বাসস
  ৩০ এপ্রিল ২০২৫, ১৮:৩৫

কিছু লোক নারী সমাজের প্রতিনিধিত্বের কথা বলে বিভ্রান্তি সৃষ্টির পাঁয়তারা করছে : ডা. শফিকুর রহমান

জামায়াতে ইসলামীর আমীর ডা. শফিকুর রহমান। ছবি : বাসস

ঢাকা, ৩০ এপ্রিল, ২০২৫ (বাসস) : জামায়াতে ইসলামীর আমীর ডা. শফিকুর রহমান বলেছেন, কিছু লোক গোটা নারী সমাজের প্রতিনিধিত্বের কথা বলে সমাজে বিভ্রান্তি সৃষ্টির পাঁয়তারা করছে।

জাতীয় ওলামা মাশায়েখ আইম্মা পরিষদের উদ্যোগে আজ বুধবার রাজধানীর ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে ‘নারী বিষয়ক সংস্কার কমিশনের ইসলাম ফোবিয়া: করণীয়’ শীর্ষক সেমিনারে অংশ নিয়ে তিনি বলেন, “আমাদেরকে ভাবতে হবে যে, আমাদেরকে কোনপথে নিয়ে যাওয়ার জন্য জোর করে চেষ্টা করা হচ্ছে। শিশুকালে দেখেছি আমাদের শিক্ষাকাল শুরু হতো মক্তবের পাঠ দিয়ে। সকালে মক্তবে যেতাম, সেখান থেকে আসার পর মা গোসল করিয়ে, কাপড় পরিয়ে স্কুলে পাঠাতো। এখন খুবই পরিকল্পিতভাবে সকালের মক্তবে যাওয়ার এ ধারাকে পরিবর্তন করে দেওয়া হয়েছে। বাচ্চা ঘুমাচ্ছে মা তাকে কাঁধে তুলে স্কুলে নিয়ে যাচ্ছেন। মক্তবের সময় এভাবেই কেড়ে নেওয়া হয়েছে। যেখানে মুসলমানের সন্তানের ‘ইক্বরা বিসমি রব্বিকাল্লাজি খলাক’ দিয়ে পাঠ শুরু হওয়ার কথা, সেখানে অন্য কিছু দিয়ে পাঠ শুরু হচ্ছে, এই জায়গাটা কেড়ে নেওয়া হয়েছে। কিছু লোক আজ গোটা নারী সমাজের প্রতিনিধিত্বের কথা বলে সমাজে বিভ্রান্তি সৃষ্টির পাঁয়তারা করছে।”

জাতীয় ওলামা মাশায়েখ আইম্মা পরিষদের সভাপতি মাওলানা নুরুল হুদা ফয়েজির সভাপতিত্বে সেমিনারে প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন আইএফএ কনসালটেন্সি লিমিটেডের পরিচালক মুফতি আব্দুল্লাহ মাসুম। এতে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ এর আমীর মুফতি সৈয়দ রেজাউল করীম, বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের আমীর মাওলানা মামুনুল হক, বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী ঢাকা মহানগর দক্ষিণের আমীর নূরুল ইসলাম বুলবুল, এবি পার্টির চেয়ারম্যান মুজিবুর রহমান মঞ্জু, এনসিপি’র যুগ্ম আহ্বায়ক মাওলানা আশরাফ মাহদী, জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশ এর মহাসচিব মাওলানা মনজুরুল ইসলাম আফেন্দী, খেলাফত মজলিসের মহাসচিব ড. আহমদ আব্দুল কাদের, ইসলামী ঐক্যজোটের মহাসচিব মাওলানা সাখাওয়াত হোসাইন রাজী, গণঅধিকার পরিষদের সভাপতি নুরুল হক নূর, মাওলানা খালিদ সাইফুল্লাহ আইয়ুবী, মাওলানা আবদুল্লাব বিন আবদুর রাজ্জাক ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী অধ্যাপক আরিফুল ইসলাম অপু বক্তব্য রাখেন।

ডা. শফিকুর রহমান বলেন, ‘এ সমাজকে ধ্বংস করে ফেলা হয়েছে। এখন দেশে দ্বীনদার, ইমানদার যে শক্তি জেগে উঠেছে, তা নিয়ে জনগণ স্বপ্ন দেখা শুরু করেছে। জনগণের দৃষ্টি ভিন্ন দিকে নিয়ে যাওয়ার জন্য ইসলামী শক্তির মুখোমুখি আরেকটি শক্তিকে দাঁড় করিয়ে দেওয়া হচ্ছে। অতীতের সকল ষড়যন্ত্র মুসলমানরা ঐক্যবদ্ধভাবে মোকাবিলা করেছে। ইনশাআল্লাহ এ চক্রান্তও টিকবে না, এটাও ভেসে যাবে, ইনশাআল্লাহ।’ 

নারী কমিশনকে উদ্দেশ করে জামায়াতের আমীর বলেন, ‘এরা স্ববিরোধীও বটে। একদিকে এরা বলছে নারী-পুরুষের সমান অধিকার; অন্যদিকে বলছে বিভিন্ন ক্ষেত্রে কোটা নির্ধারণ করতে হবে। এটা স্ববিরোধী হয়ে গেল না। সমান অধিকার চাইলে কোটার প্রশ্ন আসবে কেন? প্রশ্ন রাখেন আমীরে জামায়াত। যোগ্যতা প্রমাণ করে নিজ নিজ জায়গায় চলে গেলে তো কোটার দরকার হয় না। কোটা দেওয়া হয় পিছিয়ে পড়াদের সুযোগ দেওয়ার জন্য। নারীরা এখন আর পিছিয়ে নেই, নারীরা আমাদের মা, আমাদের বোন, আমাদের কন্যা।’

নারীরা সম্মানের প্রতীক উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘ঈমান-আকিদা, তাহজীব-তামাদ্দুনে যারা বিশ্বাস করেন, তাদের বাদ দিয়ে নয়, তাদের প্রাধান্য দিয়েই নারী সংস্কার কমিশন গঠন করতে হবে। দুঃখজনক হলো এ কমিশনে এমন একজন নারীকেও রাখা হয়নি। এখানেই এটা পক্ষপাতদুষ্ট।’

ডা. শফিকুর রহমান সেমিনার আয়োজনের ওপর দলের পক্ষ থেকে পূর্ণ সমর্থন ব্যক্ত করে বলেন, ‘আগামী দিনে হাতে হাত ধরে সমাজের সকল কল্যাণকর কাজ একসাথে করবো, ইনশাআল্লাহ এবং আমরা এ বার্তা দিচ্ছি, তোমরা আমাদের টুকরা টুকরা করে আমাদের মাথায় আর কাঁঠাল ভেঙে খেতে পারবে না। আগামীর বাংলাদেশ হবে কুরআনের বাংলাদেশ।’

সেমিনারে সর্বসম্মতিক্রমে নারীবিষয়ক সংস্কার কমিশনের প্রস্তাব অবিলম্বে প্রত্যাহার, কমিশন সরকারিভাবে বাতিল, নতুন কমিশন গঠনের ক্ষেত্রে দ্বীনদার, শিক্ষিত, দেশীয় চিন্তায় বিশ্বাসী নারীদের অন্তর্ভুক্ত করা এবং কুরআন-সুন্নাহ, সংবিধান এবং সামাজিক বাস্তবতার ভিত্তিতে পরিবার ও নারী বিষয়ে প্রস্তাবের দাবি জানানো হয়।