বাসস
  ১৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ২৩:০১
আপডেট : ১৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ২৩:১৩

প্রাকৃতিক দুর্যোগে বছরে বাংলাদেশের ক্ষতি ৩০০ কোটি ডলার : জার্মানওয়াচ

প্রতীকী ছবি। জার্মানওয়াচ সৌজন্যে

ঢাকা, ১৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ (বাসস) : বাংলাদেশে বন্যা, খরা, ঝড় ও তাপপ্রবাহসহ চরম আবহাওয়া সংক্রান্ত ঘটনাগুলোর কারণে প্রতি বছর প্রায় ৩০০ কোটি মার্কিন ডলার ক্ষতি হয়ে থাকে। দেশের ৬৩ লাখের বেশি মানুষের ওপর এর নেতিবাচক প্রভাব পড়ে। ‘দ্য ক্লাইমেট রিস্ক ইনডেক্স ২০২৫’-এর প্রতিবেদনে এই তথ্য উঠে এসেছে। জার্মানওয়াচ বুধবার প্রতিবেদনটি প্রকাশ করেছে ।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০২২ সালে বাংলাদেশে প্রাকৃতিক দুর্যোগজনিত ক্ষতির পরিমাণ ছিল ২৯৯ কোটি মার্কিন ডলারেরও বেশি।

বাংলাদেশ ঝুঁকি প্রতিরোধ ও অভিযোজনমূলক কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণের ফলে গত ৪০ বছরে ঘূর্ণিঝড়ে মৃত্যুর সংখ্যা ১০০ গুণের বেশি হ্রাস পেয়েছে। ১৯৭০ সালে ঘূর্ণিঝড়ে ৫ লাখ মানুষের মৃত্যু হয়েছিল, যা ২০০৭ সালে কমে দাঁড়ায় ৪,২৩৪ জনে।

প্রতিবেদনে আরও উল্লেখ করা হয়, ২০২২ সালের মার্চ থেকে মে পর্যন্ত ভয়াবহ তাপপ্রবাহ ভারত, পাকিস্তান এবং বাংলাদেশে আঘাত হানে, যেখানে পাকিস্তানে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল ৪৯.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এতে ৯০ জনের বেশি মানুষের মৃত্যু হয়।

১৯৯৩ থেকে ২০২২ সাল পর্যন্ত বিশ্বজুড়ে ৯,৪০০-এর বেশি চরম আবহাওয়াজনিত ঘটনা ঘটেছে, যাতে প্রায় ৮ লাখ মানুষের মৃত্যু হয়েছে এবং মোট ৪.২ ট্রিলিয়ন মার্কিন ডলার ক্ষতি হয়েছে।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, চীন, ভারত এবং ফিলিপাইন চরম আবহাওয়ার শিকার হলেও তবে এক্ষেত্রে ডমিনিকা, হন্ডুরাস, মিয়ানমার এবং ভানুয়াতু সবচেয়ে ভয়াবহ ঘটনাগুলোর শিকার হয়েছে।

গত ৩০ বছরে বিশ্বব্যাপী সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত ১০টি দেশের মধ্যে তিনটি ইউরোপীয় দেশ রয়েছে। দেশ তিনটি হলো- ইতালি, স্পেন এবং গ্রিস।

বন্যা, খরা, ঝড় ও তাপপ্রবাহের সংখ্যা এবং তীব্রতা ক্রমাগত বৃদ্ধি পাচ্ছে এবং বিশ্বের কিছু অঞ্চলে এটি ‘নতুন স্বাভাবিক পরিস্থিতি’ হয়ে উঠছে।

জার্মানওয়াচ প্রকাশিত ‘দ্য ক্লাইমেট রিস্ক ইনডেক্স ২০২৫’ প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গত ৩০ বছরে গ্লোবাল সাউথের চরম আবহাওয়া সংক্রান্ত ঘটনার প্রভাব সবচেয়ে বেশি মোকাবেলা করেছে।

প্রতিবেদনটি বিশ্লেষণ করে দেখা, জলবায়ু পরিবর্তনজনিত চরম আবহাওয়া কীভাবে বিভিন্ন দেশকে প্রভাবিত করছে এবং এতে অর্থনৈতিক ও মানবিক ক্ষতির ভিত্তিতে দেশগুলোর র‌্যাংকিং প্রকাশ করা হয়েছে। সেখানে সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত দেশটি শীর্ষে রয়েছে।

জার্মানওয়াচের আন্তর্জাতিক জলবায়ু নীতির প্রধান লরা শ্যাফার এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে বলেন, ‘জলবায়ু সংকট এখন বৈশ্বিক নিরাপত্তার জন্য ক্রমবর্ধমান হুমকি হয়ে উঠেছে এবং এটি মোকাবেলায় সাহসী বহুপাক্ষিক পদক্ষেপ প্রয়োজন। সপ্তাহান্তে মিউনিখ নিরাপত্তা সম্মেলনে নেতারা যখন নিরাপত্তা চ্যালেঞ্জ নিয়ে আলোচনা করবেন, তখন তারা জলবায়ু পরিবর্তনের বিষয়টি উপেক্ষা করতে পারবেন না।’

তিনি আরও বলেন, গত তিন দশকের পরিসংখ্যানে দেখা যায় যে গ্লোবাল সাউথের দেশগুলো চরম আবহাওয়ার কারণে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। যদি এসব দেশের তথ্য গ্লোবাল নর্থের অনেক দেশের মতো ব্যাপক হতো, তাহলে অর্থনৈতিক ও মানবিক ক্ষতির আরও ভয়াবহ চিত্র প্রকাশ পেত। এক্ষেত্রে আমরা এমন এক সংকটময় এবং অনিশ্চিত পর্যায়ে প্রবেশ করছি, যা ভবিষ্যতে সংঘাত আরও বাড়াবে, সমাজকে অস্থিতিশীল করবে এবং বিশ্বব্যাপী মানব নিরাপত্তার ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে।’