শিরোনাম
দ্য ওভাল, ১ আগস্ট ২০২৩ (বাসস) : পেসার স্টুয়ার্ট ব্রড ও অলরাউন্ডার মঈন আলির বিদায়ী টেস্ট জিতে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে পাঁচ ম্যাচের অ্যাশেজ সিরিজ ২-২ সমতায় শেষ করলো স্বাগতিক ইংল্যান্ড। গতরাতে সিরিজের পঞ্চম ও শেষ টেস্টে ইংল্যান্ড ৪৯ রানে হারিয়েছে বিশ^ চ্যাম্পিয়ন অস্ট্রেলিয়াকে। এই ম্যাচ দিয়ে সবধরনের ক্রিকেট থেকে অবসর নিলেন ব্রড। এ ম্যাচ দিয়ে টেস্ট ক্রিকেটকে দ্বিতীয়বারের মত বিদায় জানালেন মঈন।
ওভালে পঞ্চম ও শেষ টেস্ট শুরুর আগে সিরিজের প্রথম দুই ম্যাচে জয় পেয়েছিলো অস্ট্রেলিয়া, তৃতীয় টেস্টে জয় পায় ইংল্যান্ড এবং চতুর্থ ম্যাচ হয় ড্র। অর্থাৎ ইংল্যান্ডের বিপক্ষে সিরিজে ২-১ ব্যবধানে এগিয়ে থেকে শেষ টেস্ট খেলতে নামে অস্ট্রেলিয়া।
এ অবস্থায় ইংল্যান্ড ও অস্ট্রেলিয়ার সামনে সমীকরণ ছিলো, এ ম্যাচ জিতলে ২০০১ সালের পর আবারও ইংল্যান্ডের মাটিতে অ্যাশেজ জয়ের স্বাদ পাবে অস্ট্রেলিয়া। সিরিজ হার এড়াতে শেষ টেস্টে জয় ছাড়া বিকল্প পথ ছিলো না ইংলিশদের।
ইংল্যান্ডের ছুঁড়ে দেয়া ৩৮৪ রানের টার্গেটে চতুর্থ দিন শেষে বিনা উইকেটে ১৩৫ রান করেছিলো অস্ট্রেলিয়া। দুই ওপেনার ডেভিড ওয়ার্নার ৫৮ ও উসমান খাজা ৬৯ রানে অপরাজিত ছিলেন। ম্যাচ জিততে ১০ উইকেট হাতে নিয়ে ২৪৯ রান দরকার পড়ে অসিদের।
পঞ্চম ও শেষ দিনের চতুর্থ ওভারেই অস্ট্রেলিয়ার উদ্বোধনী ভাঙ্গেন ইংল্যান্ডের পেসার ক্রিস ওকস। ৯টি চারে ১০৬ বলে ৬০ রান করা ওয়ার্নারকে শিকার করেন ওকস। ১১ বল পর খাজাকেও বিদায় দেন ওকস। ৮টি চারে ১৪৫ বলে ৭২ রান করেন খাজা।
তিন নম্বরে নামা মার্নাস লাবুশেনকে বড় ইনিংস খেলার সুযোগ দেননি পেসার মার্ক উড। ১৩ রানে থামেন লাবুশেন। ১৪০ রানের দারুন উদ্বোধনী জুটির পর ২৯ রানের ব্যবধানে ৩ উইকেট হারিয়ে চাপে পড়ে অস্ট্রেলিয়া।
দলীয় ১৬৯ রানে চতুর্থ উইকেটে জুটি বাঁধেন স্টিভেন স্মিথ ও ট্রাভিস হেড। ইংল্যান্ড বোলারদের দারুণভাবে সামাল দিয়ে রানের চাকা সচল করেন দু’জনে। এতে মধ্যাহ্ন-বিরতির পর্যন্ত ৩ উইকেটে ২৩৮ রান পেয়ে যায় অসিরা। বৃষ্টির কারনে দ্বিতীয় সেশনে মাঠেই নামতে পারেনি দু’দল।
