শিরোনাম
ঢাকা, ১০ এপ্রিল, ২০২৫(বাসস) : ফিলিস্তিনের গাজা ও রাফায় ইসরাইলি বাহিনীর বর্বরোচিত হামলা ও গণহত্যার দায়ে ইসরাইলের বিরুদ্ধে শক্ত প্রতিরোধ গড়ে তুলতে মুসলিম বিশ্বের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল বিএনপি। পাশাপাশি ফিলিস্তিনে যা ঘটছে, তা শুধু তাদের ধ্বংস নয়, বিশ্ব মুসলমানদের নিঃশেষ করার ষড়যন্ত্র হিসেবে দেখছে দলটি।
ফিলিস্তিনের গাজা ও রাফায় ইসরাইলি বাহিনীর বর্বরোচিত হামলা ও গণহত্যার প্রতিবাদে এবং নির্যাতিত ফিলিস্তিনিদের প্রতি সংহতি জানিয়ে রাজধানীতে র্যালি করেছে ঢাকা মহানগর দক্ষিণ ও উত্তর বিএনপি।
আজ বৃহস্পতিবার বিকেল চারটায় নয়াপল্টনে দলটির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে সংক্ষিপ্ত সমাবেশের মধ্য দিয়ে শুরু হয় এই কর্মসূচি। এই কর্মসূচির মাধ্যমে বিএনপির পক্ষ থেকে বিশ্ববাসীকে বার্তা দেওয়া হয়েছে গণহত্যার বিরুদ্ধে বাংলাদেশি জনগণ ফিলিস্তিনের পাশে আছে।
বিএনপির এই কর্মসূচি বিকেল চারটায় শুরু হওয়ার কথা থাকলেও বেলা আড়াইটা থেকেই নয়াপল্টনে নেতাকর্মীদের ভিড় বাড়তে থাকে। হাতে প্ল্যাকার্ড, ফিলিস্তিনের পতাকা ও কালো ব্যানার নিয়ে নেতাকর্মীরা স্লোগানে স্লোগানে মুখরিত করেন নয়াপল্টন এলাকা। র্যালিতে প্রায় পঞ্চাশ হাজার লোক সমাগম দেখা যায়।
বিএনপির এই র্যালিটি নয়াপল্টন থেকে শুরু হয়ে শান্তিনগর, মৌচাক, মগবাজার হয়ে বাংলামোটরে গিয়ে শেষ হয়। বিকেল পৌনে পাঁচটার দিকে র্যালি শুরু হয়। ফিলিস্তিনের গাজায় ভয়াবহ হত্যাকাণ্ডের ছবি সম্বলিত ব্যানার ফ্যাস্টুন হাতে নিয়ে বিএনপির নেতাকর্মীরা মিছিল করেন। এ সময় ফিলিস্তিনে নিহত ছোট্ট শিশুদের রক্তমাখা প্রতীকী লাশ কোলে নিয়ে অনেকেই অঝোরে কাঁদতে থাকেন।
র্যালি চলাকালে সারা পথজুড়েই ছিল ব্যাপক জনসমাগম ও প্রতিবাদী স্লোগান। ‘ইসরাইলি পণ্য বয়কট করো, দুনিয়ার মুসলিম এক হও লড়াই করো’, ‘ফিলিস্তিনে হামলা কেন, জাতিসংঘ জবাব চাই’ ইত্যাদি স্লোগান দেন।
র্যালিপূর্ব সমাবেশে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস বলেন, ‘ফিলিস্তিনে যে নারকীর অত্যাচার, হত্যা হচ্ছে তা দেখে আমাদের মনে হতে পারে যে, শুধু তাদের ওপর অত্যাচার হচ্ছে। আসলে বিষয়টি তা নয়, এক সময় তারা ধীরে-ধীরে বিশ্বের সব মুসলমানকে নিঃশেষ করার চেষ্টা করবে।’
এ এক গভীর ষড়যন্ত্র উল্লেখ করে বিএনপির এই সিনিয়র নেতা বলেন, ‘মুসলিম বিশ্ব কার্যকরভাবে ঐক্যবদ্ধ হলে ইহুদিরা এতটা সাহস দেখাতে পারত না।’
মির্জা আব্বাস আক্ষেপের সুরে বলেন, ‘মুসলিম বিশ্বের যে সব মোড়ল দেশ নিজেদের রাজত্ব বাঁচানোর জন্য নিজেরা নেতৃত্ব দিচ্ছে না, তাদের প্রতি আল্লাহর অভিশাপ নেমে আসবে। তারা নেতৃত্ব দিয়ে মুসলিম বিশ্বকে ঐক্যবদ্ধ করলে ফিলিস্তিনের আজকে এই অবস্থা হতো না।’
