শিরোনাম
প্যারিস, ৫ অক্টোবর ২০২৩ (বাসস/এএফপি) : ২০ বছর পর প্রথমবারের মত সেন্ট জেমস পার্কে চ্যাম্পিয়ন্স লিগের ম্যাচটি স্মরণীয় করে রাখলো নিউক্যাসল। গতকাল রাতে পিএসজিকে ৪-১ গোলে উড়িয়ে দিয়ে নিজেদের শক্তিমত্তার আরো একবার প্রমান দিয়েছে নিউক্যাসল। অন্যদিকে বর্তমান চ্যাম্পিয়ন ম্যানচেস্টার সিটি শেষ ভাগের দুই গোলে আরবি লিপজিগকে ৩-১ ব্যবধানে পরাজিত করেছে।
ইউরোপীয়ান এলিট প্রতিযোগিতায় আরেক ম্যাচে কোচ জাভি হার্নান্দেজের শততম ম্যাচে বার্সেলোনা পোর্তোর বিপক্ষে কষ্টার্জিত জয় পেয়েছে। শেষ মুহূর্তে গোল হজম করে ল্যাজিওর কাছে পরাজয় বরণ করতে বাধ্য হয়েছে সেল্টিক।
কিন্তু ইউরোপ জুড়ে গ্রুপ পর্বের এত ম্যাচের ভিড়ে সকল আকর্ষন কেড়ে নিয়েছে নিউক্যাসল। অপেক্ষাকৃত শক্তিশালী প্রতিপক্ষের বিপক্ষে মিগুয়েল আলমিরন, ড্যান বার্ন, সিন লংস্টাফ ও ফাবিয়ান শায়ের স্কোরশিটে নাম লিখিয়েছেন। ২০১১ সালে কাতারি মালিক দলের দায়িত্ব নেবার পর চ্যাম্পিয়ন্স লিগের গ্রুপ পর্বে এটাই পিএসজির সবচেয় বড় পরাজয়।
ম্যাচের ১৭ মিনিটে পিএসজি অধিনায়ক মারকুইসহোসের ভুলে স্বাগতিক নিউক্যাসলকে এগিয়ে দেন আলমিরন। বিরতির ছয় মিনিট আগে বার্নের হেড গিয়ানলুইগি ডোনারুমা সেভ করলেও তা লাইন ক্রস করলে ব্যবধান দ্বিগুন হয়। ভিএআর সম্ভাব্য অফসাইডের বিষয়টি পরীক্ষা করে নিউক্যাসলকে গোল উপহার দেয়। পিএসজি তারকা কিলিয়ান এমবাপ্পে কাল কোন প্রভাবই বিস্তার করতে পারেননি। দ্বিতীয়ার্ধে লংস্টাফের গোলে ব্যবধান ৩-০’তে উন্নীত হলে পিএসজির পরাজয় সময়ের ব্যপার হয়ে দাঁড়ায়। ৫৬ মিনিটে লুকাস হার্নান্দেজ এক গোল পরিশোধ করলেও তা শেষ পর্যন্ত সান্তনাই দিয়েছে সফরকারীদের। স্টপেজ টাইমে শায়েরের গোলে নিউক্যাসলের বড় জয় নিশ্চিত হয়।
ম্যাচ শেষে নিউক্যাসল ম্যানেজার এডি হোয়ে বলেছেন, ‘পিএসজি অবশ্যই একটি ভাল দল। আমরাও আজ দারুনভাবে তাদের প্রতিরোধ করেছি। আমাদের স্পিরিট দুর্দান্ত ছিল।’
এই হয়ে নিউক্যাসল গ্রুপ-এফ’র শীর্ষে উঠে এসেছে। জার্মানীতে বরুসিয়া ডর্টমুন্ড ও এসি মিলানের ম্যাচটি গোল শুন্য ড্র হওয়ায় দ্বিতীয় স্থান নিশ্চিত হয়েছে পিএসজির।
গ্রুপ-জি’তে সবচেয়ে কঠিন প্রতিপক্ষ আরবি লিপজিগকে ৩-১ গোলে পরাজিত করে বর্তমান চ্যাম্পিয়ন সিটি নক আউট পর্বে যাবার পথে অনেকটাই এগিয়ে গেছে। ফিল ফোডেনের দারুন এক প্রচেষ্টায় প্রথমার্ধের মাঝামাঝিতে এগিয়ে যায় সিটি। বিরতির পর লোয়িস ওপেন্ডা সমতা ফেরান। এরপর ফ্রি-কিক থেকে ফোডেনের শট বারে লেগে ফেরত আসে। জুলিয়ান আলভারেজ ৭৯ মিনিটে মাঠে নামার আগ পর্যন্ত সিটিকে গোলের জন্য অপেক্ষা করতে হয়েছে। ৮৪ মিনিটে দারুন এক স্ট্রাইকে আবারো সিটিকে এগিয়ে দেন আলভারেজ। এরপর স্টপেজ টাইমে আলভারেজ জেরেমি ডকুকে দিয়ে তৃতীয় গোলটি করিয়ছেন। এবারের প্রতিযোগিতায় এখন পর্যন্ত গ্রুপ পর্বে দুই ম্যাচে দুটিতেই জয়ী হয়েছে সিটিজেনরা। সিটি বস পেপ গার্দিওলা বলেছেন, ‘সব বিভাগেই আজ আমরা অসাধারণ একটি ম্যাচ খেলেছি। সবাই নিজ নিজ দায়িত্বে অবিচল ছিল।’
