শিরোনাম
নয়াদিল্লি, ১১ অক্টোবর ২০২৩ (বাসস/এএফপি): বাবার পদাঙ্ক অনুসরণ করে ক্রিকেট ওয়ানডে বিশ্বকাপ খেলা বিরল তারকা গ্রুপে যোগ দেয়া সর্বশেষ খেলোয়াড় ডাচ অল রাউন্ডার বাস ডি লিডে। ক্রিকেটের বিশ্বমঞ্চে এক সময় খেলেছে বাবা, পরবর্তীতে ছেলে এমন সাত ‘বাবা-ছেলের’গল্প।
-টিম ও বাস ডি লিডে-
২০০৩ সালে দক্ষিণ আফ্রিকায় অনুষ্ঠিত বিশ্বকাপে ভারতকে ২০৪ রানে আউট করে দেয়া ম্যাচে গুরুত্বপুর্ন ভুমিকা রেখেছিলেন নেদারল্যান্ডসের টিম ডি লিডে। ডাচদের হয়ে তিনি ৩৪ রানে নিয়েছিলেন চার উইকেট। যার মধ্যে ছিলো ভারতের কিংবদন্তী ব্যাটার শচিন টেন্ডুলকারের উইকেটও।
পরে ইএসপিএনক্রিকইনফোকে ডি লিডে বলেছিলেন,‘ স্মৃতি হিসেবে বলটি আমাকে উপহার দিয়েছিলেন আম্পায়ার পিটার উইলি। বলটিতে আমি শচিনের স্বাক্ষর নিতে চেয়েছিলাম। কিন্তু তাৎক্ষনিকভাবে আমার ডাক পড়ে মিডিয়ার সামনে। ততক্ষনে সেখান থেকে চলে যায় ভারতীয় দল।
কয়েক বছর পর হাতের কনুইয়ের চিকিৎসার জন্য নেদারল্যান্ডসে আসেন টেন্ডুলকার। খবরটি আমার এক ফিজিও বন্ধুর কাছ থেকে আমি জানতে পারি। (শচিনের সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে গিয়ে দেখি) তিনি ম্যাচির কথা স্মরণে রেখেছেন এবং আমার জন্য বলটিতে সই করে দেন।’
গত শুক্রবার (তার ছেলে) বাস ডি লিডেও পাকিস্তানের বিপক্ষে নিজের বিশ্বকাপ অভিষেকে শিকার করেছেন চার উইকেট। যার মাধ্যমে বিশ্বকাপের ইতিহাসে প্রথম পিতা- পুত্রের চার উইকেট প্রাপ্তির বিরল এক নজীর সৃস্টি হয়েছে।
- ডন ও ডেরেক প্রিঙ্গল -
ম্যানচেস্টারে জন্মগ্রহণকারী ডন প্রিঙ্গল ১৯৫০ দশকের শেষের দিকে কেনিয়ায় স্থায়ী হওয়ার লক্ষে ইংল্যান্ড ত্যাগ করেন। সতীর্থ মাইক ব্রাউনের মতে তিনি ছিলেন ‘কেনিয়ার সর্বকালের সেরা পেস বোলার’।
পূর্ব আফ্রিকার দেশ হিসেবে ১৯৭৫ আসরে প্রথমবার বিশ্বকাপ খেলেছিল কেনিয়া, উগান্ডা, জাম্বিয়া এবং তানজানিয়াকে নিয়ে গঠিত একটি দল। যে দলের হয়ে অংশ নিয়েছিলেন প্রিঙ্গল । দুটি ম্যাচ খেলেছেন ভারত ও ইংল্যান্ডের বিপক্ষে।
তার পুত্র ডেরেক কেনিয়ায় জন্মগ্রহণ করেছিলেন তবে ইংল্যান্ডের হয়ে খেলেছেন ৩০টি টেস্ট এবং ৪৪টি ওয়ানডে। ১৯৮৭ এবং ১৯৯২ বিশ্বকাপ খেলেছেন যেরেক। মেলবোর্নে ১৯৯২ বিশ্বকাপ ফাইনালে তিনি ইংল্যান্ডের ৩২ রানে ৩উইকেট নিয়েছিলেন। তবে ২২ রানে ম্যাচটি জিতে শিরোপা জয় করে উপমহাদেশের দল পাকিস্তান।
- ল্যান্স ও ক্রিস কেয়ার্নস -
নিউজিল্যান্ডের বার্নার্ড ল্যান্স কেয়ার্নস১৯৭৫, ১৯৭৯, ১৯৮৩ সালে তিনটি বিশ্বকাপ খেলেছেন দেশের হয়ে। তার ছেলে ক্রিসকেয়ার্নস খেলেছেন একটি বেশী ১৯৯২, ১৯৯৬, ১৯৯৯ এবং ২০০৩ টুর্নামেন্টে। ল্যান্স তার ‘ভুল-পায়ের’ ডেলিভারি এবং ১৯৮৩ সালে অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে একটি ওয়ানডে ম্যাচে ২১ বলে ৫০ রানের ইনিংসে ছয়টি ছক্কা মারার কারণে ব্যাট চালানোর ‘এক্সক্যালিবার’ হিসেবে েেপয়ছেন ক্রিকেটের লোক কাহিনীতে।
ক্রিস কেয়ার্নস তার ক্যারিয়ারে ২১৫টি ওয়ানডে খেলেছেন। মাত্র ৫০ রানের জন্য ৫,০০০ রান পুর্ন করতে পারেননি। এছাড়া শিকার করেছেন ২০০ টিরও বেশি উইকেট। বিশ্বকাপে তার সেরা স্কোর ছিল ৬০ এবং সেরা বোলিং পারফরম্যান্স ছিল ৩-১৯।
