শিরোনাম
ঢাকা, ১৫ এপ্রিল, ২০২৫ (বাসস): বিশ্বে নানা কারণে জলবায়ুর পরিবর্তন অতি দ্রুত ঘটছে। এর বিরূপ প্রভাব ব্যাপকভাবে পড়ছে নারী ও শিশুর ওপর। বিশেষ করে জলবায়ু পরিবর্তন শিশু ও নারী স্বাস্থ্যের ওপর মারাত্মক প্রভাব ফেলে। শিশুদের স্বাভাবিক বিকাশ বাধাগ্রস্ত করে।
কোনো নির্দিষ্ট স্থানের সুদীর্ঘ সময়ে, সাধারণত ৩০-৩৫ বছরের আবহাওয়ার গড় বা সামগ্রিক অবস্থার হিসাবকে জলবায়ু বলে। সাধারণত বৃহৎ এলাকাজুড়ে জলবায়ু নির্ণীত হয়ে থাকে। জলবায়ুর পরিবর্তন আবহাওয়া পরিবর্তনের ওপর নির্ভরশীল। কোনো স্থানের আবহাওয়ার পরিবর্তন একটি স্বাভাবিক ঘটনা।
জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে বিশ্বের যে দেশগুলো সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিতে আছে, সেগুলোর মধ্যে বাংলাদেশ অন্যতম। এদিকে গত বর্ষা মৌসুমে প্রাকৃতিক দুর্যোগের ব্যাপকতা ছিল চরম ও নজিরবিহীন। বাংলাদেশের পূর্বাঞ্চলে গত ৩৪ বছরের মধ্যে আঘাত হানা ভয়াবহ বন্যায় ৫৮ লাখ মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, যার মধ্যে রয়েছে ২০ লাখেরও বেশি শিশু। এই দুর্যোগে অনেক শিশু তাদের প্রিয়জনকে হারিয়েছে। আরো হারিয়েছে ঘরবাড়ি, বিদ্যালয়। বিনষ্ট হয়েছে ফসল, গবাদিপশু ইত্যাদি।
বন্যার পানি শিশুদের জীবনকে এলোমেলো করে দিয়ে গেছে। দীর্ঘ সময় পর পানি নেমেছে। এর ফলে তাদের ঘর-বাড়ি নষ্ট হয়েছে। স্কুলগুলোকে অস্থায়ী আশ্রয় কেন্দ্র হিসেবে ব্যবহার করা হয়েছে। টিকাদান কর্মসূচি স্থগিত হয়েছে। মাঠের ফসল তলিয়ে গেছে, পুকুরের মাছ ভেসে গেছে। স্বাস্থ্য কেন্দ্রগুলোতে মা ও নবজাতকের জীবন রক্ষার জন্য জরুরি সব চিকিৎসা সরঞ্জাম নষ্ট হয়েছে।
পানিবন্দি অবস্থায় খাদ্য সংকট, যাতায়াত, শিক্ষা, স্বাস্থ্যসেবা দুর্লভ হয়ে পড়ে। ফলে জরুরি প্রসূতি সেবা ব্যাহত হয়েছে। অধিকহারে শিশু পানিবাহিত রোগে আক্রান্ত হয়েছে।
শিশুদের ওপর জলবায়ু পরিবর্তনের প্রত্যক্ষ এবং পরোক্ষ দুটো প্রভাবই পড়ে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে, সারাবিশ্বে বিদ্যমান রোগের ৮৮% পাঁচ বছরের নিচের শিশুদের ওপর জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবের সাথে সম্পর্কিত।
