বাসস
  ২৩ এপ্রিল ২০২৫, ২১:১৮

রানা-প্লাজা দুর্ঘটনাকে জাতীয় ইস্যুতে পরিণত করার দাবি শ্রম সংস্কার কমিশন প্রধানের

ছবি : বাসস

ঢাকা, ২৩ এপ্রিল, ২০২৫ (বাসস) : বিগত ২০১৩ সালের ২৪ এপ্রিল সাভারের রানা প্লাজা দুর্ঘটনাকে জাতীয় ইস্যুতে পরিণত করে অবিলম্বে আহতদের ক্ষতিপূরণ ও পুনর্বাসনের দাবি জানান আজ অন্তর্বর্তী সরকারের গঠিত শ্রম সংস্থা কমিশনের প্রধান সৈয়দ সুলতান আহমেদ।

বুধবার বাংলাদেশ লিগ্যাল এইড এন্ড সার্ভিসেস ট্রাস্ট (ব্লাস্ট)-এর আয়োজনে রাজধানীর জাতীয় প্রেসক্লাবের তফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মানিক মিয়া হলে আয়োজিত ‘রানা প্লাজা ভবন ধস: বিচারের অপেক্ষায় একযুগ’ শীর্ষক এক মতবিনিময় সভায় সভাপতিত্ব করার সময় তিনি এ কথা বলেন।

তিনি বলেন, রানা প্লাজার ভবন ধসের মতো ভয়াবহ দুর্ঘটনাকে জাতীয় ইস্যুতে পরিণত করা হয়নি। অথচ এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে বাংলাদেশের সমস্ত মামলার প্রক্রিয়ার পরিবর্তন হওয়ার কথা ছিল, এই ঘটনার মাধ্যমে দেশে একটা নিরাপত্তা সংস্কৃতি তৈরি হওয়ার কথা ছিল।

তিনি বলেন, এতগুলো মানুষ আমরা এত বছর ধরে প্রচেষ্টা করে যাচ্ছি তবুও ঘটনাটির বিচার করা সম্ভব হয়নি। এটিকে জাতীয় ইস্যুতে পরিণত করে ধারাবাহিকভাবে এর যাবতীয় আইনি কার্যক্রম ও পুনর্বাসন প্রক্রিয়া এগিয়ে নিয়ে যেতে হবে।

সৈয়দ সুলতান আহমেদ বলেন, শ্রম সংস্কার কমিশনের দায়িত্ব পাওয়ার পর থেকে আমি বিভিন্ন মন্ত্রণালয় এটাই বলে যাচ্ছি যে, ১২ বছর আগের করে দেওয়া ব্যবস্থা এখন আর প্রযোজ্য না, আহতদের পুনর্বাসন করতে হবে। প্রত্যেককে এনে অ্যাসেসমেন্ট এর মাধ্যমে আলাদা প্রোফাইল তৈরি করতে হবে, বড়-বড় হাসপাতালের সঙ্গে যোগাযোগ করে তাদের কি ধরনের চিকিৎসা বা পুনর্বাসন প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে যেতে হবে তা জানতে হবে এবং দ্রুততম সময় কাজগুলো শুরু করতে হবে। এটা অসম্ভব কিছু না। কারণ মানুষ এখনো মনে করে এ ঘটনা বিচার হওয়া সম্ভব, ক্ষতিপূরণ দেয়া ও পুনর্বাসন হওয়া সম্ভব।

সভায় উপস্থিত ছিলেন- সিনিয়র আইনজীবী ব্যারিস্টার সারা হোসেন, তিনি বলেন, বিভিন্ন জায়গায় যে সমন্বয়হীনতা রয়েছে তার কারণে একযুগ পরেও রানা প্লাজা ভবন ধসের কোন বিচার হয়নি।

