বাসস
  ২০ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ২১:১২

দ্রুত নির্বাচন দিয়ে অস্থিরতা দূর করুন : মির্জা ফখরুল 

বৃহস্পতিবার কুমিল্লার লাকসাম স্টেডিয়ামে এক বিশাল জনসভায় প্রধান অতিথির বক্তৃতা করেন মির্জা ফখরুল ইসলাম। ছবি: বিএনপি মিডিয়া সেল

লাকসাম, (কুমিল্লা), ২০ ফেব্রুয়ারি, ২০২৫ (বাসস) : বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল- বিএনপি’র মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, দেশের মানুষ অস্থিরতার মধ্যে রয়েছে। 

দ্রুত নির্বাচন দিয়ে এ অস্থিরতা দূর করার আহ্বান জানিয়ে তিনি একটি রাজনৈতিক দলের উদ্দেশ্যে বলেন, ‘এমন কিছু বলবেন না, যাতে দেশ আবারও অস্থির হয়ে উঠে।’

মির্জা ফখরুল বলেন, ‘সংস্কারের কথা বলে অনেকে জাতীয় নির্বাচন পিছানোর কথা বলছেন কিন্তু সংস্কার সম্পর্কে সাধারণ মানুষ কয়জন বুঝে? দু’বেলা ভাত, মাথা গোঁজার ঠাঁই, চিকিৎসা, শিক্ষা এবং শান্তি চায় মানুষ। জনগণের কাছে এই মৌলিক অধিকারগুলোই হচ্ছে সংস্কার।’

বিএনপি’র মহাসচিব আজ বৃহস্পতিবার বিকালে কুমিল্লার লাকসাম স্টেডিয়ামে ‘রাষ্ট্র মেরামতে বিএনপি’র ৩১ দফা বাস্তবায়ন’ শীর্ষক এক বিশাল জনসভায় প্রধান অতিথির বক্তৃতায় এসব কথা বলেন। 

লাকসাম উপজেলা, পৌরসভা ও মনোহরগঞ্জ উপজেলা বিএনপি’র যৌথ উদ্যোগে আয়োজিত এ জনসভায় সভাপতিত্ব করেন বিএনপি’র শিল্প বিষয়ক সম্পাদক মো. আবুল কালাম। জনসভার শুরুতে শান্তির প্রতীক ৩১ টি কবুতর উড়িয়ে বিএনপি’র ৩১ দফাকে স্বাগত জানানো হয়। 

মির্জা ফখরুল বলেন, ‘দয়া করে দেশকে আর অস্থিতিশীল করবেন না, নৈরাজ্য সৃষ্টি করবেন না। দেশকে নিয়ে অনেক ষড়যন্ত্র হচ্ছে। শেখ হাসিনা দিল্লিতে বসে ষড়যন্ত্র করছে। ভারত আমাদের বড় প্রতিবেশী তা অস্বীকার করার সুযোগ নেই। ভারত যদি মনে করে থাকে আওয়ামী লীগই তার বড় বন্ধু তাহলে ভুল হবে। বাংলাদেশের মানুষকে তারা কাছে পাবে না। কারণ, আওয়ামী লীগ এ দশের একটি ঘৃণিত একটা রাজনৈতিক দল।’

‘সম্প্রতি ফেসবুক - ইউটিউবে দেখা যাচ্ছে বিদেশে বসেই কেউ কেউ সব সংগ্রাম করেছেন, আমরা কিছুই করিনি’ উল্লেখ করে তিনি বলেন, বিদেশে বসে অনেক কিছুই লেখা যায়, বলা যায় কিন্তু দেশের মাটিতে বৈরী পরিস্থিতিতে আন্দোলন করাই বড় কথা। এসময় বিএনপি মহাসচিব জুলাই বিপ্লবে জনগণের পক্ষে অবস্থান নেওয়ায় সেনাবাহিনীকে ধন্যবাদ জানান। 

তিনি বলেন, ‘দেশকে আবার অস্থির করার পাঁয়তারা চলছে। আমরা চাই এই অন্তর্বর্তী সরকার সফল হোক। কেননা ছাত্রজনতার রক্তের বিনিময়ে গঠিত হয়েছে এই সরকার।

বিএনপি’র মহাসচিব বলেন, ‘বাংলাদেশ একটি ক্রান্তিকাল অতিক্রম করছে। আজকে একটি ফ্যাসিবাদ সবকিছু ধ্বংস করে দিয়েছে। সেখান থেকে ছাত্রজনতার সমন্বয়ে আমরা ফ্যাসিস্টকে বিদায় করেছি। এখন একটি সরকার প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। এ সরকারকে সমর্থন না দিলে কাজ করতে পারবে না। তাই সমর্থন দিয়ে যাচ্ছি।’