জি-গ্রুপের অপর দুই দল রেড স্টার বেলগ্রেড ও ইয়ং বয়েজ ২-২ গোলে ড্র করে এক পয়েন্ট করে সংগ্রহ করেছে। ৮৮ মিনিটে ওসমান বুকারি গোল করে সার্বিয়ান দল রেড স্টারের এক পয়েন্ট নিশ্চিত করেন। এর আগে চিফ এনডিয়ায়ে গোল করে রেড স্টারকে এগিয়ে দিয়েছিল। কিন্তু ফিলিপ উগরিনিকের গোলে বিরতির ঠিক পরপরই সমতায় ফিরে ইয়ং বয়েজ। এরপর সেডরিক ইত্তেনের পেনাল্টিতে এগিয়ে গিয়েছির ইয়ং বয়েজ।
পর্তুগালে এ্যাওয়ে ম্যাচে ১-০ গোলে জয়ের মাধ্যমে জাভিকে তার মাইলফলকের ম্যাচটি স্মরনীয় করে রাখার উপলক্ষ এনে দিয়েছে বার্সেলোনা। গ্রুপ-এইচ’এ কাগজে কলমে এটাই বার্সেলোনার সবচেয়ে কঠিন ম্যাচ ছিল। প্রথমার্ধের ইনজুরি টাইমে ফেরান তোরেস জয়সূচক গোলটি করেছেন। ১৬ বছর ৮৩ দিন বয়সে খেলতে নেমে চ্যাম্পিয়ন্স লিগে সবচেয়ে কম বয়সী খেলোয়াড় হিসেবে মূল দলে খেলার কৃতিত্ব অর্জন করেছেন বার্সেলোনার স্প্যানিশ তরুন লামিন ইয়ামাল।
তোরেস বলেছেন, ‘আমরা এই ম্যাচটি নিয়ে আগেই আলোচানা করেছি। এই ম্যাচের ফল আমাদের নক আউট পর্বে অর্ধেক এগিয়ে দিয়েছে, এখন বাকি অর্ধেক কাজ সম্পন্ন করতে হবে।’
ম্যাচের একেবারে শেষ মুহূর্তে গাভি লাল কার্ড দেখলে ১০ জনের দলে পরিনত হয়েছিল বার্সেলোনা।
এর আগে দিনের শুরুতে একই গ্রুপে প্রথম জয় নিশ্চিত করেছে শাখতার দোনেস্কৎ। বেলজিয়ামে তারা স্বাগতিক রয়াল এ্যান্টার্পকে ৩-২ গোলে পরাজিত করেছে। দুই গোলে পিছিয়ে পড়েও শাখতারের দারুন এই জয় নিশ্চিত হয়। আরনর মুয়া ও মিশেল-আঙ্গে বালিউইশা স্বাগতিকদের বিরতির আগেই ২-০ গোলে এগিয়ে দেয়। ডানিলো সিকানের জোড়া গোলের মাঝে ইয়ারোস্লাভ রাকিটিসকিভির গোলে ইউক্রেনের জায়ান্টরা দারুনভাবে ম্যাচের জয় ছিনিয়ে নেয়। এ্যান্টার্প ইনজুরি টাইমে ড্র করার সুযোগ পেয়েছিল। কিন্তু টবি অল্ডারইউরেল্ড স্পট কিক থেকে সুযোগ হাতছাড়া করেন।
পেড্রো রডরিগুয়েজের ৯৫ মিনিটের গোলে গ্লাসগোতে ল্যাজিও ২-১ গোলে সেল্টিককে পরাজিত করেছে। এর ফলে সেল্টিক গ্রুপ-ই’তে টানা দ্বিতীয় পরাজয় বরণ করলো। কিওগো ফুরুহাশি ১২ মিনিটে স্বাগতিক সেল্টিককে এগিয়ে দিয়েছিল। ২৯ মিনিটে মাটিয়াস ভেসিনো ল্যাজিওকে সমতায় ফেরান। নাটকীয় ম্যাচের শেষ মুহূর্তে পেড্রো গোল করে ইতালিয়ান ক্লাবের জয় নিশ্চিত করেন।
এই জয়ে শীর্ষে থাকা এ্যাথলেটিকো মাদ্রিদের সাথে সমান ৪ পয়েন্ট নিয়ে গ্রুপের দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে ল্যাজিও। এ্যাথলেটিকো মাদ্রিদ কাল ফেয়েনুর্ডকে ৩-২ গোলে পরাজিত করেছে। আলভারো মোরাতার জোড়া গোলের সাথে আঁতোয়ান গ্রীজম্যানের স্ট্রাইকে এ্যাথলেটিকোর জয় নিশ্চিত হয়। ডাচ চ্যাম্পিয়নরা দুইবার এগিয়ে গিয়েও লিড ধরে রাখতে পারেনি।