শিরোনাম
ঢাকা, ২৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ (বাসস): আমলাতন্ত্র, ঠিকাদার এবং রাজনৈতিক শক্তির ত্রিপক্ষীয় আঁতাতে সরকারি ক্রয়ের বাজার দখল প্রাতিষ্ঠানিক রূপ লাভ করেছে।
আজ মঙ্গলবার রাজধানীর ধানমন্ডিতে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি) কার্যালয়ে ‘বাংলাদেশের ই-ক্রয়কার্য: একচ্ছত্র বাজার, যোগসাজশ ও রাজনৈতিক প্রভাব’ শীর্ষক এক গবেষণা প্রতিবেদন প্রকাশ উপলক্ষে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে সংস্থাটির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান এসব কথা বলেন।
গবেষণার রিপোর্ট বলা হয়, প্রভাবশালী ঠিকাদার চক্র আইনি দুর্বলতার সুযোগ নিয়ে অনৈতিক চর্চার মাধ্যমে সুস্থ প্রতিযোগিতাকে বাধাগ্রস্ত করে রেখেছে। মন্ত্রণালয় বা সরকারি সংস্থার উচ্চপর্যায়ে কোনো কোনো ক্ষেত্রে নেতৃত্বের পরিবর্তনে বড় বড় কার্যাদেশগুলো হাত বদল হলেও বাজার নিয়ন্ত্রণ অব্যাহত রয়েছে।
টিআইবির এ গবেষণায় দেখা গেছে, সড়ক ও জনপথ বিভাগে ৯টি বড় ঠিকাদারি নেটওয়ার্ক সক্রিয় রয়েছে। স্থানীয় সরকার বিভাগ এবং শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের প্রকিউরমেন্টে ১২টি শীর্ষ ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান সক্রিয় রয়েছে। গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ে ১১টি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান সব কিছু নিয়ন্ত্রণে রেখেছে । শীর্ষ ঠিকাদাররা যৌথ উদ্যোগ গঠনের মাধ্যমে বাজারের বড় অংশ দখল করে রেখেছে। এই ঠিকাদাররা জয়েন্ট ভেঞ্চারের মাধ্যমে যে চুক্তিমূল্যে কাজ করেছে, তা এককভাবে প্রাপ্ত কাজের পাঁচ গুণ।
রিপোর্টে বলা হয়, ২০১২-২০২৪ সময়কালে দেশের ৬৬টি মন্ত্রণালয় ও বিভাগের ই-জিপি প্ল্যাটফর্মের মাধ্যমে মোট ৬ লাখ ৬৬ হাজার ৪৭৪টি ক্রয়কার্যের তথ্য বিশ্লেষণের মাধ্যমে উঠে এসেছে এ তথ্য।
এতে বলা হয়, ২০১১ সালে চালু হওয়ার পর থেকে, বাংলাদেশ ই-জিপি প্ল্যাটফর্মের মাধ্যমে ৫ লাখ ৯৬ হাজার ৯২১ কোটি টাকা ব্যয় হয়েছে। এই পদ্ধতিতে সর্বোচ্চ রেকর্ডকৃত চুক্তির মূল্য ৮৮১ কোটি টাকা। এর চেয়ে বেশি মূল্যের সকল চুক্তি এই প্ল্যাটফর্মের বাইরে রয়েছে। শীর্ষ ১০ মন্ত্রণালয়ের শীর্ষ ৫ শতাংশ ঠিকাদার মোট চুক্তির মূল্যের ৬১ দশমিক ৩১ শতাংশ অর্জন করেছে, অন্যদিকে সর্বনিম্ন ১০ শতাংশ ঠিকাদারের বাজার অংশীদারিত্ব সব মন্ত্রণালয়ের জন্য ১ শতাংশেরও কম।
এতে বলা হয়েছে, অধিকাংশ মন্ত্রণালয়ে শীর্ষ ৫ শতাংশ ঠিকাদার এক দশকে তাদের বাজার অংশীদারিত্ব বৃদ্ধি করেছে। গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের শীর্ষ ৫ শতাংশ ঠিকাদার মোট চুক্তি মূল্যের ৭৪ দশমিক ৯৬ শতাংশ কাজ করেছে। গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ে শীর্ষ ঠিকাদারদের দখল ১৫ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। এছাড়া, সড়ক ও জনপথ বিভাগ এবং শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে ১০ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে।
রিপোর্টে আরো বলা হয়, সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগে মাত্র ১১ শতাংশ (৩৮৪ জন) ঠিকাদার ৯৩ দশমিক ৫৫ শতাংশ কাজ করেছে। যার মধ্যে ৩৫ জন ঠিকাদারই ৭২ দশমিক ৯ শতাংশ বাজার দখল করেছে।
অন্যদিকে পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ে ৯ শতাংশ (৩৩৬ জন) ঠিকাদার মোট চুক্তি মূল্যের ৯১ দশমিক ৫ শতাংশ কাজ করেছে। যার মধ্যে মাত্র ৩৮ জন ঠিকাদার ৩০ দশমিক ৯ শতাংশ বাজার দখল করেছে।
গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ে ৭ দশমিক ৪৫ শতাংশ (৬০৭ জন) ঠিকাদার মোট চুক্তি মূল্যের ৭১ শতাংশ কাজ করেছে। এর মধ্যে ৮১ জন ঠিকাদার ৩২ দশমিক ৩২শতাংশ বাজার দখল করেছে।
স্থানীয় সরকার বিভাগে ৯ দশমিক ৭৪ শতাংশ (২ হাজার ৮৬৫ জন) ঠিকাদার মোট চুক্তি মূল্যের ৬২ দশমিক ৮৮ শতাংশ কাজ করেছে। ২৯৪ জন ঠিকাদার ২৭ দশমিক ৭ শতাংশ বাজার দখল করেছে। রিপোর্টে বলা হয়েছে, বাজার দখলের জন্য শীর্ষ ঠিকাদাররা যৌথ উদ্যোগ বা জয়েন্ট ভেঞ্চার কোম্পানি গঠন করে বড় প্রকল্প নিয়ন্ত্রণ করছে।