তিনি বলেন, ‘আমরা ভোটের কথা কেনো বলছি। কারণ, নির্বাচিত সরকারের সঙ্গে জনগণ থাকে। অনির্বাচিত সরকারের সঙ্গে জনগণ থাকে না। তাই যত দ্রুত সম্ভব প্রয়োজনীয় সংস্কার সম্পন্ন করে নির্বাচন দিন।’

বিএনপি’র এই শীর্ষনেতা বলেন, ‘৭১ সালে দেশ স্বাধীন করেছিলাম, পরবর্তীতে আওয়ামী লীগ ভালো কিছু উপহার দিতে পারে নাই। তারই কন্যা সংসদ, বিচার বিভাগ, নির্বাচনী ব্যবস্থা, ভোটাধিকার, অর্থনীতি সব ধ্বংস করে দিয়েছে। এ থেকে দেশকে সুস্থধারায় ফিরে আনতে তারেক রহমান স্লোগান দিয়েছেন ‘টেক ব্যাক বাংলাদেশ’। আরেকটি স্লোগান দিয়েছেন ‘ফয়সালা হবে রাজপথে’। রাজপথেই ফয়সালা হয়েছে। শেখ হাসিনা পালিয়েছে।’ 

তিনি বলেন, এই লাকসামে বিএনপির নেতাকর্মীরা অনেক অত্যাচারের শিকার হয়েছে। ভয়ংকর রূপে আবির্ভূত হয়েছিল মন্ত্রী তাজুল ইসলাম, বিএনপির কাউকে এলাকায় ঢুকতে দেয়নি। লাকসামের ত্রাস ছিলেন তিনি। এখন কোথায় ? 

মির্জা ফখরুল বলেন, ‘সারা দেশে আমাদের সাবেক এমপিসহ অসংখ্য নেতাকর্মীকে গুম করা হয়েছে। ৬০ লাখ নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে মামলা দেওয়া হয়েছে। জুলাই বিপ্লবেও ২ হাজার মানুষকে পাখির মত গুলি করে হত্যা করেছে। সেই শহীদদের সম্মান জানাই, সম্মান জানাই শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানকে। শ্রদ্ধা জানাই গণতন্ত্রের জননীকে।’

তিনি বলেন, ‘নিজেদের মধ্যে কোনো বিভেদ সৃষ্টি করতে চাই না। কেউ কোনো বিভেদ সৃষ্টির চেষ্টা করবেন না। অযথা দেশকে বিভ্রান্ত করবেন না। ২৪ যেমন আমাদের স্মরণীয়, ৭১-ও স্মরণীয়। ৭১ নিয়ে কটাক্ষ করে কেউ কথা বলবেন না।’ 

মনোহরগঞ্জ উপজেলার আহ্বায়ক শাহ সুলতান খোকন, লাকসাম উপজেলার সদস্য সচিব আব্দুর রহমান বাদল এবং পৌর সদস্য সচিব বেলাল রহমানের যৌথ সঞ্চালনায় এ সমাবেশে বিএনপি’র ভাইস-চেয়ারম্যান বরকত উল্লাহ বুলু, চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা মনিরুল হক চৌধুরী, প্রবাসী বিষয়ক সম্পাদক শেখ ফরিদ আহমেদ মানিক, ত্রাণ ও পুনর্বাসন সম্পাদক হাজী আমিন উর রশিদ ইয়াসিন, কর্মসংস্থান সম্পাদক জাকারিয়া তাহের সুমন, সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক (কুমিল্লা বিভাগ) মো. মোস্তাক মিয়া, সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক (কুমিল্লা বিভাগ) কর্নেল (অব.) আনোয়ারুল আজিম, কুমিল্লা মহানগর বিএনপি’র আহ্বায়ক উৎবাতুল বারী আবু, সদস্য সচিব ইউসুফ মোল্লা টিপু, কুমিল্লা দক্ষিণ জেলার সদস্য সচিব আসিকুর রহমান ওয়াসিম, কুমিল্লার উত্তরের আহ্বায়ক আক্তারুজ্জামান সরকার, সদস্য সচিব এ এফ তারেক মুন্সীসহ স্থানীয় নেতা আমিরুজ্জামান আমির, শাহ সুলতান খোকন, আব্দুর রহমান বাদল, ইলিয়াস পাটোয়ারী, আবুল হোসেন মানু, ডা. নুরুল্লাহ রায়হান, মজিবুর রহমান প্রমুখ বক্তৃতা করেন।