শিরোনাম
ঢাকা, ২৭ মার্চ, ২০২৫ (বাসস) : রাজধানীর ধানমন্ডিতে একটি বাড়িতে র্যাব পরিচয়ে দুর্ধর্ষ ডাকাতির ঘটনায় ডাকাত দলের ছয় সক্রিয় সদস্যকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ।
গ্রেফতারকৃতরা হলো- ফরহাদ বিন মোশারফ (৩৩), ইয়াছিন হাসান (২২), মোবাশ্বের আহাম্মেদ (২৩), ওয়াকিল মাহমুদ (২৬), আবদুল্লাহ (৩২) ও সুমন (২৯)।
ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ মিডিয়া অ্যান্ড পাবলিক রিলেশন্স বিভাগের উপ-পুলিশ কমিশনার মুহাম্মদ তালেবুর রহমান স্বাক্ষরিত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
ধানমন্ডি থানা পুলিশ জানায় আজ (২৭ মার্চ) ভোরে হাজারীবাগ থানা এলাকায় অভিযান পরিচালানা করে উক্ত ডাকাতির সাথে জড়িত আবদুল্লাহ ও সুমনকে গ্রেফতার করা হয়।
ভিকারুন্নেসা নূন স্কুলের ধানমন্ডি শাখার গলিতে একটি বাড়িতে বুধবার ভোর ৪টা ৪০ মিনিটে ডাকাতির ঘটনা ঘটে।
পুলিশ জানায় ডাকাতির পরে বাড়ির মালিক এম এ হান্নানকে জোর করে গাড়িতে উঠানোর চেষ্টা করে ডাকাতরা। তখন ধানমন্ডি থানার একটি টহল টিম ওই বাড়ির সামনে হাজির হয়ে ডাকাতদের হাত থেকে তাকে উদ্ধার করে।
এ সময় ডাকাতরা তাদের হাতে থাকা ছেনি ও রেঞ্জ দিয়ে পুলিশের ওপর হামলা করে। তাদের হামলায় পুলিশের কয়েকজন সদস্য আহত হন। তখন আশেপাশে থাকা লোকজনের সহায়তায় পুলিশ ডাকাত দলের অন্য সদস্যদের গ্রেফতার করে।
ধানমন্ডি থানা পুলিশ এ সময় তাদের হেফাজত হতে ডাকাতির কাজে ব্যবহৃত র্যাব লেখা কালো রঙের দুটি জ্যাকেট, তিনটি কালো রঙের র্যাব লেখা ক্যাপ, একটি মাইক্রোবাস, পাঁচটি মোবাইল ফোন, একটি লোহার তৈরী ছেনি, একটি পুরাতন লাল রঙের স্লাই রেঞ্জ ও নগদ ৪৫ হাজার ১০০ টাকা উদ্ধার করা হয়।
ঘটনার দিন অভিযুক্ত ডাকাতরা দলবদ্ধভাবে তিনটি মাইক্রোবাস ও একটি প্রাইভেটকারে ওই বাসার সামনে এসে গেইটে দায়িত্বরত সিকিউরিটি গার্ডদের বলে যে, তারা র্যাবের লোক। তাদের সঙ্গে ম্যাজিস্ট্রেট আছে। তারা বাড়িতে অভিযান চালাবে বলে তাড়াতাড়ি গেইট খোলতে বলে। তাদের কয়েকজনের গায়ে র্যাব লেখা জ্যাকেট পরা ছিল।
সে সময় দায়িত্বরত সিকিউরিটি গার্ড তাদের সকাল পর্যন্ত অপেক্ষা করতে বলে। তখন অভিযুক্ত ডাকাতরা সিকিউরিটি গার্ডদের গালাগালি করতে থাকে এবং গেইট না খুললে তাদের হত্যার হুমকি দেয়। তাদের মধ্যে থেকে কয়েকজন গেইটের উপর দিয়ে উঠে জোর করে গেইট খুলে ফেলে।
পুলিশ আরও জানায়, ডাকাতরা জোর করে বাড়ির ভেতরে প্রবেশ করে সিকিউরিটি গার্ড, কেয়ারটেকার ও গাড়ি চালককে দড়ি দিয়ে বেঁধে ফেলে। তারা নিচতলার অফিসের গেইট ভেঙে পিয়নকে মারধর করে এবং হত্যার ভয় দেখিয়ে তার কাছে থাকা নগদ ৪৫ হাজার ১০০ টাকা ছিনিয়ে নেয়। ডাকাতরা তাকে ভয়তীতি দেখিয়ে তৃতীয় তলায় গিয়ে এস এম সোর্সিংয়ের অফিসের গেইট ভেঙে ফেলে। এ সময় গেইট ভাঙার শব্দ পেয়ে চতুর্থ তলায় থাকা এস এম সোর্সিংয়ের তিনজন অফিস সহকারী তৃতীয় তলায় নেমে আসে।
ডাকাতরা তখন তাদেরও আটক করে মারধর করে অফিসের চাবি ও বাসার চাবি দিতে বলে। অতঃপর তারা জোর করে তাদের কাছ থেকে চাবি নিয়ে তৃতীয় তলার অফিসের দরজা খুলে ভেতরে প্রবেশ করে এবং অফিসের ড্রয়ার ভেঙে নগদ ২২ লাখ টাকা লুট করে নেয় ও অফিসের বিভিন্ন আসবাবপত্র ভাঙচুর করে।
পুলিশ জানায়, তাদের আরেকটি দল চতুর্থ তলার অফিসের দরজা খুলে ভেতরে প্রবেশ করে আলমারি ভেঙে নগদ ১৩ লাখ টাকা লুট করে নেয়। এরপর তারা মালিক এম এ হান্নান আজাদের পঞ্চম ও ষষ্ঠ তলার ডুপ্লেক্স ফ্ল্যাটের দরজা ভেঙে ভেতরে প্রবেশ করে এক লাখ ৫০ হাজার টাকা, স্বর্ণের কানের দুল ও চেইনসহ আনুমানিক ২.৫ ভরি স্বর্ণ (যার মূল্য তিন লাখ ৭৫ হাজার টাকা) লুট করে নেয়।
এ ঘটনায় ২৬শে মার্চ প্রতিষ্ঠানের ম্যানেজার ও মালিকের ভাগ্নে তৌহিদুল ইসলামের অভিযোগের প্রেক্ষিতে গ্রেফতারকৃতরাসহ পলাতক আট জন এবং অজ্ঞাতনামা আরো ১০/১২ জনকে আসামি করে ডিএমপি’র ধানমন্ডি থানায় একটি নিয়মিত মামলা রুজু করা হয়।
থানা সূত্রে আরও জানা যায়, গ্রেফতারকৃতরা একটি সংঘবদ্ধ ডাকাত চক্রের সক্রিয় সদস্য। তারা আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার পরিচয়ে ডাকাতি করে।
গ্রেফতারকৃতদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ প্রক্রিয়াধীন।