শিরোনাম
আজাদ রুহুল আমিন
বাগেরহাট, ২৮ এপ্রিল, ২০২৫ (বাসস) : উচ্চশিক্ষা লাভ করে চাকরির পিছনে না ছুটেও অনলাইনে স্বাধীন ব্যবসা করছেন বাগেরহাটের সোমা মিস্ত্রি (৩৭)। যেটি অনুকরণীয় দৃষ্টান্ত হতে পারে অন্য বেকার শিক্ষিত যুব যুবাদের কাছে। একেবারেই নিজ উদ্যোগে ২০২০ সালে কারো কোনো সহযোগিতা ছাড়াই তিনি প্রথম মোবাইলের মাধ্যমে অনলাইনে চা পাতা পেজ খুলে ব্যবসার কাজে হাত দেন। সে সময় সারা দেশজুড়ে চলছিলো করোনা মহামারি।
ব্যবসার শুরুতে প্রতি মাসে তিনি আয় করতেন কমপক্ষে ৫ হাজার টাকা। করোনা শেষ হলে ধীরে ধীরে তার ব্যবসায় সফলতা আসতে শুরু করে। এখন তিনি মাসে আয় করেন দ্বিগুণ ১০ হাজার টাকা ও কোনো কোনো মাসে আরো বেশি। এরই মধ্যে তিনি ২০২৪ সালের শেষ দিকে বাগেরহাট সদর উপজেলা আই সিটির প্রথম ব্যাচে ৬ মাসের ই-কমার্স ট্রেনিং সফলতার সাথে সম্পন্ন ও সনদ লাভ করেন। একেবারেই শখের বসে যে ব্যবসা শুরু করেছিলেন তা তিনি এখন পেশা হিসেবে বেছে নিয়েছেন।
সোমা মিস্ত্রির বাবা সুদর্শন মিস্ত্রী, মা চারুবালা মজুমদার পেশায় দু’জনই শিক্ষকতা করতেন। এলাকায় তাদের শিক্ষা প্রসারে নাম, যশ, ও খ্যাতি রয়েছে। মোংলা উপজেলার মিঠাখালী ইউনিয়নের খাসের ডাংগা গ্রামে সোমার জন্ম। বাবা মায়ের খুব আদরের একমাত্র সন্তান হিসেবে বাবা মায়ের ইচ্ছা ছিল লেখা পড়া মানেই চাকরি আর এক ঘেয়েমি নয়। চাকরি না করার জন্য তারা তাদের সন্তানকে নিরুৎসাহিত করতেন। এটিও সোমা মিস্ত্রির জীবনে ইতিবাচক প্রভাব ফেলতে শুরু করে।
সোমা মিস্ত্রি বাগেরহাট সরকারি পিসি কলেজ থেকে দর্শন বিভাগে কৃতিত্বের সাথে ২০২৩ সালে অনার্স পাস করেন এবং খুলনা সরকারি বি এল কলেজ থেকে দর্শন বিভাগে ২০২৪ সালে মাস্টার্স সম্পন্ন করেন। সোমা মিস্ত্রির বিয়ে হয় আজ থেকে ১০ বছর আগে কচুয়ার সুমন কুমার হালদারের সাথে। তবে তারা বাগেরহাট সরকারি মহিলা কলেজ রোড়ের বাসিন্দা। সোমার স্বামী সুমন কুমার হালদার বাগেরহাট সদর উপজেলার চিরুলিয়া স্কুল এন্ড কলেজের অর্থনীতি বিভাগের প্রভাষক হিসেবে কর্মরত।
সোমা মিস্ত্রির একমাত্র পুত্র হিল্লোল হালদার বয়স ৯ বছর। বাগেরহাট সরকারি বালক উচ্চ বিদ্যালয়ের চতুর্থ শ্রেণির ছাত্র। তাকে স্কুলে আনা নেওয়া, তার স্কুলের পাঠ দানের নিয়মিত পড়ালেখার প্রতি নিজেই প্রচুর সময় ব্যায়সহ রান্নাবান্না ঘর সংসার দেখতে হয় তার। ভেতরে তথ্য প্রবাহের অবারিত প্রযুক্তির ব্যবহার খুব কম সময় দিতে পারেন। তারপরও তিনি অধিক খুশি।