যে সকল কারণে জলবায়ু পরিবর্তন হয় তার উল্লেখযোগ্য কারণ হলো, কলকারখানা থেকে নির্গত কালো ধোঁয়া, মিল ফ্যাক্টরি থেকে নির্গত বিষাক্ত ধোঁয়া, যানবাহন থেকে নির্গত ধোঁয়া, ইট ভাটার কালো ধোঁয়া যা মারাত্মকভাবে বায়ুদূষণ করছে, গাছ কাটার মারাত্মক ক্ষতিকর প্রভাবে মেরু অঞ্চল প্লাবিত হচ্ছে। যার ফলে চাষাবাদ ব্যাহত হচ্ছে। গাছপালা শুকিয়ে মরে যাচ্ছে। জীবন ধারণ অসম্ভব হয়ে পড়ছে। এছাড়া নদীর ওপর অবৈধ স্থাপনা তৈরির ফলে নদী তার নাব্যতা হারাচ্ছে, বস্তির অস্বাস্থ্যকর খোলা পায়খানা যা পানিতে মিশে পানি মারাত্বকভাবে দূষিত করছে, কলকারখানার ক্ষতিকর রাসায়নিক বর্জ্য যা পানিতে গিয়ে মিশে পরিবেশের ওপর বিরূপ প্রভাব ফেলছে, ময়লা আবর্জনার স্তূপ পরিবেশ দূষিত করছে।
বৈশ্বিক স্তরে জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে শিশুদের মধ্যে বিভিন্ন রোগ, অক্ষমতা এবং উচ্চ মৃত্যু হার দেখা যায়। একটানা বায়ু দূষণের মধ্যে থাকলে শিশুর জন্মের সময় ওজন কম হয়, গর্ভকালীন অবস্থায় ছোটো আকার (এসজিএ), এবং নির্ধারিত সময়ের আগেই শিশুর জন্ম হওয়ার আশঙ্কা থাকে। শিশুরা বায়ু দূষণের সংস্পর্শে থাকলে, তাদের হাঁপানি রোগ হওয়ার আশঙ্কা বেড়ে যায়। যার কারণে হাঁপানিতে আক্রান্ত শিশুদের শ্বাসনালিতে অক্সিডেটিভ চাপ ও শ্বাসনালি প্রদাহ বৃদ্ধি পায়। বায়ুদূষণ একটি শিশুর স্নায়ুর বিকাশকে বাধাগ্রস্ত করে।
বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশেও জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব পরিলক্ষিত হচ্ছে। এ কারণে সমাজে বসবাসরত সকল শ্রেণীর মানুষকে সচেতন করতে হবে। তবে নিম্নলিখিত কাজগুলো করলে বায়ু দূষণ কিছুটা হ্রাস করা সম্ভব হবে, যেমন, বেশী করে গাছ লাগাতে হবে, বিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য তেল, গ্যাস, কয়লার মতো অনবায়নযোগ্য শক্তি ব্যবহার না করে সৌর শক্তির ওপর নির্ভরতা বাড়াতে হবে, উইন্ডো টারবাইন ব্যবহার করে বায়ু শক্তিকে কাজে লাগিয়ে ও সোলার প্যানেলের সাহায্যে বিদ্যুৎ উৎপাদন করতে হবে, পরিবেশ বান্ধব কলকারখানা তৈরির প্রস্তাব করতে হবে। পানি শোধনাগারের মাধ্যমে কলকারখানা থেকে নির্গত ক্ষতিকর বর্জ্য ও পানি শোধন প্রক্রিয়ার মাধ্যমে নদীতে ফেলতে হবে, বায়োগ্যাস প্লান্ট তৈরি করে সকল বর্জ্য বিশেষ প্রক্রিয়ায় গ্যাস তৈরি করে গৃহস্থালি বৈদ্যুতিক চাহিদা পূরণ করা যেতে পারে। অবশিষ্টগুলো জৈব সার হিসেবে চাষাবাদের জন্য ব্যবহার করা যাবে।
বর্তমান বিশ্বায়নের যুগে বায়ুদূষণ হ্রাস করা খুবই কঠিন। তারপরও উপরোক্ত পদক্ষেপগুলো গ্রহণ করলে বাংলাদেশ তথা বিশ্বকে জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাব থেকে কিছুটা হলেও রক্ষা করা সম্ভব হবে বলে বিশেষজ্ঞগণ মনে করেন। এ জন্য প্রয়োজন সকলের সম্মিলিত প্রচেষ্টা এবং জনসচেতনতা বৃদ্ধি।