শিরোনাম
ঢাকা, ১০ মার্চ, ২০২৫ (বাসস) : কারা মহাপরিদর্শক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল সৈয়দ মোহাম্মদ মোতাহের হোসেন বলেছেন, দেশের সকল কারাগারকে মানবিক সেবাধর্মী প্রতিষ্ঠান হিসেবে গড়ে তোলার জন্য নানামুখী সংস্কারের উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে।
সকল কারাগারকে স্বচ্ছ এবং জবাবদিহিমূলক হিসেবে গড়ে তোলার লক্ষ্যে বর্তমান প্রশাসন বন্দি ব্যবস্থাপনার মান উন্নয়নের জন্য আধুনিক প্রযুক্তি নির্ভর উদ্যোগ গ্রহণ করেছে।
আজ রাজধানীর বকশিবাজার কারা অধিদপ্তরের সম্মেলন কক্ষে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ কথা বলেন।
সৈয়দ মোতাহের বলেন, দেশব্যাপী বন্দি সংক্রান্ত যে কোনো তথ্য সংগ্রহের জন্য হট লাইন চালু, বন্দিদের সাক্ষাতকারে ভোগান্তি কমানোর জন্য ডিজিটাল ভিজিটর ম্যানেজমেন্ট চালু, অভ্যন্তরীণ বন্দি ব্যবস্থাপনা সহজীকরণের লক্ষ্যে গঠনমূলক বন্দি ব্যবস্থাপনা সফটওয়্যার চালু করা হয়েছে। যাতে, পিসি ক্যাশ, টেলিফোন কথোপকথন, ক্যান্টিন ম্যানেজমেন্ট এবং বন্দিদের চিকিৎসা সংক্রান্ত বিষয়াদী অন্তর্ভূক্ত থাকবে এবং ধাপে ধাপে তা আর এফ আইডি’র মাধ্যমে নিয়ন্ত্রিত হবে।
বন্দিদের নিরাপদ উন্নত চিকিৎসা সেবা নিশ্চিতের লক্ষ্যে কেন্দ্রীয় কারা হাসপাতাল নির্মাণের প্রক্রিয়াও চূড়ান্ত অনুমোদনের অপেক্ষায় রয়েছে। বন্দিদের কারাগারের বাহিরে যাতায়াত নিরাপদ এবং ঝুঁকিমুক্ত করার জন্য আধুনিক জিপিএস ট্রাকারযুক্ত এ্যাংকেল বেন্ড লাগানোর উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে।
কোনো আর্থিক লেনদেন ব্যতীত বন্দিদের প্রাপ্যতা অনুযায়ী খাবারসহ অন্যান্য সুবিধাদি নিশ্চিতের জন্য জেল সুপার এবং ডিআইজিদের প্রতি কঠোর নির্দেশনা জারি করা হয়েছে।
গুরুত্বপূর্ণ স্থানে দায়িত্ব পালনকারী কারা কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বডিক্যাম ব্যবহার বাধ্যতামূলক করা, ৬৯টি কারাগারকে নিজস্ব ফাইবার নেটওয়ার্ক কানেকটিভিটির আওতায় আনা হয়েছে। যা কারা ব্যবস্থাপনার আধুনিকায়ন ও নিরাপত্তা জোরদারে ব্যাপক ভূমিকা রাখবে।
এছাড়া বড় কারাগারগুলোকে সৌরবিদ্যুতের আওতায় আনা হচ্ছে। যাতে সার্বক্ষণিক বিদ্যুৎ প্রাপ্তির নিশ্চিত করাসহ সরকারের বিপুল পরিমান রাজস্ব ও সাশ্রয় হবে।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য ব্রিগেডিয়ার জেনারেল সৈয়দ মোহাম্মদ মোতাহের হোসেন আরো বলেন, কারাগারসমূহে ধারণক্ষমতার তুলনায় অতিরিক্ত বন্দির অবস্থান একটি সমস্যা। এই ধারণ ক্ষমতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে ইতোমধ্যে সিলেট কেন্দ্রীয় কারাগার-২ (যা মেট্রোপলিটন কারাগার হিসেবে পরিচিত) চালু করা হয়েছে এবং কেরাণীগঞ্জে আরকটি বিশেষ কারাগার চালুর উদ্যোগ প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। এছাড়া রংপুর, রাজশাহীসহ বেশ কয়েকটি পুরনো কারাগার সম্প্রসারণের উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে।
নিয়ম ভঙ্গকারী কর্মকর্তা এবং কর্মচারীদের কোনোরুপ ছাড় দেওয়া হচ্ছেনা এবং নিয়ম ভঙ্গকারীদের অতি দ্রুততার সাথে জাবাবদিহিতার আওতায় আনা হচ্ছে। ফলস্বরূপ গত সাত মাসে ১২ জনকে চাকুরিচ্যুত, ছয় জনকে বাধ্যতামূলক অবসর, ৮৪ জনকে সাময়িক বরখাস্ত, ২৭০ জনকে বিভিন্ন মেয়াদে শাস্তি প্রদান, বিভাগীয় মামলা দায়ের ২৬০ জনের বিরুদ্ধে, ২৯ জনকে কৈফিয়ত তলব, ২১ জনকে চূড়ান্ত সতর্ক, ৩৯ জনকে তাৎক্ষণিক বদলী এবং ১০২ জনকে প্রশাসনিক কারণে বিভাগের বাইরে বদলী করা হয়েছে।
এক্ষেত্রে কারা সদর দপ্তর নিশ্চিত করছে যে, বর্তমান প্রশাসন প্রমাণসহ যেকোনো ধরণের অভিযোগ উত্থাপিত হলে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণে বিন্দুমাত্র বিলম্ব করেনি এবং ভবিষ্যতেও করবেনা।
