বাসস
  ১০ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ১৮:৪৬

অন্তর্বর্তী সরকারের অবস্থান দীর্ঘায়িত করা যৌক্তিক হবে না: ড. মঈন খান

সোমবার রাজধানীর মোমেনবাগে ডেমোক্রেসি অডিটোরিয়ামে এক গোলটেবিল বৈঠকে বক্তব্য রাখেন বিএনপি নেতা ড. মঈন খান। ছবি: বাসস

ঢাকা, ১০ ফেব্রুয়ারি, ২০২৫ (বাসস) : বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল বিএনপি’র স্থায়ী কমিটি সদস্য ড. আবদুল মঈন খান বলেছেন, যৌক্তিক সময়ের মধ্যে নির্বাচন না দিয়ে অন্তর্বর্তী সরকারে নিজেদের অবস্থান দীর্ঘায়িত করতে চাইলে তা কোনোভাবেই যৌক্তিক হবে না।

সোমবার দুপুরে রাজধানীর মোমেনবাগে ডেমোক্রেসি অডিটোরিয়ামে ‘জুলাই-আগস্ট গণঅভ্যুত্থানের ছয় মাস, ছাত্র-জনতা এখন কোথায়?’ শীর্ষক গোলটেবিল বৈঠকে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন ড. মঈন খান। গোল টেবিল বৈঠকের আয়োজন করে ‘দ্যা মিলিনিয়াম ইউনিভার্সিটি’।

‘নির্বাচন করার জন্য সরকার যৌক্তিক সময় নেবে’ দলের এমন বক্তব্যকে আবারও স্মরণ করিয়ে দিয়ে ড. আবদুল মঈন খান বলেন, বিএনপি শুরু থেকেই যৌক্তিক সময়ের মধ্যে জাতীয় নির্বাচনের দাবি করে আসছে। এমনকি বিদেশি কূটনৈতিকরাও এ বিষয়ে জানতে আগ্রহী।

মঈন খান বলেন, গণতন্ত্রের জন্য দেশের লক্ষ লক্ষ মানুষ জীবন দিয়েছে। সর্বশেষ ২৪’র আন্দোলনে যে নতুন সূর্য্য উদয় হয়েছে, সেই সূর্য্য কোনো দিন আমরা অস্তমিত হতে দিতে পারি না। এ জন্য প্রয়োজনে আমাদের নতুন করে সংগ্রাম করতে হবে।

তিনি আরো বলেন, ‘৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার আন্দোলনে স্বৈরাচার শেখ হাসিনার বিদায়ের পরে আমরা অপার মুক্তির আনন্দ উপভোগ করেছিলাম। কিন্তু ছয় মাস পরে এসে এখন সেই আনন্দ উপভোগ করতে পারছি না। কারণ, দিনকে দিন দেশ এক অনিশ্চিত পথে যাত্রা করছে।’

ধানমন্ডি ৩২ নম্বরে শেখ মুজিবুরের বাড়ি ভাঙার ঘটনার প্রতি ইঙ্গিত করে বিএনপি’র এই সিনিয়র নেতা বলেন, ৫ ফেব্রুয়ারি ধানমন্ডি ৩২ নম্বরে যে ঘটনা ঘটল, এ বিষয়ে আমার কাছে একজন রাষ্ট্রদূত জানতে চেয়েছিলেন। আমি তাকে বলেছি, এর বীজ বপন হয়েছিল বেগম খালেদা জিয়ার সেনানিবাসের বাড়ি ভেঙে দেওয়া।  তবে প্রতিহিংসার রাজনীতি ভালো কিছু বয়ে আনে না।

গণ সংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি বলেন, সরকারের হাতে সংস্কার এবং নির্বাচন। এই দায়িত্ব থেকে ব্যর্থ হলে আমাদের গণতন্ত্র পূণরুদ্ধারের সকল পথ বন্ধ হয়ে যাবে। তবে হতাশ হওয়া যাবে না। জনগণের সরকার প্রতিষ্ঠার লক্ষে আমাদের ঐক্যবদ্ধ ভাবে এগিয়ে যেতে হবে।

