শিরোনাম
ঢাকা, ১৮ সেপ্টেম্বর ২০২৩ (বাসস) : বৃষ্টি বাঁধা সত্ত্বেও মধ্যে শেষ পর্যন্ত পর্দা নেমেছে এশিয়া কাপের। সহ-আয়োজক দেশ শ্রীলংকার বিপক্ষে ফাইনাল জিতে অষ্টমবারের মতো এশিয়া কাপের শিরোপা জিতেছে ভারত। তবে এবারের এশিয়া কাপ যে অনেকটাই পানশে ছিল তাতে কোন সন্দেহ নেই।
বৃষ্টির বাঁধার মুখে পড়েছিলো ফাইনাল ম্যাচও। নির্ধারিত সময়ের চেয়ে ৪০ মিনিট পর খেলা শুরু হলে টস জিতে প্রথমে ব্যাট করতে নামা শ্রীলংকাকে ১৫ দশমিক ২ ওভারে মাত্র ৫০ রানে অলআউট করে দেয় ভারতের তিন পেসার মোহাম্মদ সিরাজ, হার্ডিক পান্ডিয়া ও জসপ্রিত বুমরাহ। মাত্র ৫১ রানের টার্গেট ২৬৩ বল বাকী রেখে ১০ উইকেটে ম্যাচ জিতে নেয় শ্রীলংকা।
ঘরের মাঠে দর্শকদের সামনে ১০ উইকেটে লজ্জাজনক হার বেশ বিব্রতকর ছিলো শ্রীলংকার জন্য । প্রত্যাশা অনুযায়ী পারফরমেন্স করতে না পারার কারনে হতাশ সহ-আয়োজক দেশটি। ভালো করার প্রত্যাশা নিয়ে এশিয়া কাপ শুরু করেছিলো বাংলাদেশ। সাম্প্রতিকালে দলের পারফরমেন্স আশানুরুপ না হলেও আসন্ন বিশ্বকাপের আগে মানসিকভাবে আত্মবিশ^াসী হবার লক্ষ্য ছিলো বাংলাদেশের।
শেষ পর্যন্ত ভালো-খারাপ মিলিয়ে মাঝারি মানের পারফরমেন্স করেছে বাংলাদেশ। কিন্তু সুপার ফোর পর্বে নিজেদের শেষ ম্যাচে ভারতকে হারাতে না পারলে খারাপ পারফরমেন্সের তকমা গায়ে লাগতো টাইগারদের।
দু’টি গ্রুপে বিভক্ত হয়ে মোট ছয়টি দল এবারের আসরে অংশ নেয়। প্রাথমিকভাবে স্বগাতিক হিসেবে পাকিস্তানেরই এককভাবে টুর্নামেন্টটি আয়োজনের কথা ছিল। কিন্তু পাকিস্তান ও ভারতের মধ্যকার রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণে বাধ্য হয়ে প্রথমবারের মতো হাইব্রিড মডেলে টুর্নামেন্টটি অনুষ্ঠিত হয়। ফাইনালসহ বেশির ভাগ ম্যাচই শ্রীলংকার মাটিতে অনুষ্ঠিত হয়।
টুর্নামেন্টের সূচি এমন ছিল যে, ফাইনালসহ তিনবার দুই চিরপ্রতিন্দ্বন্দি ভারত-পাকিস্তানের মুখোমুখি হবার সম্ভাবনা তৈরি হয়েছিলো। কিন্তু পাকিস্তান ফাইনালে উঠতে না পারায় আয়োজকদের স্বপ্ন ভঙ্গ হয়। সুপার ফোর পর্বেই শেষবারের মত লড়াই হয় দু’দলের।
