শিরোনাম
প্যারিস, ৯ আগস্ট ২০২৩ (বাসস/এএফপি) : পিএসজিতে কিলিয়ান এমবাপ্পের ভবিষ্যত নিয়ে অনিশ্চয়তা ফরাসি ফুটবলের নতুন মৌসুমর শুরুর আগে সবচেয়ে বড় আলোচনার বিষয়ে পরিনত হয়েছে।
পিএসজির এই সুপারস্টার টানা চারবারের মত ফ্রান্সের বর্ষসেরা খেলোয়াড় হিসেবে মনোনীত হয়েছে ন। এছাড়া টানা পাঁচ ফরাসি লিগে সর্বোচ্চ গোলাদাতাও ছিলেন। কিন্তু চ্যাম্পিয়ন ক্লাবটির সাথে চুক্তি নিয়ে বিরোধ পুরো গ্রীষ্মকালীন ট্রান্সফার মার্কেটেই হইচই ফেলে দিয়েছে।
এমবাপ্পে ইতোমধ্যেই পিএসজিকে চুক্তি নবায়নে অস্বীকৃতির চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত জানিয়ে দিয়েছে। এর অর্থ হচ্ছে আগামী মৌসুমে তিনি ফ্রি এজেন্ট হিসেবে ক্লাব ছাড়তে পারবে। দীর্ঘদিন তার প্রতি আগ্রহ দেখানো রিয়াল মাদ্রিদই হতে পারে পরবর্তী ঠিকানা।
এদিকে পিএসজি চাচ্ছে তাকে বিক্রি করতে, যাতে করে ফ্রি ট্রান্সফারের ঝুঁকিতে না পড়তে হয়। নতুবা এমবাপ্পেকে পিএসজিতে থাকতে হলে চুক্তি নবায়ন করেই থাকতে হবে। ২০১৭ সালে মোনাকো থেকে ১৮০ মিলিয়ন ইউরোতে পিএসজিতে এসেছিল এমবাপ্পে। এমবাপ্পে এখনো প্যারিসেই আছেন। কিন্তু প্রথম দলের সাথে অনুশীলন করছেন না।
এ সম্পর্কে পিএসজির কাতারি মালিক নাসের আল-খেলাইফি গত মাসে বলেছেন, ‘আমরা এই মুহূর্তে বিশ্বের সেরা খেলোয়াড়কে ফ্রি’তে ছাড়তে পারিনা। এটা অসম্ভব।’
বিষয়টি নিয়ে পিএসজির নতুন কোচ লুইস এনরিকে বিপাকে পড়েছেন। ক্রিস্টোফার গাল্টিয়ারের স্থলাভিষিক্ত এনরিকের ইচ্ছা এমবাপ্পেকে দলে ধরে রাখা। এমবাপ্পের বিষয়টি বাদ দিলে পিএসজি নতুন মৌসুমে ইউরোপীয়ান ব্যর্থতা কাটিয়ে উঠতে চায়। ফরাসি লিগ শিরোপাতো আছেই, সাথে বহুল প্রতিক্ষিত চ্যাম্পিয়ন্স লিগের শিরোপাও নিশ্চিত করতে চায় প্যারিসের জায়ান্টরা।
যদিও ইতোমধ্যেই দলত্যাগ করেছেন লিওনের মেসি, সার্জিও রামোসও চলে গেছেন। এমবাপ্পে যদি থাকেনও পিএসজির এই মুহূর্তে আক্রমনভাগকে শক্তিশালী করতে হবে। পর্তুগীজ স্ট্রাইকার গনসালো রামোস বেনফিকা থেকে দলে এসেছেন। ট্রান্সফার উইন্ডোর শুরুতেই নাম লিখিয়েছেন লুকাস হার্নান্দেজ, মিলান স্ক্রিনিয়ার, ম্যানুয়েল উগাতে, লি ক্যাং-ইন ও মার্কো আসেনসিও।
হার্নান্দেজ বলেছেন, ‘আমি হয়তোবা বায়ার্ন মিউনিখে থেকে যেতে পারতাম। কিন্তু পিএসজি আমার প্রতি আগ্রহ দেখিয়েছে। তাদের ভবিষ্যত পরিকল্পনা আমাকে সন্তুষ্ট করেছে।’
