বাসস
  ০৬ মার্চ ২০২৫, ১৭:৫০

চট্টগ্রামে পানিতে লবণাক্ততা বেড়ে যাওয়ায় ওয়াসার পানি উৎপাদন হ্রাস

ঢাকা, ৬ মার্চ, ২০২৫ (বাসস): শুষ্ক মৌসুম শুরু হওয়ার সাথে সাথে চট্টগ্রাম ওয়াসার পানিতে লবণাক্ততার পরিমাণ বেড়ে গেছে। ফলে মাহে রমজানে পানির অত্যধিক চাহিদা থাকা স্বত্বেও কর্ণফুলী নদীতে জোয়ারের সময় বন্ধ রাখতে হচ্ছে ওয়াসার পানি সরবরাহ প্রকল্পগুলোর উৎপাদন। পানি উৎপাদন হ্রাস পাওয়ায় নগরীতে সরবরাহ ঘাটতি দেখা দিয়েছে।

চট্টগ্রাম ওয়াসার তথ্য অনুযায়ী, কাপ্তাই লেকের পানি প্রবাহ কমে যাওয়ায় হালদা নদীতে মিঠা পানির স্তর কমে গেছে। ফলে জোয়ারের পানি বেশি প্রবেশ করায় লবণাক্ততার কারণে এখন প্রতিদিন ৫ থেকে ৬ কোটি লিটার পানি কম উৎপাদন হচ্ছে।

ওয়াসার সংশ্লিষ্ট প্রকৌশলীরা জানিয়েছেন, বর্তমানে হালদার পানিতে প্রতি লিটারে সর্বোচ্চ ২ হাজার ৩২ মিলিগ্রাম পর্যন্ত লবণাক্ততা দেখা যাচ্ছে। অথচ সহনীয় পর্যায় ২৫০ মিলিগ্রাম। 

রমজান শুরুর আগে থেকে ওয়াসার সরবরাহকৃত পানিতে লবণাক্ততা বৃদ্ধি পেলেও ওয়াসা কর্তৃপক্ষ কোনো প্রকার প্রস্তুতিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ না করায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন দেশের ক্রেতা-ভোক্তাদের জাতীয় প্রতিনিধিত্বকারী প্রতিষ্ঠান কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব) চট্টগ্রাম বিভাগ ও নগর কমিটির নেতৃবৃন্দ।

এক বিবৃতিতে ক্যাব কেন্দ্রীয় কমিটির ভাইস প্রেসিডেন্ট এস এম নাজের হোসাইন, ক্যাব বিভাগীয় সাধারন সম্পাদক কাজী ইকবাল বাহার ছাবেরী, ক্যাব চট্টগ্রাম মহানর সভাপতি জেসমিন সুলতানা পারু, সাধারন সম্পাদক অজয় মিত্র শংকু, যুগ্ম সম্পাদক মো. সেলিম জাহাঙ্গীর, দক্ষিণ জেলা সভাপতি আলহাজ্ব আবদুল মান্নান, যুব ক্যাব চট্টগ্রাম বিভাগীয় সভাপতি চৌধুরী কেএনএম রিয়াদ ও যুব ক্যাব মহানগর সভাপতি আবু হানিফ নোমান, পলিসি ইনফ্লুয়েন্স গ্রুপ চট্টগ্রামের সভাপতি কলামিস্ট মুসা খান, সদস্য সচিব আবু মোশারফ রাসেল ও যুগ্ম সদস্য সচিব সাঈদুর রহমান মিন্টু রমজান মাসে দ্রুত পানি সরবরাহ ব্যবস্থা স্বাভাবিক করার দাবি জানিয়েছেন।