প্রত্যাশিতভাবে নিজেদের গ্রুপ থেকে সুপার ফোরে খেলার যোগ্যতা অর্জন করে ভারত ও পাকিস্তান। গ্রুপে অন্য দল ছিলো প্রথমবারের মত এশিয়া কাপ খেলতে নামা নেপাল। অন্যটি ডেথ গ্রুপ নামে পরিচিতি পায়। সেখানে আফগানিস্তানকে বিদায় করে সুপার ফোরে খেলার যোগ্যতা অর্জন করে বাংলাদেশ ও শ্রীলংকা।
ফেভারিটের তকমা নিয়ে মাঠে নামলেও গ্রুপ পর্বে নিজেদের প্রথম ম্যাচেই শ্রীলংকার কাছে ৫ উইকেটে হেরে যায় বাংলাদেশ। ঐ হারে সুপার ফোরে খেলার পথে বড়সড় ধাক্কা খায় টাইগাররা। কিন্তু দ্বিতীয় ম্যাচে আফগানিস্তানের বিপক্ষে ৮৯ রানের বড় জয়ে সুপার ফোরের টিকিট নিশ্চিত করে সাকিব-মুশফিকরা। আফগানদের বিপক্ষে প্রথমে ব্যাট করে ৫ উইকেটে দেশের বাইরে সর্বোচ্চ ৩৩৪ রান বিশাল সংগ্রহ পায় বাংলাদেশ। জবাবে ২৪৫ রানেই গুটিয়ে যায় আফগানিস্তান।
নিজেদের দ্বিতীয় ম্যাচে আফগানিস্তানকে হারিয়ের সুপার ফোরে বাংলাদেশের সঙ্গী হয় শ্রীলংকা। সুপার ফোরে ভারতের বিপক্ষে ম্যাচের আগে পর্যন্ত ছন্দহীন ছিলো বাংলাদেশ। পাকিস্তানের বিপক্ষে প্রথম ম্যাচে প্রতিপক্ষের পেস বোলিংয়ের সামে ফুটে ওঠে টাইগার ব্যাটারদেরদুর্বলতা। ঐ ম্যাচে পাকিস্তানের কাছে ৭ উইকেটে এবং পরের ম্যাচে বোলিং উইকেটে শ্রীলংকার কাছে ২১ রানে হার বরণ করে টাইগারা। দুই ম্যাচেই ব্যাটিং ব্যর্থতায় ম্যাচ হারে বাংলাদেশ।
ফর্ম ফিরে পান সাকিব :
সুপার ফোর পর্বে নিজেদের শেষ ম্যাচে ভারতের বিপক্ষে খেলতে নামার আগেই ফাইনাল খেলার স্বপ্ন শেষ হয়ে যায় বাংলাদেশের। অপরদিকে, আগেই ফাইনাল নিশ্চিত হয়ে যাওয়ায় নিয়মরক্ষার ম্যাচে পরীক্ষা-নিরীক্ষার সিদ্বান্ত নেয় ভারত। ম্যাচের একাদশে ভারত পাঁচটি পরিবর্তন আনলেও ছয়টি পরিবর্তন নিয়ে খেলতে নামে বাংলাদেশ। এরমধ্যে অভিষেক হয় পেসার তানজিম হাসান সাকিবের।
ভারতের বিপক্ষে ছন্দে ফিরেন অধিনায়ক সাকিব আল হাসান। তার ৮০ রানের ইনিংসের সুবাদে ৮ উইকেটে ২৬৫ রানের চ্যালেঞ্জিং স্কোর করে বাংলাদেশ। পরবর্তীতে নিজের দুর্দান্ত বোলিং ও বুদ্ধিমত্তার সাথে বোলারদের ব্যবহার করে ভারতকে ২৫৯ রানে আটকে রাখতে অবদান রাখেন সাকিব। অভিষেক ম্যাচে নিজের দ্বিতীয় বলেই ভারত অধিনায়ক রোহিত শর্মাকে খালি হাতে বিদায় দিয়ে দলকে দারুন শুরু এনে দিয়েছিলেন তানজিম। এমনকি শেষ ওভারেও নিজের দক্ষতা ফুটিয়ে তুলেন তিনি।
