বাসস
  ১৫ এপ্রিল ২০২৫, ১৭:৫৭

অনলাইন জুয়া খেলা বন্ধে সংশ্লিষ্টদের লিগ্যাল নোটিশ

সুপ্রিম কোর্ট। ফাইল ছবি

ঢাকা, ১৫ এপ্রিল, ২০২৫ (বাসস) : অনলাইন জুয়া খেলা বন্ধে পদক্ষেপ নিতে সংশ্লিষ্টদের লিগ্যাল নোটিশ পাঠানো হয়েছে।

সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ব্যারিস্টার মোহাম্মদ হুমায়ন কবির পল্লব এ নোটিশ পাঠান।

আজ মানবাধিকার সংগঠন ল এন্ড লাইফ ফাউন্ডেশন ট্রাস্টের পক্ষে অনলাইন জুয়ার ভয়াবহতা উল্লেখ করে ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রণালয়ের সচিব, তথ্য ও সম্প্রচার সচিব, স্বরাষ্ট্র সচিব, আইন সচিব, বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন, বাংলাদেশ ব্যাংকের ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট ও পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) বরাবর ই-মেইল যোগে জনস্বার্থে নোটিশ পাঠান।

নোটিশে উল্লেখ করা হয়, বাংলাদেশের প্রচলিত আইন ও সংবিধান অনুযায়ী যে কোনো ধরনের জুয়া খেলা বেআইনি ও অপরাধ। কিন্তু নোটিশ গ্রহীতাদের নিষ্ক্রিয়তার কারণে, অনলাইন জুয়া বাংলাদেশে মহামারি আকার ধারণ করেছে। বিভিন্ন পত্রপত্রিকার তথ্য মতে, বাংলাদেশের প্রায় ৫০ লক্ষ লোক অনলাইন জুয়ায় আসক্ত। হাতে হাতে স্মার্টফোন ও ইন্টারনেট থাকায় প্রাপ্তবয়স্কদের পাশাপাশি কোমলমতি শিশুরাও জুয়ায় আসক্ত হচ্ছে। ফলে লক্ষ লক্ষ লোক জুয়া খেলে নিঃস্ব হয়ে যাচ্ছে।  এই সুযোগে বিদেশি কোম্পানিগুলো দেশীয় সিন্ডিকেটের সাথে যুক্ত হয়ে হাজার হাজার কোটি টাকা পাচার করে নিয়ে যাচ্ছে। বাংলাদেশের নামিদামি সেলিব্রেটি, শোবিজ মডেল ও তারকা তাদের নিজস্ব ফেসবুক পেজ ও ফেসবুক অ্যাকাউন্টে টাকার বিনিময়ে জুয়ার বিজ্ঞাপন প্রমোট করছেন। অনেক টেলিভিশন ও অনলাইন মিডিয়া তাদের পেইজে বিভিন্ন জুয়ার বিজ্ঞাপন প্রচার করছে।

গণমাধ্যমের প্রতিবেদন অনুযায়ী, দেশের ক্রীড়া ও শোবিজের তারকারা বিভিন্ন সময় নিজস্ব ফেসবুক পেইজে বাণিজ্যিক কারণে অনলাইন জুয়ার বিজ্ঞাপন দিয়ে জুয়াকে সম্প্রসারণ করেছেন। 

ওয়ানএক্সবেটসহ অনলাইন অ্যাপস ও ক্যাসিনোগুলোতে মোবাইল ব্যাংকিং ও বিভিন্ন লোকাল ব্যাংকের কার্ডের মাধ্যমে টাকা পরিশোধ করে অনলাইন জুয়া খেলা হয়। এর সাথে স্থানীয় মোবাইল ব্যাংকিংয়ের এজেন্টরাও জড়িত বলে পত্রপত্রিকায় খবর এসেছে। বিষয়গুলো খুবই উদ্বেগজনক এবং এ ব্যাপারে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া জরুরি।

নোটিশে বলা হয়, ১৮৬৭ সালে ব্রিটিশ আমলে জুয়া নিষিদ্ধ করে একটি আইন করা হয়েছিল। ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ  অর্ডিন্যান্স ১৯৭৬ এর ৯২ ধারা, দণ্ডবিধির ২৯৪-এ এবং ২৯৪-বি ধারায় যেকোনো ধরনের জুয়া নিষিদ্ধ করা হয়েছে এবং জুয়া খেলা শাস্তিযোগ্য অপরাধ। আমাদের সংবিধানের অনুচ্ছেদ ১৮(২) অনুযায়ী রাষ্ট্র যে কোনো ধরনের জুয়া প্রতিরোধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করতে সাংবিধানিকভাবে দায়বদ্ধ।

নোটিশ গ্রহীতাদের পদক্ষেপ নেওয়ার জন্য নোটিশে বলা হয়: অবিলম্বে অনলাইন জুয়ার সাথে সংশ্লিষ্ট সকল লিংক, সাইট, গেটওয়ে, অ্যাপ্লিকেশন বন্ধ বা ব্লক করতে হবে।  গুগল ও অন্যান্য ইন্টারনেট কোম্পানিগুলো যাতে অনলাইন জুয়ার কোন ধরনের বিজ্ঞাপন প্রচার বা প্রসার করতে না পারে, সেই বিষয়ে যথাযথ পদক্ষেপ নিতে হবে। অনলাইন জুয়ার প্রচার ও প্রসারের সাথে সংশ্লিষ্ট সেলিব্রেটি বা তারকা, টাকা লেনদেনকারি মোবাইল ব্যাংকিং কোম্পানি ও তপসিলি ব্যাংকগুলোর বিরুদ্ধে তদন্তপূর্বক আইনি ব্যবস্থা নিতে হবে। গুগল, ফেসবুক, ইউটিউব, এক্স, হোয়াটসএ্যাপসহ কোন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেই যেন আর অনলাইন জুয়া খেলার সাইট, অ্যাপ্লিকেশন বা লিংকে প্রবেশ করা না যায়, সেটা নিশ্চিত করতে হবে। 

অনলাইন জুয়া প্রতিরোধে স্পেশাল মনিটরিং সেল গঠন করতে ও জড়িতদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নিতে হবে।

নোটিশ গ্রহীতারা অবিলম্বে অনলাইন জুয়া বন্ধে সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ না করলে, ল এন্ড লাইফ ফাউন্ডেশন জনস্বার্থে হাইকোর্টে রিট দায়ের করে যথাযথ আইনি পদক্ষেপ নেবেন বলে নোটিশে উল্লেখ করা হয়েছে।