শিরোনাম
ম্যানচেস্টার, ২০ সেপ্টেম্বর, ২০২৩ (বাসস/এএফপি) : ইত্তিহাদ স্টেডিয়ামে চ্যাম্পিয়ন্স লিগের শুরুতেই হোঁচট খাওয়া থেকে শেষ পর্যন্ত বেঁচে গেছে বর্তমান চ্যাম্পিয়ন ম্যানচেস্টার সিটি। পিছিয়ে পড়েও শেষ পর্যন্ত জুলিয়ান আলভারেজের জোড়া গোলে ৩-১ ব্যবধানে রেড স্টার বেলগ্রেডকে পরাজিত করে নতুন মৌসুমের যাত্রা শুরু করেছে পেপ গার্দিওলার দল ম্যান সিটি।
প্রথমার্ধের স্টপেজ টাইমে ওসমান বুকারির গোলে এগিয়ে গিয়েছিল সফরকারীরা। বিরতির দুই মিনিটের মধ্যে আলভারেজ গোল করে স্বস্তি ফেরান। এর মাধ্যমে নতুন মৌসুমে নিজের দুর্দান্ত ফর্ম ধরে রাখার ইঙ্গিত দিলেন তরুণ এই আর্জেন্টাইন স্ট্রাইকার। ৬০ মিনিটে দুর্দান্ত এক ফ্রি-কিকে ব্যবধান দ্বিগুন করেন আলভারেজ। এই গোলে অবশ্য রেড স্টার গোলরক্ষক ওমরি গ্লেজারের অবদানই বেশী। ম্যাচ শেষের ১৭ মিনিট আগে রড্রির গোলে জয়ের ব্যবধান বাড়িয়েছে বর্তমান চ্যাম্পিয়নরা।
প্রথমার্ধে রেড স্টারের পোস্টে ২২টি শট নিয়েও সফল হতে পারেনি সিটি। সে কারনে ম্যাচ শেষে কিছুটা হতাশ সিটি বস গার্দিওলা বলেছেন, ‘শুরুতেই যদি আমরা দুই গোল দিতে পারতাম তবে পরিস্থিতি হয়তো এতটা জটিল হতো না। ২২টি শট নেবার অর্থ হচ্ছে তোমরা ভাল ফুটবল খেলেছো। ঘরের মাঠের সমর্থকদের সামনে গোল করাটা তোমাদের দায়িত্বের মধ্যেই পড়ে।’
প্রিমিয়ার লিগে প্রথম পাঁচ ম্যাচে দারুন শুরুর পর ট্রেবল জয়ী সিটিজেনদের সামনে এখন চ্যাম্পিয়ন্স লিগে শিরোপা ধরে রাখার মিশন। প্রথম ম্যাচে সার্বিয়ান চ্যাম্পিয়নদের বিরুদ্ধে সিটির আরো কিছুটা কঠোর হওয়া উচিত ছিল। কিন্তু ইংলিশ চ্যাম্পিয়নরা নিজেরাই নিজের জীবন কঠিন করে তুলেছিল। বিরতির আগে বুকারির গোলে উল্টো রেড স্টার অঘটনের স্বপ্ন দেখতে থাকে। এনিয়ে টানা চার চ্যাম্পিয়ন্স লিগের ম্যাচে গোল করতে ব্যর্থ হলেন সিটির নরওয়েজিয়ান স্ট্রাইকার আর্লিং হালান্ড। তার একটি হেড ক্রসবারে লেগে ফেরত আসলে হতাশ হতে হয় পুরো দলকে। এর পরপরই ফিল ফোডেন আরো একটি সহজ সুযোগ পেয়েও কাজে লাগাতে পারেননি। তার হেড সরাসরি গ্লেজারের হাতে ধরা পড়ে।
ইনজুরির কারনে কাল সিটির বদলী বেঞ্চে ছিলেন আটজন খেলোয়াড়। ৪৪ মিনিটে বার্নার্ডো সিলভার স্থানে জেরেমি ডকুকে নামাতে বাধ্য হন গার্দিওলা। সিলভার ইনজুরি গার্দিওলাকে নতুন করে দু:শ্চিন্তায় ফেলেছে। প্রথমার্ধে রেড স্টার খুব কমই নিজেদের অর্ধ থেকে উপরে উঠতে পেরেছে। কিন্তু আত্মবিশ^াসী বুকারি যখন এডারসনকে পরাস্ত করে বল জালে জড়ান তখন পুরো স্টেডিয়াম হতবাক হয়ে যায়। ঘানাইয়ান এই মিডফিল্ডারের গোল উদযাপন অল্প সময়ের জন্য অফসাইড পতাকার কারনে থেমে গিয়েছিল। কিন্তু ভিএআর প্রযুক্তিতে দেখা গেছে রুবেন ডিয়াসের পাশে তিনি অনসাইডে ছিলেন।
