বাসস
  ০৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ১৭:৫৫

সারাদেশে বাংলা ইশারা ভাষা দিবস উদযাপিত

‘এক ভুবনে এক ভাষা, চাই সর্বজনীন ইশারা ভাষা’ এই প্রতিপাদ্যে সারাদেশে বাংলা ইশারা ভাষা দিবস উদযাপিত। ছবি : বাসস

ঢাকা, ৭ ফেব্রুয়ারি, ২০২৫ (বাসস) : সার্বজনীন ইশারা ভাষার আহ্বান নিয়ে আজ সারাদেশে যথাযোগ্য মর্যাদায় বাংলা ইশারা ভাষা দিবস-২০২৫ উদযাপিত হয়েছে। ইশারা ভাষা দিবসের এবারের প্রতিপাদ্য ‘এক ভুবনে এক ভাষা, চাই সর্বজনীন ইশারা ভাষা’।

এ দিবসটি পালন উপলক্ষে সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয় ও প্রতিবন্ধীবান্ধব বিভিন্ন বেসরকারি সংস্থা সারাদেশে শোভাযাত্রা, আলোচনা সভা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানসহ বিভিন্ন কর্মসূচি গ্রহণ করে। বিভিন্ন জেলার জনপ্রতিনিধি, সুধীজন, সুশীল সমাজ এবং সরকারি ও বেসরকারি সংস্থার প্রতিনিধিরা এসব কর্মসূচিতে অংশ নেন। 

এছাড়াও বাংলা ইশারা ভাষা দিবস উপলক্ষে সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ধীন জাতীয় প্রতিবন্ধী উন্নয়ন ফাউন্ডেশন ৫০ জন বাক ও শ্রবণ প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীকে আর্থিক প্রণোদনা দিয়েছে। এর মধ্যে নবম শ্রেণীতে অধ্যয়নরত ৫ জন, দশম শ্রেণীতে অধ্যয়নরত ১৫ জন, এস.এস.সি বা সমমান পর্যায়ে উত্তীর্ণ ১৩ জন, এইচ.এস.সি বা সমমান পর্যায়ে উত্তীর্ণ ১৫ জন এবং অনার্স,স্নাতক,মাস্টার্স বা সমমান পর্যায়ে উত্তীর্ণ ২ জন শিক্ষার্থীকে এ প্রণোদনা দেয়া হয়। শিক্ষার্থীদের প্রত্যেককে ৮০০০/- (আট হাজার) টাকা করে অনুদান দেয়া হয়। 

উল্লেখ্য, ২০১২ সালের ২৬ জানুয়ারি আন্তঃমন্ত্রণালয় সভায় সর্বসম্মতিক্রমে ৭ ফেব্রুয়ারিকে রাষ্ট্রীয়ভাবে ‘বাংলা ইশারা ভাষা দিবস’ হিসেবে নির্ধারণ করা হয়। ইশারা ভাষা বা সাংকেতিক ভাষা বা প্রতীকী ভাষা বলতে শরীরের অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ বিশেষ করে হাত ও বাহু নড়ানোর মাধ্যমে যোগাযোগ করার পদ্ধতিকে বোঝায়। সীমিত পরিসরে হলেও দেশে ইশারা ভাষা ব্যবহার শুরু হয়েছে। কিন্তু তার কোনো মানদণ্ড নেই। বেসরকারিভাবে কিছু প্রতিষ্ঠান এক্ষেত্রে কাজ করছে। 

ওয়ার্ল্ড ফেডারেশন অব দ্য ডেফ-এর তথ্য মতে, সারা বিশ্বে প্রায় সাত কোটি শ্রবণ ও বাকপ্রতিবন্ধিতা বৈশিষ্ট্যসম্পন্ন মানুষ রয়েছেন। এর মধ্যে বাংলাদেশেই আছে প্রায় ৩০ লাখ। তবে দেশে বর্তমানে নিবন্ধিত শ্রবণ ও বাকপ্রতিবন্ধিতা বৈশিষ্ট্যসম্পন্ন মানুষের সংখ্যা ১ লাখ ৬৬ হাজার ৩৯৭ জন। যার মধ্যে ১ লাখ ১৮ হাজার ৯০৭ জন বাকপ্রতিবন্ধিতা বৈশিষ্ট্যসম্পন্ন ও ৪৭ হাজার ৪৯০ জন শ্রবণ-বাকপ্রতিবন্ধিতা বৈশিষ্ট্যসম্পন্ন। 

বিভিন্ন জেলায় বাংলা ইশারা ভাষা দিবস উদযাপিত
বাগেরহাট জেলা সমাজসেবা কার্যালয়ের উদ্যোগে জেলা সম্মেলন কক্ষে আজ শুক্রবার সকাল ১০ টায় ‘বাংলা ইশারা ভাষা দিবস ২০২৫’ উপলক্ষে বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রা, প্রদর্শনী, আলোচনা ও সহায়ক উপকরণ বিতরণ করা হয়। এ উপলক্ষে সমাজসেবা অধিদপ্তরের পক্ষ থেকে ১০ জন শারীরিক প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীকে ১০ টি হুইল চেয়ার প্রদান করা হয়। বাগেরহাট জেলা প্রশাসক আহমেদ কামরুল হাসান প্রতিবন্ধীদের কাছে হুইল চেয়ার হস্তান্তর করেন। এসময় প্রতিবন্ধীদের অভিভাবকরাও উপস্থিত ছিলেন। 

