শিরোনাম
রংপুর, ২৭ মার্চ, ২০২৫ (বাসস): জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) সদস্য সচিব আখতার হোসেন বলেছেন, ফ্যাসিবাদী শক্তি নির্বাচনে না আসতে পারলে গণতন্ত্রের বিজয় সূচিত হবে।
বৃহস্পতিবার দুপুরে রংপুর নগরীর মাহিগঞ্জ গ্লাস ফ্যাক্টরি মাঠে একটি শোভাযাত্রা শুরুর আগে সাংবাদিকদেরকে তিনি একথা বলেন। তিনি বলেন, জাতীয় নাগরিক পার্টি দাবি জানিয়ে আসছে যে, দল হিসেবে আওয়ামী লীগের বিচার করা, নিবন্ধন বাতিল ঘোষণাসহ তাদের দলের নাম ও মার্কা নিয়ে বাংলাদেশে কেউ কোনোভাবে রাজনীতি করতে পারবে না।
আখতার হোসেন বলেন, দেশের মানুষের প্রত্যাশা হলো- যাদের হাত ধরে ফ্যাসিবাদ বিদায় নিয়েছে এবং দেশ গণতান্ত্রিক পরিবেশে উত্তোরণের সুযোগ পেয়েছে, দেশের মানুষ সেই তরুণদের হাত ধরেই আগামীর বাংলাদেশ বিনির্মাণ করতে চান। সে যাত্রায় জাতীয় নাগরিক পার্টি কাজ শুরু করেছে।
নির্বাচন নিয়ে তিনি বলেন, আমরা মনে করি অন্তর্বর্তী সরকার সংস্কার ও বিচার কার্যক্রমের দৃশ্যমান অগ্রগতি নিশ্চিতের ভেতর দিয়ে নির্বাচনের দিকে অগ্রসর হবে।
তবে, নির্বাচনের ক্ষেত্রে অবশ্যই গণপরিষদ নির্বাচনের বাস্তবতা রয়েছে। দেশে ফ্যাসিবাদী, একনায়কতান্ত্রিক, অগণতান্ত্রিক ও জনগণের অধিকার বঞ্চিত করার সংবিধান দিয়ে দেশের শাসন কাঠামো পরিচালিত হবে- তা দেশের মানুষ চান না। দেশের মানুষ নতুন সংবিধান প্রত্যাশা করেন। আশা করবো ক্রিয়াশীল ফ্যাসিবাদ বিরোধী সব রাজনৈতিক পক্ষ গণপরিষদ নির্বাচনের বিষয়ে জনগণের আকাঙ্ক্ষার প্রতি শ্রদ্ধাশীল থাকবে।
সদস্য সচিব আখতার বলেন, প্রধান উপদেষ্টা ডিসেম্বর থেকে জুনের মধ্যে নির্বাচন অনুষ্ঠানের কথা বলেছেন। অন্য রাজনৈতিক শক্তি যদি অন্তর্বর্তী সরকারকে সহযোগিতা করে, তাহলে সংস্কার ও বিচার কার্যক্রম অতি দ্রুত সময়ের মধ্যে দৃশ্যমান করে নির্বাচনের পথে অগ্রসর হওয়া সম্ভব। এতে এই সময় সীমার মধ্যে নির্বাচন হওয়ার মতো বাস্তব পরিস্থিতি তৈরি হতে পারে।
তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ ও জাতীয় পার্টি যোগসাজশ করে পরপর তিনটি ডামি নির্বাচন, প্রহসনের নির্বাচন করেছে। এই দুই দলের যোগসাজশে দেশের মানুষ গণতন্ত্রের আবহ থেকে পরিপূর্ণভাবে বঞ্চিত ছিল। দীর্ঘ সময় ধরে ফ্যাসিবাদীদের জাঁতাকলে পৃষ্ঠ হওয়ার পেছনে ছিল এই দু’টি রাজনৈতিক দল। দেশের ২০২৪ সালে যে গণহত্যা সংগঠিত হয়েছিল, তার প্রকাশ্য মদদদাতা সংগঠন আওয়ামী লীগ ও তাদের দোসর জাতীয় পার্টি। পিলখানা হত্যাকাণ্ড, মোদি বিরোধী আন্দোলনে হত্যাকাণ্ড, শাপলা চত্বর হত্যাকাণ্ড ও জুলাই হত্যাকাণ্ডে ব্যক্তি হিসেবে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা এবং দল হিসেবে আওয়ামী লীগ জড়িত ছিল।
