির করার জন্য জোর দেওয়া উচিত।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, অপরাধীদের যাতে জবাবদিহিতার আওতায় আনা যায় এমন আইন প্রণয়ন করে সরকারের প্রকাশ্যে ও স্পষ্টভাবে বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড নিষিদ্ধ করা উচিত।
এইচআরডব্লিউ নির্যাতন কনভেনশনের ঐচ্ছিক প্রোটোকল অনুসমর্থন এবং অভিযোগের অবস্থা, তদন্ত, মামলা এবং প্রতিকার সম্পর্কে জনসাধারণের তথ্য সরবরাহসহ নির্যাতন ও হেফাজতে মৃত্যু (প্রতিরোধ) আইনটি যথাযথভাবে প্রয়োগের পদক্ষেপ নেওয়ার পরামর্শ দিয়েছে।
এতে ফৌজদারি কার্যবিধির ৫৪ ও ১৬৭ ধারা বাতিল করা উচিত যা পুলিশকে রিমান্ড নামে পরিচিত আইনজীবী ছাড়াই ১৫ দিনের জন্য লোকজনকে আটক রাখার ক্ষমতা দেয়। এ সময় যখন তখন কর্তৃপক্ষ আটক ব্যক্তিদের ওপর প্রায়শই নির্যাতন চালায়।
মানবাধিকার সংস্থাটি বলেছে, জাতিসংঘের স্ট্যান্ডার্ড মিনিমাম রুলস ফর নন-কাস্টডিয়াল মেজার্স (টোকিও রুলস) এবং ইউএন স্ট্যান্ডার্ড মিনিমাম রুলস ফর দ্য ট্রিটমেন্ট অব প্রিজনার্স (নেলসন ম্যান্ডেলা রুলস) প্রয়োগ করে জরুরি ভিত্তিতে কারাগার সংস্কার শুরু করা উচিত।
এতে আরও বলা হয়, অন্তর্র্বর্তী সরকার নির্বাচনের আগে এসব সংস্কার আনার জন্য সর্বোচ্চ এক বছর সময় পাবে। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের উচিত নিরাপত্তা বাহিনীর প্রশিক্ষণ সহায়তার চেয়ে অগ্রাধিকার হিসেবে এসব পদ্ধতিগত সংস্কার বাস্তবায়নের লক্ষ্যে সরকারকে জরুরি ভিত্তিতে দক্ষতার সাথে সহায়তা করা উচিত।
ইউনূস সরকারের উচিত তদন্ত ও সুপারিশ প্রদানের জন্য জাতিসংঘ ও অন্যান্য বিশেষজ্ঞদের আমন্ত্রণ জানিয়ে সহায়তা চাওয়া।
এইচআরডব্লিউ’র প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ভবিষ্যতের সরকারগুলোকে সংস্কারকে ক্ষুণ্ন করা থেকে বিরত রাখতে মানবাধিকারবিষয়ক হাইকমিশনারের কার্যালয়ের অব্যাহত পর্যবেক্ষণ ও প্রতিবেদন নিশ্চিত করতে মানবাধিকার কাউন্সিলে একটি সর্বসম্মত প্রস্তাব জরুরি ভিত্তিতে নেয়া উচিত।