- রড ও টম লাথাম -
বাস ডি লিডের মতো,টম লাথামও ২০২৩ বিশ্বকাপে খেলছেন, উইকেট রক্ষক এবং কেন উইলিয়ামসন চোট থেকে সেরে উঠার সময় দলের অধিনায়কত্ব করছেন। সোমবার ডাচদের বিরুদ্ধে দ্রুতগতিতে ৫৩ রানের একটি ইনিংসও করেছেন টম।
টম লাথামের বাবা উদ্বোধনী ব্যাটসম্যান রড লাথাম ৩৩টি ওডিআই খেলেছেন এবং ১৯৯২ বিশ্বকাপে অংশ নিয়েছেন। অকল্যান্ডে দক্ষিণ আফ্রিকার বিরুদ্ধে বিশ্বকাপে সাত উইকেটে জয় পাওয়া ম্যাচে ৬০ রান করেছিলেন তিনি।
- কেভিন ও স্যাম কারান-
স্যাম কারানের মধ্যেই যেন ক্রিকেটের জিন আছে । যার দুই ভাই বেন এবং টমও পেশাদার ক্রিকেটার। বাবা কেভিন খেলেছেন জিম্বাবুয়ের হয়ে। দাদা কেভিনও রোডেশিয়ার প্রতিনিধিত্ব করেছিলেন। বাবা কেভিন জিম্বাবুয়ের হয়ে ১১টি ওডিআই খেলেছেন যার সবগুলোই ছিল ১৯৮৩ এবং ১৯৮৭ বিশ্বকাপে। ১৯৮৩ সালে তিনি ভারতের বিপক্ষে ৭৩, ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে ৬২ রান করেছিলেন। সাউদাম্পটনে অস্ট্রেলিয়াকে ৩২ রানে হারিয়ে দেয়া জিম্বাবুয়ে দলেরও অংশ ছিলেন তিনি।
স্যামও এখন তার প্রথম বিশ্বকাপে খেলছেন, ১৯ বছর বয়সে টেস্ট অভিষেক হওয়া এই ক্রিকেটার গত বছর টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে শিরোপা জয়ী ইংল্যান্ডের হয়ে তারকা দ্যুতি ছড়িয়েছেন। চলতি বছর অনুষ্ঠিত ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগের দল পাঞ্জাব কিংসে ১.৮৫ মিলিয়ন পাউন্ডে যোগ দিয়ে ক্লাবটির সর্বকালের সর্বোচ্চ দামী খেলোয়াড়ের তকমা পেয়েছেন তিনি।
- ক্রিস ও স্টুয়ার্ট ব্রড -
ওপেনিং ব্যাটসম্যান ক্রিস ব্রড ইংল্যান্ডের হয়ে ২৫টি টেস্ট এবং ৩৪টি ওয়ানডে খেলেছেন। ১৯৮৬/৮৭ অ্যাশেজ সিরিজে অস্ট্রেলিয়ার মাটিতে ইংল্যান্ডের জয়ে তার তিনটি সেঞ্চুরি ছিল খুবই কার্যকরী। যা একজন খেলোয়াড় হিসাবে তাকে সবচেয়ে বেশি স্মরণীয় করে রেখেছে।
তার ছেলে স্টুয়ার্টও একজন তরুণ টপ অর্ডার ব্যাটসম্যান হিসেবে ক্যারিয়ার শুরু করেছিলেন। তবে সময়ের সাথে সাথে তিনি ফাস্ট বোলার বনে যান। বর্তমানে ইংল্যান্ডে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ৬০৪ উইকেটের মালিক স্টুয়ার্ট । ১২১টি ওয়ানডে ম্যাচ খেললেও ২০১৫ সালে মাত্র একটি বিশ্বকাপে অংশ নিয়েছেন স্ট্রয়ার্ট ব্রড।
- জিওফ মিচেল ও শন মার্শ -
জিওফ মিচেল মার্শ ১৯৮০-এর দশকের শেষের দিকে এবং ৯০-এর দশকের শুরুতে অস্ট্রেলিয়া দলের মূল স্তম্ভ ছিলেন। টেস্টে ২,৮৫৪ রান এবং ওয়ানডেতে ৪,৩৫৭ রান করেছেন তিনি। অস্ট্রেলিয়ার ১৯৮৭ বিশ্বকাপ জয়ী দলের হয়েও খেলেছিলেন মার্শ।
এদিকে ২০১৯ বিশ্বকাপে দুটি ম্যাচ খেলেছেন শন। অথচ মিচেল এখনও অসিদের নিয়মিত খেলোয়াড় এবং চলতি বিশ্বকাপের অংশ। নিউজিল্যান্ডের বিরুদ্ধে ২০২১ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে ফাইনালে ম্যাচ জয়ী ইনিংস খেলেছিলেন তিনি। এই বছর অ্যাশেজ সেঞ্চুরি নিয়ে টেস্ট দলে ফিরেছেন এবং ইনজুরিতে পড়া ট্রাভিস হেডের অনুপস্থিতিতে চলমান বিশ্বকাপেও ব্যাটিং করছেন।