শিরোনাম
ঢাকা, ১৩ ফেব্রুয়ারি, ২০২৫ (বাসস) : গত ৯ ফেব্রুয়ারি ঢাকার সাইবার ট্রাইবুন্যালের বিচারক ও ঢাকা আইনজীবী সমিতির কতিপয় আইনজীবীর মধ্যে জামিন নামঞ্জুরের আদেশ নিয়ে বাদানুবাদ ও একে কেন্দ্র করে আদালত বর্জনের ঘটনায় গভীর উদ্বেগ জানিয়েছে বাংলাদেশ জুডিসিয়াল সার্ভিস এসোসিয়েশন।
বাংলাদেশ জুডিসিয়াল সার্ভিস এসোসিয়েশনের সভাপতি মো. আমিরুল ইসলাম ও মহাসচিব মুহাম্মদ মাজহারুল ইসলাম স্বাক্ষরিত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে গতকাল এ কথা জানানো হয়। এই ঘটনার শান্তিপূর্ণ সমাধানের পথে বিঘ্ন সৃষ্টিকারী ও বিচারালয়ে এরূপ অরাজকতা সৃষ্টির মতো আইন পরিপন্থি কাজের সাথে জড়িতদের বিচারসহ তিনটি দাবিও পেশ করা হয়েছে।
গত ৯ ফেব্রুয়ারি ঢাকার সাইবার ট্রাইবুন্যালে ঢাকা আইনজীবী সমিতির গুরুত্বপূর্ণ পদধারী কয়েকজন আইনজীবী ঢাকার বিজ্ঞ সাইবার ট্রাইব্যুনালে আসামিপক্ষে জামিন শুনানি করলে তাদের পক্ষে আদেশ না যাওয়ায় আদেশ পরিবর্তনের জন্য বিচারকের ওপর এজলাসেই চাপ সৃষ্টি করেন। এক পর্যায়ে বিচারক এজলাস থেকে নেমে যেতে বাধ্য হন।
এরপরেও আদেশ পরিবর্তন না করায় পরদিন বিচারক এজলাসে উঠলে উক্ত আইনজীবীরা বিচারককে এজলাস থেকে নেমে যেতে বলেন এবং বিচারক নামতে না চাইলে তারা হট্টগোল, বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করেন, বিচারককে হুমকি দেন। এক পর্যায়ে তারা আদালতের কর্মচারিকে এজলাসেই মারধর করেন যার ভিডিও ফুটেজ বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে বলে বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয়।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ‘আমরা গভীর উদ্বেগ ও ক্ষোভের সঙ্গে লক্ষ্য করছি যে, কতিপয় আইনজীবীর ঔদ্ধত্যপূর্ণ আচরণ ও আক্রমনাত্মক কর্মকাণ্ডের কারণে গত ৯ ফেব্রুয়ারি থেকে ঢাকার বিজ্ঞ সাইবার ট্রাইব্যুনালের বিচারকার্য পুরোপুরি স্থবির হয়ে পড়েছে, বিচারপ্রার্থী মানুষ অবর্ণনীয় হয়রানির শিকার হচ্ছে। উক্ত আইনজীবীবৃন্দ বিভিন্ন ইলেকট্রনিক, প্রিন্ট ও সোশ্যাল মিডিয়ায় অসত্য তথ্য উপস্থাপন করে বিচারকের মানহানি করারও চেষ্টা করছেন। বাংলাদেশ জুডিসিয়াল সার্ভিস এসোসিয়েশন অত্যন্ত ধৈর্য ও সতর্কতার সাথে এতোদিন পুরো ঘটনা পর্যবেক্ষণ করেছে। কিন্তু পরিস্থিতি যে পর্যায়ে যাচ্ছে তা সারা দেশের বিচারকদের মনে তীব্র ক্ষোভ ও অসন্তোষের জন্ম দিয়েছে।’
বাংলাদেশ জুডিসিয়াল সার্ভিস এসোসিয়েশন জানায়, শুরু থেকেই ঘটনাটি শান্তিপূর্ণ ও স্থানীয়ভাবে সমাধানের লক্ষ্যে সকল কর্তৃপক্ষের সাথে যোগাযোগ অব্যাহত রেখে ঢাকার বিজ্ঞ সিনিয়র জেলা ও দায়রা জজ এবং মহানগর দায়রা জজ মহোদয়গণ ঢাকা আইনজীবী সমিতির সাথে যোগাযোগ করছে। কিন্ত এসকল প্রচেষ্টা সত্ত্বেও আইনজীবী সমিতি উক্ত প্রচেষ্টাকে এড়িয়ে সংশ্লিষ্ট বিচারকের অপসারণের দাবিতে অনির্দিষ্টকালের জন্য ট্রাইব্যুনাল বর্জনের ডাক দিয়েছেন।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ‘আদালতের আদেশ দ্বারা কেউ সংক্ষুব্ধ হলে আইনগতভাবে সেই আদেশের বিরুদ্ধে উচ্চতর আদালতে যাওয়ার অথবা কর্তৃপক্ষ বরাবর লিখিত অভিযোগ দায়েরের সুযোগ থাকা সত্ত্বেও দেশের বিদ্যমান আইন ও বিচারকের সাংবিধানিক স্বাধীনতাকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে পদ ও পেশি শক্তি প্রদর্শন করে নিজের পক্ষে রায় বা আদেশ পাওয়ার লক্ষ্যে আইনজীবী কর্তৃক এজলাস ও আদালত প্রাঙ্গণে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করা ফৌজদারি অপরাধ। এতে আদালতের স্বাভাবিক বিচার কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে। বিচারপ্রার্থী সাধারণ জনগণ হয়রানির শিকার হচ্ছে এবং বিচার ব্যবস্থার প্রতি সাধারণ মানুষের অনাস্থা সৃষ্টি হচ্ছে।’
প্রধান বিচারপতি স্বাধীন বিচার বিভাগ প্রতিষ্ঠায় যে রোডম্যাপ ঘোষণা করেছেন এবং তা বাস্তবায়নে যেসকল ঐতিহাসিক উদ্যোগ হাতে নিয়েছেন, কতিপয় আইনজীবীর উক্তরূপ আচরণ ও কর্মকাণ্ড এর প্রক্রিয়াকে বাধাগ্রস্ত করছে জানিয়ে বাংলাদেশ জুডিসিয়াল সার্ভিস এসোসিয়েশন আদালত বর্জন বিষয়ের আশু-নিষ্পত্তিসহ তিনটি দাবি উপস্থাপন করেছে।
দাবিসমূহ হলো অনতিবিলম্বে তদন্তপূর্বক দায়ী ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে আইন-শৃঙ্খলা বিঘ্নকারী অপরাধ (দ্রুত বিচার) আইনে মামলা দায়ের, পেশাগত অসদাচণের দায়ে সংশ্লিষ্ট আইনজীবীদের সনদ বাতিল ও দেশের বিভিন্ন জেলায় সংঘটিত একই ধরনের ঘটনায় দায়েরকৃত আদালত অবমাননা মামলা ও সংশ্লিষ্টদের সনদ বাতিলের কার্যক্রম দ্রুত নিষ্পত্তি। অন্যথায়, এসোসিয়েশন সারাদেশের জেলা আদালতের বিচারকদের নিয়ে কঠোর কর্মসূচি গ্রহণ করবে বলে এতে উল্লেখ করা হয়।