যদিও রেড স্টারের এই লিড বেশীক্ষন স্থায়ী হয়নি। বিরতির পরপরই সমতায় ফিরে সিটিজেনরা। হালান্ড হয়তোবা স্কোরশিটে নাম লেখাতে পারেননি। কিন্তু তার চতুর পাসে আলভারেজ ঠিকই বল জালে জড়িয়েছেন। রেড স্টার কোচ বারাক বাখার বলেছেন, ‘দ্বিতীয়ার্ধের শুরুতেই আমরা গোল হজম করেছি। এরপর ম্যাচের গতির সাথে তাল মিলিয়ে চলা কঠিন হয়ে পড়ে। কারন আমরা কখনই ঘরোয়া লিগে এই ধরনের গতির সাথে পরিচিত নই। এই ম্যাচ থেকে আমরা অনেক কিছু শিখেছি।’
কেভিন ডি ব্রুইনার দীর্ঘ ইনজুরির অনুপস্থিতিতে আলভারেজের সামনে নিয়মিত একাদশে হালান্ডের সঙ্গী হিসেবে খেলার সুযোগ হয়েছে। ২৩ বছর বয়সী এই আর্জেন্টাইন ইংলিশ ফুটবলে দ্বিতীয় মৌসুম কাটাচ্ছেন। ইতোমধ্যেই নতুন মৌসুমে সাত ম্যাচে করেছেন চার গোল।
জুনে ইস্তাম্বুলে ইন্টার মিলানের বিপক্ষে ফাইনালে ১-০ গোলের জয়ের মাধ্যমে চ্যাম্পিয়ন্স লিগের শিরোপা প্রথমবারের মত ঘরে তুলেছিল সিটিজেনরা। ঐ ম্যাচে জয়সূচক গোল করা রড্রি কালও স্কোরশিটে নাম লিখিয়েছেন। এর মাধ্যমে এই স্প্যানিয়ার্ডের গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্তে গোল করার অভ্যাস আরো একবার প্রমানিত হলো। তার কোনাকুনি শটে সিটি তিন পয়েন্ট নিয়ে মাঠ ছেড়েছে।
এদিকে পার্ক ডি প্রিন্সেসে পিএসজি হয়তো গ্রীষ্মে দলের দুই প্রাণ ভোমরা নেইমার ও লিওনেল মেসিকে হারিয়েছে। কিন্তু একইসাথে কিলিয়ান এমবাপ্পেকে ঠিকই দলে ধরে রাখার সাহসও দেখিয়েছে। পিএসজি জানে এমবাপ্পে তাদের কাছে কি, যার প্রমান একাধিকবার তারা পেয়েছে। চ্যাম্পিয়ন্স লিগের এবারের আসরে ডেথ গ্রুপ হিসেবে পরিচিত এফ-গ্রুপে তাই শুরু থেকেই নিজেদের এগিয়ে নেবার লক্ষ্য নিয়েই মাঠে নেমেছিল প্যারিসের জায়ান্টরা। প্রথম ম্যাচে সফলও হয়েছে। জার্মান জায়ান্ট বরুসিয়া ডর্টমুন্ডকে তারা ২-০ গোলে হারিয়ে এবারের মৌসুমের সফল যাত্রা শুরু করেছে। বিরতির পর চার মিনিটে এমবাপ্পের স্পট কিকে এগিয়ে যায় পিএসজি। নিকলাস সুয়েলের হ্যান্ডবলে পেনাল্টি উপহার পায় স্বাগতিকরা। ভিটিনহার এ্যাসিস্টে ৫৮ মিনিটে আশরাফ হাকিমি ব্যবধান দ্বিগুন করার পাশাপাশি দলের জয় নিশ্চিত করেন। ম্যাচের শেষভাগে আরো কিছু প্রচেষ্টা ব্যর্থ না হলে জয়ের ব্যবধান হয়তো বাড়তো।
পরবর্তী ম্যাচে পিএসজি উজ্জীবিত ইংলিশ ক্লাব নিউক্যাসলের আতিথেয়তা নিবে। গতকাল গ্রুপের আরেক ম্যাচে সান সিরোতে সাতবারের ইউরোপীয়ান চ্যাম্পিয়ন এসি মিলানের সাথে গোলশুণ্য ড্র করে দুই দশক পর ফিরে আসা নিউক্যাসল চ্যাম্পিয়ন্স লিগের যাত্রা শুরু করেছে। গত বারের রানার্স-আপদের বিপক্ষে ম্যাচের প্রায় বেশীরভাগ সময়ই ব্যাক ফুটে থাকলেও গুরুত্বপূর্ণ এক পয়েন্টে স্বস্তি প্রকাশ করেছেন নিউক্যাসল ম্যানেজার এডি হাউ, ‘অবশ্যই আমরা এই ফলাফলে গর্বিত। এই ম্যাচে আমাদের মানসিকতার প্রমান হয়েছে। সবাই স্বীকার করেছে এর থেকেও ভাল পারফর্ম করা সম্ভব। আমি মনে করি সময় যত গড়াবে আমরা ততই নিজেদের উন্নতির প্রমান দিতে পারবো।’