আখতার বলেন, যারা গণহত্যার আনজাম দেয়, দেশের মানুষের উপর মানবতাবিরোধী অপরাধ চাপিয়ে দেয়, গণতন্ত্রকে লুণ্ঠন করে নিয়ে যায়, এমন শক্তি কোনোভাবে গণতন্ত্রের পক্ষের শক্তি নয়। গণতন্ত্রকামী মানুষ ও দেশ কোনোভাবে ফ্যাসিবাদী শক্তিকে তাদের দেশে রাজনীতি করতে দেয়ার অধিকার দিতে চান না। তাই আমরা মনে করি আওয়ামী লীগ ও জাতীয় পার্টির মত ফ্যাসিবাদী শক্তি ইনক্লুসিভ নির্বাচনের প্রয়োজনীয় উপাদান হতে পারে না।
জাতীয় নাগরিক পার্টির সদস্য সচিব বলেন, এনসিপি দল গঠনের একমাস পরে তিনি নিজের এলাকায় পীরগাছা ও কাউনিয়ার মানুষের খোঁজ খবর নিতে এসেছেন।
তাদের রাজনৈতিক চিন্তা-চেতনা ও মননের ব্যাপারে খোঁজ-খবর নেয়া এবং সেভাবেই নিজেকে সামনের রাজনীতির জন্য প্রস্তুত করা এবং বাংলাদেশে এনসিপির রাজনীতিকে আরো গতিশীল করার সামগ্রিক উদ্দেশ্য নিয়েই তিনি রংপুরে এসেছেন বল উল্লেখ করেন।
তিনি বলেন, ‘আপনারা জানেন যে, ২০২৪ সালে এক রক্তক্ষয়ী সংগ্রামের মধ্য দিয়ে এদেশের মানুষ দীর্ঘ সময় ধরে বাংলাদেশ চেপে বসা ফ্যাসিবাদের শাসনের বিরুদ্ধে তাদের সংগ্রাম জারি রেখেছিলেন। তারা তাদের জীবনের বিনিময়ে স্বৈরাচারকে বাংলাদেশ থেকে উৎখাত করেছেন।’
সদস্য সচিব বলেন, এনসিপি মনে করে যে, বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক পরিবেশে কোনোভাবেই কোনো ফ্যাসিবাদী শক্তি পুনর্বাসিত হতে পারেনা। রংপুরের তথা বাংলাদেশের মানুষ দীর্ঘ সময় ধরে রাজনৈতিকভাবে নানা দলের সঙ্গে সংযুক্ত থেকেছেন।
তিনি বলেন, ‘কিন্তু আমরা দেখেছি, আমরা মনে করি, জনগণের মধ্যে একটা স্বতঃস্ফূর্ত জাগরণ তৈরি হয়েছে। যারা ফ্যাসিবাদের রাজনীতি করেছেন বা ফ্যাসিবাদের দোসর থেকেছেন, বাংলাদেশের মানুষ কোনোভাবেই তাদেরকে আর বাংলাদেশের রাজনীতিতে প্রতিষ্ঠিত হতে দেয়ার সুযোগটা আর দিতে চান না। ’
আখতার বলেন, এনসিপি বাংলাদেশে যে মধ্যপন্থী রাজনীতির সূচনা করেছে, এই মধ্যপন্থী রাজনীতিতে বাংলাদেশের সব ধর্মের মানুষ, সব সম্প্রদায়ের মানুষসহ সবার জন্য সমান নাগরিক অধিকার এবং মানবিক মর্যাদা নিশ্চিত করাই আমাদের লক্ষ্য।’
এ সময় উপস্থিত ছিলেন, এনসিপি’র সংগঠক আলমগীর নয়ন, তৌফিক ইসলামসহ স্থানীয় অন্যান্য নেতৃবৃন্দ।
এরপর স্থানীয় একটি মসজিদে জোহরের নামাজ আদায় শেষে এনসিপি’র সদস্য সচিব আখতার হোসেন দুই শতাধিক ভ্যানে নেতাকর্মীদের নিয়ে একটি শোভাযাত্রাসহ পীরগাছা উপজেলার দেউতি, সৈয়দপুর, কদমতলা, পীরগাছা, নেক মামুদ (তাম্বুলপুর), পাওটানাহাট, ভাইয়েরহাট এবং কাউনিয়ার টেপামধুরের বিভিন্ন স্থানে গণসংযোগ ও সড়ক প্রদক্ষিণ করেন।
কাউনিয়া উপজেলার টেপামধুপুর বাজারের কারবালা মাঠে আজ একটি ইফতার ও দোয়া মাহফিলে এনসিপি’র সদস্য সচিব আখতার হোসেনের অংশগ্রহণ করার কথা রয়েছে।