তিনি কারণ হিসেবে অর্থ মন্ত্রণালয়সহ অন্যান্য মন্ত্রণালয় এর সঙ্গে বিচার বিভাগ ও আনুষঙ্গিক প্রতিষ্ঠানের যোগাযোগের অভাবকে দায়ী করে বলেন, আমরা এবার বছরে দোষী ব্যক্তিদের সাজাসহ জবাবদিহিতা, ক্ষতিগ্রস্তদের ক্ষতিপূরণ ও পুনর্বাসনসহ এ প্রক্রিয়াগুলো মনিটর করার জন্য মনিটরিং কমিটির জন্য বলেছি। শ্রম সংস্কার কমিশনের সদস্যরা এখানে আছেন আশা করি এ ব্যাপারগুলো তারা যথাযথভাবে সরকারের কাছে তুলে ধরবেন।

এসময় দ্রুততম সময় মনিটরিং কমিটি করে ক্ষতিগ্রস্তদের ক্ষতিপূরণ পুনর্বাসনসহ সব ধরনের আইনি প্রক্রিয়াকে ত্বরান্বিত করার জন্য প্রচেষ্টা করার আশ্বাস দেন তিনি।

আলোচনায় নিজ বক্তব্য প্রদানের সময় অতিরিক্ত পাবলিক প্রসিকিউটর এডভোকেট আবুল কালাম খান বলেন, আমরা সুসংগঠিত পদ্ধতিতে এগিয়ে যাচ্ছি এবং আশা করি ২০২৬ সালের মধ্যে এ মামলাটির নিষ্পত্তি হবে।

সম্মান আলোচনা সভায় আরো উপস্থিত ছিলেন ব্লাস্টের পরিচালক লিগ্যাল মো. বরকত আলী, শ্রম সংস্কার কমিশনের সদস্য তাসলিমা আক্তার, এডভোকেট একেএম নাসিম, আইনজীবী শারমিন সুলতানা ও মাসুম বিল্লাহ, সমাজতান্ত্রিক শ্রমিক দলের সভাপতি রাজেকুজ্জামান রতনসহ আরো অনেকে।

উপস্থিত বক্তারা আর্থিক সহায়তা সহ ভুক্তভোগীদের জন্য সাভারের রানা প্লাজার স্থানে একটি পুনর্বাসনের কেন্দ্র ও হাসপাতাল সহ শ্রমিকদের আবাসন স্থল তৈরি করার দাবি জানান।  কর্মক্ষেত্রে সুরক্ষা সহ জীবন বীমা এবং অন্যান্য আনুষঙ্গিক ইন্স্যুরেন্স পলিসি প্রণয়ন, ভবিষ্যতে এ ধরনের ঘটনাকে প্রতিহত করার জন্য পদক্ষেপ গ্রহণ, শ্রমিক আইন সহায়তা সেল, সচেতনতা বৃদ্ধির জন্য মিডিয়া ক্যাম্পেইন ইত্যাদি সুপারিশ তুলে ধরেন।

উল্লেখ্য, ২০১৩ সালের ২৪ এপ্রিল সাভারে অবস্থিত রানা প্লাজা ভবনটি ধসে পড়ে। এতে মৃত্যুবরণ করেন ১ হাজার ১৩৮ জন তৈরি পোশাক শ্রমিক এবং গুরুতর আহত হন ১ হাজার ৭৬৯ জন মানুষ।

পরদিন ২৫ এপ্রিল রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ রাজউক ভবনের গার্মেন্টস মালিকদেরকে অভিযুক্ত করে একটি মামলা দায়ের করেন। এই দুর্ঘটনার কারণ তদন্ত করতে সরকারিভাবে আলাদা কয়েকটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। এদের সাতদিনের মধ্যে তদন্ত রিপোর্ট জমা দেবার আহ্বান করা হয়।

২৭ এপ্রিল এই ভবনের দু’টি গার্মেন্টসের মালিককে গ্রেপ্তার করা হয় ও তৎকালীন সাভার পৌরসভার দু’জন প্রকৌশলীকে গ্রেফতার করে রিমান্ডে নেয়া হয়।

ওই বছরের ২৮ এপ্রিল এই ঘটনায় দায়ী ভবন মালিক সোহেল রানাকে বেনাপোল সীমান্ত থেকে ভারতে পালিয়ে যাওয়ার সময় র‌্যাব গ্রেফতার করে। বর্তমানে তিনি কারাগারে আছেন।

নিষ্পত্তির অপেক্ষায় রয়েছে ১৯টি মামলা।