শান্তর ইনজুরি বাংলাদেশের জন্য বড় ধাক্কা :
ইনজুরি এবং দলের গুরুত্বপূর্ণ খেলোয়াড়দের অনুপস্থিতিতে এশিয়া কাপের মিশনে শুরুতেই চিন্তায় পড়ে যায় বাংলাদেশ। টুর্নামেন্ট শুরুর আগেই ছিটকে পড়েন তামিম ইকবাল এবং অসুস্থ হয়ে পড়েন লিটন দাস। টুর্নামেন্ট চলাকালীন ইনজুরিতে পড়ে ইনফর্ম ব্যাটার নাজমুল হোসেন শান্ত দেশে ফিরলে বড় ধাক্কা খায় বাংলাদেশ।
গ্রুপ পর্বে শ্রীলংকার বিপক্ষে ৮৯ এবং আফগানিস্তানের বিপক্ষে ১০৪ রানের দারুন দু’টি ইনিংস খেলেন শান্ত। ব্যাটিং পজিশনে তিন নম্বরে শান্তর জায়গায় উপযুক্ত ব্যাটার না পাওয়ার চাপে পড়ে দল। টুর্নামেন্টে বাংলাদেশের সেরা ব্যাটার ছিলেন শান্ত। মাত্র দুই ম্যাচ খেলে ১৯৩ রান করেছিলেন তিনি। পাঁচ ম্যাচে ১৭৩ রান করে বাংলাদেশীদের মধ্যে দ্বিতীয়স্থানে সাকিব এবং ১৫৮ রান নিয়ে বাংলাদেশের পক্ষে তৃতীয় ছিলেন মেহেদি হাসান মিরাজ।
সামর্থ্যের প্রমাণ দেয় তরুণ খেলোয়াড়রা
দলের পারফরমেন্স খুব একটা ভাল হলেও, প্রশংসা কুড়িয়েছেন তরুণরা। বিশেষ করে অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপজয়ী সাবেক খেলোয়াড় তাওহিদ হৃদয়, তানজিম। ব্যাট হাতে দু’টি হাফ-সেঞ্চুরিতে আলো ছড়িয়েছে হৃদয়। তরুণ এ ব্যাটার বড় পর্যায়ে খেলার যোগ্য নয় বলে যখন চার দিকে সমালোচনা চলছিল তখনই দু’টি হাফ সেঞ্চুরি করে সমালোচকদের সমুচিত জবাব দিয়েছেন হৃদয়।
শ্রীলংকার বিপক্ষে ম্যাচে একাই লড়াই করে ৮৫ রানের ইনিংস খেলে দলকে প্রায় জয়ের কাছে নিয়ে যান হৃদয়। পরে ভারতের বিপক্ষে গুরুত্বপূর্ণ ৫৪ রানও করেন তিনি। এদিকে ৩২ রানে ২ উইকেট নিয়ে স্বপ্নের মত অভিষেক হয় তানজিমের। দ্বিতীয় বলে রোহিতকে শূণ্যতে ফিরিয়ে বাংলাদেশের ৬ রানের জয়ে বড় ভূমিকা রাখেন তানজিম।
নতুন বলে দারুন জুটি তাসকিন-শরিফুলের :
ভারতের বিপক্ষে বাংলাদেশের শেষ ম্যাচে খেলেননি দুই পেসার তাসকিন আহমেদ ও শরিফুল ইসলাম। তারপরও বাংলাদেশের পক্ষে সর্বোচ্চ উইকেট শিকারী তারা। আসরে ১৬ উইকেট নেন নতুন বল-এর জুটি তাসকিন-শরিফুল। এরমধ্যে তাসকিন ৫ ম্যাচে ৯ উইকেট এবং শরিফুল ৪ ম্যাচে ৭ উইকেট শিকার করেন। এমন পরিসংখ্যান প্রমান করছে, বিশ্বকাপে কতটা শক্তিশালী জুটি হতে পারেন তারা।