তিনি বলেন, বর্তমান প্রশাসন কারা কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মনোবল বৃদ্ধিসহ তাদের পেশাগত দক্ষতা বৃদ্ধির জন্য কোনো প্রকার আর্থিক লেনদেন ব্যতিত সৎ, যোগ্য, কর্ম উদ্যোমী ব্যক্তিবর্গকে গুরুত্বপূর্ণ পদ এবং স্থাপনায় পদায়ন।
জনবল সমস্যার সমাধানের লক্ষ্যে নতুন ১৮৯৯টি পদ সৃষ্টি, দীর্ঘ ১৪ বৎসর পর সিনিয়র কর্মকর্তাদের পদোন্নতির জট খোলা, কর্মকর্তা-কর্মচারীদের অর্জিত ছুটি নিশ্চিতকরণের পদক্ষেপ গ্রহণ,অ্যাপসের এর মাধ্যমে সকল স্তরের মতামত প্রকাশের ব্যবস্থাকরণসহ দীর্ঘদিন যাবত কর্মরত থেকে অনিয়মের সিন্ডিকেটকারীদের পোস্টিং এর আওতায় আনা হচ্ছে।
সকল পদবীর জন্য নতুন প্রশিক্ষণ নীতিমালা প্রণয়ন, সকলের মতামত গ্রহণপূর্বক নতুন নিয়োগবিধির খসড়া চূড়ান্তকরণ, স্বাস্থ্য স্কীমের আওতায় কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বর্ধিত সহায়তা প্রদান, পরিবার নিরাপত্তা প্রকল্পের আওতায় আনুতোষিক বৃদ্ধি, টিম ট্র্যাকারের মাধ্যমে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের কর্মস্থলে উপস্থিতি নিশ্চিত করা হচ্ছে।
এছাড়া ‘বাংলাদেশ প্রিজন অ্যান্ড কারেকশন সার্ভিস অ্যাক্ট’এর খসড়াও চূড়ান্ত করা হয়েছে। কারা গোয়েন্দা ইউনিটকে ঢেলে সাজানোর উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। কারা কল্যাণ সমিতির কার্যক্রম বৃদ্ধির মাধ্যমে কারা বিভাগের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সহায়তা কার্যক্রম বৃদ্ধির উদ্যোগও গ্রহণ করা হয়েছে।
তিনি আরো বলেন, এত স্বল্প সময়ে উল্লেখিত সংস্কার সত্বেও বিগত ১৫ বছরের কিছু সুবিধা ভোগী অসৎ কর্মকর্তা-কর্মচারী এবং বন্দিরা তাদের স্বার্থ হাসিলের জন্য বাহিরের কিছু অসাধু ব্যক্তি বর্গের সহযোগিতায় বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান, সংস্থা ও ব্যক্তিকে প্ররোচিত করে কারাগার সম্পর্কে নেতিবাচক সংবাদ, প্রপাগান্ডা, মিথ্যা ও হয়রানিমুলক অবান্তর ও অবাস্তব ঘটনার অবতারনা করে অধিদপ্তরের ভাবমূর্তি বিনষ্টের পায়তারা চালাচ্ছে।
কারাগারকে মাদক এবং মোবাইলমুক্ত করার জন্য গত তিন মাসে শুধুমাত্র কেরাণীগঞ্জ কারাগারেই ২৭৫টি ঝটিকা অভিযান পরিচালনা করা হয়েছে এবং ফলস্বরূপ কারা অভ্যন্তর হতে বিপুল পরিমাণ নগদ অর্থসহ উল্লেখযোগ্য সংখ্যক ছোট বাটন ফোন এবং মাদক উদ্ধার সম্ভব হয়েছে।
এছাড়া প্রশাসনের তৎপরতায় কারাগারে মাদক প্রবেশ করানোর বেশ কয়েকটি উদ্যোগও ব্যর্থ করে দেয়া সম্ভব হয়েছে। ক্যান্টিন দ্রব্য সামগ্রীর মান এবং মূল্য নিয়ন্ত্রণে কঠোর নজরদারী করা হচ্ছে। বন্দীদের প্রাপ্যতা অনুযায়ী খাবার নিশ্চিতের জন্য কঠোর নির্দেশনা জারি করা হয়েছে। কারা হাসপাতালে টাকার বিনিমিয়ে অবস্থানের সুবিধা কঠোর নজরদারীর কারণে বহুলাংশে হ্রাস করা সম্ভব হয়েছে।
কারা মহাপরিদর্শক বলেন, গত ১৫/১৬ বছরের অনিয়ম দূর্নীতিতে অভ্যস্ত কর্মকর্তা-কর্মচারীদের নিয়মশৃঙ্খলার মধ্যে ফিরিয়ে আনা হয়েছে। তা চলমান রয়েছে এবং আমরা আশবাদী অদূর ভবিষ্যতে এর সুফল কারাকর্মকর্তা-কর্মচারীসহ কারাগারের সেবা প্রত্যাশীরা উপভোগ করবে।
একটি মহল দেশে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির প্রচেষ্টা চালাচ্ছে। দীর্ঘ্য ১৫ বছরের অনৈতিক সুবিধা ভোগীদের সিন্ডিকেট ভেঙ্গে দ্রুত সংস্কার/পরিবর্তন করা বড় একটি চ্যালেঞ্জ । তথাপিও কারা বিভাগ কাজ করে যাচ্ছে।
সংরক্ষিত এলাকা এবং বর্তমান সময়ে সাবেক মন্ত্রী-আমলা ও আলোচিত ব্যক্তিবর্গ কারাগারে আটক থাকায় কারাগারের প্রতি সকলের আগ্রহ অনিবার্য।