তৃতীয় ও শেষ সেশনে ৭ উইকেট হাতে নিয়ে ৫২ ওভারে ১৪৬ রান দরকার পড়ে অস্ট্রেলিয়ার। স্মিথ ও হেডের জমে যাওয়া জুটি ভাঙ্গতে মরিয়া হয়ে উঠে ইংল্যান্ড। ৩ উইকেটে ২৬৪ রান তুলে শক্ত অবস্থানে থেকে ম্যাচ জয়ের পথে ছিলো অস্ট্রেলিয়া।
হঠাৎ করে নাটকীয়ভাবে বদলে যায় ম্যাচের চিত্রপট। ১৮ বল ও ১১ রানের মধ্যে অস্ট্রেলিয়ার ৪ উইকেট শিকার করেন মঈন ও ওকস। দলীয় ২৬৪ রানে স্মিথ-হেডের ৯৫ রানের জুটিতে ভাঙন ধরান মঈন। ৬টি চারে ৭০ বলে ৪৩ রান করে আউট হন হেড।
২৭৪-২৭৫ রানে আরও ৩ উইকেটের পতন ঘটে অস্ট্রেলিয়ার। এসময় স্মিথকে ৫৪ রানে ও মিচেল স্টার্ককে শূন্যতে শিকার করেন ওকস। মিচেল মার্শকে ৬ রানে থামান মঈন। ২৭৫ রানে পতন হয় অসিদের সপ্তম উইকেট। ম্যাচের লাগাম চলে যায় ইংল্যান্ডের কব্জায়।
অস্ট্রেলিয়ার রান ৩শ হবার আগে আবারও আঘাত হানেন মঈন। এবার অসি অধিনায়ক প্যাট কামিন্সকে ৯ রানে আউট করেন তিনি। এতে ২৯৪ রানে ৮ উইকেট হারায় অস্ট্রেলিয়া। নবম উইকেটে প্রতিরোধ গড়ার চেষ্টা করেন উইকেটরক্ষক অ্যালেক্স ক্যারি ও টড মারফি। ৩৫ রান তুলে দলকে লড়াইয়ে রাখেন ক্যারি ও মারফি।
মারফিকে ব্যক্তিগত ১৮ রানে শিকার ইংল্যান্ডকে জয়ের দ্বারপ্রান্তে পৌঁছে দেন ব্রড। ৩৩৪ রানে অস্ট্রেলিয়ার শেষ ব্যাটার ক্যারিকে আউট করে ইংল্যান্ডের জয় নিশ্চিত করেন ব্রড। ক্যারিয়ারের শেষ বলেও উইকেট তুলে থামলেন ব্রড। ২৮ রান করেন ক্যারি। ইংল্যান্ডের ওকস ৪টি, মঈন ৩টি ও ব্রড ২টি ও উড ১টি উইকেট নেন। ম্যাচে ৩৭ রান ও ৭ উইকেট নিয়ে সেরা খেলোয়াড় হয়েছেন ওকস। যৌথভাবে সিরিজ সেরা খেলোয়াড় হয়েছে ওকস ও অস্ট্রেলিয়ার স্টার্ক। পুরো সিরিজে ৭৯ রান ও ১৯ উইকেট নেন ওকস এবং ৮২ রান ও ২৩ উইকেট শিকার করেন স্টার্ক।
এবারের সিরিজ ২-২ সমতায় শেষ হলে অ্যাশেজ ধরে রাখলো অস্ট্রেলিয়াই। কারন ২০২১-২২ মৌসুমে অ্যাশেজ জিতেছিলো অস্ট্রেলিয়া।
বিশ^ টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপ তৃতীয় চক্রের অংশ এই সিরিজ শেষে টেবিলে ৫ ম্যাচ খেলে সমান ২টি করে জয়-হার ও ১টি ড্র’তে শতকরা ৪৩ দশমিক ৩৩ পয়েন্ট নিয়ে যধাক্রমে তৃতীয় ও চতুর্থস্থানে আছে অস্ট্রেলিয়া ও ইংল্যান্ড। প্রথম দু’টিস্থানে আছে পাকিস্তান (১০০.০০) ও ভারত (৬৬.৬৭)।