শিরোনাম
।। কবির আহমেদ খান।।
ঢাকা, ২৯ এপ্রিল, ২০২৫ (বাসস) : নির্বিঘ্নে কৃষকের ঘরে উঠছে বোরো ধান। চলতি বোরো মৌসুমে অধিক ধান ফলন হতে যাচ্ছে বলে আশা করছে কৃষি বিভাগ।
ইতোমধ্যে ২০ ভাগ আবাদী জমির ধান কাটা হয়ে গেছে, ধান উৎপাদনের পরিমাণের দিক থেকে ৪৪ লাখ ৭০ হাজার টন ধানের ফলন হয়েছে। বোরো সবচেয়ে বেশি ধান উৎপাদিত হয় হাওড় অঞ্চলে, হাওড়ের ৮০ ভাগ ধান কাটা হয়ে গেছে। আগামী জুন মাস পর্যন্ত ধান কাটা চললেও মাসের মাঝাামাঝিতে ধান কাটা প্রায় শেষ হয়ে যাবে বলে জানা যায়।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের সূত্র জানায়, ধান উৎপাদনে সর্বাধিক উৎপাদনশীল মৌসুম বোরো। বোরোর ওপর ভিত্তি করেই দেশের খাদ্য নিরাপত্তার ভিত্তি রচিত হয়। কেননা দেশের মোট উৎপাদনের প্রায় ৫৮ ভাগ আসে এ মৌসুম থেকে। এবার বোরোর ফলন খুব ভালো হয়েছে বলে আশা করছে কৃষি বিভাগ। এছাড়া দেশের নিন্মাঞ্চলে বিশেষ করে হাওড় এলাকায় বোরোর মৌসুমে সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিপূর্ণ থাকে। আকস্মিক বন্যা ও বৃষ্টির কারণে হাওড় অঞ্চলের ধান কাটা কার্যক্রম ক্ষতিগ্রস্ত হয়। কিন্তু এবার অনুকূল আবহাওয়ার কারণে হাওড় অঞ্চলের ধান কাটা প্রায় শেষ পর্যায়ে।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের ‘কৃষি আবহাওয়া তথ্য পদ্ধতি উন্নতকরণ প্রকল্পের প্রকল্প পরিচালক’ ড. শাহ কামাল খান বাসস’কে বলেন, বোরো মৌসুমে আগাম বন্যা ও অতি বৃষ্টি নিয়ে শংকায় ছিলাম, কিন্তু এখন পর্যন্ত বোরো ফসলের কোন ক্ষতি হয়নি। আবহাওয়া সামগ্রিকভাবে অনুকূলে রয়েছে, এখন যে পরিমাণ বৃষ্টি হচ্ছে তা সেচের কাজেই প্রয়োজন। তাই এক কথা বলা যায়, এই সময়ে সামান্য বৃষ্টি বোরো ধানের জন্য আশীর্বাদ।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, ২০২৩-২৪ অর্থবছরে দেশে বোরো ধানের ফলন ছিল ২ কোটি ১০ লাখ টন, লক্ষ্যমাত্রা ছিল ২ কোটি ২৬ লাখ টন, যা হেক্টর প্রতি ৪ দশমিক ৪৬ টন। এর আগে ২০২২-২৩ অর্থবছরে ২ কোটি ৭ লাখ টন, ২০২১-২২ অর্থবছরে ২ কোটি ১ লাখ টন এবং ২০২০-২১ অর্থবছরে ১ কোটি ৯৮ লাখ টন ধান উৎপাদন হয়েছিল।
অধিদপ্তরের সরেজমিন শাখার (ফিল্ড সার্ভিসেস উইং) প্রকল্প পরিচালক মো. ওবায়দুর রহমান মণ্ডল বাসস’কে বলেন, বোরো মৌসুমে এবার ধানের ফলন ভালো হওয়ার সম্ভাবনাই বেশি। সামান্য যে বৃষ্টি দেশের বিভিন্ন স্থানে হচ্ছে, তাতে ক্ষতিকর তেমন প্রভাব ফেলবে না। কারণ এখন অনেক স্থানে ধানের জন্য আরও পানির প্রয়োজন রয়েছে। তিনি জানান, এবার সারা দেশে বোরো ধানের আবাদ হয়েছে ৫০ লাখ ৪৬ হাজার ৫০০ হেক্টর জমিতে, আর ধান উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ২ কোটি ২৬ লাখ টন।
তিনি বলেন, এবার সারা দেশে তিন মৌসুমে (আউশ, আমন ও বোরো) ধান উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৪ কোটি ৬ লাখ টন। তবে বোরো ধান মোট লক্ষ্যমাত্রার ৫৮ ভাগ পূরণ করে থাকে। আউশ অনেকাংশে কম হয়, সারা দেশে ১০ লাখ হেক্টর জমিতে ৪০ লাখ টন আউশ ধান হয়ে থাকে।
তিনি আরও জানান, দেশের মোট ধানের ১০ ভাগের একভাগ উৎপাদিত হয় হাওড় অঞ্চলে, যা প্রায় ২১ লাখ টন। তিন মৌসুমে হাওড় অঞ্চলে ৪ লাখ ৫৪ হাজার হেক্টর জমিতে ধান আবাদ হয়ে থাকে। হাওড় অঞ্চলের মধ্যে অধিকাংশ আবাদী জমি হচ্ছে- সিলেট, মৌলভীবাজার, নেত্রকোনা, কিশোরগঞ্জ, হবিগঞ্জ, সুনামগঞ্জ ও ব্রাহ্মণবাড়িয়ায়। এসব হাওড় অঞ্চলে কম্বাইন্ড হারভেস্ট পদ্ধতিতে ইতোমধ্যে ৮০ ভাগ ধান কাটা হয়ে গেছে, সে হিসাবে ধান কাটা হয়েছে ৩ লাখ ৬০ হাজার হেক্টর।
এদিকে গত শনিবার মুন্সীগঞ্জের শ্রীনগর উপজেলার আড়িয়াল বিলে ধান কাটা ও মাড়াই পরিদর্শন ও কৃষকদের সঙ্গে মতবিনিময়কালে কৃষি ও স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী বলেছেন, দেশে বোরো ধানের ফলন সন্তোষজনক হয়েছে। নির্ধারিত সময়ের মধ্যে বোরো ধান কাটা সম্পন্ন হবে।
বাংলাদেশের খাদ্য উৎপাদন বিষয়ে জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থার (এফএও) প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০২৩ সালে বাংলাদেশে যে ৬ কোটি ৪৩ লাখ টন দানাদার খাদ্য উৎপাদিত হয়েছে, তার মধ্যে শুধু ধান ৫ কোটি ৮৬ লাখ টন। যা দেশে মোট দানাদার খাদ্য উৎপাদনে রেকর্ড।
জানা যায়, ২০১৭-১৮ অর্থবছর থেকে ফসল উৎপাদন সামগ্রিকভাবে বেড়েছে। ধানি জমির পরিমাণ বেড়ে যাওয়ার পাশাপাশি আধুনিক জাতের ফসল ফলানোয় চাল আমদানিও কমেছে। এ বছর প্রায় ৫০ লাখ ৪৬ হাজার ৫০০ হেক্টর জমিতে বোরো ধানের চাষ হয়েছে। ২০০৫ সালে বোরো ধান আবাদের আওতায় জমি ছিল ৪০ লাখ ৬৪ হাজার হেক্টর।