সোমা মিস্ত্রি তার নিঃসঙ্গ সময় কাটাতে এবং আর্থিকভাবে সংসারে কিছুটা অর্থনৈতিক স্বাচ্ছন্দ্য বয়ে আনতে তার শখের বসের এই অনলাইনের ব্যবসাকে তিনি এখন পেশা হিসেবে নিলেও সোমা মনে করেন, উচ্চ শিক্ষায় প্রশিক্ষিত হয়ে চাকরির পিছনে না ঘুরে স্বাধীনভাবে অনলাইনে ব্যবসা যে কোন শিক্ষিত বেকারদের জীবন বদলে দিতে পারে আর যদি পুরো সময়টা দেয়া যায় তাহলে ভাগ্যের দ্বার উন্মোচিত হবে আশীর্বাদ হিসেবে।
সোমা বাসস’কে জানান যে, তিনি তার একমাত্র পুত্র হিল্লোল হালদারকে মানুষ করতে অনেক সময় পার হয়ে যায়। পুরোপুরি সময় দিতে পারেন না। সোমার চা পাতা পেজের নাম পরিবর্তন না করলেও মহিলাদের প্রসাধনী এবং ভ্যানিটি ব্যাগসহ নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যের অর্ডার পান ঘরে বসেই। বাগেরহাটের দ্রব্য সমূহ তার বাসা থেকে ডেলিভারি নেন গ্রাহকরা বিনা খরচে আর পিরোজপুর, বরিশাল, খুলনা, সাতক্ষীরা, যশোর, নড়াইল কুষ্টিয়া, রাজশাহী ও অন্যান্য জেলা শহরে মালামাল পৌঁছে যায় খুব দ্রুতই কুরিয়ার সার্ভিসের মাধ্যমে। তিনি বিভিন্ন সামগ্রীর ক্রেতার অর্ডার পান ঘরে বসেই।
সোমা মিস্ত্রি বাসস’কে আরো জানান, কোনো পণ্য তৈরি করেন না তিনি। উন্নত মানসম্পন্ন দ্রব্য সমূহ দেশের রাজধানী ঢাকা ও চট্টগ্রাম থেকে বিভিন্ন অভিজাত প্রতিষ্ঠান ও বড় বড় দোকানীদের কাছ থেকে পণ্য অর্ডারের মাধ্যমে পেয়ে থাকেন। তবে অনলাইন ভিত্তিক ব্যাবসা প্রসারের ক্ষেত্রে ল্যাপটপ বা ডেক্সটপ কম্পিউটার ব্যবহার এই পেশাকে আরো গতিশীল করতে তিনি এর প্রয়োজনীয়তা অনুভব করেন।
তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি অধিদপ্তর বাগেরহাট উপজেলা আইসিটি অফিসার মো. আসাদ আব্দুল্লাহ বাসস’কে জানান, প্রথম ব্যাচে ই- কমার্সের ওপর ৬ মাসের প্রশিক্ষণ নিয়ে গৃহিণী সোমা মিস্ত্রি অতি অল্প সময় ব্যয় করেও তিনি সফল। সরকার সবসময় আইসিটি খাতে বেশি অর্থ বরাদ্দ দেন সে কারণেই অনেক গরীব অসহায় পরিবারের শিক্ষিত ছেলেমেয়েরা ফ্রি প্রশিক্ষণ নিয়ে সোমা মিস্ত্রির মতো সংসারে আর্থিক অসচ্ছলতা পূরণে এবং অর্থনীতির দ্বার উন্মোচিত করতে পারেন।