গত ১২ বছরে ১০মবারের মত শিরোপা জয়ে এবারও ফেবারিট হিসেবেই লিগ ওয়ান মৌসুম শুরু করবে পিএসজি। কিন্তু এমবাপ্পে চলে গেলে ঘরোয়া প্রতিদ্বন্দ্বীরা মাথাচাড়া দিয়ে উঠতে পারে।
এবার ফরাসি লিগের ফর্মেটেও পরিবর্তন এসেছে। প্রায় দুই দশকেরও বেশী সময় ধরে ২০ দলকে নিয়ে আয়োজিত লিগ ওয়ানে এবার খেলছে ১৮টি দল। ইউরোপীয়ান আসরে ফরাসি ক্লাবগুলোকে আরো প্রতিদ্বন্দ্বীতাপূর্ন হিসেবে গড়ে তোলার লক্ষ্যেই ঘরোয়া লিগে দলের সংখ্যা কমানো হয়েছে। লিগ কর্তৃপক্ষ চাচ্ছে তাদের লিগ ইংল্যান্ড, স্পেন, জার্মানী ও ইতালির ঘরোয়া লিগগুলোর তুলনায় আন্তর্জাতিক ভাবে আরো জনপ্রিয় হয়ে উঠুক। তারই ধারাবাকিতায় আন্তর্জাতিক স্বত্ব বাবদ আরো বেশী অর্থ আয়ের প্রত্যাশা করা হচ্ছে।
কিন্তু বেশ কিছু ফরাসি দলের একাধিক মালিক থাকায় বিষয়টি অনেক সময় হুমকির মুখে পড়ে। যেমন যুক্তরাষ্ট্র ভিত্তিক যে কনসোর্টিয়াম ব্লুকো চেলসির মালিক সেটাই আবার লিগ ওয়ানের ক্লাব স্ট্রসবার্গ কিনে নিয়েছে। স্ট্রসবাগ সভাপতি মার্ক কেলার অবশ্য তার দলের বর্তমান অবকাঠামোন নিয়ে বেশ সন্তুষ্ট। অন্য যেকোন দলের তুলনায় তার দল অপেক্ষাকৃত ছোট দল হিসেবে পরিচিত, এটা তিনি মানতে নারাজ। বিশেষ করে ক্রিস্টাল প্যালেসের সাবেক ম্যানেজার প্যাট্রিক ভিয়েরাকে নিয়োগ দেবার পর থেকে স্ট্রসবার্গ ফ্রান্সের অন্যতম বড় ক্লাবে পরিনত হয়েছে বলে কেলার দাবী ।
অন্যদিকে প্রিমিয়ার লিগের ক্লাব বোর্নমাউথের মার্কিন মালিক বিল ফোলে লোরিয়েন্টের ৪০ শতাংশ কিনে নিয়েছেন। সম্প্রতি ফরাসি তারকা লেফট-ব্যাক বেঞ্জামিন মেন্ডিকে কিনে নিয়ে লোরিয়েন্ট বেশ আলোচনার জন্ম দিয়েছে।
গত মৌসুমের রানার্স-আপ লেন্স থেকে অধিনায়ক সেকো ফোফানা সৌদি আরবে পাড়ি জমিয়েছেন। তাদের শীর্ষ গোলদাতা লোয়িস ওপেন্ডা গেছেন আরবি লিপজিগে।
ভ্যালেন্সিয়ার সাবেক কোচ মার্সেলিনোর অধীনে মার্সেই এবার পিএসজির মূল চ্যালেঞ্জার হিসেবে আবির্ভূত হতে পারে। চেলসি থেকে দলে আসা অভিজ্ঞ পিয়েরে-এমেরিক অবামেয়াং মার্সেই জন্য নিয়ামক হিসেবে প্রমানিত হতে পারেন। রেনে ও লিলি আরো একবার বড় দলগুলোকে চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে দিতে পারে। মোনাকো ও নিস নতুন কোচ নিয়ে নতুন মৌসুমে নিজেকের অবস্থানের উন্নতিতে আশাবাদী।