বিবৃতিতে বলা হয়, নগরীর হালদা ও কর্ণফুলী নদীতে প্রতি লিটারে ২ হাজার ৫০০ মিলিগ্রাম পর্যন্ত লবণাক্ততা দেখা দিয়েছে। আর সহনীয় মাত্রা হলো ২৫০ মিলিগ্রাম। শুকনো মৌসুম শুরু হবার সময় থেকে বেশ কয়েক বছর যাবৎ এ সমস্যা দেখা দিচ্ছে। লবণাক্ততার কারণে ওয়াসার চারটি প্রকল্পে পানির উৎপাদন ছয় কোটি লিটার পর্যন্ত কমেছে। এ কারণে রমজান মাসে পানি সংকটে পড়ে চরম দুর্ভোগে পড়েছেন চট্টগ্রাম নগরীর বিভিন্ন এলাকার গ্রাহকরা। বিবৃতিতে বলা হয়, এমনিতেই নগরীর এক-চতুর্থাংশ এলাকায় সরবরাহকৃত পানিতে ময়লা ও ঘোলা পানি এবং লাইনে পানি না থাকার মতো নানা সংকটে গ্রাহকরা বিশুদ্ধ পানি সংগ্রহে চরম দুর্ভোগ পড়েছেন। এমন পরিস্থিতিতে রমজানে বিভিন্ন মসজিদের মুসল্লিদের টিউবওয়েল থেকে পানির জোগান দিতে হচ্ছে।

বিবৃতিতে নেতারা আরও বলেন, এ বছর বৃষ্টি কম হওয়ায় নদীতে সাগরের পানি ঢুকছে। জোয়ারের পাশাপাশি অমাবস্যা-পূর্ণিমায় এ সমস্যা বহুগুণ বেড়ে যায়। কাপ্তাই পানিবিদ্যুৎ প্রকল্প থেকে পর্যাপ্ত পানি না ছাড়ায় জোয়ারের সময় লবণাক্ত পানি ওপরের দিকে উঠে যাচ্ছে। এছাড়াও কাপ্তাই পানি বিদ্যুৎ কেন্দ্র থেকে পর্যাপ্ত পানি ছাড়া হচ্ছে না। সে সঙ্গে দীর্ঘদিন ধরে বৃষ্টিও হচ্ছে না। কাপ্তাই বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে পর্যাপ্ত পানি ছাড়া হলে এবং বৃষ্টি হলে লবণাক্ত পানি নদীতে প্রবেশ করতো না। 

চট্টগ্রাম ওয়াসার তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী নুরুল আমিন বলেন, মোহরা পানি শোধনাগারে স্বাভাবিক সময়ে ৯ কোটি লিটার পানি উৎপাদন হয়। এখন জোয়ারের সময় লবণের মাত্রা বেড়ে যাওয়ায় ওই সময় উৎপাদন স্বাভাবিক রাখা যায় না। যার কারণে উৎপাদন একটু কমেছে। এখন ৬ থেকে ৭ কোটি লিটার আবার কখনো ৮ কোটি লিটার পানি উৎপাদন হচ্ছে। সবমিলে এখন দৈনিক ৪৫ কোটি লিটার উৎপাদন হচ্ছে। তবে রমজানে নগরীতে এখনো পর্যন্ত পানির তেমন কোনো সংকট নেই।

চট্টগ্রাম ওয়াসা সূত্র জানায়, রাঙ্গুনিয়ায় অবস্থিত ওয়াসার কর্ণফুলী পানি শোধনাগার প্রকল্প-১ এবং প্রকল্প-২ থেকে প্রতিদিন ১৪ কোটি করে ২৮ কোটি লিটার পানি সরবরাহ করা হতো। বর্তমানে এ দুটি প্রকল্প থেকে উৎপাদন হচ্ছে ২৬ কোটি লিটার পানি। একইভাবে মদুনাঘাট পানি শোধনাগার প্রকল্প এবং মোহরা পানি শোধনাগার প্রকল্প থেকে স্বাভাবিক সময়ে ৯ কোটি লিটার করে ১৮ কোটি লিটার পানি সরবরাহ করা হতো। বর্তমানে তা কমে ১৫ কোটি লিটার পানি সরবরাহ করা হচ্ছে। ফলে কিছুটা সরবরাহ সংকট তৈরি হয়েছে।