প্রতিবন্ধী উন্নয়ন সংস্থা নওগাঁ প্রতিবন্ধী সেবা ও সাহায্য কেন্দ্র এ দিবস উপলক্ষে জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে এক আলোচনা সভা ও চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতার আয়োজন করে। প্রতিবন্ধী ও অটিস্টিক শিশুরা এ চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতায় অংশ নেন। দৃষ্টি প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীরাও এসময় উপস্থিত ছিলেন। জেলা সমাজসেবা অধিদফতরের উপ-পরিচালক নূর মোহাম্মদ এর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন নওগাঁর জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আব্দুল আউয়াল। এ সময় অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন সমাজসেবা অধিদফতরের সহকারী পরিচালক মোহতাসিম বিল্লাহ, রানী এনজিওর প্রধান নির্বাহী ফজলুল হক খান, আশার আলো অটিস্টিক ও বুদ্ধি প্রতিবন্ধী বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ওছিম উদ্দিন প্রমুখ। আলোচনা শেষে চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতায় বিজয়ীদের মধ্যে পুরস্কার বিতরণ করা হয়। 

সাতক্ষীরা জেলা প্রশাসন ও জেলা সমাজসেবা কার্যালয়ের আয়োজনে আজ সকালে দিবসটি উপলক্ষে সাতক্ষীরা কালেক্টরেট চত্বর থেকে একটি বর্ণাঢ্য  শোভাযাত্রা বের হয়ে শহরের প্রধান প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ শেষে জেলা প্রশাসন সম্মেলন কক্ষে আলোচনা সভায় মিলিত হয়। জেলা সমাজসেবা কার্যালয়ের উপ-পরিচালক সন্তোষ কুমার নাথ’র সভাপতিত্বে আলোচনা সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন, সাতক্ষীরার অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) বিষ্ণুপদ পাল। অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক ( শিক্ষা ও আইসিটি) রিপন বিশ্বাস। অনুষ্ঠানে পবিত্র কুরআন থেকে তেলাওয়াত করেন সরকারি শিশু পরিবারের ধর্মীয় শিক্ষক হাফেজ মাওলানা মো. ইউনুস আলী। অনুষ্ঠানে বিভিন্ন বাক ও শ্রবন প্রতিবন্ধী স্কুলের শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা অংশ নেন।

দিবসটি উপলক্ষে কুষ্টিয়া জেলা সমাজ সেবা অধিদপ্তর কার্যালয়ের হলরুমে জেলা প্রশাসন ও সমাজ সেবা কার্যালয়ের আয়োজনে এক আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়। জেলা সমাজ সেবা কার্যালয়ের উপ-পরিচালক আব্দুল লতিফ শেখের সভাপতিত্বে উক্ত আলোচনা সভায় জেলা প্রশাসনের নেজারত ডেপুটি কালেক্টর (এনডিসি) তাফসীরুল হক মুন, জেলা সমাজ সেবা কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক মোঃ মুরাদ হোসেন বক্তব্য রাখেন। আলোচনা সভায় প্রায় শতাধিক বাক প্রতিবন্ধী অংশগ্রহণ করেন।

বাংলা ইশারা ভাষা দিবস উপলক্ষে মাগুরা জেলা সমাজ সেবা অধিদপ্তরের উদ্যোগে এক বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রা ও আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়। শোভাযাত্রা শেষে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত আলোচনা সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন জেলা প্রশাসক মোঃ অহিদুল ইসলাম।  তিনি বলেন, ‘বাংলা ইশারা ভাষা শুধুমাত্র শ্রবণ ও বাকপ্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের ভাষা নয়, এটি সমাজের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। আমাদের সবার উচিত তাদের ভাষা শেখা ও ব্যবহারে উৎসাহিত হওয়া, যাতে তারা সমাজের মূলধারায় সম্পৃক্ত হতে পারে।’ অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন মাগুরা জেলা সমাজসেবা কার্যালয়ের উপপরিচালক মোঃ জাকির হোসেন। অনুষ্ঠান শেষে বাংলা ইশারা ভাষার গুরুত্ব ও ব্যবহার সম্পর্কে সচেতনতামূলক একটি ভিডিও প্রদর্শন করা হয়। সভায় বিভিন্ন সরকারি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধি, শিক্ষক, শিক্ষার্থী এবং শ্রবণ ও বাক প্রতিবন্ধী ব্যক্তিরা উপস্থিত ছিলেন।

টাঙ্গাঈল জেলা প্রশাসন, জেলা সমাজসেবা কার্যালয় এবং প্রতিবন্ধী সেবা ও সাহায্য কেন্দ্রের উদ্যোগে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে এক বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রা ও আলোচনা সভা আয়োজন করা হয়।  

পঞ্চগড়ে শোভাযাত্রা ও আলোচনা সভার মধ্য দিয়ে বাংলা ইশারা ভাষা দিবস পালিত হয়েছে। আজ দুপুরে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সামনে থেকে শোভাযাত্রা শুরু হয়ে শহরের বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ করে একই স্থানে এসে শেষ হয়। জেলা প্রশাসন, জেলা সমাজসেবা কার্যালয়, জাতীয় সমাজ কল্যাণ পরিষদ ও জাতীয় প্রতিবন্ধী উন্নয়ন ফাউন্ডেশনের উদ্যোগে জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়। 

জেলা সমাজসেবা কার্যালয়ের উপ-পরিচালক অনিরুদ্ধ কুমার রায়ের সভাপতিত্বে সভায় আলোচনায় অংশ নেন, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) ইমাম রাজী টুলু, সদর উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা লায়লা আরজুমান, দেশ প্রতিবন্ধী স্কুলের পরিচালক জহিরুল ইসলামসহ বাক ও শ্রবণ প্রতিবন্ধী শিশু, তাদের অভিভাবক এবং গণমাধ্যমকর্মীরা।