শিরোনাম
পাবনা, ১০ ফেব্রুয়ারি, ২০২৫ (বাসস) : পাবনার ঈশ্বরদীতে ১৯৯৪ সালে শেখ হাসিনাকে হত্যাচেষ্টা মামলায় মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত বিএনপি নেতা জাকারিয়া পিন্টুসহ তিনজন বিএনপি নেতা কারাগার থেকে মুক্তি পেয়েছেন।
আজ রোববার দুপুরে পাবনা জেলা কারাগার থেকে তারা মুক্তি পান। এ সময় জেল গেটে নেতাকর্মীদের ফুলেল শুভেচ্ছার মধ্য দিয়ে সৃষ্টি হয় এক আনন্দঘন পরিবেশ। মুক্তিপ্রাপ্ত অন্য দুইজন হলেন ঈশ্বরদী পৌর বিএনপি নেতা শহিদুল ইসলাম অটল ও ঈশ্বরদীর যুবদল নেতা মোস্তফা নুরে আলম শ্যামল।
কারাগার থেকে মুক্তি পাওয়ার পর সেখান থেকে তারা জেলা বিএনপির কার্যালয়ে পৌঁছালে তিনজনকে ফুলেল শুভেচ্ছা জানান দলের নেতৃবৃন্দ। পরে সংক্ষিপ্ত বক্তব্য দেন কারামুক্ত ঈশ্বরদী পৌর বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক জাকারিয়া পিন্টু।
পরে ঈশ্বরদী উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের সাবেক সদস্য সচিব মেহেদী হাসানের নেতৃত্বে নেতাকর্মীরা জাকারিয়া পিন্টুসহ নেতাদের নিয়ে শোভাযাত্রা বের করে।
শহরের প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ করে শোভাযাত্রাটি গাছপাড়া, টেবুনিয়া, দাশুরিয়া হয়ে ঈশ্বরদী গিয়ে শেষ হয়। সেখানে কারামুক্ত নেতাদের গণসংবর্ধনার আয়োজন করে ঈশ্বরদী উপজেলা ও পৌর বিএনপি।
প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করতে গিয়ে জাকারিয়া পিন্টু সাংবাদিকদের বলেন, মামলাটি ছিল সম্পূর্ণ ভুয়া। তৎকালীন আওয়ামী লীগের অভ্যন্তরীণ গ্রুপিংয়ের কারণে সেই গণ্ডগোল হয়েছিল। সেখানে আমরা স্যাবোটাজ হয়ে গেছি। পরে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর উদ্দেশ্যে প্রণোদিতভাবে বিএনপির ৫২ জন নেতাকর্মীকে জড়িয়ে মামলাটি করেছিল। পরে সেই মামলায় ফরমায়েশি রায় দিয়েছিল। যাতে ঈশ্বরদীতে বিএনপি মাথা তুলে দাঁড়াতে না পারে। নিজের কারামুক্তির অনুভূতি তিনি তারেক রহমানকে উৎসর্গ করেন।
১৯৯৪ সালের ২৩ সেপ্টেম্বর আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা উত্তরাঞ্চলে দলীয় কর্মসূচিতে যোগ দিতে ট্রেনে খুলনা থেকে সৈয়দপুর যাচ্ছিলেন। ট্রেনটি পাবনার ঈশ্বরদী রেলওয়ে জংশন স্টেশনে ঢোকার সময় ট্রেন বহরকে লক্ষ্য করে হামলা চালানো হয়।
এ ঘটনায় ওই সময় ট্রেনে গুলিবর্ষণ ও বোমা হামলার অভিযোগে ঈশ্বরদী জিআরপি (রেলওয়ে পুলিশ) থানার তৎকালীন ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) নজরুল ইসলাম বাদি হয়ে একটি মামলা করেন।
মামলায় তৎকালীন ছাত্রদল নেতা ও ঈশ্বরদী পৌর বিএনপির নেতা জাকারিয়া পিন্টুসহ সাতজনকে আসামি করা হয়। মামলা দায়েরের পরের বছর পুলিশ কোনো সাক্ষী না পেয়ে আদালতে চূড়ান্ত অভিযোগপত্র জমা দেয়। কিন্তু আদালত সে অভিযোগপত্র গ্রহণ না করে অধিক তদন্তের জন্য মামলাটি সিআইডিতে পাঠান।
১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর মামলাটির পুনঃতদন্ত হয়। ১৯৯৭ সালের ৩ এপ্রিল পুলিশ ঈশ্বরদীর বিএনপি, যুবদল ও ছাত্রদলের নেতা-কর্মীসহ ৫২জনের নামে আদালতে আবার অভিযোগপত্র জমা দেয়।
২০১৯ সালের ৩ জুলাই পাবনার স্পেশাল ট্রাইব্যুনাল-৩ এর তৎকালীন ভারপ্রাপ্ত বিচারক রুস্তম আলী এই মামলায় রায় ঘোষণা করেন। রায়ে বিএনপি, ছাত্রদল, যুবদলের বিভিন্ন পর্যায়ের নয়জনকে মৃত্যুদণ্ড, ২৫ জনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড এবং ১৩ জনকে ১০ বছর করে কারাদণ্ড দেওয়া হয়।
গত ৫ ফেব্রুয়ারি মামলায় মৃত্যুদণ্ডাদেশপ্রাপ্ত বিএনপি নেতা জাকারিয়া পিন্টুসহ স্থানীয় বিএনপির আরও ৯ নেতাসহ ৪৭ জনের সবাইকে খালাসের আদেশ দেন হাইকোর্ট। বিচারপতি মুহাম্মদ মাহবুব-উল ইসলাম ও বিচারপতি হামিদুর রহমানের সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চ এ রায় ঘোষণা করেন।
জেলা বিএনপির সাবেক দপ্তর সম্পাদক জহুরুল ইসলাম জানান, খালাসপ্রাপ্ত নেতাদের মধ্যে ৩০ জন হাইকোর্টের রায় ঘোষণার আগে জামিনে কারাগার থেকে মুক্তি পেয়েছেন। মৃত্যুদণ্ডাদেশ প্রাপ্তর মধ্যে পাবনা কারাগারে ছিলেন জাকারিয়া পিন্টুসহ তিনজন। তারা সোমবার মুক্তি পান। এছাড়া রাজশাহী ও ঢাকার কেরানীগঞ্জ কারাগারে থাকা বাকি নেতারা আগামীকাল মঙ্গলবার মুক্তি পাবেন বলে আশা করা হচ্ছে।