নিরপেক্ষতা বজায় রাখাই অন্তর্বর্তী সরকারের বড় চ্যালেঞ্জ উল্লেখ করে সাকি বলেন, জুলাইয়ের গণঅভ্যুত্থানে রাজনৈতিক দলগুলো কিছুই করেনি, এমন একটা নেরেটিভ দেওয়ার চেষ্টা করা হচ্ছে। তবে একটা কথা স্পষ্টভাবে বলে দিতে চাই, স্বৈরাচার পতনের আন্দোলনে কারো একার ভূমিকা ছিল না।

অভ্যুত্থানে সবার অংশগ্রহণ আছে। এখানে কাউকে বড় কাউকে ছোট করা যাবে না।

ছাত্রদের নতুন দল গঠন প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘নতুন পার্টি যে কেউ করতে পারে। স্বাগত জানাই। তবে ক্ষমতার ছায়াতলে থেকে পার্টি করলে দেশের মানুষ ভালোভাবে নেবে না।’

বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক বলেন, নানা প্রতিকূলতার মধ্যে সরকারের ছয় মাস টিকে থাকাটাই বড় সাফল্য। দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণহীন, বিনিয়োগ বাড়বে এটাও আশাব্যঞ্জক হয়নি।

তিনি বলেন, যৌথ বাহিনীর অভিযান শুরু হয়েছে। কিন্ত অধিকাংশ ডেভিল এখনও ধরাছোঁয়ার বাইরে। সরকারের পক্ষ থেকেই আগেই বড় ডেভিলদের বের করে দেওয়া হয়েছে। সরকার এখন ছিঁচকে ডেভিলদের খোঁজছে।

অন্তর্বর্তী সরকারের উদ্দেশ্যে গণফোরামের নেতা অ্যাডভোকেট সুব্রত চৌধুরী বলেন, দ্রুত সময়ের মধ্যে নির্বাচন দিন। জাতিকে মুক্ত করুন।

গণঅধিকার পরিষদের সাধারণ সম্পাদক রাশেদ খান বলেন, একটি মহল থেকে বলা হচ্ছে, রাজনৈতিক দলগুলো হাসিনার পতন চাইনি। এটি রাজনৈতিক দলগুলোর বিরুদ্ধে গভীর ষড়যন্ত্র।

তিনি বলেন, ছাত্ররা রাজনৈতিক দল গঠন করবে। ভালো কথা। কিন্তু এটা যেন কিং পার্টি না হয়ে যায়। তাহলে রাজনৈতিক দলের প্রতি মানুষ আস্থা হারাবে।

সাংবাদিক আকবর হোসেন মজুমদার বলেন, আমাদের সমাজে একটা অস্থিরতা তৈরি হয়েছে। গত তিন/চার মাস ধরে দেখতে পাচ্ছি, সরকারের সঙ্গে রাজনৈতিক দলগুলোর একটা দূরত্ব তৈরি হচ্ছে। এটা ভালো লক্ষণ নয়।

তিনি বলেন, ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনা ও তার পলাতক দোসররা কেউ ফিরে আসুক এটা দেশের মানুষ চায় না। এই জায়গায় সবাই একমত। সুতরাং ডেমোক্রেসি, লিবারেল, উদারপন্থী, সহনশীল সমাজ তৈরি করতে হবে, এর কোনো বিকল্প নেই।

গোল টেবিল বৈঠক সঞ্চালনা করেন, ‘দ্যা মিলিনিয়াম ইউনির্ভাসিটির ট্রাস্টি বোর্ডের চেয়ারপার্সন অ্যাডভোকেট রোখসানা খন্দকার। এতে স্বাগত বক্তব্য দেন দি মিলিনিয়াম বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ড. অভিনয় চন্দ্র সাহা।

বৈঠক আরো বক্তব্য রাখেন, প্রাণ আরএফ এলের চেয়ারম্যান ও সিইও আহসান খান চৌধুরী, সাংবাদিক মঞ্জরুল আলম পান্না, বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক এম রাজীবুল ইসলাম তালুকদার বিন্দু প্রমুখ।