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ফিলিস্তিনে চলমান সহিংসতার ছবি দেখলে সহ্য করা যায় না উল্লেখ করে মির্জা আব্বাস বলেন, ‘ইরাক-ইরান যুদ্ধের সময় যেমন জিয়াউর রহমান ভূমিকা রেখেছিলেন, তিনি বেঁচে থাকলে আজ ফিলিস্তিনের পক্ষে কার্যকর উদ্যোগ নিতেন এবং ইসরাইল এমন সহিংসতা চালানোর সাহস পেত না।’
বিএনপির এই সিনিয়র নেতা বলেন, ‘অন্য যেকোনো সভার চেয়ে আজকের এই প্রতিবাদ মিছিল অস্বাভাবিক বড় হয়েছে। বিএনপির পাশাপাশি ধর্মপ্রাণ মুসল্লিরাও এতে অংশ নিয়েছেন।’
বিএনপির অপর স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ বলেন, ‘বিশ্বের কয়েকটি পরাশক্তির প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ সমর্থনে বহু আগেই ফিলিস্তিনে গণহত্যা শুরু হয়েছে। আজ ফিলিস্তিনের মানুষ নিজেদের দেশেই পরবাসী। অথচ মুসলিম বিশ্বের মোড়লদের কার্যকর কোনো ভূমিকা নেই। তারা মুখ খুলছে না, অবস্থান নিচ্ছে না।’
গাজায় গণহত্যা বন্ধে বিশ্বব্যাপী আন্দোলন চললেও কার্যকর কোনো উদ্যোগ দেখা যাচ্ছে না উল্লেখ করে বিএনপির এই নেতা বলেন, ‘আমরা বিএনপির পক্ষ থেকে এই নির্মমতার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানাচ্ছি এবং গণহত্যা বন্ধের জোর দাবি করছি।’
নজরুল ইসলাম খান বলেন, ‘স্বাধীনতা দিবসে জিয়াউর রহমান ইয়াসির আরাফাতকে আমন্ত্রণ জানিয়েছিলেন। সেই থেকেই বিএনপি ফিলিস্তিনের জনগণের সংগ্রামের পক্ষে অবস্থান নিয়ে এসেছে। আজ গাজা যেন অবরুদ্ধ খাঁচা, যেখানে শিশু ও নারীদের ওপর বর্বরতা চালানো হচ্ছে। ইসরাইলি বাহিনীকে প্রতিহত করতে আন্তর্জাতিক উদ্যোগ দরকার।’
ফিলিস্তিনের পক্ষে সংহতি জানিয়ে কর্মসূচিতে অংশ নিয়ে ভাঙচুর ও লুটপাটকারীদের বিষয়ে হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে বিএনপির এই সিনিয়র নেতা বলেন, ‘যারা বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করবে, তারা ইসরাইলের পক্ষে কাজ করছে বলেই মনে করব। তাদের প্রতিহত করতে হবে, তবে কোনোভাবেই মারপিট নয় পুলিশের হাতে তুলে দিতে হবে।’
গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেন, ‘ফিলিস্তিনে যুগের পর যুগ ধরে নৃশংস হত্যাকাণ্ড চলছে। নারী-পুরুষ কেউ রেহাই পাচ্ছে না। এটা সরাসরি মানবতাবিরোধী অপরাধ। দেশের সাধারণ মানুষ দলমতনির্বিশেষে ফিলিস্তিনের পক্ষে, কিন্তু বুদ্ধিজীবীদের থেকে তেমন কোনো অবস্থান দেখা যাচ্ছে না। জাতিসংঘও নিষ্ক্রিয় ঠুঁটো জগন্নাথ হয়ে গেছে।’
র্যালিপূর্ব সংক্ষিপ্ত সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপির আহ্বায়ক রফিকুল আলম মজনু। সঞ্চালনায় ছিলেন বিএনপির প্রচার সম্পাদক সুলতান সালাউদ্দীন টুকু। আরও বক্তব্য দেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সেলিমা রহমান, ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপির আহ্বায়ক আমিনুল হক। উপস্থিত ছিলেন বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান আবদুস সালাম পিন্টু, যুগ্ম মহাসচিব শহীদ উদ্দীন চৌধুরী এ্যানি, স্বাস্থ্যবিষয়ক সম্পাদক রফিকুল ইসলাম প্রমুখ।